www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বিপ্লব বিকলাঙ্গ

সম্পর্ক
_____________________//বিপ্লব পাল//______
জীবনের ওজন যত ভারী হয়, হয়তো সম্পর্কগুলো তত হালকা হতে থাকে । পুর্ণেন্দু'র ক্ষেত্রে তাই-ই হয়েছে । পুর্ণেন্দু'র স্ত্রী তার একমাত্র কন্যা সন্তানটিকে নিয়ে বাপের বাড়ি চলে গিয়েছে । হয়তো তারা নিঃস্ব হতে হতে অমোঘ সেই চরম নিঃস্বতাকে আলিঙ্গন করতে চায়নি ; হয়তো বা অন্য কোনো অবলম্বন থেকে জীবনের বুকভরা আশ্বাস খুঁজে পেয়েছিল । পক্ষাঘাতে পুর্ণেন্দু'র সমস্ত শরীর চেতনাহীন, এমনকি বাকশক্তিও হারিয়েছে। শুধু মস্তিষ্কের দু'একটা প্রাক্ষোভিক অনুভূতিই জীবিত । তাই, বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন দেখতে গেলে চোখের কোণে জল জমে গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে । চিকিৎসার খরচ যোগাতে সমস্তই শেষ । শেষ সম্বল বসত বাড়িটাও মৃত্যু পর্যন্ত মাথা গোঁজার শর্তে বিক্রি হয়ে গেছে । জীবনে শুধুই শূন্যতা । ক্যালেন্ডারের তারিখ আর ঘড়ির সময় দু'টোর দিকে চেয়েই দিন যায়, রাত কাটে । নার্স রাণু'র পরিচর্যা কিছুটা জীবনের অনুভূতির অনুভবকে অস্তিত্বশীল করে তোলে । পুর্ণেন্দু'র সমস্ত দায়ভার নার্স রাণু'র ওপরেই । দীর্ঘ দশ বছর ধরে রাণু পুর্ণেন্দু'র সেবায় নিয়োজিত ।
মৃত্যুর সাথে একটা অজানা সম্পর্কের আগলে যেন পুর্ণেন্দু আটকে পড়ে আছে দশ-দশটা বছর ধরে । অনাকাঙ্খিত মুক্তির কাঙ্খিত আকাঙ্খার একটা স্পষ্ট ছাপ রাণু পুর্ণেন্দু'র চোখেমুখে দেখতে পায় । পুর্ণেন্দু'র কষ্ট তাকে যতটুকু কষ্ট দেয়, তার চেয়ে রাণু'কে কষ্ট দেয় অধিক । কষ্টগুলো একসময় বিদ্রোহ করে রাণুকেই খতম করতে আসে । অগত্যা রাণু সিদ্ধান্ত নেয় পুর্ণেন্দু'কে মুক্তি দিতেই হবে । শুরু হয় মরফিনের হাই ডোজ । তিনদিনের মাথায় হার্ট পাম্প বন্ধ হয়ে ঘুমের মধ্যেই প্রাণটা নিশ্চুপে বেরিয়ে যায় । পরদিন পুর্ণেন্দুর প্রাণহীন দেহটা বেওয়ারিশ পড়ে থাকতে দেখে মনে মনে রাণুর সে কী আনন্দ ! পুর্ণেন্দু আবার মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে নতুন করে জীবন'কে আলিঙ্গন করল । মৃত্যুর আগল খুলে পুর্ণেন্দু হয়তো জীবনের বন্ধনে আবদ্ধ হবে এবারে চিরতরে ।
_______________________________________//
অণুগল্প (নং-৪) © বিপ্লব ।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪০০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/১০/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast