www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গার্জিয়ানদের সেকাল ও একাল

ক্লাশ ওয়ান থেকে ক্লাশ ফাইভ পর্যন্ত একই গৃহ শিক্ষকের কাছে পড়াশুনা করতে হয়েছে। আমার গার্জিয়ানদের মতে এর চেয়ে ভালো শিক্ষক হয় না । কারন উনি ছাত্র ছাত্রীদের তেমন পাত্তা দেননা , তাদের কোনো অন্যায় আব্দার তিনি রাখেন না, তারা যখন টিভির কোনো মজার প্রোগ্রাম দেখবে বলে ভাবে ঠিক সেই সময়ই তিনি পড়াতে বসান , আর পড়া না পারলে বা মিথ্যা কথা বললে হাত ও বেত দুটোই পিঠের উপর সজোড়ে চালান। আমাদের সময় টিভির এতগুলো চ্যানেল ছিলনা বিটিভি ছিল একমাত্র ভরসা ।শুক্রবার বিকেল তিনটায় টিভি খুলতো অন্যদিন বিকাল পাচটা। রাত নয়টায় সব ভালো ভালো প্রোগ্রামগুলো শুরু হতো আর আমার স্যারের পড়ানোর সিডিউল ছিল রাত নয়টা আমি তখন ক্লাশ ফোরে পড়ি।পড়ায় একটুও মন বসতো না কেবল ভয়ে বইয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।ফলে যা হবার তাই হলো রেজাল্ট ভীষণ খারাপ হলো। প্রতিদিন স্যার আসার আগে দোয়া পড়তাম স্যার যেন না আসে। লেখাপড়াটাই আমার কাছে আতংকের হয়ে উঠলো।আমাদের সময় যে শিক্ষক যত কড়া শাসন এ রাখতে পাড়তো আর কঠিন মারধোর করতে পাড়তো তারাই ভালো শিক্ষক হিসেবে নাম করতো। আমাদের গার্জিয়ানরাও এতে সন্তুষ্ট বোধ করতেন।শারীরিক ও মানসিক দুইভাবেই শোসিত হতাম আমরা ছাত্ররা।
এখন সময় পাল্টেছে আগের শিক্ষকদের মত এখনকার শিক্ষকরা মারধোরে বিশ্বাস করেন না গার্জিয়ানরাও অনেক সচেতন। বাচ্চাগুলোর উপর শরীরিক টর্চার করেননা ঠিকই কিন্তু মানসিক টর্চার অব্যাহত আছে। সবার বাচ্চাকেই যেন ক্লাশে প্রথম হতে হবে। বইয়ের পড়া ছাড়া যেন আর কিছু পড়ার নেই, আর কিছু জানারও নেই সারাদিন শুধু পড়া আর পড়া।স্কুল থেকে পড়াশুনার চাপ না দিলেও সমস্যা, তাহলে সেই স্কু্লই ভালো না।গল্পের বই কিনে দিতে চাইনা কার্টুন বা ইংরেজী ছবির সিডি বিভিন্ন গেমস কিন্তু কিনে দেই। অনেকের আবার ধারণা এতে ইংরেজীটা পোক্তা হয়, যাক বাংলা রসাতলে তাতে ক্ষতি নেই। ফেন্টাসী কিন্ডম,নন্দন, যমুনা ফিউচার পার্কে নেয়ার মত সময় বা অর্থ দুটোই আমাদের আছে শহীদ মিনার, স্মৃতি সৌধ, যাদুঘর যেগুলোর সাথে আমাদের গৌরবের ইতিহাস জড়িত সেই সকল স্থান বা ইতিহাসের সাথে আমাদের সন্তানদের পরিচয় করাতে আমরা ভুলে যাই। যার বাচ্চা যত ভালো ইংরেজীতে কথা বলতে পারে সে ততো গর্ব বোধ করে। অনেকে আবার গর্বিত কণ্ঠে বলে, ‍আল্লা ভাবী আমার মেয়ে/ছেলেতো বাংলা একদম পড়তে পারেনা।একটা বাচ্চার জন্য দুতিনটা প্রাইভেট টিউটোর রাখছি অথবা বিভিন্ন কোচিং এ দৌড়াচ্ছি ফার্স্ট তোমাকে হতেই হবে।জিপি ফাইভ বা গোল্ডেন না হলে বাবা মা মুখ দেখাবে কি করে বলতো। এটাই শেষ কথা নয় তারপরে আছে ভর্তি যুদ্ধ।খেলাধুলা করার বা গল্পের বই পড়ার সময় কৈ এদের্‌্‌্‌্‌্‌?
এখন আমার মেয়ে একই সময় পার করছে ক্লাশ থ্রিতে পড়ে ক্লাশ ফোরে উঠবে।আমার মা আমাকে বলে, কিরে ওকে পড়াশুনার জন্য কিছু বলিসনা? আমি বলি,- না ও ওর মতো করে আনন্দ নিয়ে পড়ুক্। পড়াশুনা নিয়ে যে অত্যাচার আমার সাথে তোমরা করেছ সেই অত্যাচার আমি আমার সন্তানের সাথে করতে চাইনা । জ্ঞানার্জন করুক আনন্দের সাথে।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ১৩৭১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/১১/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast