www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গোপলার কথা - ৭৫

ওষুধের মাশুল
-------------
(১)

গ্রামে গঞ্জে বা শহরে সাধারণ মানুষ সাধারণ সর্দি কাশি জ্বর মাথা ব্যথা গা হাত পা যন্ত্রণা দাঁত ব্যথা চোট লাগা দা বটিতে কেটে যাওয়া টুকটাক পায়খানা বমি ঘা খোস পাঁচড়া হলে কোথায় যাবে? গ্রামে গঞ্জে হাতের কাছে পাশ করা ডাক্তার নেই। শহরে যদিও আছে তার কাছে নাম লিখিয়ে সময় নিয়ে দু'শ পাঁচ'শ টাকার ভিজিট দিয়ে দেখাতে অনেক সময় চলে যায় । তাতেও রোগ সেরে যায় অথবা বিকট আকার ধারণ করে ?
আর সরকারী পরিসেবার হাসপাতাল অনেকটা দূরে দূরে। এইসব ছোট খাটো সাধারণ ব্যাপার নিয়ে খুব কম লোক হাসপাতালে যায়। কিংবা যাতায়াতে যা পয়সা খরচ হয় এবং সময় যায় তাতে পাশের দোকান থেকে অনায়াসে ওষুধ পাওয়া যাবে এবং সেরেও যাবে।
তাহলে উপায় ? গ্রাম শহর সর্বত্র হাতুড়ে ডাক্তার অথবা পাড়ার ওষুধ দোকান থেকে ওষুধ নেওয়াই হল সবচেয়ে সহজ। তাতে তারা হাতের কাছে যতটুকু পয়সা আছে সেই মাপে ওষুধ কেনে অথবা একদিন দুদিনের মত ওষুধ নিয়ে নিল। পরে যা হয় দেখা যাবে। এবং পরে আর ওষুধ নিল না।
কিন্তু ওষুধের ডোজ সিস্টেম আছে। সেই ডোজে ওষুধ না খেলে রোগ হয়তো আপাত দৃষ্টিতে সেরে যায় কিন্তু সেই রোগ নিয়ে বার বার ভুগতে হয়। তার কারণ যে ওই ওষুধ খেল তার দেহে রোগ সৃষ্টির জীবাণু আধমরা হয়ে বেঁচে থাকে। ওই ওষুধ অর্ধেক ডোজে খেয়ে যেহেতু জীবাণু মৃত হল না তাই সে ওই ওষুধে পরে আর মরবেই না। রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেল। শুধু ওই রোগী নয় অন্য কারো ক্ষেত্রে আর ওই ওষুধে তেমন কোন কাজ হবে না। ফলে তারপরে চাই আরো অধিক শক্তিশালী ওষুধ।
বুঝলাম। কিন্তু আমাদের দেশে ডাক্তার ও ওষুধের যে অবস্থান তাতে এই গতানুগতিক ভাবে চলা ছাড়া আর উপায় কি? এর সঙ্গে আছে ঝাড় ফুঁক তুকতাক জড়িবুটি । আর আছে লোক ঠকানো ডাক্তার ও ডাক্তারের সাথে যুক্ত নানা রকম টেস্ট ও থেরাপির ব্যবসায়ীকুল ।
চিকিৎসা পরিসেবা খুবই সেনসিটিভ । মানুষের জীবন মৃত্যুর সাথে জড়িয়ে । তবুও মানুষ নিরুপায় হয়ে তাৎক্ষনিক ভাবে ছোটখাটো পরিসেবা খুবই সাধারণভাবে সেরে নেয় । চাইলেও সঠিক পরামর্শে এগিয়ে নিয়ে যেতেও পারবে না ।
কেননা ওষুধ দোকানে ঠিকমত গাইড দেওয়া ফার্মাসিস্ট নেই । নার্সিং হোমে ট্রেনিং প্রাপ্ত নার্সিং স্টাফ নেই । প্যাথলজিতে সঠিক টেকনিশিয়ান নেই । কার রেজিস্ট্রেশন কে কিভাবে পাচ্ছে ব্যাবহার করছে সাধারণের জানার উপায়ও নেই । আর এসব খুব একটা সুনির্দিষ্ট তদারকি বা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থাও নেই ।
তাই উদ্যোগ প্রশাসনিকভাবে শুরু করা দরকার । সেখানে আবার অন্য খেলা । ওষুধের গুণাগুণেও কত কি চুপি চুপি অথবা কারচুপি । তা আর বলার নয় ।
প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি নিষিদ্ধ লেখা আছে আইন আছে তাও রমরমিয়ে চলছে ।
(২)
আমাদের দেশে সবাই না হলেও অনেকেই ডাক্তার। সাধারণ জ্বর সর্দি কাশি ব্যথা যন্ত্রণা পায়খানা বমি ইত্যাদির ক্ষেত্রে অনেকেই এমনকি বলা যেতে পারে প্রায় সবাই নিজস্ব ম্যাডিকেশন ব্যবহার করেন । এর জন্য আবার ডাক্তারখানায় যাব ? কিংবা মেডিক্যাল পারসন-এর সঙ্গে যোগাযোগ করব ? দূর ! কি আর হবে ওই তো মেট্রোজিল ক্যালপল নয় তো জেলুসিল দেবে ।
কি তার কাজ , কতটা ভাল মন্দ , কিসব দিয়ে গড়া , এখুনি কি হতে পারে কিংবা সুদূর প্রসারী ফল কি ইত্যাদি কিছুই না জেনে মুড়ি মুড়কির মত আমাদের দেশে অনেকেই ওষুধ খায় । এমনকি সব কিছু জেনেশুনে মেডিক্যাল লাইনের লোকও খায় । ফলে ওষুধের মান ইজ্জত বলে আর কিছু নেই । যে যা পারছে গলাধঃকরণ করছে ।
আর তাই ওষুধ সে বেচারা আর অল্পে হচ্ছে না । এই ছিল ৫০০ এখন ৬৫০ ক্যালপলেও হচ্ছে না । আর আছে অ্যান্টিবায়োটিক । ওরে বাস !
– ওই নীল নীল ক্যাপসুলগুলো দিন না ।
দোকানদার এক পাতা বের করে দিল । দাম - এই ১২০ টাকা ।
-বাপরে এত লাগবেনা । দিন না তিন চারটে । এতেই কমে যাবে ।
আগে জেনে হোক বা না জেনে দোকানদার বলত – তা হয়না , এর একটা ডোজ আছে তো । তখন খরিদ্দারের মুখ ঝাড়া , পয়সা নেই , অন্য দোকানে চলে যাবে । তাই এখন সুড়সুড় করে দোকানদার ( সে সাধারণত ফার্মাসিস্ট নয় ) চারটে দিয়ে দিল । রোগীও খুশি , রোগও খুশি ।
কিন্তু কিছুদিন পরে রোগ ফিরে এল । রোগীর মুখ ব্যাজার । আর নীলের অকাজ নীলের ঘাড়েই চাপল । বাতিল । কিন্তু রোগ তখন অন্য ডালপালা মেলে ধরেছে । গুটি গুটি পায়ে ডাক্তারের কাছে গেল । তখন সেই রোগের অন্য অন্য ঢাউস নাম । খাতির বেশ । টাকা অগাধ লাগে লাগুক । ভুলে গেল সেই টাকা নেই – ওই দু চারটে দিয়ে দিন !
ওষুধ নিয়ে ছেলেখেলা রোগীরা যেমন করছে তেমনি মেডিক্যাল পারসন , সংস্থা , সরকার এবং আমাদের দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ এবং তাদের লুটে নেওয়া অভিপ্রায়ও সামিল । অনেকেই এখনো শুরুতেই ডাক্তারের কাছে যায় ।
কিন্তু ডাক্তারবাবু বসে ভাবছেন এই দুটো ক্যালপল বা জেলুসিল বা মেট্রোজিল দিলেই তো সেরে যাবে। তাতে মান ইজ্জত বলে কিছু থাকবে ? সঙ্গে দিয়ে দিল কিছু সিরাপ , হজমী , ভিটামিন। ফর্দ ভিজিটের মতই মোটা। আর রিস্ক নিয়ে কি দরকার ? আজকাল যা যুগ ! তার চেয়ে কিছু টেস্টও লিখে দেওয়া যাক । ফলে অযথা কিছু ওষুধ শরীরকে হজম করতে হল ।
উল্টোদিকে রোগী ও তার বাড়ির লোক যদি একটা ওষুধ লেখা দেখে – এমা ! ডাক্তার তেমন করে দেখলই না ? এই একটা ওষুধে সারবে ?
একটা মজার ঘটনা। একজন অনেক ডাক্তার দেখিয়েও বেশ একটু খরচের পর এক মেডিক্যাল কলেজে ভিড় ঠেলে দেখানোর পর ডাক্তারবাবু গল্প করতে করতে লিখে দিল ১৫টা মেট্রোনিডাজোল । রোগী এই ওষুধ জানত বাড়ির লোককে বলল – ধুর ! এ তো পায়খানার ওষুধ এতে সারবে !
তার বেশ কয়েকদিন পরেও কষ্টের জন্য বাধ্য হয়ে সেই ওষুধ খেল । সারতে শুরু করছে তাই আটটা কিনেছিল তাতেই কাজ মিটিয়ে নিল । বুঝুন । ওষুধের এই হাল !
অর্থাৎ কেউ কারো উপর ভরসায় নেই । ডাক্তার লিখে দেওয়ার পরেও ওষুধ নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করবেই – এটা কিসের ওষুধ ? এটা তো গা হাত পা ব্যথার জন্য দিয়েছিলেন আমার তো জ্বর ? কিংবা আমাকে বুঝিয়ে দিন কোনটা কি কাজ করে ?
সবাইয়ের আবার তথ্য জানার অধিকার আছে কিনা !
বুঝুন ! ওষুধ বেচারা যেন দোষ করে বসে আছে । এটা সারিয়ে তুললেও ওটা সারানো যাবে না।
এ ব্যাপারে সবচেয়ে মজা হল নানান কোম্পানি। একই ওষুধ বিভিন্ন দাম। অনেকটা আলু পেঁয়াজের মত কোয়ালিটি অনুযায়ী দাম দর। এদিকে বলা হচ্ছে অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া রেজিস্ট্যাণ্ড হয়ে যাচ্ছে আবার অন্যদিকে বিভিন্ন কোয়ালিটির মেডিসিন। একই সিফ্রান নানান দামে। আবার বলাও হচ্ছে পরীক্ষিত। তাহলে তো সবচেয়ে কম দামেরটাই ব্যবহার করা যেতে পারে। ক্রিম লোশন মশ্চারাইজারের ক্ষেত্রে হতে পারে । তা বলে ওষুধ?
তার মানে কনফিউশন গোড়াতেই। মেডিসিন তৈরি থেকেই পর পর ধাপ অতিক্রম করে ডাক্তারের হাত ঘুরে কিংবা সবাই ডাক্তার হওয়ায় মেডিসিন তার দিশায় সবচেয়ে বেশি মাশুল গুনছে। আর সবচেয়ে বেশি অব্যবস্থায় ব্যবহৃত এই ওষুধ।

(৩)
স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পুরো স্তম্ভটাই এই ওষুধের উপর দাঁড়িয়ে। শুধু ডাক্তার দেখালে কখনই রোগ সারে না। রোগ ডায়াগনোসিস হওয়ার পর যদি ওষুধ না পাওয়া যায় তাহলেও রোগ সারবে না। শুধু তাই নয় সঠিক ওষুধ যদি সঠিক ভাবে প্রয়োগ না হয়, তাহলেও রোগ সারে না। আবার সঠিক ওষুধ হলেও তা যদি সঠিক পোট্যান্সির( অর্থাৎ ৫০০mg ওষুধে যেন ৫০০mgই থাকে) না হয় তাহলেও রোগ সারবে না।
তাহলে কি দাঁড়াল? ওষুধই সব। অথচ সেই ওষুধকে কিভাবে বোকা বানাতে গিয়ে মানুষ নিজে বোকা বনে যাচ্ছে। তা ভাবনারও অতীত। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার পরিকাঠামোতে যত রকমের প্রসারিত ব্যবসা ফায়দা মুনাফা এই ওষুধকে সামনে রেখে করা হয়, তা অনেকেই জানেন। জেনে চুপ করে থাকেন। অথবা না-জানার ভান করেন। তারপর বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা গড়ে উঠে। তখন নিজের ঘরে ঝড় উঠলেও কিছু করতে চাইলেও করতে পারে না বা কিছু করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।
আবার ওষুধ রোগ নিরাময়ের চাবিকাঠি হলেও সাধারণ মানুষ ডাক্তার দেখানোর জন্য নাম লেখানো, দেখানো ইত্যাদিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকবে, অপেক্ষা করবে। কিন্তু ওষুধ নেওয়ার জন্য দু-চার মিনিট দেরি হলেই নানা সমস্যা খাড়া করবে। যেন ওষুধটা অত দরকারি নয়। ফলে ঠিক ডায়াগনোসিস, ঠিক ওষুধ পেয়েও রোগ ঠিক সারল না। তার কারণ, ওষুধটি ঠিক মত খাওয়া হয় নি। ডাক্তারবাবু দু-বার কি তিনবার করে, খাওয়ার আগে বা পরে খেতে হবে লিখে দিল। তার বাইরেও কিছু অবস্থান আছে যা ওষুধের সঙ্গে যুক্ত। সে সব পরামর্শের জন্য ওষুধটি ভাল ভাবে বুঝে নেওয়া দরকার। না হলে চিকিৎসাটাই বৃথা হয়ে যায়।
এই চিকিৎসা ফেলিওয়ের ক্ষেত্রেও মজা আছে। কিছু ছোটখাটো ইনফেকশন (সে কেটে যাওয়া হোক আর খুসখুশে কাশি কিংবা ঘুসঘুসে জ্বর) যতই ডাক্তার দেখাও আর ওষুধ খাওয়াও, সময় লাগবে দু-চার দিন বা এক আধ সপ্তাহ। তাতে অনেকেই বাচ্চাদের ক্ষেত্রে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। ডাক্তার পাল্টায়। একই বা একই রকম ওষুধ বিভিন্ন ভাঁজে উল্টে পাল্টে সবাই দিতে থাকে। ক্ষতি হয় শিশুটির এবং আমাদের ভবিষ্যতের।
একটি ওষুধ আবিষ্কার করতে যে গবেষণা, সময়, ধৈর্য, ক্ষতি, অসাফল্য, সাফল্য, আর্থিক জড়িয়ে থাকে, তা সাধারণের ভাবনার অতীত। আর সেই ওষুধ নিয়ে ছেলেখেলা, মুড়িমুড়কির মত খেয়ে ফেলা আদৌ কাম্য নয়।
সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এণ্টাসিড। পকেটে পকেটে ঘুরছে। যে যখন পারছে খাচ্ছে। কিছু একটা শরীরের অসুবিধা, সবাই একবাক্যে স্বীকার করেন – ও কিছু না, অ্যাসিডের জন্য হচ্ছে। সবাই তখন ডাক্তার। ফলে এ রকম কত যে ভুল ট্রিটম্যাণ্ট হয়েছে তা বলার নয়।
আর মেডিক্যাল সিস্টেমের মধ্যে নানা শ্রেণি আছে যেমন ডাক্তার, নার্স, ফার্মাসিস্ট, জি ডি এ, সুইপার, বিভিন্ন টেকনোলজিস্ট, টেকনিশিয়ান ইত্যাদি। একজন রোগীর পরিসেবা দিতে সামগ্রিকভাবে ডাক্তার দেখানো পরেই প্রত্যেকেরই প্রয়োজন। আর প্রত্যেকে যদি তার সুনির্দিষ্ট কাজটি করে তাহলে পরিসেবা আরও স্বচ্ছ ও সুন্দর হবে।
কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। তার প্রথম এবং প্রধান কারণ ডাক্তারবাবুকে বাদ দিয়ে অন্য সমস্ত শ্রেণি সুযোগ পেলেই ডাক্তারি করাটাই বেশি পছন্দ করে। ফলে দেখা যায় ডাক্তারবাবু যা লিখল ওষুধের ঘরে তা পাল্টে গেল। কিংবা ইনটেক করার সূচী পাল্টে গেল। বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় ভুল পরামর্শ সামনে চলে এল। ফলে কিছু হয় নি অথচ রোগী ঘাবড়ে গেল। কিংবা অনেক কিছু হলেও কিছু করা হল না।
এখানে যেহেতু ওষুধের বিষমদায় নিয়ে আলোচনা। তাই কাজটা ফার্মাসিস্টের উপর বর্তায়। তাই ওষুধ দেওয়া কাজটি করতে ফার্মাসিস্টের কোন অস্বস্তি বা দ্বিধা যেন না হয়। কোনমতে দায়সারা ভাবে যেন না করা হয়, যাতে অন্যের মনে প্রশ্ন না জাগে যে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন দেখে বার কয়েক দেখিয়ে দিলে একটু পড়াশুনা জানা যে কেউ কাজটি করতে পারবে। এর জন্য আবার বিশেষ ডিগ্রীর দরকার কি? কিংবা ফার্মাসিস্টের দরকার কি? অর্থাৎ নিজের যোগ্যতা নিজেকেই প্রমাণ করতে হবে। ওষুধকে নিজের মর্যাদায় ফিরিয়ে আনতে পারে কেবল ফার্মাসিস্ট। ওষুধের ম্যানেজিং স্টোরিং ডিসপেন্সিং আপ্রাণ চেষ্টায় ফার্মাসিস্ট যেন তার নিজের হাতে রাখার চেষ্টা করে।
সব শ্রেণির মত ফার্মাসিস্ট যদি ডাক্তারি বা অন্যান্য আর্থিক এবং ক্লারিক্যাল করতেই বেশি পটু হয়; কেমিস্ট বা ড্রাগিস্ট স্টোরে ফার্মাসিস্টবাবু যদিও বা থাকেন (সাধারণত থাকেন না) তো তিনি টাকা পয়সার হিসেব করতেই ব্যস্ত থাকেন আর ডিসপেন্সিং করে অন্য কেউ; আর যে সব হেলথ সেণ্টারে ডাক্তারবাবু নেই বা সপ্তাহে দু-এক দিন আসেন সেসব জায়গায় যদি ফার্মাসিস্ট ডাক্তারি করতেই বেশি পছন্দ করেন, ওষুধ দেয় অন্য কেউ – সেটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক হবে। ফলে ওষুধ বেচারা এইভাবে বেঠিক হাত থেকে হাত বদল হয়ে হ্যাংলা হয়ে যায়। হেলাফেলায় এর ওর দেহের মধ্যে ঢুকছে আর অস্বস্তির অবান্তর লড়াই করে যাচ্ছে।
তাহলে চিকিৎসা ব্যবস্থার স্তম্ভ ওষুধ। আর সেটাই মিস ইউজ হওয়ার জন্য ওষুধ যাদের দিকে মুখ চেয়ে বসে থাকে তারা অর্থাৎ ফার্মাসিস্ট যদি মনযোগ দিয়ে ভালোবেসে কাজটা না করে, তাহলে ওষুধের আর দোষ কোথায়? ডাক্তার না থাকলেও রোগীর কথা শুনে ওষুধটা নিজে হাতে দিলে রোগী বেশি সন্তুষ্ট হবে আর ওষুধ ঠিক লোকের হাত থেকে ঠিক জায়গায় সঠিক পরামর্শে পৌঁছবে।
তাহলে রোগ সারানোর যে প্রধান উপকরণ ওষুধ তার সুষ্টু মীমাংসা এবং সামগ্রিক সাফল্য জীবন মৃত্যুর সাথে জড়িয়ে, তা ফার্মাসিস্টের হাতে। মহান ব্রত বলা যেতেই পারে।
আবার ফার্মাসিস্ট এই ওষুধের ভাল চাইলে যে ভাল হবে, তাও নয়। সেখানে আবার অনেক গ্যাঁড়াকল। বেশির ভাগই, ওষুধ কেনাবেচার কমিটিতে ফার্মাসিস্ট নেই, দেওয়া নেওয়া স্টোরে ফার্মাসিস্ট নগন্য, মান পরীক্ষা কেন্দ্রে ফার্মাসিস্ট হিসেবমাপা, যে কোন মেডিক্যাল বোর্ড বসালে কোন ফার্মাসিস্ট রাখা হয় না, আর সাধারণ চলতি মেডিসিনসপে ফার্মাসিস্ট নেই বললেই চলে। এর পর আছে ম্যানুফ্যাকচার সেণ্টারে নামমাত্র ফার্মাসিস্ট দিয়ে চলে। তাছাড়াও আছে নানা শ্রেণির ফার্মাসিস্ট সার্টিকেট হোল্ডার। এদের নজরদারি করার জন্য যে সিস্টেম সেখানেও ফার্মাসিস্ট ভূমিকায় দিশেহারা।
এরকম এক গোলকধাঁধাঁয় ওষুধ বেচারা নানান ভাবে বলির পাঁঠা। অথচ ব্যবসা জমজমাট। মুনাফায় ষোলআনা।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৫০৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/১০/২০১৯

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast