www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

করোনায় একজন প্রবাসী I

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১১তম পর্ব।

রাষ্ট্রদূতকে ডেকে সৌদি সরকারের প্রতিনিধিরা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন দেশটিতে কর্মরত শ্রমিকসহ অন্য পেশাজীবিরা ভিসায় উল্লেখিত পেশার বাইরে কোন কাজ করতে পারবে না। বিশেষ করে রাজনীতি, পেশাজীবি বা অরাজনৈতিক সংগঠন করতে পারবে না। শ্রম ভিসায় গিয়ে বাংলাদেশে খবর পাঠান অভিযোগের প্রমাণ হাজির করে সৌদি পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা এক বাক্যে বলেছেন, প্রেস ভিসা ছাড়া অন্য কেউ সৌদিতে সাংবাদিকতা করতে পারবে না। বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিনিধিদের এই বলে সতর্ক করা হয় যে বাংলাদেশ মিশনের কেউ যাতে এসব কর্মে কাউকে আশ্রয়-প্রশ্রয় বা সমর্থন কিংবা অনুমোদন না দেয়। দৃষ্টি আকর্ষণের পরও যদি কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এসব কর্মে সম্পৃক্ত রয়েছে প্রমাণ মিলে তবে, অবশ্যই তাকে জেল-জরিমানাসহ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
এরূপ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সৌদি সরকারের কঠোর মনোভাবের বিষয়টি অবহিত করেছে । ইকামায় বর্ণিত পেশার বাইরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক বা এ ধরণের অন্যান্য কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

এরপরও কোন ব্যক্তি এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে বা পরিচালনা করলে তা রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপের আওতায় আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে বিবেচিত হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে জেল জরিমানার সম্মুখীন হওয়াসহ দ্রুত নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সৌদি সরকার জানায়, এখানে অন্য পেশায় নিয়োজিত থেকে সৌদি তথ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি বা প্রেস ভিসা ব্যতিরেকে যে সকল বাংলাদেশি নাগরিকগণ সাংবাদিকতা করছেন বা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ঢাকায় সংবাদ প্রেরণ করছেন তা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং গুরুতর দণ্ডনীয় অপরাধ।
সৌদি আরবের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি সমুন্নত রাখার জন্য বর্ণিত বিষয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা যথাযথভাবে মেনে চলতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস।

অধিকাংশ লোক জায়গা বিক্রি করে, ধারদেনা করে কিংবা সুদের হিসাবে টাকা ধার করে বিদেশে আসে, এর মধ্যে সামান্য একটা অংশ বিভিন্ন ব্যাবসা বানিজ্যে এর মাধ্যমে কিছু টাকা আয় করে যেটা তারা দেশে বসে কল্পনাতেও হিসাব করেনি। এরাই কিছু লোক নিজেকে নেতা পরিচয় দিতে শুরু করেন। অনেক সময় স্থানীয় কোন এমপি বা নেতাকে আমন্ত্রণ করে, হোটেলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এমপি বা নেতাকে দিয়ে একটা সংগঠন এর নাম ঘোষণা করানো হয় এবং সেই সাথে কিছু পদ পদবিতেও নাম ঘোষনা করা হয় । বিভিন্ন পদে উপনীত ব্যক্তিগণ নেতা হিসাবে পরিচিয় দিয়ে আত্ম সন্তুষ্টি লাভ করেন। পরবর্তিতে এইসব নেতারাই বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। আমাদের দেশে এই একটি মাত্র পদ আছে যে পদের জন্য কোন যোগ্যতা লাগেনা শুধু মাত্র পাগল না হলেই হলো, সেটা হচ্ছে নেতা। অবশ্য মন্ত্রী, এম পি হতেও যোগ্যতার কোন মাপকাঠি নেই। কিছু টিভি চ্যানেল বিদেশে শ্রমিক হিসাবে আসা কিছু লোককে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেয় যাদের ভাষা জ্ঞান তেমন নেই। এরা ভালো বাংলা উচ্চারনে কথা বলতে পারেন না, অবশ্য এটা দোষের কিছু নয় কিন্তু যখন এদেরকে রিপোর্টার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয় তখন সেটা বুঝতে পারিনা। যারা সাংবাদিকতা করবেন, লাইভ সম্প্রচার করবেন তারা অবশ্যই উচ্চারণ এবং ভাষাজ্ঞানে সমৃদ্ধ থাকার কথা।

এই দিকে বাংলাদেশের কোন উড়োজাহাজ কুয়েতে ঢুকতে পারছেনা । ইটালীতে অনেক আগে হতে বাংলাদেশী ঢুকতে পারছেনা অথচ হাজার হাজার বাংলাদেশি ইটালীতে ফিরে যাওয়ার অপেক্ষায় আছে । বাংলাদেশিরা ইটালীতে করোনা সনদ জালিয়াতি করে খবরের শিরোনাম হয়েছে আমরা সবাই জানি ।এইদিকে জাপানও বলে দিয়েছে বাংলাদেশের লোক ঢুকতে পারবে না । পাপুলের ভিসা জালিয়াতি করায় কুয়েত হয়তো নিরহ বাংলাদেশীদের ফেরত পাঠাতে পদক্ষেপ নিতেও পারে। সরকারের দক্ষ কূটনীতিক তৎপরতা চালানো দরকার যাতে শ্রমিক কখনো ফেরত না পাঠায়। সরকার এবং জনগণের বুঝা উচিত অকাতরে প্রবাসী ফেরত গেলে দেশে একটা অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, যা কাটিয়ে উঠা দুরূহ ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।

রহমান মাসুম নামে একটা লোক আমেরিকা বসে প্রায় প্রতিদিন ফেসবুক লাইভ করে সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করেন । উনি আবার একটা ফেসবুক গ্রুপও করেছে রেমিটান্স ফাইটার অফ বাংলাদেশ (আরএফবি) নামে । যেখানে প্রবাসীদের এড করে এবং প্রচার করছে উনি নাকি সরকারের পদত্যাগ চায়। এবং সরকার বিরোধী যেসব লোক আছে তাদের সহযোগিতাও চেয়েছে । আসলে সব হলো মিথ্যা এবং ধান্দাবাজি । আমেরিকার রহমান মাসুম , কাতার প্রবাসী একজন , এসকে মিডিয়ার টিপু চৌধুরী এবং সৌদি প্রবাসী মিনার মাহমুদের ভিতর মতবিরোধ শুরু হওয়ায়। মাসুম তার লোক দিয়ে টাকা পয়সা খরচ করে সৌদিতে মিনারকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় । সে ধরা পড়ে পুলিশের কাছে স্বীকার করে সে ডাক্তারী পেশার সাথে সাথে সাংবাদিকতাও করে এবং বিভিন্ন বাংলাদেশী শ্রমিকও এইসব করে ( করোনা নিয়ে এবং মানুষের বিভিন্ন অসুবিধা নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করতো আমিও দেখেছি )। তবে মিনার মাহমুদ একজন ভালো লোক কিন্তু তার এই লাইভ করা সৌদি আইনে নিষিদ্ধ এবং অপরাধ , জানতে পেরেছি সে এখন জেলে ।

যার কারণে সৌদি সরকার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছে। প্রথম হতে মাসুমের সরকার বিরোধী ফেসবুক লাইভ দেখে আমার মনে হয়েছে লোকটা বাটপার । কোন মতলব নিয়ে সে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করতে চায় যাতে তার লাভ হয় । প্রিয় প্রবাসী ( রেমিটান্স যোদ্ধা ) ভাইবোন আপনারা এইসব মতলবাজ ধান্দাবাজ কূটচালবাজ এবং অসৎ লোক হতে দুরে থাকুন । বিদেশে বসে দেশে কোন দল সরকারে থাকে তা নিয়ে রাজনীতি না করে আপনি নিরাপদ সুস্থ ও সবল থেকে সৎ পথে রোজগার করে বৈধ পন্থায় টাকা পরিবারের কাছে পাঠান । এতে পরিবার চলবে , সমাজ দেশ উপকৃত হবে। সজাগ থাকুন ধান্দাবাজ আপনাকে ব্যবহার করে যেন উপরে উঠতে না পারে।

মনে রাখবেন আপনি হলেন লাল সবুজ পতাকা , রক্তমাখা মানচিত্র ও জনমদুঃখী মায়ের সন্তান। আপনি কোন এক বোনের প্রিয় স্বামী , আপনি ফুটফুটে বাচ্চা সন্তানের বাবা । মা বা সন্তান ও প্রিয়তমা স্ত্রী অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ কখন তাদের হৃদয়টা ঘরে ফিরবে । মা আদর করে ভাত খাওয়াবে , সন্তান দৌড়ে এসে আপনার কোলে উঠবে , প্রিয়তমা ভালোবাসা চুমার নকশা করবে আপনার কপালে। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী।
১২তম পর্ব।

মায়া , মমতা ও মানবতা যেন আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছে । এই মহামারী শেষ হলে তা হয়তো আরো বেড়ে যাবে । সন্তান বাবার মৃত লাশ হাসপাতালে রেখে চলে যাওয়া আমাদের দেশেরই ঘটনা । তাও আবার পেনশানের টাকা উঠাতে যেন কোন সমস্যা না হয় তার জন্য বাবার আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে যায় । মাকে রাতের আধারে গভীর জঙ্গলে রেখে চলে যায় নিজ সন্তান। প্রতিবন্ধী একজন লোককে বাসায় একা ফেলে চলে যায় স্ত্রী ও সন্তান। আর এই সন্তানকে মা পেটে নিয়ে এক একটা হিমালয় পাড়ি দেয় নয় মাসে। সন্তানের প্রস্রাবে ভিজা বিছানায় রাতের পর রাত যাপন করে শীত কিংবা ভরা বর্ষায়ও। আল্লাহ পর মাথা নত করতে হলে মায়েরই তা পাপ্য।

কিছু মা বৃদ্ধা আশ্রমে যাবে একটা নিদিষ্ট সময়ের পর। কিছু মা একা একা বন্ধ বাসায় অন্ধকার রুমে মরে থাকবে। কয়েকদিন পর প্রতিবেশীরা না দেখলে থানায় খবর দিবে । পুলিশ এসে গলিত মার মৃতদেহ বাহির করবে। তখন হয়তো সন্তান ব্যস্ত থাকবে দেশে কিংবা বিদেশে । আজকাল ধর্মীয় অনুশাসন মানুষকে বশ্যতায় রাখতে পারছে না। ধর্ম নিরহ হয়ে ধর্মের জায়গায় পড়ে আছে। আর মানুষ পাখি হয়ে আকাশে উড়ছে । যেমন কোন এরাবিয়ানের চীনে গিয়ে হালাল খাবার খোজ করার মত। অথচ সেই লোক চীন যায় কোন নামকরা কোম্পানির পণ্য নকল করার তদারকিতে। আমরাও এই মহামারীতে কীট হয়ে পলিটিক্স করছি।

বাবা এই সন্তানের সুখের জন্য পৃথিবীর এক পান্ত হতে অন্য পান্তে ছুটে চলছে । কত বাবা যে বরফের পাহাড় এবং ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে আল্লাহ এবং সন্তানের নাম মনে করেছে তার হিসাব কোন দিনই হবে না । কত বাবা যে মধ্যপাচ্যে বর্বর আরবের লাথি আর থাপ্পরে সন্তানের মুখ কল্পনা করে নীরবে চোখের জলে বুক ভিজিয়েছে তার হিসাব কখনো হবে না। করোনায় আক্রান্ত সন্তানকে বাবাই কাঁধে নিয়ে ছুটেছে । আরে একদিন আপনি নিজেই মা হবেন , বাবা হবেন। আর তখন ফিরে পাবেন কর্ম ফল। আল্লাহর কাছে শোকর কিছু লোক বাদ দিয়ে আমরা মা বাবা নিয়ে সুখেই আছি। নেইমা তোমার বিধাতা । সন্তান যদি এমন আচরণ করে তাহলে অন্য লোক কেমন আচরণ করবে। এইতো ভাবতেই পারি না। কারণ করোনা পরিবর্তি বিশ্ব হবে নিজে খাই নিজে বাঁচি।

বাংলাদেশে করোনার প্রভাব হয়তো দীর্ঘ মেয়াদি পড়বে । প্রবাসী যারা করোনার হাত থেকে বাঁচার জন্যই হোক আর নাড়ীর টানেই হোক দেশে এসে গিয়েছে তারাও বাংলাদেশের বেকার হয়ে গিয়েছে । পাশাপাশি আরো লক্ষ কোটি লোক চাকরি হারিয়ে বেকার জীবন যাপন করবে এমনিতে কয়েক মিলিয়ন শিক্ষিত বেকার আছে । ওদিকে রোহিঙ্গা তো আছেই । আমরা এই দুর্যোগে অত্যন্ত ভয়ানক পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি । তাই আমরা একমাত্র মালিকের কাছেই সবকিছুতে আশ্রয় চাচ্ছি । হে আল্লাহ্‌ তুমি আমাদের করোনার হাত থেকে বাঁচিয়ে দাও এবং করোনা পরবর্তী দুর্ভিক্ষ থেকেও রক্ষা করো

টাফ টাইম, অনেক সমস্যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, নতুন বিজনেস আইডিয়া সামনে নিয়ে আসে। এই টাফ টাইমে মুভি দেখে, গেম খেলে সময় নষ্ট না করে, নিজেকে নিয়ে ভাবুন। বিকল্প কি করা যেতে পারে। আপনি কি কি কাজ জানেন? কি কি স্কিল আছে? কোনটা করলে এখন পয়সা পাবেন? ভাবুন , ঠান্ডা মাথায় । আপনার সমস্যার চমৎকার সমাধান বের হবে , আপনি নিজেই সেটা বের করতে পারবেন। হতে পারে, তা অন্যের দেয়া সমাধানের চেয়েও অনেক গুণ ভালো।
যদি কোন সমাধান মাথায় না আসে তাহলে কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন করতে পারেন । জমিতে শাকসবজি করা যেতে পারে । মনে রাখবেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখা যাবে না । এখনি পুকুরে মাছ চাষ করা শুরু করেন । মহিলারা হাঁস মুরগি পালন করা বাড়াতে হবে। তাহলে নিজের প্রয়োজনীয় ডিম এবং মাংসের যোগান হবে। বেশী হলে বিক্রি করা যাবে। বুঝা দরকার সময় খুব খারাপ আসছে সামনে । (চলবে )।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৩তম পর্ব।

পদ্মার যেমন কুল-কিনারা নাই। তেমনি বন্যার্ত মানুষজনের দু:খ-কষ্টেরও কোন কুল-কিনারা নাই। বন্যায় পদ্মার পানিতে নিমজ্জিত শত শত ঘর বাড়ি। এই যেন বিধাতার কঠিন এক পরীক্ষা মহামারী , বন্যা ও ত্যাগের ঈদ । মহামারী কেড়ে নিচ্ছে জীবন আর বন্যা কেড়ে নিচ্ছে জীবন ও বেঁচে থাকা মানুষের রসদ । আবার ঈদ হলো আনন্দের । কিন্তু জীবন ও রসদ হারিয়ে আনন্দ হয় না। পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষ মহামারীতে বন্যার জলে সাঁতার কাটছে সেখানে কোরবানির জন্য পশু ক্রয় করা খুবই কষ্ট সাধ্য । এমন বহু পরিবার আছে যে পরিবারে কারো না কারো অসুখ এবং পরিবার গুলি মহামারীর কারণে রোজগারহীন তারা প্রচণ্ড দিশাহারা জীবন নিয়ে।

জীবনকে কখনো কখনো খুব সিরিয়াসলি নিতে হয়। জীবন নদীর মতো বয়ে যায়, একুল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে, সুখ দুঃখের পালাবদল হয়। জীবন আসলে সফলতা ব্যর্থতার সাতকাহন, কান্না হাসির কবিতা। নানান মানুষ এর নানান কান্ড! ভালো খারাপ এর ঝালমুড়ি ,আর এটা মেশানোর উপাদানের পরিমাণের উপর নির্ভর করে জীবনের ভালো কিংবা মন্দ। তাতে জীবনের কিছু যায় আসে না, জীবন তার নিজের নিয়মে বয়ে যায়। নদী যেমন একসময় সাগর মহাসাগরে মিশে জীবনও তেমনি একদিন শেষ হয় বা আরো বড় করে শুরু হয় মহাকালের মহাস্রোতে। তাই জীবনকে বয়ে যেতে দিন । তবে হ্যাঁ নিজের মন ভালো রাখতে চেষ্টা করতে হবে, পরিস্কার রাখতে হবে, কারো উপকার করতে না পারলেও সমস্যা নাই কিন্তু জেনেশুনে আপনার দ্বারা যেন কারো কোন ক্ষতি না হয়। মহাকালের জীবনে গিয়ে হয়তো আপনাকে জবাবদিহিতার মুখে পড়তে হতে পারে আপনার জীবনের ভালো খারাপের হিসাবপত্র নিয়ে । তাই জীবনকে সেই মোতাবেক সাজিয়ে তুলতে হবে।

ঈদের খুশির মাঝে , মহামারী ও বন্যা। কোরবানের শাব্দিক অর্থ হল- নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া। পারিভাষিক অর্থে ‘কোরবানি’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ঈদ উৎসব ঈদুল আযহা বা কোরবানির ঈদ, কোরবানির মূল দীক্ষাই হল আল্লাহর সকল হুকুমের প্রতি পূর্ণ আত্মসমার্পণ করা। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নমুনাস্বরূপ হযরত ইবরাহীম (আঃ) নিজ প্রিয় পুত্র ইসমাইলকে (আঃ) আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর হুকুমের প্রতি অতিশয় আনুগত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তার এ কোরবানিকে কবুল করে নেন, এ ঘটনা আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগত্যতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাই কোরবানিতে মানুষের জন্য অসংখ্য শিক্ষনীয় বিষয় রয়েছে।

কোরবানি অন্যতম শিক্ষা হলো দরিদ্র ও অনাথের সুখ দুঃখে ভাগিদার হওয়া । নামাজে ধনী দরিদ্রের সহাবস্থান এবং কোরবানির মাংস গরিবের মাঝে বিলীয়ে দেওয়ার ইসলামী নির্দেশ তা প্রমাণ করে। মাংস বিলীয়ে দেওয়ার আদেশ এই প্রমাণ করে যে ধনীদের সম্পদে অসহায়দের অধিকার আছে। কোরবানি মুসলমানদের শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব না বলে একে শুদ্ধ জীবন গঠনের অনুশীলন বলা উচিত। যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করি। তাওহীদ , একনিষ্ঠতা ও আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা এইটা। দরিদ্র জনগণের দুঃখের ভাগীদার হয়ে আল্লাহের সন্তুষ্টি অর্জনই কোরবানির লক্ষ্য হওয়া উচিত । কোনরকম নিজেকে জাহির করা কিংবা ফায়দা হাসিল এর মনোভাব স্থান লাভ করতে পারবে না । পবিত্র কোরানের সুরা আল -আমের ১৬২ নাম্বার আয়াতে ইরশাদ করেছেন ‘বলুন হে নবী (সাঃ) আমার সালাত আমার কোরবানি আমার জীবন আমার মৃত্যু , শুধুমাত্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক মহান রাব্বুল আলামিনের জন্যই” ।

করোনা কালে খাদ্য এবং চিকিৎসার জন্য যেভাবে হাহাকার দেখা গিয়েছে বন্যাতেও দেখা যাবে। রাষ্টের উচিত ঘুষখোর , চাঁদাবাজ , দুর্নীতিবাজ , মানব পাচারকারি ও জুয়াড়ি হতে জনগণের সম্পদ উদ্ধার করে দুঃস্থ মানুষের মাঝে বিলীয়ে দেওয়া।

মুখ ডুবিযে খাওয়া লোকেরা দেশটার রস খেয়ে ঈদে খাবে বড় বড় গরু , তাদের জন্য প্রতিদিনই ঈদ। কিন্তু আজ এই ঈদ মহামারী ও বন্যার মাঝে খাওয়ার জন্য নিজের ইজ্জত আব্রু বাঁচানোর জন্য ও একটু আশ্রয়স্থলের জন্য যারা সংগ্রামে লিপ্ত তাদের ত্যাগ ও তিতিক্ষার ঈদ । ঈদ আসলে এখনো সাম্য আনতে পারেনি বৈষম্যও কমাতে পারিনি কিন্তু নেতারা ভাষণ দিবেন সাম্যের। সুদখোর, ঘুষখোর , চাঁদাবাজ , দুর্নীতিবাজ , মানব পাচারকারি ও জুয়াড়িরা আজ টাকা দেশে আলমারি ভর্তি করে আবার বিদেশে পাচার করেছে । সিঙ্গাপুর মালেশিয়া যেমন বাড়ি করেছে ব্যবসা পেতেছে তেমনি কানাডা আমেরিকাসহ ইউরোপ এর বিভিন্ন দেশেও তাই করেছে। এই মহামারীতে এই বন্যায় এইসব মানুষ কতটুকু সাহায্যে এগিয়ে এসেছে , মোটেও আসেনি। এসেছে সৎ মানবিক দরদি লোকেরা । কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা এগিয়ে আসেনি তারাই নামের সাথে জনদরদি ও সমাজসেবক লিখে কিংবা লিখবে ভোটের সময় ও অন্য সময়।

কিছু কিছু এলাকায় কোরবানি আসলে মেয়ে পক্ষ থেকে জামাই বাড়িতে গরু ছাগল পাঠাইতে হয় । এই মহামারী সময় এইটা বন্ধ করা দরকার । এইসব নিয়মের ফলে প্রায় মেয়ের পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়। অনেক এলাকায় মেয়ের বিয়ের সময় একবার কষ্ট করে দিয়ে দেয় যেটা যৌতুকই। ঈদ আসলে আমরা আনন্দিত হই, আরেক পক্ষ আতঙ্কিত হয়।

বন্ধ করা দরকার এইসব লজ্জাজনক কাজ। কোরবানি ওয়াজিব হলে নিজের টাকায় পশু খরিদ করে আল্লাহর নামে কোরবানি করতে হবে। পাড়া প্রতিবেশী , আত্মীয় স্বজন ,গরিব দুঃস্থ , এতিম ও বিপদগ্রস্ত মানুষের সাধ্যমত খোঁজ খবর রাখতে চেষ্টা করতে হবে। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৪তম পর্ব।

আগষ্ট মাসের ১৪/১৫ তারিখ হতে গরম কমতে শুরু করে , আগে যেখানে ৪৫/৪৬ ডিগ্রী তাপমাত্রা পড়তো আর এখন ৪২/৪৩ ডিগ্রী পড়ে। রাত বাড়তে থাকে আর দিন ছোট হতে থাকে। তবে এখনো রোদের আলো এতই প্রকট যে কালো চশমা পরাই ভালো । দোকান হতে দশ রিয়েল (দুইশ বাইশ টাকা সাইত্রিশ পয়সা) দিয়ে একটা কালো চশমা কিনতে হয়েছে আমার। কালো চশমা চোখে দিলে বেবী নাজনীনের “ হেই যুবক” গান মনে পড়ে। তবে মন খারাপ হলে ফরিদা ইয়াসমিনের লালন গীতি শুনি । কয়েক মাস রাতে ৩,১৩ মিনিটে ফজর নামাজের আযান দিতো। তখনি উঠে যেতাম আমি নামাজ পড়েতে পড়তেই সকাল হতো । কাজ সব শেষ করতে করতে সকাল আটটা বেজে যায় তারপরই যেতাম ফকির শাহর কাছে নাস্তা করতে। এরপর আর কোন কাজই থাকে না ফকির শাহর সাথে বসে টেলিভিশনে ছবি দেখে সময় পার করতে হয়। সেই আবার আছর নামাজের পড়ে ভেড়ার পালের তদারকি করতে হয় ৬,৩৫ মিনিটে মাগরিব নামাজের আযান পর্যন্ত । প্রচণ্ড গরমে এই রুটিন মেনে কাজ করে অদ্যাবধি চালু রাখছি। রমজানের ঈদ কিংবা কোরবানির ঈদ কোনটাতেই ব্যতিক্রম হয়নি কাজের । ভেড়ার খাবার ও পানি দেওয়া ব্যতিক্রম করাও সম্ভব না। তাই ঈদের নামাজ ও আনন্দ মরুভূমিতে কল্পনা করা যায় না। জীবনের কাজ বহমান হওয়া , নদীতে পড়া নদী হতে সাগর কিংবা মহাসাগরে তারপর বিলীন হয়ে যাওয়া।

এমন টালমাটাল জীবনকে সুখী করতে এবং নিজ জীবনে পাশে আরো কিছু জীবনকে সুখ দিতেই এই নিরন্তর ছুটে চলা। গ্রাম্য প্রবাদ “ নিজের পেট নিজেই পালতে পারি” যদিও কথাটা শতভাগ সত্য । কিন্তু এতে জীবনের সার্থকতা নাই ,এতে জীবনের গভীরতা নাই। প্রত্যেক মানব জীবনের একটা দায়বদ্ধতা আছে আর সেটা পরিবার এবং সমাজের প্রতি। তবে কিছু কিছু মানুষ প্রবাসে এসেও এইটা ভুলে যায় , সৌদি আরবে অনেক প্রবাসী আছে যারা জুয়া খেলায় মত্ত আর থাই লটারিতে মগ্ন। লটারির নেশায় পড়ে এরা খাওয়ার টাকার জন্য ধার করতে হাত পাতে । হয়তো ভাগ্য জোরে বছরে একবার পেলে তার লোভে চাকরী করে সব টাকা লটারিতে বিনিয়োগ করে আর দেশে বউ বাচ্চা ভাতে মরে । কেউ কেউ আবার কাজ করে না ধার দেনা করে চলে খায় আর ঘুমায় এবং বন্ধু বান্ধব নিয়ে সৌখিনতা বজায় চলে। কিন্তু এরা লটারি খেলতে অভ্যস্ত নয়। এই দুই ধরনের লোকের কেউ বাড়ির খোজ খবর নেয় না এবং টাকা পয়সাও দেওয়ার প্রয়োজন মনে করে না ।

অথচ এদের অনেকে বাবার শেষ সম্বল বিক্রি করে বিদেশ আসে , এসে মোটা তাজা হলে সেই বাবার আর খোজ নিতে চায় না। মা বাবা কষ্টে থাকে অসুখ বিসুখে । কিছু লোকতো নিজের স্ত্রী সন্তানেরও খোজ নিতে চায় না তবে এই সংখ্যা খুবই নগণ্য। বেশীর ভাগ লোক রোজগার করে নিজের বউ বাচ্চার কাছে কিংবা আত্মীয় স্বজনের কাছে টাকা পাঠিয়ে দেয়। এমন অনেক আছে এই টাকার হিসাব নিতে গিয়ে সে লাঞ্ছনা গঞ্জনার স্বীকার হয় চরমভাবে । দুই একটা ঘটনা এমনও আছে সন্তান ও স্ত্রী মিলে লোকটাকে টাকার হিসাব না দেওয়ার জন্য হত্যা করেছে। ভাই বোনও টাকার হিসাব না দিয়ে প্রতারণা করে । এতে বুঝা যায় একজন প্রবাসী কতটা যন্ত্রণা বুকে ধারণ করে পরিবারকে সকল অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দেয়।

অনেক প্রবাসী পারিবারিক কলহে পড়ে মানসিক যন্ত্রণায় দিশেহারা থাকে এবং হার্ট এ্যাটাকে মৃত্যু বরণও করে। প্রতিদিন না হলেও প্রতিমাসে রোড় অ্যাক্সিডেন্ট করে মরে অভাগা প্রবাসী । যার সব খবর দেশের জনগণ জানতেও পারে না । মরে যাওয়া প্রবাসীর লাশ খুব কম সংখ্যক দেশে আসে কিছু লাশ দাফন হয় বাকি পড়ে থাকে হাসপাতালের ডিপ ফ্রিজে। একটা লাশ দেশে আনতে নিজস্ব লোকের প্রয়োজন হয় তাহাছাড়া লাগে টাকা পয়সা যা অনেকেরই থাকেে না। (চলবে)।

করোনায় একজন প্রবাসী ।
১৫তম পর্ব।

কোন লোক মারা গেলে লাশ দেশে পাঠানোর জন্য দেশ হতে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র ঠিক করে আনতে হয় যা আবার রিয়াদে বাংলাদশ দূতাবাস যাচাই করে সৌদি আরবে যথাযথ কতৃপক্ষের কাছে দিতে হয় । তারপর লাশ দেশে পাঠানোর অনুমতি মিলে। লাশ দেশে পাঠাতেও অনেক টাকা পয়সার দরকার হয়। যা কোন কোন লোকের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে । সৌদি মালিক বড় কোম্পানি হলে কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যায় । ক্ষুদ্র ব্যবসায় হলে কিংবা সৌদিয়ানের বাসা বাড়ির ব্যক্তিগত লেবার মারা গেলে কিছু কিছু সৌদিয়ান খোজও নিতে চায় না টাকা দেওয়ার ভয়ে। আবার কিছু কিছু সৌদিয়ান অনেক সাহায্য সহযোগিতা করে , এমনকি আত্মীয় স্বজন হতে টাকা পয়সা নিয়ে মৃত ব্যক্তির পরিবারের জন্য পাঠায়। আইনি জটিলতা কিংবা টাকা পয়সার জটিলতায় পড়ে অসংখ্য লাশ মাসের পর মাস বছরের পর বছর হাসপাতালের ফ্রীজে পড়ে আছে । অথচ মৃত ব্যক্তির স্বজনেরা জানে না লাশের দাফন হলো কিনা । তাই বলবো পরিবার হতে মানসিক অশান্তি নয় শান্তির কথা শুনাবেন প্রবাসীকে। পারিবারিক কলহের রোষানলে পড়ে অনেক প্রবাসী হার্ট এ্যাটাকের কবলে পড়ে , আত্মা হত্যা করতে বাধ্য হয়।

প্রতি মাসে যানবাহনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় কোন না কোন প্রবাসী। বিদ্যুৎ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায় এবং রান্না করার গ্যাস সিলিণ্ডারে দুর্ঘটনায় আগুন লেগে প্রাণ হারায়। যার হিসাব দেশের কেউ রাখে না , যার হারায় সে হিসাব রাখে সে বুঝে নির্মম বেদনা । দেখেছিলাম রাস্তায় সৌদি কিশোরদের অমানবিক আচরণ কত নির্দয় হতে পারে । দিনের আনুমানিক বারটা কিংবা একটা হবে আমি রাস্তার পাশে গাছের ছায়ায় দাঁড়ানো ট্যাক্সি এর জন্য । একজন সাইকেল চালিয়ে কাজ শেষ করে বাসায় যাচ্ছে ট্যাফিক ইশারা নীল বাতি জ্বলার সাথে সাথে একটা গাড়ি সাইকেলের পিছনে ধাক্কা মারে । গাড়ির ভিতর কয়েকজন কিশোর হা হা হা করে হেসে উঠে বিচ্ছিরি আওয়াজ করে আমি রাস্তার অপর পান্তে দাড়িয়ে অসহায় চোখে দেখছি । সাইকেল হতে ছিটকে পড়ে লোকটা চটপট করতে লাগলো আমি গাড়ির জন্য রাস্তা পার হতে পারছি না । ট্যাফিক মোড় বলে কোন গাড়ি থামতেও পারছে না তবুও দুই একটা দুরে গিয়ে দাড়িয়ে ছুটে আসলো ততক্ষণে লোকটির নিঃশ্বাস বন্ধ আর কিশোর দল লাপাত্তা । রাস্তায় পড়ে রইলো প্রবাসী , রাস্তায় পড়ে রইলো সবুজ পাসপোর্ট , রাস্তায় পড়ে রইলো রেমিট্যান্স যোদ্ধা আমি ছুটে গেলাম কাজের গোড়ায় । জীবন বীমা এবং পুলিশ এসে তদন্ত করে লাশ নিয়ে যাবে কোন এক হাসপাতালের লাশের ঘরে।

এইতো কিছু দিন আগের ঘটনা আগুনে পুড়ে মরলো চৌদ্দগ্রাম উপজেলা চিওড়ার এক বিশ বছরের যুবক । ছেলেটির বাবা একটা হত্যা মামলায় যাবতজীবন সাজাপাপ্ত আসামি , ছেলেটি বুঝ হওয়ার পর হতে বাবা জেলে। বড় দুই বোন নিয়ে মা চাচার ঘরে থাকে । চাচী যেমনই হোক চাচা খুবই ভালো মানুষ তাই ছেলেটার দুই বোন বিয়ে দিয়েছে এবং ছেলেটাকে সৌদি আরব পাঠায় । যদিও মাকে চাচার ঘরের যাবতীয় কাজ করে খেতে হয় । সংসারে অশান্তি হবে বলে চাচা চুপ থাকে এবং চাচীর অজান্তেই ছেলেটিকে ভিসা দেয়। আশা ছিল টাকা পয়সা রোজগার হলে আর মাকে এমন অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হবে না চাচীর বকাঝকার ভিতর। কিন্তু ভাগ্যের চাকা ঘুরে সোনালি হওয়ার আগেই থেমে যায় , ছেলেটি সৌদি আরব এসে এক বছরের ভিতরই লাল আভার আগুনের কবলে পড়ে ভাগ্যের নির্মম আচরণে পরাজিত হতে হয় তাকে। রান্না ঘরের গ্যাস সিলিণ্ডার হতে আগুন গেলে এক চরম দুঃখী মায়ের পরম ধন পুড়ে যায় । হাসপাতালের নিবিড় সেবা কেন্দ্রে ২০/২৫ পড়ে থেকে দম চলে যায় আকাশে ।

ছেলেটির পুরো শরীর পুড়ে যায় , যেতদিন হাসপাতালে ছিল চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখতে পায়নি।
এই প্রবাসে কে দেখার আছে এমন সীমাহীন কষ্টের সময় , কে দিবে এক ফোটা জল এই হতভাগা পুড়ে যাওয়া রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে । আশেপাশে পরিচিত লোকজন থাকলে তাদের ছুটির দিনে হয়তো দেখতে যায় একবার কিন্তু অভাগা মার সন্তান চোখ খোলে দেখতেও পায়নি এইসব স্বজনদের। মরণ আজ না কাল সবার হবে কিন্তু এমন মায়ের সন্তান যদি বিদেশে মরে তাকে শুভ্র শ্বেত মরণ বলা যায় না । বিয়ের পর অভাবের সংসার পেলেও মা দুঃখী হয় না কিন্তু যখন স্বামী হাতে পায়ে বাচ্চার ভার দিয়ে চলে যায় তখন সেই মা চোখে সাগর মহাসাগর দেখে। এমন হাজারো স্বামীহীন মা আছে সন্তানের মুখ দেখে চুপ হয়ে ঘানি টানে। আর যখন সন্তান বড় হয়ে সুখের নীল রং জড়ানোর আগেই দুঃখের সাগরে ডুবে যায়। পুড়ে যাওয়া ছেলেটির চাচা এলাকার লোকজনকে ফোন দিয়ে টাকা ধার করে লোক ধরে লাশ দেশে নিয়ে আসে । সন্তানকে শেষবার দেখার জন্য বাবাও সাময়িক মুক্তি নিয়ে বাড়িতে আসে । মা বাবা ভাই বোন সবাই একসাথে হয় কিন্তু একমাত্র প্রবাসী ছেলেটি সাদা কাপড়ে মুড়ানো নির্জীব বস্তুতে খাটে শোয়ানো বাক্যহীন ভাবে। মানবিক উদার চাচা লোকটি ঘরের দেয়ালে ঠেস দিয়ে নির্বাক হয়ে ফেল ফেল চোখে সব অবলোকন করে । হঠাৎ আকাশপানে চেয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে বাবা, হাতে হ্যান্ডক্যাফ চারিদিকে পুলিশ পাহারায়। মা ও দুই বোন নীরব হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। মরে গেলে সবাই ভুলে যায় চার দিন অথবা দশ দিন কাঁদে ও হতাশ্বাস ছাড়ে। আমার মনে হয় না এই মা এই বোনেরা ভুলে যাবে এই দয়াবান চাচা চিন্তিত থাকবে কেমন করে দেখাশোনা করবে ভাইয়ের বউ ও মেয়েদের।

প্রবাসে এমন অহরহ ঘটনা গড়ে। অনেকের পারিবারিক অশান্তি থাকে বছরের পর বছর পরিবারে কেউ কাউকে মানতে চায় না । প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে শাশুড়ী এবং দেবর ননদের ঝগড়া লেগেই থাকে মাঝখানে প্রবাসী লোকটাই মানসিক চিন্তায় আস্তে আস্তে অসুস্থ হতে থাকে । কোন কোন পরিবারে ছেলের বউকে একদম আপন মানতে চায় না শাশুড়ী আর এতে কলকাঠি নাড়ে অন্যরা । আবার কোন কোন প্রবাসীর স্ত্রীর এত লোভী এবং একরোখা পড়ে যে নতুন জায়গায় নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে শান্তিময় ঘরে বাস করবে তা একদম করে না। সত্য মিথ্যা বলে নিজের স্বামীকে বুঝিয়ে পরিবার হতে আলাদা করে ফেলে ফলস্বরূপ ভেঙ্গে যায় যৌথ পরিবার। আবার কোন কোন প্রবাসী অসৎ স্ত্রী নিয়ে থাকে চরম বিপদে। সভ্যতার আমূল পরিবর্তনে মানুষের মন এখন বহুগামী এবং ব্যক্তি কেন্দ্রিক নতুন কিছুতে সুখ খোজ করতে চায় এতে প্রবাসী লোকটা পড়ে চরম বিপাকে। সব বুঝে শুনেও মান সম্মান এবং স্ত্রীর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসার টানে চুপ করে সব সহ্য করে। আবার এইসব অনেকে সহ্য করতে পারে না তাই ত্যাগ করতে হয় নিজের জীবনের ভালো লাগা কিছু। আবার অনেক প্রবাসীর বউ চালাকি করে সব গোপন রেখে একদিন পালিয়ে যায় কোন এক ছেলের হাত ধরে সাথে নিয়ে যায় প্রবাসীর ঘাম ঝরানো কষ্টাজিত টাকা পয়সা লোকটা হারায় সুখ নামক পায়রাটা । (চলবে)।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩৩৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৬/০৮/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast