www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমি মা

মা:- হ্যালো  হ্যালো  কে?
সমুদ্র :- মা মা  আমি তোমার বাবু মানে সমুদ্র  ।
মা:- (কান্না কান্না) বাবু কত দিন পর ফোন করলি বলত ? আমার বুঝি মন কেমন করেনা। সবসময় মনে হ্য় এই বুঝি তোর ফোন এল । ফোন আর আসেনা ।
সমুদ্র :- হ্যা মা জানি জানি তোমাকে ছাড়া আমার মন ভালো নেই । কিছু ভালো লাগে না ।সেই জন্য একটা বিশেষ ব্যবস্থা করেছি । শুধু তোমার কথা ভেবে ।
মা:- (আনন্দ নিয়ে) বিশেষ ব্যবস্থা? সেটা আবার কি ? বল বল আমার যে আর তর সয়ছেনা । আমার বুকটা কেমন উথাল পাথাল করছে।তোরা সব ভালো আছিস ?বলনা...
সমুদ্র :- বলব বলব সব ব্যবস্থা প্রায় করে ফেলেছি।
মা:- ও বুঝেছি তোরা সবাই ফিরে আসছিস। আমেরিকা আর ভালো লাগছেনা তাইত। হ্যা বাবা ফিরে আয়। তোদের ঘর বাড়ি তোরা বুঝেনে । আমি একটু নিশ্চিন্ত হ্য় । হ্যাঁরে টুকুন আমার কথা বলে? বুকুনটাকে তো চোখেই দেখিনি । আমার না আনন্দে কাঁদতে ইচ্ছা করছে  ।
সমুদ্র :- না মা আমরা কেও যাবনা ।
মা:- (অবাক) তোরা আসবিনা... দেখত আমি কি বোকা .. ভাবলাম তোরা আসবি ।
সমুদ্র :- আমি যাব....... তোমায় আমেরিকায় নিয়ে আসতে । ভিসা পাসপোর্ট সব প্রায় তৈরী । আর মাত্র কটা দিন অপেক্ষা কর । আর সব সময় ঘ্যান ঘ্যান করে কাঁদতে হবেনা ।তোমার অপেক্ষার দিন শেষ ।
মা:- কি শোনালি সমু..... আমি .......যাব....... আমেরিকা.....ভাবতেই পারছিনা ।
সমুদ্র :- হ্যাঁ মা তুমি আসবে আমেরিকা প্লেনে করে ।
মা:- প্লেনে করে.......হ্যাঁরে বাবু আমি পারব? এই দেশ ছেড়ে, ভিটে মাটি ছেড়ে চলে যেতে আমি পারব? না না আমার কষ্ট হবে । আমি পারবনা । যদিও এখানে আমার কেও নেই । ভালো লাগছে ভাবতে তোদের সাথে বাকি জীবন কাটাব? না যাবনা ....
সমুদ্র :- কি আবোল তাবোল বকছ । আমরা তোমার আপনজন তুমি আমাদের কাছে থাকবে ।বাকি জীবন খুশিতে কাটাবে । এখানকার জল পেটে পড়লে তুমিও ফটাফট ইংরাজী বলবে ।
মা:- তুই যে কি বলিস সমু...। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছেনা  । তোর বাবা মারা যাবার পর ভীষণ একলা হয়ে গেছি...। এই বাড়ি এই জমি জায়গা কি হবে????
সমুদ্র :- কি আবার হবে? জমি বাড়ি সব বিক্রি করতে হবে  । সময় খুব কম... আমি এখানে গাড়ি বাড়ি সব করে নিয়েছি  । শুধু তোমার জন্য মন খারাপ করে  । তোমাকে পেলে আমি সম্পূর্ণ হব... তুমি কিন্তু না কর না  । তাড়াতারি সব করতে হবে...ফোন রাখছি ।
( জমি বাড়ি সব নিমেষে বিক্রি হ্য়, বাড়িটা কেনে দীর্ঘ দিনের ভাড়াটে অমূল্য রতন, মা ছেলে পোটলা পুঁটলি নিয়ে এখন  এয়ারপোর্টে)
সমুদ্র :- দেখেছ মা এই হচ্ছে দমদম এয়ারপোর্ট । আর ঐ দেখো বিশাল বিশাল এরোপ্লেন । তুমি তো বল উড়োজাহাজ । ওর একটাতে করে আমরা উড়ে যাব হু............শ করে ।
মা:- সমু আমরা আর দেশে ফিরবনা কোনদিন...? কত স্মৃত্মি কত হাসি কত কান্না সব হারিয়ে যাবে?........(কেঁদে ফেলে)
সমুদ্র :- এই দেখো আবার কান্না শুরু করলে! তোমার কান্না দেখে পাঁচটা লোক কি ভাববে বলত? যে মনে করবে আমি তোমাকে জোর করে বিদেশ নিয়ে যাচ্ছি......
মা:- আমি আর কাঁদব না । সমু তোর্ বাবা বলত” ছেলের নাম রেখেছি সমুদ্র । ওর হৃদয়টাও হবে সমুদ্রের মত । এখন বুঝি নাম রাখাটা সার্থক হয়েছে  (কেঁদে ফেলে ) ।
সমুদ্র :-কি হচ্ছে মা আবার......আঁচল দিয়ে চোখটা মোছ....সিকিউরিটি চেক হবে, তাড়াতাড়ি করতে হবে নইলে প্লেনটা মিস করব ।
মা:- যাই বাবা যাই, ছেলে আমার মস্ত ইন্জিনিয়ার, কে বলবে  এই ছেলেকে খেয়ে না খেয়ে মানুষ করেছি, ভাবলেই বুকটা আনন্দে জুড়িয়ে যা............।
সমুদ্র : (বিরক্তি) উফ সিকিউরিটি চেকীং না হাতির মাথা । এটা দেখাও ওটা দেখাও, আচ্ছা মা এই খালি চেয়ারটাতে একটু বসে থাকো  মাল পত্তর নিয়ে । দেখো যেন চুরি টুরী না হ্য় । আমি টিকিট কনফার্ম করে এখুনি আসছি...। কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলবে আমার ছেলে এখুনি আসবে । ঠিক আছ ... মনে থাকবে ......। মা আসি ।
মা:- না বা  আসি বলতে নেই, তুই কিন্তু তাড়াতাড়ি আসিস । আমি তো কিছুই জানিনা চিনি না , কি বলতে  কি বলব কে জানে ।
সমুদ্র :  হ্যাঁ মা যাই । আমি এই যাব আর এই আসব , একটু দাড়াও তোমার পা'টা দেখি?
মা:- আবার পা কেন!  আমার পা ধরলি কেন?
সমুদ্র :  না মা এমনি। তোমার পায়ের ছোয়া নিয়ে যাচ্ছি। তাহলে তাড়াতাড়ি টিকিট কনফর্ম হবে । তাহলে যাই মা । কিছু চিন্তা করনা ।
মা:- তুই আমার পা ধরলি , আয় তোকে একটু চুমু খাই। দেরী করিস না বাবা তাড়াতাড়ি আসিস.........( ছেলে ছুটে যায় ,একটু পারে ভিড়ে হারিয়ে যায় )
(টিক টিক করে ঘড়ি চলে পাঁচ মিনিট দশ মিনিট এক ঘন্টা দুই ঘন্টা মা বসে থাকে। এই বুঝি তার ছেলে আসে। ছেলে এসে বলবে.... মা ...চল দেরী হয়ে গেছে অনেক । মা চেয়ে থাকে ছেলের চলে যাওয়ার পথের দিকে। চোখ কখন ঝাপসা হ্য়, মা আঁচলে চোখ মোছে । এক প্রহরী এগিয়ে আসে) জিজ্ঞাসা করে-
প্রহরী : মা অনেকক্ষন থেকে লক্ষ্য করছি, আপনি কি কারোর জন্য অপেক্ষা করছেন?
মা : আমার ছেলে আমার ছেলে .........আচ্ছা বাবা আমেরিকার প্লেন কটায় ছাড়বে?
প্রহরী : সেতো কখন ছেড়ে গেছে। মা  আপনার যাবার কথা ছিল?
মা : (ইতস্তত) না না মানে  হা মান......ঐ মানে (হাসি কান্না মেশানো) আমি ছেলেকে সি অফ করতে এসেছিলাম বাব... এখন কি করব (স্বগতোক্তি) কি করি । একটু সাহায্য করবে বাবা একটা ট্যাক্সি ডেকে দেবে?
প্রহরী :ও নিশ্চয় নিশ্চয় ? কোথায় যাবেন বলুন ?
মা : (ভাবলেশ হীন)কোথায় যাব ?কো  থা ই...... যাব। যাব হা হা হা  ৮৮ প্রভাতী নগর /কলকাতা =৪৫
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭০৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২০/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • দুঃখজনক.................
  • ২২/১১/২০১৪
    হয়তো বা টাকার লোভে...........
  • চন্দ্রশেখর ২২/১১/২০১৪
    বাস্তবের সমস্যা সুন্দরভাবে লিখেছেন বন্ধু
    • রক্তিম ২৪/১১/২০১৪
      রক্তের সম্পর্ক অর্থের কারনে অস্তিত্ব হারাচ্ছে । সমাজ কিভাবে পাল্টে যাচ্ছে । ভালো থাকবেন ।
  • সুজন ২১/১১/২০১৪
    অবিশ্বাস্য শ্রুতিমধুর আলাপন
    • রক্তিম ২১/১১/২০১৪
      অবিশ্বাস্য হলে ও বিশ্বাস করুন এটা ঘটে ছিল । শুভ সন্ধ্যা ।
  • শম্পা ২১/১১/২০১৪
    ঘটনাটা দুঃখজনক।
    • রক্তিম ২১/১১/২০১৪
      অহরহ এমনটা ঘটছে। কিছু করার থাকেনা ।কিছু বলার থাকেনা । নিরব দর্শক হয়ে যায় । যাক আপনি ভালো থাকুন ।
  • একনিষ্ঠ অনুগত ২১/১১/২০১৪
    বিশ্বাস হতে চায় না এমন মাতৃভক্ত ছেলে এমনটা করতে পারে।। ঘটনা কি আসলেই সত্যি?
    • রক্তিম ২১/১১/২০১৪
      এটা সতিই ঘটেছে । তবু মা বাবা আমরা সন্তান কে বিশ্বাস করে যাব । সুপ্রভাত । ভালো থাকবেন ।
  • লেখক লেখা ভালো লেগেছে । কিন্তু গদ্য রুপে না লিখে কাব্যের রুপে লিখে ফেলেন ।
    • রক্তিম ২১/১১/২০১৪
      আপনার কথা ভেবে দেখব ।আবেগ প্রকাশের ভঙ্গি অনেকরকম যেমন একটা গান একটা নাটক একটা কবিতা কি ছড়া কি প্রবন্ধ........ইত্যাদি ..........। কবিবর বলেছেন আমি চেষ্টা করব কিন্তু এই রচনা নয়... অন্য কিছু সুপ্রভাত ।
 
Quantcast