www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পূজোর স্মৃতি

আমাদের গ্রামটাকে নিরেট অজপাড়া গাঁ বললে অত্যুক্তি হবে না । গ্রামে এখনো বিদ্যুৎ পৌঁছেনি, রাস্তাঘাট এখনো অনেকটাই কাঁচা রয়ে গিয়েছে। এলাকার নেতারাও সেই ঐতিহ্য বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর । তাই তাঁরা এখনো নির্বিকার!
প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি ছড়িয়ে ভোট বাগিয়েই তারা পগারপার।
আর একটা উল্লেখ করার মতো বিষয় হল -- আমাদের গ্রামের বাড়ির চারপাশ জুড়ে অনেকঘর হিন্দুর বসবাস। বেশিরভাগ হিন্দু প্রতিবেশীই দারিদ্র্যক্লিষ্ট। তার মধ্যে আমরা মোটামুটি স্বচ্ছল গৃহস্থ । সেই ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি আমাদের বাড়ির গৃহপরিচারিকা থেকে শুরু করে যারা রোজ কাজ করতে আসে তারা বেশিরভাগেই হিন্দু। দারিদ্র্য আর অন্নজলের অভাব তাদের এমন তাড়িয়ে বেড়ায় যে ছ্যুৎ-অছ্যুৎ চর্চার অবসর পায় না ।
বাবা আমাকে খুব ছোট বেলা থেকেই মাদরাসায় ভর্তি করিয়ে দেন। বাবা - মা খুবই ধর্মভীরু হলেও তাদের কখনো নিজ ধর্মের বড়াই, জাত্যভিমান করতে দেখিনি। তবে হ্যাঁ, মাঝেমধ্যে ধর্ম নিয়ে বাহাস হত বৈকি। তবে সেটা দ্বিপাক্ষিক রসিকতার পর্যায়েই পড়ে। বাড়াবাড়ি নয়।
ঈদ এলে আমরা যেমন আশেপাশের হিন্দু বাড়িগুলোতে সেমাই-মুুড়ি বিলাতাম, তেমনি দুর্গা পূজা এলে আমাদের বাড়িতে মিষ্টি,মুড়কি, সন্দেশে ভরে যেত। চিনি দিয়ে এক ধরণের মিষ্টান্ন বানানো হয়। দেখতে সাদা। আমরা এটা বাতাসা নামেই চিনি। এটা ছিল আমার প্রিয় খাবার। তারপর গুড়ের জিলিপি তো আছেই। সব মিলে পূজার সময়ে দিনগুলো বেশ কেটে যেত।
ঘরবন্দি এই শহুরে জীবনে সেই লোভনীয় মিষ্টান্নের স্বাদ খুব মনে পরছে. ...।
যারা আমাদের বাড়িতে কাজ করে, বাবার বন্ধু, ধর্মের বেটি সবাই আমাদের সানন্দে দিয়ে যেত!
বাবার ধর্মের মেয়ে মানে আমাদের বোন । এই ধরণের বোনদের আন্তরিকতা দেখলে এখনো তাজ্জব বনে যাই। প্রতি পালা-পার্বণে পরিবারের সবার খোঁজ-খবর নেয়া, বাড়ির গাছের ফল, মৌসুমি পিঠা পুলি দেয়া -- যেন আবশ্যিক কাজ। আমরাও এখনো সাধ্যমত দায়িত্ব পালের চেষ্টা করি। আমার মা-বাবাকে ধর্মের ভাই-বোনরা নির্দ্বিধায় মা- বাবা বলেই ডাকে।
অল্প শিক্ষিত, নিরক্ষর সেই মানুষগুলোর নিখাদ ভালোবাসার সংজ্ঞায়ন করা আমার পক্ষে অসম্ভব !
মূলত এইটেই অাবহমান বাঙার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। তাই'তো সাম্যবাদী কবিতায় কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন--
"গাহি সাম্যের গান-
যেখানে আসিয়া এক হয়ে গেছে সব বাধা-ব্যবধান
যেখানে মিশছে হিন্দু-বৌদ্ধ-মুস্‌লিম-ক্রীশ্চান।
গাহি সাম্যের গান!"
অমিয় চক্রবর্তী তাঁর বাংলাদেশ কবিতায় লিখেছেন --
"সেই বাংলাদেশে ছিল সহস্রের একটি কাহিনী
কোরানে পুরাণে শিল্পে,পালা-পার্বণের ঢাকে ঢোলে
আউল বাউল নাচে;পুন্যাহের সানাই রজ্ঞিত
রোদ্দুরে আকাশতলে দেখ কারা হাটে যায়,মাঝি
পাল তোলে,তাঁতি বোনে,খড়ে-ছাওয়া ঘরের আঙনে
মাঠে ঘাটে-শ্রমসঙ্গী নানাজাতি ধর্মের বসতি
চিরদিন বাংলাদেশ...।"
কিন্তু, আমাদের সেই অজপাড়ার মানুষেরা কাজী নজরুল, অমিয়,রবীন্দ্র পড়েনি : তবে কে শেখাল তাদের এই মহানুভবতা, মানবতাবাদ, সাম্যবাদ...?
পুনশ্চ : সুখে থাক পৃথিবীর সকল জীব ; উৎসবে মেতে উঠুক চতুর্দিক। সবাইকে শারদীয় দুর্গা পূজার শুভেচ্ছা. .......
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৫৫৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/১০/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast