www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রমিজ

আপনারা প্রেমিক প্রেমিকার মিষ্টি প্রেম নিয়ে হয় তো অনেক গল্প শুনে থাকবেন। তাই শিশির আর সুভার মিষ্টি প্রেমের খুঁটিনাটি বর্ণনা আমি করব না। আর সব স্থানে সব কথা চলেও না। অচল কথা বাদ দিয়ে তাই আসল কথাই বলছি।
শিশির আর সুভা সেদিন বসেছিল ফুলার রোডে গাছের ছায়ায়। শিশিরের কাছে সুভার আবদারের কোনো শেষ নেই। ডাগর ডাগর দুটি চোখ মেলে সেদিন সে শিশিরের কাছে কিছুটা অভিমান মিশিয়ে আবদার করে বসল, শিশিরকে সাঁতার শিখতে হবে।
-বলো, প্রমিজ।
-আচ্ছা, আমি বললাম তো সাঁতার শিখব।
-না, তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তুমি কিছুই পার না।
-আরে, ভালো পাগল তো। বললাম তো সাঁতার শিখে নেব।
-তাহলে প্রমিজ করো, এবার বাড়ি গিয়েই সাঁতার শিখবে।
-ঠিক আছে। যাও কথা দিলাম।
শিশিরের কথা শুনে সুভা অন্যদিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাসে। বলে- মনে থাকে যেন।
এরপর শিশির আর সুভার প্রেমে কত বেলা পার হয়ে গেছে তা আর আমি আপনাদের বলব না। শুধু জেনে রাখুন তারা দুজন দুজনকে এতটাই ভালোবেসেছিল যে, তা বর্ণনার ভাষা বোধকরি স্রষ্টা ছাড়া অন্য কারও জানা নেই। তারপরও বিধাতার কী ইচ্ছা ছিল জানি না, তাদের ভালোবাসা একদিন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে গেল। কী কারণে এমন হলো সেটাও নাহয় আপনাদের অগোচরই রইল। আসুন আমরা এরপর কী হলো দেখি।
সুভার বিয়ে হয়েছে বছর পাঁচেক হবে। তার ঘর আলো করে রয়েছে দুই বছরের ফুটফুটে একটা মেয়ে। স্বামী নিতান্তই সজ্জন ব্যক্তি, সরকারি চাকুরে। বেশ সুখেই আছে সুভা। শিশিরকে আর তার ভুলেও মনে পড়ে না। আর শিশির? সেও ভালোই আছে। সুভার মতো বিয়ে করে নি, তবে অচিরেই হয়তো করে ফেলবে। লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ততার কারণে বিয়ের সময় করে উঠতে পারছে না। দেশের উঠতি সাহিত্যিকদের মধ্যে তার আনাগোনা নিয়ে পাঠকসমাজ ও সমালোচকদের কিছু আলোচনা বেশ জোরেশোরেই শোনা যায়।
পাঠক আসুন আমরা গল্পের শেষটুকু জেনে নিই। বলে রাখি শিশির আর সুভার মাঝে এই পাঁচ বছরে কোনো যোগাযোগ নেই।
শিশির ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাবে; মা চিঠি দিয়েছেন। তিনি নাকি শিশিরের জন্য মেয়ে ঠিক করে রেখেছেন। এবার তার কোনো আপত্তিই শুনবেন না। বিয়ে শিশিরকে করতেই হবে। মায়ের চিঠি পড়ে শিশিরের সুভার কথা একবারও মনে হয়েছিল কিনা তা আমি বলতে পারি না। তবে বাড়ি যাওয়ার পথে যখন পদ্মার শান্ত ঘোলা জলে প্রচণ্ড আলোড়ন তুলে ফেরিটা ডুবে যাচ্ছিল, তখন সাঁতার না জানা শিশিরের সুভার কথা মনে পড়বারই কথা। পদ্মার জলে হাবুডুবু খেতে খেতে তার কানে হয় তো বাজছিল সুভার অনুরাগমিশ্রিত আবদার- “প্রমিজ করো তুমি সাঁতার শিখবে।”
শিশিরের পদ্মার বুকে সলিল সমাধি হয়েছে- এ খবর সুভা পরের দিনই পেয়েছিল। তবে তার সেই প্রমিজের কথা মনে পড়েছিল কিনা তা আমার জানা নেই। পাঠক নিজ গুণে আমাকে ক্ষমা করবেন।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২১১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ৩০/০৪/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • লেখার ভঙ্গি সুন্দর!!
 
Quantcast