www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অণুগল্প-যন্ত্রণার ঘোরে জীবন

বুনো হরিণীর মত চঞ্চল। কৈশরের দুরন্তপনায়, যে ছিল সবার পরিচিত। পাড়ার, স্কুলের সবাই জানতো ও যে সরকার বাড়ির মেয়ে,মৌমিতা সরকার। মৌ নামেই সবাই চেনে। হাইস্কুল পেরুল। কলেজেও তার সরব চঞ্চলতা। এই চঞ্চলতায় অনেকের মন যে কেড়েছিল, তা প্রতীয়মান হয়। যখন সে তারই কলেজের সহপাঠির সাথে পালিয়ে বিয়ে করল। তাড়িত যৌবন, নাকি ভালো লাগা? আর ভাল লাগা যখন শরীর স্নানে বিষ ঢালে, আর তখনই বোধ হয়, চঞ্চলতার হয় বিসর্জন। তেমনি চুপসে যাওয়া মৌ এখন দুই সন্তানের জননী। পড়া লেখা আর এগোইনি। সংসার নামের ঘানি টানতে টানতে, চল্লিশ ছুঁই ছুঁই করছে। মাঝে মাঝে খুব একা লাগে মৌ এর। হাতে যখন কোন কাজ থাকে না, বারান্দায় বসে নিরবে কি যেন ভাবে। সন্তান দুটো বড় হচ্ছে। একজন তো ঢাকায় ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। আর অন্যজন হাইস্কুলে। ওদের বাবা প্রাইমারী স্কুলের হেড মাষ্টার। দিনের অনেক টা সময় একা একা কাটে মৌ’ এর এই উপজেলা শহরে। জীবনে কত স্বপ্ন ছিল, তার কিছুই হল না।

ইদানিং আবার নিজের উপর খুব রাগ হয়, বাবা মা কে কিছুই বলতে পারে না। কিছু বললেই বলে উঠে নিজেই তো বিয়ে করেছিস। যদি একটা মেয়ে থাকো তা হলে, বোধ হয় নিজের মত করে মানুষ করতে পারতাম। এ রকম না না প্রশ্নে নিজেকে আরও উদাস করে। এক সময় লেখা হাত ছিল বেশ, সেটাতেও আর মন বসে না। তাই তো মৌয়ের বাবা খুব স্বপ্ন দেখত ওকে নিয়ে, বাবার কবিতা শোনার ভক্ত ছিল।
মৌ একবার বাবাকে বলেছিল, বাবা তোমার একটা কবিতা শোনাবে, জান আমার খুব মন খারাপ।
বাবাঃ নারে মা আমি আর কবিতা শোনাতে পারব না।
মৌঃ কেন বাবা?
বাবাঃ আমি যে আর কবিতা লিখি না মা। সেই যে তোরা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করলি, সেদিন থেকে আর কবিতা লিখি না। কবিতা যে আর আসে না। তাই তো আর লেখা হয় না। তুই যে আমার একমাত্র মেয়েরে মা। তোর ভাইটা তো ঢাকা থাকে। এই সরকার বাড়ীতে আমি আর তোর মা, সারা বাড়িটা কেমন যেন খাঁ খাঁ করে। বুঝতে পারিস। সেই যে গেলি একবারও ভাবলি না, আমাদের কথা। সরকার বাড়ীর ইজ্জতের কথা। তাই খোদার কাছে সঁপেছি তুরে, সংসার নিয়ে ভাল থাক।

কয়েকদিন আগে এই বাবাও মারা গেল। মা এখন ঢাকায় ছেলের বাসায় থাকে। সরকার বাড়ি এখন শূণ্য। তাই তো মৌয়ের এখন আরও বেশী একা লাগে। বাবা মার অবাধ্যতার জের সারা জীবন তাকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। এই যন্ত্রণা না থেকে মুক্তি নাই। ভালোবেসে বিবাহ। সংসার বিড়ম্বনায়, সুখের চেয়ে অধিকারে বিপন্নতা মুখ্য। তাই বোধ হয় উদাস আকাশ, মৌয়ের জীবনের নির্মল স্বস্থি।

১৪২০@২০ কার্তিক, হেমন্তকাল।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০৬৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৪/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • খুবই বাস্তবতার ছোঁয়া একটি গল্প।সরল লেখনী গল্প টিকে আরও প্রানবন্ত করে তুলেছে।খুবই ভালোো লাগলো।ধন্যবাদ এবং শুভকামনা আপনার জন্য।
  • জহির রহমান ০৪/১১/২০১৩
    অসাধারণ লিখেছেন।
    আমি কখনো এমন ভুল করতে পারবো না। তাই আমি যাকে ভালোবাসি- তাকেই বিয়ে করবো। তবে তা অবশ্যই হবে সামাজিক ভাবে। পালিয়ে নয়। হয়তোবা এজন্য আমাকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। দোয়া করবেন...
    ধন্যবাদ গল্পটির জন্য। শুভকামনা।
 
Quantcast