www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৯৩

গর্বিত বাঙালি জাতি
----------------
বাঙালি যে গর্বিত জাতি এ কথা মানতেই হবে। বাঙালির কি নেই? সাহিত্য সংস্কৃতি চিত্র কলা ধর্ম বিজ্ঞান ঐতিহ্য খেলাধুলা থেকে শুরু করে মানব সভ্যতার উন্নতির সোপানের প্রতিটি ধাপে বাঙালির জয়জয়কার। উন্নতির একেবারে শিখর চূড়ায় বাঙালির অবদান বিশেষভাবে লক্ষণীয়।
বিশ্বের যত রকমের যত শ্রেষ্ঠ পুরস্কার আছে তার প্রায় সবকটিতে বিশেষ অবদানের জন্য বাঙালির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। স্বামী বিবেকানন্দ সনাতন ধর্মের সারবস্ত সারা বিশ্বের সামনে তুলে ধরেছিলেন। ১৮৯৩ সালের সেই মহাসম্মেলন আজও বাঙালির হৃদয়ে গর্বের আসন পেতে বসে আছে। জীবনের অনুপ্রেরণা, যৌবধর্মের ওঠো জাগো আজও বাঙালির সাথে সাথে সমস্ত মানবজাতিকে উজ্জীবিত করে তোলে। সেই যে শুরু হল বাঙালির বিশ্বযাত্রা তা আজও মহীমান্বিত হয়ে আছে। চৈতন্যদেব রামকৃষ্ণ তারই মূর্ত প্রতীক।
আচার্য জগদীশচন্দ্র বোস গাছের মধ্যে যে প্রাণের সঞ্চারের সন্ধান দিয়েছিলেন তা আজও বিশ্ববাসীর কাছে বিস্ময়ের উদ্রেগ সৃষ্টি করে। গাছের প্রতি যে ভালোবাসার টান আজও মানুষের হৃদয়ে হৃদয় অনুভূতির আলাদা জায়গা করে নেয়। গাছ তাই মিশে গেছে অনেকের জীবনে। আর ইথার তরঙ্গ। শব্দ কথা ছবি লেখাজোখা সবই ভেসে বেড়ানো তরঙ্গে দূরদূরান্ত পাড়ি। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর এই আবিষ্কার বাঙালি জাতিকে গর্বিত করেছে অনন্ত জীবনে।
বিজ্ঞানের আরো অলঙ্কৃত আসনে আসন অলঙ্কৃত করেছেন মেঘনাদ সাহা প্রফুল্লচন্দ্র সত্যেন্দ্রনাথ বোস, প্রশান্তচন্দ্র মহালনবীশ, উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী ও আরো অনেকে।
বাংলা সাহিত্যেও মণিমুক্তার অভাব নেই।রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে আজকের জয় গোস্বামী শঙ্খ ঘোষ কবি সাহিত্যিকদের অবাধ বিচরণ। সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথের নোবেল পুরস্কার গর্বিত বাঙালি জাতির আর এক ধাপ। রবীন্দ্রনাথের অসামান্য সঙ্গীত ও তার মাধুর্যমন্ডিত কথা প্রতিটি বাঙালির সাথে সাথে বিশের বহু মানুষের খুব সহজেই মন জয় করেছে। ভারত ও বাংলাদেশ দুটো দেশের জাতীয় সঙ্গীত রবীন্দ্রনাথের রচিত। মাইকেল মধুসূদন দত্ত বাংলাভাষাকে বাঙালিকে অবজ্ঞার দৃষ্টিতে দূরে সরিয়ে যে ভুল করেছিলেন তাঁর রচিত রচনাসম্ভার সেই ভুলের মণিমুক্তা ভরা বাংলা ও বাঙালির আখর হয়ে আছে। এভাবে তারাশঙ্কর বিভূতিভূষণ শরৎচন্দ্র বঙ্কিমচন্দ্র ও আরো অনেকে যে যাঁর রচনায় যুগোর্ত্তীন ছাপ রেখে গেছেন।
তাছাড়া বাঙালির পাঁচালি ব্রতকথা লোকগাঁথা পরব নৃত্য (ছৌ গম্ভীরা ইত্যাদি) ইত্যাদি বিশ্বের দরবারে তার আসন সুনির্দিষ্ট করতে পেরেছে। আমরা তাই ভুলি নি বিদ্যাপতি চণ্ডীদাস মুকুন্দদাস কৃত্তিবাস কাশীরাম।
বাঙালি তাই আজ বিশ্বের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজস্ব মেধা মনন ও যোগ্যতমের উদ্বর্তনে ছড়িয়ে পড়েছে মিশে গেছে মিলে গেছে। যে কোন ক্ষেত্রে যে কোন দরবারে যে কোন মানব সভ্যতার উন্নতির সোপানে কোন না কোনভাবে বাঙালি আপন মর্যাদায় আপন স্বকীয়তায় ভাস্বর হয়ে আছে।
আজকের চলচ্চিত্র তাই সত্যজিৎ রায়কে অস্কারে ভূষিত করেছেন। সাধারণ অবস্থানে উচ্চ চিন্তার রসদ ছড়িয়ে বিশ্বকে তাক লাগানো যায়, সাধারণ জীবনযাত্রাকে অসামান্য আঙ্গিকে শিল্পের পর্যায়ে পরিবেশন করা যায় তা সত্যজিৎ রায়ের মত জীবনভেদী মানুষ বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছেন। আর বাঙালিকে বসিয়েছেন গর্বের আসনে। ঋত্বিক ঘটক তপন সিংহ পঙ্কজ মল্লিক সন্দীপ রায়ের সাথে সাথে বাঙালির গর্বের উত্তমকুমার সুচিত্রা সেনও এসেছেন। আর ভারত দাপিয়ে এখনও চিরনবীন চির উজ্জ্বল কিশোরকুমার মান্নাদে হেমন্ত কাননদেবী।
চিত্র কলায় যামিনী রায় থেকে শুরু করে যোগেন চৌধুরীর এত চিত্র সম্ভার যা যে কোন প্রজন্মের কাছে প্রেরণার মাপকাঠি হতে পারে। তারই হাত ধরে এখনও পটশিল্প তার নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে। যা অন্য কোন জাতির মধ্যে বিদ্যমান নয়।
আর খেলাধুলায় পঙ্কজ রায় গোষ্ঠ পাল থেকে শুরু করে বর্তমানে লিয়েন্ডার পেজ সৌরভ গাঙ্গুলি বিশ্বের দরবারে উজ্জ্বল বাঙালি মুখ। গর্বের সর্বোচ্চ আসন। এভাবে গর্বিত বাঙালি জাতি সকল দেশের সেরা হয়ে আজও চির ভাস্বর হয়ে আছে হয়ে ছিল হয়ে থাকবে।
স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালির আসন সত্যিই উজ্জ্বল। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা, মাস্টারদা সূর্য সেন , চিত্তরঞ্জন দাশ, বিনয় বাদল দীনেশ ও আরো অনেক অনেক বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীর সংগ্রামের ইতিবৃত্ত বর্ণনা করেও শেষ করা যাবে না। আজও ভারতবাসীর কানে বাজে 'তোমরা আমাকে রক্ত দাও আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব'।
অথচ বাংলা ভাষাকে দীনতার বেশ পরিয়ে বার বার 'বাংলাটা ঠিক আসে না' বলে পেছনে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। আগ্রাসী অন্য ভাষার প্রতি কর্ম সূত্রতার আগ্রহ এভাবে বাঙালি জাতির গর্বে আঘাত করছে। কিছু হবে না এ বাংলা ভাষার, এ বাংলার, এ বাঙালি জাতির এমন ভাবনা ছড়িয়ে পড়ছে যা বাঙালির পক্ষে আদৌ কাক্ষিত নয়।
বহু ভাষাভাষী, বহু ধর্মাবলম্বী, বহু আচারবিধির, বহু মননশীলতার, বহু ভাবধারার, বহু উৎসবের, বহু নিষ্ঠাসহযোগের এবং বহু জাতির বাস এই ভারতবর্ষে। তার মধ্যে বাঙালি জাতি তার ভাষায়, তার চরিত্রে, তার উৎসবে, তার আচরণে, তার মননশীলতায় আজও ভাস্বর আজও প্রণিধানযোগ্য আজও প্রতীয়মান। আমরা সহজেই চিনতে ও চেনাতে পারি মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্র রায়, রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহ, ভাস্কর বিমল কুণ্ডু, ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী, অলিম্পিক খ্যাত দীপা কর্মকার, ইণ্ডিগোর কর্ণধার রণজয় দত্ত ইত্যাদি।
গর্ব করার মত, গর্বিত হওয়ার মত বাঙালি জাতির অনেক অনেক মণিমুক্তো ছিল আছে এবং থাকবে। নোবেল অস্কার ম্যাগসাইসাস বুকার থেকে শুরু করে প্রায় সমস্ত প্রকার আন্তর্জাতিক পুরস্কারে বাঙালির নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। যে কোন উচ্চ পর্যায়ের কমিটি, পরিষদ, মণ্ডলী কিংবা বৈঠকের কোথাও না কোথাও বাঙালির ছাপ দেখা যায়। সারা পৃথিবীতে বাঙালি তার আপন মর্যাদায় নিজস্ব আসন জুড়ে অবস্থান করে আছে।
আর আছে বাঙালির আত্মীয়তা, আত্মীক বন্ধন। গ্রামে ঘরে এখন আত্মীয়দের কুটুম্ব বন্ধবান্ধবদের এমন আদর আপ্যায়ন করা হয় যা বিশ্বের কোথাও তা উপলব্ধ নয়। বসুধৈব কুটুম্বকম। যদিও ভারতবর্ষের সর্বত্র এর বিস্তার আছে তবু সবার উপরে বাঙালির আত্মীয়তা। বাঙালির এই আত্মীয়তার সূত্র সত্যিই গর্বের। এত উৎসব এত পার্বণ এত পারিবারিক আনন্দ অনুষ্ঠান এত সম্পর্কের বাঁধন বাঙালির মধ্যেই বিদ্যমান। বাবা মা মামা মামী কাকা কাকী জ্যেঠু জ্যেঠিমা ভাই বোন খুড়তুতো জ্যেড়তুতো মাসতুতো ঠাকুরমা ঠাকুরদা দাদু দিদা ইত্যাদি আরও আরও কত কত রকমের সম্পর্ক বাঙালার ঘরে ঘরে ও বাঙালির জন মানসে ছড়িয়ে আছে যা আর কোন জাতির মধ্যে আছে কি না কে জানে।
আর দুর্গাপূজা লক্ষ্মীপূজা থেকে শুরু করে তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর যে পুজো হয়, ঈদ মহরম পালিত তা কেবল ধর্মীয় অনুশাসন নয়, বাঙালির মননের বিস্তার। বাঙালির আত্মীক বন্ধন। বাঙালির পৃথিবীর বুকে গর্বের অবস্থান। পূজোর আচার বিচার আচরণ ও তিথি নক্ষত্র আগামীর বুকে বাঙালির গর্বের পদচারণা। মানব সভ্যতা যতই উন্নতির সর্বোচ্চ শিখরে অবস্থান করুক না কেন আত্মীক বন্ধন ছাড়া সেই সভ্যতা প্রাণহীন মূল্যহীন সারবত্তাহীন। বাঙালি সেই আত্মীক বন্ধনে মানুষের সাথে মানুষের পরিচয় করায়।
বাঙালির ঐতিহ্য ভাণ্ডার এত ভরপুর যে, যে কোন ধারা যে কোন প্যাশান যে কোন এম-ইন-লাইফ গড়ে তুলতে প্রজন্মের সামনে তার উজ্জ্বল উদাহরণ বিদ্যমান। তাই সদর্পে বলা যেতেই পারে আমরা গর্বিত বাঙালি জাতি।
বিষয়শ্রেণী: অভিজ্ঞতা
ব্লগটি ৪৮৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/০২/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ভালো লেখা
  • আশরাফুল হক মহিন ০১/০৩/২০২১
    Nice nice
  • ভাল লাগল
  • অনেক অনেক সুন্দর।
  • আরিফ আহমেদ খান ১৪/০২/২০২১
    সুন্দর
  • ফয়জুল মহী ১৪/০২/২০২১
    বসন্তের শুভেচ্ছা । সুন্দর
 
Quantcast