www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কেতকী ৬

এখন বেলা প্রায় দুটো । পরিচ্ছন্ন আকাশ, আষাঢ়ের দুপুর মানেই একটা ভ্যাঁপসা গরম থাকে, উপরন্তু সিন্থেটিক কাপড়ের প্যান্ড্যাল, সুতরাং যথেষ্ট উত্তপ্ত পরিবেশ বলাই বাহুল্য । এই গুমট গরমে ভারী বেনারসীর অস্বস্তি সঙ্গে চটকদার মেকআপ কেতকীর শরীরকে ক্রমশঃ অসহনীয় করে তোলার আগেই আকাশে মেঘ জমেছে । দু এক পশলা বৃষ্টির জন্য সবাই অপেক্ষা করছে কিন্তু বৃষ্টি ঝরছে না, নৈঋত কোনে গুড়ুম গুড়ুম দেয়ার ডাক ঝড়ের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে । যদিও এই আবহাওয়া বা পরিবেশের দিকে খুব একটা খেয়াল নেই কেতকীর । এদিকে বিমানের ব্যস্ততার শেষ নেই , কিছুক্ষণ আগে মাত্র কেতকীর পছন্দ মতো কিনে আনা শেরওয়ানি পাঞ্জাবীটা পড়েছে , বেশ মানিয়েছে বলতে হবে, হয়তো সেটাকে দেখানোর জন্যই বিমান একবার কেতকীর মঞ্চের পাশে এসে কানে কানে কিছু একটা বলে গেল, তবে কথাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ নয় । পাশে বসে থাকা বিস্মৃতা কিন্তু ফোঁড়ন কাটতে ছাড়েনি ," কি রে দাদা, বৌদিকে দেখতে এলি না কিছু বলতে এলি!" বিমান লাজুক লাজুক চোখে একবার নববধূর অপরূপ রূপটা দেখে বেশ একটা আত্মতৃপ্তির ভঙ্গিতে মিশে গেল বন্ধু বান্ধব, আত্মীয় স্বজনের ভিড়ে । "বউ তো নয় যেন একটা টুকটুকে পুতুল" এই গুঞ্জনটা আকাশের গুড়ুম গুড়ুমকে ছাপিয়ে যাচ্ছে যেন ।

আকাশের মতোই কালো মেঘ জমে আছে কেতকীর মনে । কি হবে ! কি হবে ! একটা দুশ্চিন্তা কূড়ে কূড়ে খাচ্ছে কেতকীর আজকের এই সুন্দর মুহুর্তের স্বর্ণালী লগনটাকে । একটা নিদারুণ ভয়ে ক্রমশঃ কুঁকড়ে যাচ্ছে কেতকী, এই বুজি অলকানন্দ বাবু আসছে, এসেই নববধূর মুখশ্রী দর্শণের নামে এক কুৎসিত কদাকার অলক্ষী জাতীয় কিচ্ছু দেখে মানুষ যেভাবে আকাশ থেকে পরে ঠিক সেভাবেই মেসোমশাইয়ের অচৈতন্য হবার মতো দশা । হৈ চৈ করে চারিদিক একাকার করে বাড়ি ভর্তি আমন্ত্রিত অথিতিদের একত্রিত করে এক্ষুণি এই হতশ্রী বধূকে বাড়ি ছাড়া করার ব্যবস্থা না করেন সকলের শ্রদ্ধেয় মেসোমশাই ।ভাবতে ভাবতে মাঝে মধ্যে গায়ে শিহরণ দিচ্ছে তার । এ ভাবনার যেন কোন অন্ত নাই । এর চাইতে ঢের ভাল ছিল যদি এই অলকানন্দ বাবু এক্ষুণি সামনে চলে আসতেন, যা হোক একটা কিছু হিল্লে হয়ে যেতো । ভাল অথবা মন্দ তাতে কিছু যায় আসে না । এ যেন মৃত্যুপথ যাত্রীর অবর্ণনীয় অসীম যন্ত্রণার চাইতে কোন অংশেই কম নয়, এবার মরে গেলেই বাঁচে এমন অবস্থা ।

না, আকাশের কালো মেঘের ঘনঘটা বাতাসের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে সরে গেলো এক পাশে । আর কোন ঝড়ের আশঙ্কা নেই । খুব বেশী বৃষ্টি না হলেও আশে পাশে কোথাও বৃষ্টিটা ঝরেছে ফলে বাতাসের মধ্যে একটা আদ্রতা অনুভূত হচ্ছে । স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে বিমান, বিমানের বাবা এমনকি পরিবারের অন্যান্য সকল সদস্যরাও । এই স্বস্তির নিঃশ্বাসটা ভেতরে আটকে আছে কেবল কেতকীর । বুকের মধ্যে যেন একটা দলা বেঁধে পাঁজরের এপাশ ওপাশে ধাক্কা দিচ্ছে। বেড় হতে চাইছে কিন্তু পারছে না । খাবারের পরে অম্ল হলে যেমন বমি বমি ভাব করে কিন্তু বমিটা হয় না অথচ যতক্ষণ বমিটা না হচ্ছে ততক্ষণ উপশম হয়না ঠিক তেমনি এক পীড়ার যন্ত্রণায় ছটফট করছে কেতকী । একে একে লোকজন আসছে, অভ্যাগতদের হাতজোড় প্রণামের ভঙ্গীতে হাসিমুখে শ্রদ্ধা সম্মান জানানোর কথা বলে গেছে গুরুজনরা, সুতরাং সেই অভিনয়টা চালিয়ে যাচ্ছে বটে তবে সেই অজানা আশঙ্কায় প্রতিটি মুহুর্ত যে অসীম তাড়নার ভয় গ্রাস করে আছে কেতকীকে এর থেকে মুক্তির উপায় খুঁজে পায় না সে ।খুব চিৎকার করে কান্নার ইচ্ছে হচ্ছিল তার কিন্তু সেই উপায় যে নেই । মনে মনে নিজের জীবনকে এই প্রথম খুব খুব বেশী ধিক্কার জানাচ্ছে এবার কেতকী । এতদিন একবারের জন্যও মনে হয়নি তার, কোন পাপবোধ গ্রাস করতে পারছিল না কোন ভাবেই কিন্তু আজকের এই আশঙ্কার কালোমেঘ একেবারে ঢেকে দিচ্ছে কেতকীর আকাশকে ।

দেখতে দেখতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে । গ্রামের মানুষ আস্তে আস্তে যে যার বাড়ির দিকে চলে যাচ্ছে । এখানে সন্ধ্যার পরে খুব একটা ভিড় হয় না । তাই আমন্ত্রিতের সংখ্যাও প্রায় শূন্যের কোঠায় ।শহরের কথা আলাদা, এরকম একটা জাঁকজমক অনুষ্ঠান দিনের বেলায় হতোই না, রাত যত বাড়বে ততোই বাড়বে ভিড়, বাড়বে হৈ হুল্লোড় ।শেষটা হবে চটকদার হিন্দি গানের তালে তালে সকলের কোমর দোলনি দিয়ে । কিন্তু এখানে এরকম কোন পরিবেশের আভাস পাওয়া যাচ্ছে না তাই কেতকী আস্তে আস্তে মঞ্চ ছেড়ে নামার উপক্রম করছে বটে কিন্তু মনের মধ্যে একটা উশখুশ রয়েই গেল । কোথায় গেলেন মেশমশাই ! কোথায় অলকানন্দ বাবু ! যে লোকটা গতকাল এত প্রাণবন্ত ছিলেন আজকে সারাদিনে একবারও কেন দেখতে পেল না কেতকী ! এর মধ্যেও কি কোন রহস্য লুকিয়ে আছে ! কেউ তো এই বিষয়ে টু শব্দটিও করেনি ।

...............চলবে ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৩২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/০৬/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বেশ ভালো
  • অসাধারণ!
  • মুগ্ধতা রেখে গেলাম
  • ফয়জুল মহী ২১/০৬/২০২৩
    অতুলনীয় লেখা, মুগ্ধতা রেখে গেলাম
 
Quantcast