www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৮৯

ইঁদুরদৌড়
---------
আচ্ছা একটা শিশুকে ইঁদুর দৌড়ে বড় করার মধ্যে অভিভাবকদের কি লাভ বা সার্থকতা আছে? সেখানে অভিভাবক নেহাতই সিঁড়ির কয়েকটা ধাপ মাত্র। শেষ কবে কে শুনেছে বা দেখেছে যে আমার ছেলে আমার মেয়ের জন্য অন্য লোক গর্ব করছে। সৌরভ তো সবাই হয় না তবু যেটুকু গৌরব হয় তার জন্য ঈর্ষা আছেই আছে। তাহলে ছেলে মেয়েকে ইঁদুর দৌড়ে পাঠিয়ে অভিভাবকের কি লাভ?
কি লাভ? লাভ একটাই যাতে শিশু এই সমাজের বুকে নিজের পরিচয় গড়ে তুলতে পারে? যাতে সে বড় হয়ে বাবা মায়ের গলগ্রহ না হয়ে ওঠে। দিনের শেষে সম্মানের সঙ্গে দুমুঠো খেতে পারে। অন্যের কাছে সমাজের কাছে যেন হাত পাততে না হয়। কিংবা দুমুঠো খাবার যোগাড়ের জন্য বিপথে না চলে যায়। কোন একদিন যেন ঘুরে সে প্রশ্ন না করে যে, তোমরা আমার নিজে রোজগারের একটু ব্যবস্থা করে দিতে পারলে না?
তাই বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবাই শিশুকে বড় করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করে। বর্তমান পরিস্থিতির সাথে পা না মেলালে যে কোন শিশু আপনাআপনি কিছু শিখে যাবে। তা তো নয়? স্বাভাবিক অবস্থান দেখে কেউ কিছু শিখে যায় কি? প্রকৃতি দেখে কি আঁকা যায়? শুধু গান শুনে কি গান শেখা যায়? খেলা দেখে কি খেলতে পারা যায়?
তার হাতে রঙ তুলি না ধরিয়ে দিলে জানব কি করে তার আঁকায় আগ্রহ আছে? ব্যাট বল বা ফুটবলে পা না দিলে জানব কি করে যে তার খেলায় আগ্রহ আছে? হারমোনিয়াম না ধরালে কি করে জানব যে তার গানে আগ্রহ আছে? আবার এসব শুধু ধরালে হবে না যদি আগ্রহ থাকে তাহলে তার লক্ষ্যে পৌঁছনো অত সহজসাধ্য না। অধ্যবসায় দরকার। আবার কোন বিষয়ে শিশুর জানার জন্য সব বিষয় ধরাতে হয়। সব বিষয়ে সময় দেওয়ার জন্য। সকালে বিকালে সন্ধ্যায় কোন না কোন বিষয়ে এনগেজ থাকতে হয়। যাকে আমরা অন্য নামে বলি ইঁদুর দৌড়।
আবার যে ছেলে মেয়ে শিশুকালে যে বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কঠিন অধ্যবসায় ইত্যাদির সাথে যুক্ত হয়ে সেই আগ্রহ বদলে যায়। কিংবা আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।
তবে একটা বিষয়ে সব ছেলে মেয়ের জ্ঞানচক্ষু খুলে যায়। তা হল যতটা সম্ভব কম কষ্ট করে কিভাবে পয়সা রোজগার করা যায়। সাফল্য সম্মান নাম ডাক যশ ইত্যাদি নিয়ে আজকাল আর কেউ আর মাথা ঘামায় না। কারণ নাচ গান খেলাধুলা আঁকা কাব্য সাহিত্য লেখালেখিতে এত প্রাজ্ঞ বিজ্ঞ বাবু ফোরফণ্ট এসে গেছে যে একবাক্যে চিনবে এরকম জায়গায় পৌঁছানো আদৌ সম্ভব নয়। যদি সম্ভব হয় তাও কচিৎ দু একজনের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ে। তাই অতটা ইঁদুর দৌড় কেউ দৌড়ায় না। বা অভিভাবক ভাবেও না। তাও সেই জিনিয়াসরা সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। আমার তো মনে হয় তারা আরও বেশি ইঁদুর দৌড়ে সামিল হয়। আমাদের এখানে একজনের অল ইন্ডিয়াতে র‍্যাঙ্ক পঞ্চাশ লাখের মধ্যে একশ। তাকে আমরা কেউ খেলতে দেখি নি। ঘুরে বেড়াতে দেখি নি। মোবাইল হাতে দেখি নি। হি হি হা হা করে হাসতে দেখি নি। টিউশন আর বাড়ি।
তবু কষ্ট করে বড় হওয়ার মধ্যে একটা সার্থকতা আছে। কোন বাবা মা একশতে একশ চায় না। চায় তার শিশু যেন একশ পাওয়ার জন্য সেদিকে লক্ষ্য রেখে চেষ্টা করে। একশতে একশ পায় নি বলে কেউ বকাঝকা করে না। বকাঝকা করে একশতে একশ পাওয়ার কোন রকম চেষ্টা যে করে নি তাকে। ছেলে মেয়েকে চোখের সামনে থেকে প্রত্যেক অভিভাবক সেই চেষ্টাটুকুই দেখে। সেই চেষ্টাকে আর একটু আর একটু বাড়ানোর জন্য একটু চাপ তো দেবে। না হলে শিশু বড় হবে কি করে?
মাঠে ঘাটে খেলতে দিলেই যে ছেলে মেয়ে খেলবে, রকে বসে আড্ডা দিতে বললেই যে দেবে, সকাল সকাল ঘুম থেকে না তুলে আরাম করতে দিলেই যে নিজের থেকে ঘুম থেকে উঠে পড়াশুনায় বসে যাবে ইত্যাদি ইত্যাদি আমরা যা করেছি এখনকার ছেলে মেয়ে তা কি করতে চাইবে? করতে কি চায়? যুগ পাল্টে গেছে। সাথে সাথে বহু এন্টারটেনমেন্ট এসে গেছে। ফলে শিশু বয়সে, পড়াশুনার সময়ে একটু জোর তো করতেই হবে। এন্টারটেনমেন্ট থেকে একটু সরিয়ে তো রাখতেই হবে। সমাজের সঙ্গে পরিস্থিতির সঙ্গে মানাতে একটু দৌড় তো দৌড়তে হবে? হ্যাঁ সেটা অন্য নামে ইঁদুর দৌড় হলেও আপত্তি নেই।
যে পড়াশুনা ও পড়াশুনা সংক্রান্ত চেষ্টায় থাকে না, অন্য দিকে যার মন চলে যায় তার ক্ষেত্রে বাবা মার একটু কড়া শাসন ভারি মনে হয়। সেইই এই পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে পারে না। আর কেটে পড়ে। কিংবা অসুস্থ হয়। নিজেকে মানসিক বিপর্যস্ততার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আমরা ভাবি অভিভাবক বড় নিষ্ঠুর। তা কিন্তু নয়। ছেলে মেয়ে বড় হয়ে যাই হোক না কেন তাতে অভিভাবক তার বিন্দুমাত্র লাভ লোকসান কিছুই পায় না। তাই শৈশবের ইঁদুর দৌড়ের জন্য বা অধ্যবসায়ের জন্য অভিভাবক দোষের ভাগী নয়। ছেলে মেয়েকে যদি তার ইচ্ছে খুশি মত বড় হতে দিতে হয়, যদি শাসন করার দরকার নেই, যদি যদি জীবন দৌড়ের জন্য সে আপনা থেকে প্রস্তুত হয়ে যায় তাহলে আর বাবা মা অভিভাবকের দরকার কি?
পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ আছেন তাদের বাবা মা এবং অভিভাবকের কড়া শাসনেই তাঁরা বড় হয়েছেন। যুগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিভাবকের সেই কড়া শাসনই ইঁদুর দৌড়ের নামে পরিচিতি পেয়েছে।
চাপ সর্বত্র আছে। সব ব্যাপারে আছে। এই বয়সে নেবে না তো কবে নেবে? এত লোকসংখ্যায় আমরা এমন একটা অবস্থানের দিকে এগোচ্ছি যেখানে শুধু হেসে খেলে জীবন কাটিয়ে দেব তা কিন্তু হবে না। বরং এই ইঁদুর দৌড় বা অধ্যবসায়, এই পরিস্থিতি ও এই অবস্থানের সঙ্গে যুজতে যুজতে হেসে খেলে বেঁচে ওঠতে হবে। আর তার উপযুক্ত সময় এই বাল্যবেলা। শিশু কাল।
অভিভাবকের পরীক্ষা। ইঁদুর দৌড়ে ছেলে মেয়ের পাশে দাঁড়ানো। ট্র্যাকে থেকে। ট্র্যাক থেকে বেরিয়ে নয়।
এমন কি গ্যারান্টি আছে যে ইঁদুর দৌড়ে বা অধ্যবসায়ে নেই, গানও শেখে নি নাচও শেখে নি আঁকাও শেখে নি কবিতার ক্লাস করে নি ব্যাট বল নিজের মত খেলেছে ইচ্ছে খুশি মত পড়েছে কোন চাপ নেই তবু এই দু হাজার বিশ সালে একেবারে জুয়েল ছেলে একেবারে হীরের টুকরো মেয়ে হয়েছে? উদাহরণ আছে?
বরং এইভাবে দৌড়তে দৌড়তে অনেকেই যে যার পথ বেছে নিয়েছে। সব শিখেছে আবার একটা সময় সব সব ফেলে দিয়ে নিজের পছন্দ ধরে নিয়েছে। সৌরভ ক্রিকেট খেলত আবার ফুটবল খেলত আবার পড়াশুনাতেও ভালো ছিল তাই সে তার বর্তমান পছন্দে আসতে পেরেছে। একটা বয়স পর্যন্ত সেও তো ইঁদুর দৌড়ে বা অধ্যবসায়ে ছিল।
সব ক্ষেত্রে যেমন ফেলিওর আছে। তেমনি এই দৌড়েও ফেলিওর আছে। মিছিমিছি ইঁদুর দৌড় বলে চেঁচামেচি করে কোন লাভ নেই। বর্তমান পরিস্থিতি সঙ্গে সামাল দিয়ে দৌড়তে হয় ঠিকই তবে তা ইঁদুর দৌড় নয়। জীবনের দৌড়। বড় হওয়ার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট দৌড়। দু একটা ফেলিওর দু একজনের উদাহরণ কোন কাজের কথা নয়।
না হলে যে শৈশবকে আজ আপনি ইচ্ছে খুশি মত বড় হতে দিতে চাইছেন তাকে নিয়েই পরে ছড়া কাটবেন
বিদ্যেবুদ্ধি বলছি মশাই
ধন্যি ছেলের অধ্যবসায়
উনিশটিবার ম্যাট্রিকে সে
ঘায়েল হয়ে থামল শেষে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৪৮১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০১/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আসিফ খন্দকার ০৫/০২/২০২১
    দুটি সন্তানের বেশি নয়, একটি হলে ভাল হয়।

    সুন্দর লিখেছেন প্রিয়।
  • এস এম শাহনূর ০৩/০২/২০২১
    বাহ
  • ফয়জুল মহী ৩০/০১/২০২১
    সুন্দর করে মনের কথাগুলো সাজিয়ে লিখেছেন।
  • আব্দুল হক ৩০/০১/২০২১
    বেশ লিখেছেন।
 
Quantcast