www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মাটির প্রতিমা

তিয়াস ব্যাগটা পিঠ থেকে খুলে বিছানায় রাখ্ল। এখনি সবিতামাসি এসে খাবার দিয়ে যাবে। তিয়াসকে খেতে হবে। তারপরই তাকে পড়তে বসতে হবে। আজকাল সে আর পড়াশোনা করছে না।

       তিয়াস হল সিঙ্গল মাদার প্রখ্যাত লেখিকা গার্গী বসুর সিঙ্গল চাইল্ড। বাবাকে তার মনেও পড়ে না। শেষ দেখা হয়েছিল মা বাবার ডিভোর্সের দিন; তখন তার বয়স ৪ বছর। নতুন বাড়িতে মনটা প্রথম ফাঁপর লাগত। এখন সেই ফাঁপড়ে সে অভ্যস্ত। মা কিছু দিন সকালে বের হবেন। ফিরবেন সন্ধ্যার পরে। আর বের না হলে সারাদিন লেখালিখি নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। সবিতামাসি, শিবুজেঠু, দীপাদি, ওদের সাথেই গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব । মার সময় নেই তিয়াসের জন্য। তিয়াসের ও নেই । থাকলেও সে যায় না মায়ের কাছে। কেন যাবে? শুধু "এখানে কেন? পড়তে বসো শুনতে?" না। যাবে না সে। নিজের ঘরই দুনিয়া এখন। ক্লাসের বন্ধু-বান্ধবীদের দেখলে আগে ঈর্ষা হত। এখন নিজের জন্য মায়া হয় খুব। মার মুখটা যেন কোনো অভিজ্ঞ শিল্পীর হাতে গড়া মাটির প্রতিমা। নিদারুণ সুন্দর। শুধু প্রাণ প্রতিষ্ঠাটুকু বাকি।

        এক একদিন সে ভাবে মায়ের সাথে ঝগড়া করবে। সাহস হয় না। বুক শুকিয়ে যায় মার গলার আওয়াজ শুনলে-"দাড়িয়ে এখনো ? যাও পড়তে বোসো।" মা কি জানেন- আজকাল পড়তে তো বসে তিয়াস, কিন্তু পড়া হয় না সে বসায়। মা বলতে পারবেন না; তিয়াসের কোন সাবজেক্ট্ কতটা পড়া হয়েছে।
রক্তিম, সন্ধ্যা, নেহা ওদের মারা পারেন।

         মার লেখাগুলো আগে মনযোগ সহকারে পড়ত সে। এখন তার ইচ্ছে করে লেখাগুলো ছিড়ে ফেলতে। সে জানে না, হয়ত এগুলোর জন্যই মা মায়ের মত নয়। বা হয়ত মা এরকম ই; আগাপাশতলা লাল কার্পেট দিয়ে মোড়া।

          খেয়েদেয়ে ঘুমোয় না সে।না ঘুমোলে রাত জাগতে পারবে না? পড়া হবে না? না হোক । কিছুই কি যায় আসে না পড়া না হলে?  আসে যায়। কিন্তু জাষ্ট পসিবল না।

          ঘর থেকে বের হতে চায় না সে । তবু নিয়ম ভাঙার স্পর্ধায় বেড়িয়ে পড়ে। মার শোবার ঘরের সামনে যখন; দীপাদির ডাকে সম্বিত ফেরে-

"দিদিমণি তুমি শোওনি? না ঘুমিয়ে ম্যাডামের ঘরে ঢুকতে এয়েছ? ম্যাডাম দেখলে কিন্তু ভারি রাগ করবেন।"

"মা কোথায় ?"

"ক'জন লোক এয়েছে। ওদের সাথে কথা বলছে।"

তিয়াস মনে মনে ভাবে আবার পুতুল সেজে বসে পড়েছে। মার ঘরে ঢুকে পড়ে সে । শেষ কবে এই অপরাধ করেছে সে তার মনে পড়ে না। মার ড্রয়ার চাবি ঘুরিয়ে খোলে। জানেনা কেন? মার লেখা পড়া তার উদ্দেশ্য নয়।শুধু যা করা নিষেধ, তাই করতে মন চায় তার

        ২০০৫ সালের ডায়েরীটা হাতে তুলতেই একটা ভাজ করা কাগজ খশে পড়ে ডায়েরী থেকে।খুলে পড়তে থাকে তিয়াস।


প্রিয় মা,

       ভালো আছেন মা? আর বাড়ির পোষা পায়রাগুলো? জানেন নিজের মাকে জ্ঞান হবার পর খুব একটা দেখিনি। আপনি আমার শাশুড়ি মা থেকে আমার মা হয়ে উঠতে পারতেন। আমি কোনোদিন ও সেই যোগ্যতা দি নি আপনাকে। অশিক্ষিত বলে অবহেলা, গ্রাম্য বলে ব্যঙ্গ, আপনার কথা বলার সুর নিয়ে কৌতুক, ঠেস দিয়ে আপনাকে বলা কত কথা। কী নেই লিষ্টে? ক্ষমা চাবার দুঃসাহস করি না।

       আমি কি নিজেকে ক্ষমা করেছহি? বোধহয় না। কিন্তু জীবনকে যে পেছানো যায় না। যদি যেত, তাহলে আপনার দেয়া শাড়িগুলো পড়ে দেখাতাম আপনাকে। আপনাকে আমার গল্পগুলো পড়ে শোনাতাম। হাসতে হাসতে সময় পার হয়ে যেত।

       মা এখন আমাকে কেউ সক্কালবেলা রুটি করে দেয় না। কেউ বলে না- "একবার খেয়ে দ্যাখো, তোমাদের ওমলেতের মতই ভাল লাগবে।"

        আর একবার সুযোগ পেলে আপনাকে মা বলে ভাবতাম, মানুষ বলে ভাবতাম।

                                             -ইতি,
                                                    আপনার মেয়ে গার্গী।

চিঠিটা রেখে দেবে ও, এমন সময় গুরুগম্ভীর ডাক। -

"এখানে কী হচ্ছে? কেন ঢুকেছ? ঘুম নেই?"

"তোমার চিঠিগুলো পড়লাম। ঠাম্মাকে দাওনি কেন?"- এমনভাবে বলে সে, যেন সামান্যতম ভয় পায়নি।

"ওটা মায়ের মারা যাবার দু'বছর পড়ে লেখা। তাছাড়া মা পড়তে পারতেন না"

তিয়াস আবাক চোখে দেখে প্রা্ণহীন মাটির প্রতিমার চোখে একফোটা জল উকি দিচ্ছে।

ঘরে এসে বালিশ চাদর নিয়ে তিয়াস ভাবে-লাল কার্পেটের নীচেও তাহলে একটা সোঁদামাটির মন থাকে!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৪০৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/১০/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সুন্দর লেখা। একটু এডিট করবেন।
  • অনিরুদ্ধ বুলবুল ০৮/১১/২০১৪
    এত সুন্দর প্লট কি করে পাও ভাই?
    খুব ঝানু মাথার মতই প্লট আর ঘটনা বিন্যাস। বেশ লাগল।

    এবার একটু পণ্ডিতি করি?
    বরাবরই তোমার বানান প্রায় শুদ্ধ, শব্দ প্রয়োগও বেশ সুবিন্যস্ত কিন্তু এটা কি হলো ভাই - ব্যাগ্টা, রাখ্ল, এক্দিন, কত্টা, এমন্ভাবে ????
    এখানেও চন্দ্রবিন্দুর সমস্যা (?)
    • রেনেসাঁ সাহা ০৮/১১/২০১৪
      ওটা বিরাট গল্প তো! টাইপ করতে গিয়ে ছেঁড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি অবস্থা। বানানের দিকে লক্ষই করিনি।

      আর প্লট বিশেষে বলতে হয়,
      ১/ মাটির প্রতিমার প্লট - আমার এক তুতো দিদি আছেন; খুব রাগী; একদা আমিও তার ভেতরে একটি সোঁদামাটির মনের দেখা পেয়েছিলাম।

      ২/গল্পের থীম- আমার আর এক তুতো দিদির বাড়িতে আলোমাসি নামে সত্যি এক মাসি কাজ করতেন; তার সম্পর্কে যা লিখেছি সব সত্য; নামগুলোও চেঞ্জ করিনি।

      ৩/বুনু আর আমি - আমাদের বাড়ির পাশে সত্যি অমন একজন আছেন, যিনি রাত হলেই রবীন্দ্রসঙ্গীত শুরু করেন; আমার বেশ মনে আছে আমার মাধ্যমিকের রেজাল্ট আউটের দিন তিনি গান গেয়েছিলেন- "বিপদে মোরে রক্ষা কর/এ নহে মোর প্রার্থনা।""এছাড়া বাঁধাকপির পাতা/পাতার ভিতর পাতা"-সবই সেই ভদ্রলোকটির অসীম সৃষ্টি। আর আমাদের পাড়ায় আরো একজন আছেন; যিনি দুই বিবাহের অধিকারী; আমার এক প্রতিবাদী বান্ধবী তার নাম দিয়েছিল অমুকের "ড্যুয়াল সিম।" সেই বান্ধবী একদা সেই ব্যক্তির দোকানে গেছিল; চকলেট কিনতে; তা লোকটি বলেছিল "আজকাল দিনকাল ঠিক নেই! যতই দুজনেই মেয়ে হও; এত মেলামেশা কোরো না" মাতাল অবস্থায় থাকা সেই লোকটিকে সঙ্গে সঙ্গে চমকে দিয়ে বান্ধবীটি বলল-"চিন্তা নেই, তোমার মত কিছু করব না, তোমার জোড়া বউ -এর কসম!" আমি পুরো পাখা ছিলাম ঐ প্রতিবাদী চরিত্রের। একা ক্যারাটেতে ৪ টি ছেলেকে হারিয়েছিল সে! আমাকে অবাক করে একদিন সে; একজন বিবাহিত লোককে জীবনসঙ্গী বাছে । আজ বান্ধবীটিও বেঁচে নেই ।

      ৪//মাও ছেলে- একেবারেই কল্পনাপ্রসূত।

      অনেক অবান্তর কথা বললাম, অন্যায় নেবেন না , প্লিজ্ ।
      • অনিরুদ্ধ বুলবুল ০৮/১১/২০১৪
        বাহঃ অন্যায় হবে কেন? যা সত্যি তা ই বলেছো?
        এবার বানানগুলো ঠিক করে নাও লক্ষ্মী বোন।
        তোমার গল্পের হাত আরো ভাল। আমি কিন্তু এখানে কানা।

        ভালো লাগলো।
        স্টাডি ও স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দিয়ো, ভালো থেকো।
        শুভরাত্রি।
  • যাক, তিয়াসকে এক ঘরে করে রেখে পাঠক হৃদয়ে ক্ষত সৃষ্টি করলেও শেষ পর্যন্ত গার্গী তাঁর কোমল মনের পরিচয় দিয়েছেন।

    তবে লেখকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, মা মা ই। মাকে কোমল ভাবে দেখালেও মন্দ হতো না যেতে তিয়াস বেশ কোমল মতি
    • রেনেসাঁ সাহা ০৮/১১/২০১৪
      ধন্যবাদ জানবেন। এখানে গার্গী একইসাথে মা-বাবার ভূমিকা নিতে হচ্ছে; যেহেতু বাবাটি দূরে থাকেন। তাই কঠিন করেতুলেছি। তাছাড়া কোনো চরিত্রই তো দেবতা নয়, সবাইকে রক্ত-মাংসের মানুষ হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছিলাম ।
  • Înšigniã Āvî ০৫/১১/২০১৪
    last line ta osadharon.....
    ekhane aapnake dekhe bhalo laaglo R aapnar lekha golpo porar souvagyo holo
  • কল্পনা শক্তি ভালো । চালিয়ে যান....
  • শিমুল শুভ্র ২৯/১০/২০১৪
    বেশ ভালো লাগলো
 
Quantcast