www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তথ্যসূত্র (References) লেখার সহজ পাঠ

আমরা সাধারণত কোন গবেষণা বা প্রতিবেদন তৈরী করার পর এতে ব্যবহৃত তথ্যের উৎস দিতে কার্পণ্য করি বা সঠিক ভাবে দিতে অনেকসময়ই অপারগ থাকি কিভাবে তথ্যসূত্র দিতে হয় তা না জানা থাকার কারণে । তথ্যসূত্র সঠিকভাবে প্রদাণ করার কারণেই বরং উল্লেখিত লেখাটি, গবেষণা বা প্রতিবেদনটি আরো বেশি নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠে । নিচে তথ্যসূত্র লিখার কিছু সহজ নিয়ম তুলে ধরা হলো । আশাকরি পাঠকদের কাজে লাগতে পারে তাদের যে কোন তথ্যসমৃদ্ধ লেখাকে নির্ভরযোগ্য করার ক্ষেত্রে।

তথ্যসূত্র বা তথ্যপঞ্জী হল প্রকাশিত কাজের সংগৃহীত উৎসের তালিকা । কিন্তু থিসিস বা প্রবন্ধে প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত উভয় প্রকার কাজকেই তথ্যপঞ্জীতে সন্নিবেশিত করা হয়। তথ্যপঞ্জী বিভিন্ন প্রকার হতে পারেঃ

১। থিসিসের মূল গ্রন্থাংশে, প্রতিবেদনে বা পাদটীকায় যেসব উৎসের উল্লেখ রয়েছে তাদের তালিকা।

২। থিসিসের সাথে সম্পর্কযুক্ত যেসব পুস্তক, পুস্তিকা, সাময়িকী, প্রতিবেদন, প্রবন্ধ ইত্যাদি পাঠ ও পর্যালোচনা করা হয়েছে, সেসব পুরোপুরি প্রাসঙ্গিক না হলেও তাদের তালিকা।

৩। আরেক ধরনের তথ্যপঞ্জী আছে, এদের বলা হয় টীকাযুক্ত তথ্যপঞ্জী। তথ্যের উৎসের বিষয় ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত টীকা সহ তাদের তালিকা থাকে।

তথ্যপঞ্জী লেখার নিয়ম

ক। পাদটীকা না দিয়ে প্রতিবেদনের শরীরেই উৎস নির্দেশ করা যেতে পারে। যেমন: [দ্র: হাবিব (২০০৬, ৭১)] এভাবে তৃতীয় বন্ধনীর মধ্যে আটকাতে হবে । এতে বোঝায় মোঃ আহসান হাবিব ২০০৬-এ প্রকাশিত বইয়ের ৭১ পৃষ্ঠায় মিলবে তথ্য বা বিশ্লেষণটি; এবং ওই বই সম্পর্কে সব তথ্য পাওয়া যাবে রচনাপঞ্জীতে।

খ। তথ্যপঞ্জীতে গ্রন্থনাম উল্লেখ করা যেতে পারে বাঁকা ( Italic) যেমনঃ Lewin, K. (1946). Field Theory in Social Science, Harper & Row, New York, NY

গ। প্রবন্ধ, গল্প, কবিতার নাম ছাপা উল্লেখ করা একক উদ্বৃতি চিহ্নের ভেতরে। যেমনঃ Lewin, K.(1946), 'Action Research and minority problems', Journal of Social Issues, Vol. 2 No. 4

ঘ। গ্রন্থকারের নাম, প্রথমে শেষ নাম বা পারিবারিক নাম তারপর কমা দিয়ে প্রথম বা প্রদত্ত নাম তারপর কমা । যেমনঃ Bessey, M., বাঙালী গ্রন্থকারের বেলায় পুরোনাম লিখে কমা । যেমনঃ ডা: গোলাম মোর্শেদ

ঙ। কাজের শিরোনাম লিখে তার নিচে দাগ দেয়া , তারপর কমা । যেমনঃ উচ্চশিক্ষিত দম্পতিদের মধ্যে সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রাধান্য যাচাই,

চ। প্রকাশের স্থান এরপর কোলন। যেমনঃ ঢাকাঃ

ছ। প্রকাশনা সংস্থার নাম, এরপর কমা । যেমনঃ জাতীয় গ্রন্থ প্রকাশণ,

জ। প্রকাশের সন এরপর দাঁড়ি বা কমা, প্রয়োজনে মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা, তারপর দাঁড়ি। যেমনঃ ২০০৯, ৬৪।


রেফারেন্সিং এর বিষয় এলে শুধু রেফারেন্স সেকশানে কিভাবে লিখতে হবে তা উল্লেখ না করে "ইন টেক্সট" সাইটেশান সম্পর্কেও লেখা উচিত।

আবার রেফারেন্সে কতজন অথরের নাম আসবে সেই বিষয়টাও গুরুত্বপূর্ণ।

ইনটেক্সট সাইটেশনঃ

ধরা যাক, ম্যানুস্ক্রিপ্টের ভেতরে অ্যজমা সম্পর্কে একটা তথ্য দেওয়া হলো।
Asthma affects over 5-10% of population in industrialized countries.

এই ইনফরমেশনটার তথ্যসূত্র টেক্সটের ভেতর বিভিন্নভাবে উল্লেখ করা যেতে পারে । কিভাবে উল্লেখ করা হবে তা নির্ভর করবে জার্নাল কোন ফরমেটে চাইছে ।

সাধারণত জার্নালগুলো হয় এলফাবেটিকাল অর্ডারে রেফারেন্সিং করে নয়ত নাম্বারে (সহজ বাংলায়) ।

উপরে যে তথ্যটা দেয়া হয়েছে সেটির পূর্ণ তথ্যসূত্র হচ্ছে-

Chang RK, Guo X, Burnside B, Couch R. Fast-dissolving tablets. Pharm Technol 2000;24:52-8.

অর্থাৎ চারজন অথর, ফাস্ট ডিসলভিং ট্যাবলেট শিরোণামে একটি আর্টিকেল পাবলিশ করেছেন ২০০০ সালে ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজি নামক জার্নালের ভলিউম ২৪এ । আর্টিকেলটি পাওয়া যাবে ৫২ নাম্বার পৃষ্ঠায় ।

এখন যদি টেক্সটের ভিতর নাম্বারিং সিস্টেমে সাইট করতে চাওয়া হয় তবে নিচের মত হবে-

Asthma affects over 5-10% of population in industrialized countries (1).

এখন রেফারেন্স সেকশানে কেউ ১ খুঁজলেই তথ্যসূত্র পেয়ে যাবে । উল্লেখ্য জার্নালভেদে এই "(1)" লেখাটাও ভিন্ন হতে পারে, হতে পারে [1] । 1 আবার হয়ত অনেক জার্নালে সুপারস্ক্রিপ্ট করে দিতে হতে পারে ।

আবার যদি এমন হয় আপনি একই তথ্য দু'টি বা তার অধিক সূত্র থেকে নিয়েছেন তবে লিখতে হবে এভাবে (1,2)। [1,2] হতে পারে, (1),(2) বা [1],[2] বা এগুলোর সুপারস্ক্রিপ্ট হতে পারে ।

এলফাবেটিকাল অর্ডারে চাইলে প্রথম অথরের নামের শেষ অংশ লিখে et al., সাল লিখতে হবে। অর্থাৎ রেফারেন্সটা হবে এমন-

Asthma affects over 5-10% of population in industrialized countries (Chang et al., 2000).

এর মানে হচ্ছে জনাব চ্যাং এবং তার সহকর্মিরা গবেষণা প্রবন্ধটি প্রকাশ করেছেন । এই রেফারেন্সে লক্ষ করার মত কিছু বিষয় আছে । ধরা যাক উপরে যে আর্টিকেলের কথা বললাম ওটায় অথর সংখ্যা চার। যদি ৪ না হয়ে ১ জন অথর হতেন অর্থাৎ ফুল রেফারেন্স যদি এমন হত-

Chang RK. Fast-dissolving tablets. Pharm Technol 2000;24:52-8.

তাহলে ইনটেক্সট এলফাবেটিকাল সাইটেশন হত (Chang, 2000)

যদি দুইজন অথর থাকতেন, যেমন ধরা যাক-

Chang RK, Guo X. Fast-dissolving tablets. Pharm Technol 2000;24:52-8.

তাহলে হত (Chang and Guo, 2000)।

যখনই অথর দুইএর বেশি তখনই (et al., ইয়ার)


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো একাডেমিক জার্নাল পাবলিকেশনের ক্ষেত্রে প্রতিটি জার্নাল কিভাবে রেফারেন্সিং করতে হবে তা বিস্তারিত জানিয়ে দেয় এবং ঐ নির্দিষ্ট ফরমেটই ব্যবহার করতে হবে।

এবার আসা যাক পারসোনাল কমিউনিকেশনকে কিভাবে রেফার করা যায়।

পারসোনাল কমিউনিকেশনঃ

পারসোনাল কমিউনিকেশন বলতে বোঝাবে ইমেইল, চিঠি ইত্যাদির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহকে । আবার এমন হতে পারে কোন একটা বিষয়ে ঐ বিষয়ের কোন এক্সপার্টের ইন্টারভিউ নেওয়া হলো । ওটাও পারসোনাল কমিউনিকেশন । সাধারণত এ ধরণের রেফারেন্স হাইলি অথেনটিকেটেড না হলে গ্রহণযোগ্য হয়না ।

যতোদূর জানা যায় এসব ক্ষেত্রে রেফারেন্স সেকশানে আলাদা করে রেফারেন্স লিখতে হয়না । শুধু টেক্সটের অর্থাৎ ম্যানুস্ক্রিপ্টের ভেতর সাইট করলেই হয়।

যেমন ধরা যাক Mohamaad Abu Ali নামক একজনার মেইল থেকে কোন তথ্য দিতে চাওয়া হচ্ছে । এক্ষেত্রে মুল টেক্সটে উল্লেখ করতে হবে (Ali MA, personal communication, October 9, 2012)।

আর যদি কোন জার্নাল বলে দেয় পারসোনাল কমিউনিকেশন রেফারেন্স সেকশানে উল্লেখ করতে হবে তবে ইন টেক্সট হবে (Ali, 2012)।


রেফারেন্সে গিয়ে পারসোনাল কমিউনিকেশন ভায়া ইমেইল/লেটার/ইন্টারভিউ ডেটেড কত তা উল্লেখ করতে হবে ।


কৃতজ্ঞতা :রিয়াজ উদ্দিন

-----------
বইপত্র, গবেষণা
বিষয়শ্রেণী: তথ্যপ্রযুক্তি
ব্লগটি ১৪২৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/১০/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • আবির ইমন ২৯/১০/২০১৩
    সুন্দর এবং সহজ পদ্ধতির পাশাপাশি রেফারেন্সিং নিয়ে অনেক তথ্যের অবতারনা করেছেন...ভাল লাগল...সাথে একটু যোগ করে দিই।আরও সহজ ভাবে রেফারেন্সিং করতে চাইলে কিছু সফটয়ার আছে যেমন এন্ডনোট,যেটা আমি ব্যাবহার করে থাকি,ইজি টু ইঊজ়,থমসন রয়টারের নিজস্ব, ব্যবহার করে দেখতে পারেন
    ডাউনলোডের লিঙ্কঃ http://endnote.com/en/trial
    • আরজু নাসরিন পনি ২৯/১০/২০১৩
      আবির অথবা ইমন...
      আপনি অন্তত একটা লিখা প্রকাশ করুন যেন আপনার ব্লগে গিয়ে কথা বলতে পারি ।

      আমার কাছে আসলে তথ্যসূত্র নিয়ে আরো কিছু লেখা ছিল...আমার খুব পছন্দের একজন মানুষ তথ্য দিয়ে আমায় সহযোগিতা করেছিলেন...আমি ওতে পুরোপুরি অভ্যস্থ হয়ে উঠতে পারি নি বলেই ওইটুকু দিইনি ।

      তবে সামনের কোন এক সময় দেবার পরিকল্পনা আছে ।
      আর আপনার রেফারেন্সটাও দেখবো ।
      খুব ভালো লাগলো আপনাকে দেখে...
      আপনার প্রথম উপস্থিতি আমাকে রিতিমতো অবাক করেছিল, সত্যিই খুব উপভোগ করেছি ।

      অনেক ভালো থাকুন আবির অথবা ইমন ।।
      • আবির ইমন ৩০/১০/২০১৩
        http://www.ncbi.nlm.nih.gov/pubmed?itool=pubmed_Abstract&DbFrom=pubmed&Cmd=Link&LinkName=pubmed_pubmed&IdsFromResult=21346055&retmode=ref
        • আরজু নাসরিন পনি ৩১/১০/২০১৩
          এখানে রাইট মাউজ কাজ করবে না...আমি সময় করে টাইপ করে ওই লিংকে যাব, প্রিয় কবি রাজ আবির ইমন ।।
        • আবির ইমন ৩০/১০/২০১৩
          এই লিঙ্ক টা তে আমাদের গ্রুপ এর কিছু scientific paper listed.referencing was done by using end note.if i can get u online i can help u to use endnote. nyway, i m very much slow in bengali key board,till i m practicing ,to write something in blog inspirited by you :)
          • আরজু নাসরিন পনি ৩১/১০/২০১৩
            লিংকটাতো এখানে কাজ করবে না ...এটাকে দেখে দেখে কম্পোজ করে সাইটে /গ্রুপে যেতে হবে । আচ্ছা সময় করে আপনার কাছে ক্লাস করে নিব । সেজন্যে আগে ভাগে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রাখি ।
  • রাখাল ২৭/১০/২০১৩
    উপকারী পোষ্ট, প্রিয়তে রাখলাম ।
  • রাখাল ২৭/১০/২০১৩
    চমৎকার তথ্য শেয়ারের জন‌্য ধন্যবাদ ।প্রিয়তে রাখলাম।
  • ওয়াছিম ১৯/১০/২০১৩
    ধন্যবাদ লেখক। আপনার পোষ্টটি আমার উপকারে আসলো।
  • আহমাদ সাজিদ ১৮/১০/২০১৩
    উপকৃত হলাম
 
Quantcast