www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

হামিদ আর দীপ্তি

ছনের ঘরের বৃষ্টিস্নাত বারান্দায় দাঁড়িয়ে উঠোনে পড়া বৃষ্টিবিন্দুগুলো গুণছে আট বছর বয়সী হামিদ। নিস্তব্ধ চারদিক। কেবল বৃষ্টিই তার আপন ছন্দে সুর তুলছে, সাথে উঠোনের আশপাশের গাছগুলোর সবুজপত্রগুলোও দুলছে। দুলছে না বাতাসযুক্ত বৃষ্টি দোলাচ্ছে। মাঝেমাঝে উল্টো বাতাস বৃষ্টিজল দ্বারা ভিজিয়ে দিচ্ছে হামিদকে। নির্বাক হামিদও প্রকৃতির বিরুদ্ধে যাচ্ছে না। গায়ে তার বাদামি রঙের শার্ট, পরনে ঢিলেঢালা সাদা হাফপ্যান্ট। শার্টের বয়স অন্তত দু'বছরের কম হবে না। তবুও তার গায়ে ভালোই মানাচ্ছে। বোঝাই যাচ্ছে রীতিমত ধৌত করা হয়। বৃষ্টির ফোঁটা শার্টের রঙ অনেকখানিই বদলে দিয়েছে। হামিদের তাতে খেয়াল নেই বললেই চলে। সে পলকহীন দৃষ্টিতে উঠোনের পরের দিগন্তরেখায় দৃষ্টি রেখে চলেছে। ভাবনার দুয়ার খুলে সে ভাবছে বর্ষা আর কত দিন দীর্ঘ হবে, কোনদিন সে আবার দেড় মাইল হেঁটে স্কুলে যাবে, তার সমবয়সী জামিল-আমিনদের সাথে পুনরায় খেলায় মেতে উঠতে তাকে আর কত দিন অপেক্ষা করতে হবে, কবে সে তার প্লাষ্টিকের নতুন গাড়িটাতে সুতো বেঁধে এখানে ওখানে চালিয়ে বেড়াবে, কবে তার দেড় বছরের বোন দীপ্তিকে কাঁধে নিয়ে উঠোনের একোণা হতে ওকোণায় দৌঁড়ে বেড়াবে। এসব ভাবতে ভাবতেই বিষণ্ণ হয়ে পড়ে হামিদ। দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে সে দৃষ্টি ফেরায় উঠোনের উত্তর কোণায় তার আপন হাতে লাগানো ফুল আর সবজির গাছগুলোতে। দেখে বৃষ্টিতে পুঁইশাকের গাছগুলোতে বেশ ভালোই কান্ড গজিয়েছে। একটা গাছ ইতিমধ্যে মাচার হালও ধরেছে। দেখে পুলকিত হৃদয়ে সে হাসে নিঃশব্দে। মুহূর্তকাল আগেই যে হামিদের মন ছিল বিষণ্ণ সে হামিদ এখন অধিকতর খুশি। তারপর হঠাৎ কি যেন ভেবে ঘরের ভেতর ঢোকে হামিদ। ঘুমন্ত দীপ্তিকে হাত টেনে জাগিয়ে তোলে সে। তারপর তাকে কোলে নিয়ে বেড়িয়ে আসে বারান্দায়। বৃষ্টিতে দুজনই পরম খুশি। দীপ্তি বারবার হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরতে চাইছে কিন্তু হামিদ বারবার তার হাত টেনে নিচ্ছে। এতে দীপ্তি কিছুটা ক্রুদ্ধ হয়ে হামিদের মুখে আঘাত করে বলা যায় থাপ্পড় দেয়। হামিদ ছোট বোনের কান্ডে আবারো নিঃশব্দে হাসে। কি যেন বুঝে দীপ্তিও হাসে। হামিদ নিজ হাতে বৃষ্টির পানি নিয়ে দীপ্তির মুখে ছোঁড়ে। এতে দীপ্তির হাসি আরো বেড়ে যায়। বৃষ্টি সম্পূর্ণ না থামলেও গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টিতে দীপ্তিকে কোলে নিয়ে পা টিপেটিপে সতর্কভাবে স্যাঁতসেঁতে উঠোনে হাঁটতে শুরু করে হামিদ। উঠোনের দক্ষিণ পাশ দিয়ে হাঁটার সময় বাতাসে বড় গাছগুলো থেকে পানি ছিটকে পড়ে দু'ভাইবোনের গায়ে। হামিদ কোলে থাকা দীপ্তিকে নিয়ে দৌঁড় দেয় ঘরের দিকে এতে দীপ্তি হাসে উচ্চশব্দে। হামিদও হাসে।
তবে দীপ্তির হাসির শব্দ থাকলেও হামিদ হাসে নিঃশব্দে। কারণ হামিদ বাক্ প্রতিবন্ধী। বাক্ প্রতিবন্ধী হলেও সে কথা বলে আর সে কথাগুলো দীপ্তি স্বয়ং বুঝতে পারে। তাইতো জন্মের পর থেকে এ পর্যন্ত দীপ্তি হামিদের কোলে কোনদিন কাঁদেনি।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৮৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/১২/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast