www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভয়

শ্রাবণ মাস। একফোটা বৃষ্টি নেই। প্রচন্ড গরম। এর মাঝে লোডসেডিং। শেষে ছেলেমেয়ের আবদারে রাত এগারোটায় ছাদেই উঠতে হলো মুনসুর সাহেবকে কাঁথা-বালিশ আর হাতপাখা সমেত। আকাশে থালার মতো চাঁদ। শ্রাবণে এমন সুন্দর জোসনা তিনি কোনদিন দেখেননি। ঝিরঝির হাওয়া বইছে। বিছানা পেড়ে শুয়ে পড়লেন। তার ডানপাশে শুলো ছেলে অর্চি, বামপাশে মেয়ে তাবাসসুম। অর্চি বললো-

- বাবা দেখেছো কী সুন্দর ঝকঝকে আকাশটা। তারার চাদোয়ার নীচে আমরা শুয়ে। এবার একটা কিচ্ছে বলো!
তাবাসসুম বললো-
-না বাবা, কিচ্ছা নয়, একটা গল্প বলো। তোমার জীবন থেকে। ভয়ংকর একটা গল্প বলবে।
-ভয়ংকর গল্প শুনে ভয় পাবে নাতো?
অর্চি তাবাসসুম একসাথে বললো-
-না। আমরা সাহসী বাবার সাহসী সন্তান। ভয় পাবো না।।
-তাহলে শুরু করি।

মুনসুর সাহেব শুরু করলেন-
-তখন আমি মেট্রিক পরীক্ষা দিয়েছি। রেজাল্ট হয়নি। রাত করে মাছ ধরার খুব নেশা চেপেছিল। আমার এক বন্ধু এবং সহপাঠি ছিলো নাম খোরশেদ। ফজরের আযান হবার কিছু আগে সে এসে আমাকে ডেকে তুলতো। ঝাঁকিজাল নিয়ে দুজন একসাথে যেতাম নদীতে। সূর্য ওঠার আগেই বালতি ভর্তি হয়ে যেতো মাছে। সেদিনও খোরশেদের ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। দরজা খুলে দেখি সে উঠোনের মাঝখানে দাঁড়িয়ে। বললো-
-কিরে? যাবি না? রাত তো শেষ হয়ে এলো!

আমার মনে আছে এমনি ধবধবে জোসনা ছিলো সেদিন। জাল আর বালতি নিয়ে ঘর থেকে বেরুলাম। খোরশেদ আমাকে দেখেই হাঁটা শুরু করলো। আমি তাকে অনুস্মরণ করে চললাম। খুব দ্রুত হাঁটছি কিন্তু খোরশেদের নাগাল পাচ্ছিনা। আমি যতোটা ছুটছি সেও ততোটা ছুটছে যেনো।
-কি রে এতো জোরে হাঁটছিস কেনো?
-কথা বলিস না। তাড়াতাড়ি আয়। এমনিতেই রাত ভোর হয়ে এলো।
-তুই যা। আমি একটু প্রস্রাব করে আসছি।
আমি রাস্তার পাশে প্রস্রাব করতে বসলাম। খোরশেদ যথা দুরত্বে দাঁড়িয়ে রইলো। আমি উঠে দাঁড়াতেই সে হাঁটা শুরু করলো। আমিও চললাম পিছু পিছু।

নদীর পারে এসে মনটা ভরে গেলো। জলময় খলবল করে লাফাচ্ছে ছোটবড় মাছ। চাঁদের আলোয় চকচক করছে তাদের শরীর। খোরশেদ আমাকে বললো-
-তুই উজানের দিকে যা, আমি ভাটির দিকে জাল ফেলি।
এমনিতে আমি ভূতপ্রেত বিশ্বাস করিনা, কিন্তু রাত-বিরাতে ভাটির দিকে যেতে মাঝেমধ্যে শরীরটা কাটা দিয়ে ওঠে। ওদিকটায় যে শ্মশান রয়েছে। খোরশেদ জাল গুছিয়ে পা টিপে টিপে শ্মশানের দিকে চলে গেলো।

আমিও জাল গুছিয়ে নিয়ে কয়েক পা উজানে এসে একটি বড় মাছের ঘাঁই দেখে নদীতে জাল ছুড়ে ফেললাম। মাছটা আটকা পড়লো। বেড়িয়ে যাবার জন্য খুব তোড়জোর শুরু করলো। এমতাবস্থায় মাছটাকে আটকাতে হলে আমাকে নদীতে লাফিয়ে পড়ে তাকে জালে জড়িয়ে উপরে তুলতে হবে। নয়তো জাল ছিঁড়ে সে বেড়িয়ে যাবে। কি করবো? স্থির করতে পাচ্ছিনা। খোরশেদকেও দেখা যাচ্ছেনা। সে শ্মশান পেরিয়ে নদীর বাঁকের ওদিকটায় চলে গেছে।

আমি আর বেশীকিছু ভাববার সময় পেলাম না। ঝাঁপিয়ে পড়লাম নদীতে। খুব বেশী জল ছিলোনা সেখানে। এই আমার বুক পর্যন্ত! মাছটির সাথে প্রায় কুড়ি মিনিট খুবই ধ্বস্তাধ্বস্তি করে জালে জড়াতে সক্ষম হালাম এবং তাকে নিয়ে পাড়ে উঠে এলাম। ওজন ছয়-সাত কেজির কম হবেনা। জল থেকে ডাঙ্গায় তুলতেই মাছটি যেনো নড়াচড়া বন্ধ করে স্থির হয়ে গেলো।

জালের প্যাঁচ খুলে মাছটি বের করতে গিয়ে আমার শরীরটা মুহূর্তের জন্য হিম হয়ে গেলো। চাঁদের আলোয় দেখতে পেলাম চার/পাঁচ বছর বয়সের ফুটফুটে একটি শিশুর লাশ! গায়ে সাদা গেঞ্জি, পড়নে কালো প্যান্ট। আমি জাল-বালতি ফেলে সোজা বাড়ির দিকে দৌড়াতে লাগলাম। আমাদের বাড়ির পাশে রাস্তার ধারে একটি কদম গাছ ছিলো। দৌড়াতে দৌড়াতে আমি সেই গাছটার নীচে এসে দাঁড়ালাম।

-কে মুনসুর?
আমি আশেপাশে তাকালাম। কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না।
-কে? কে কথা বলছো?
-আমি খোরশেদ।
-খোরশেদ? কই তুই?
-আমি গাছে। উপরের দিকে তাকা।
তাকিয়ে দেখলাম কদমগাছের উত্তরদিকের সবচেয়ে উচু ডালটায় খোরশেদ পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আমাকে হাত ইশারা করে বললো-
-উঠে আয়!
-আমি?
-নয়তো কে?
- তুই জানিসনা আমি গাছে উঠতে জানিনা!
- ও তাইতো! আচ্ছা দাঁড়া আমি নেমে আসছি।
এই বলে খোরশেদ ঝাপ দিয়ে ফাঁস দেয়া মানুষের মতো উপরে ঝুলে গিয়ে দাপাদাপি করতে লাগলো। আমি চিৎকার করে উঠে বাড়ির দিকে দৌড় দিতে গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে পরে গেলাম।

আমার যখন হুশ ফিরলো দেখলাম খাটে শুয়ে আছি। মসজিদের ইমাম সাহেব আমার মাথার কাছে বসা। তিনি কলেমা পড়ে আমার গায়ে ফুঁ দিচ্ছেন। আমার পরিবার ও প্রতিবেশীদের অনেকগুলো চোখ অপলক চেয়ে আছে আমার দিকে।"

মুনসুর সাহেব দেখলেন অর্চি আর তাবাসসুম বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ধারনা করতে পারলেন না যে ওরা গল্পের কতটুকু শুনেছে। বিৎদ্যুত তখনও আসেনি। কটা বাজে কে জানে! তারও চোখ বন্ধ হয়ে এলো।।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৩৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৯/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • কল্পনা বিলাসী ২২/১০/২০২০
    বেশ
  • বেশ ভালো লাগলো পাঠে।
    • শ.ম. শহীদ ২৭/০৭/২০১৯
      আষাঢ়ে গল্প...ভারো লাগায় আমোদিত হলাম।
      অনেক ধন্যবাদ।
      পাতায় ফিরলাম বহুদিন পর।
      বিলম্বিত সাড়ার জন্য ক্ষমা করবেন প্রিয়।।
      ভালো থাকুন।
  • খুব ভালো
    • শ.ম. শহীদ ২৭/০৭/২০১৯
      আনন্দিত হলাম।
      অনেক ধন্যবাদ।
      পাতায় ফিরলাম বহুদিন পর।
      বিলম্বিত সাড়ার জন্য ক্ষমা করবেন প্রিয়।।
      ভালো থাকুন।
  • কল্পনার পরিধি বেশ বিস্তৃত।
    ভয় থাকলেও রসালো হয়েছে।
    এভাবেই চলুক না গল্প লেখা।
    • শ.ম. শহীদ ২৭/০৭/২০১৯
      চালাতে আর পারলাম কই
      পেট চালাতেই ব্যস্ত রই!!
      _____________
      অনেক ধন্যবাদ।
      পাতায় ফিরলাম বহুদিন পর।
      বিলম্বিত সাড়ার জন্য ক্ষমা করবেন প্রিয়।।
      ভালো থাকুন।
  • গা ছমছমে
    • শ.ম. শহীদ ২৭/০৭/২০১৯
      যদিও গল্পে শ্রাবণ মাস
      তবুও গল্প আষাঢ়ে চাষ!
      ____________
      অনেক ধন্যবাদ।
      পাতায় ফিরলাম বহুদিন পর।
      বিলম্বিত সাড়ার জন্য ক্ষমা করবেন প্রিয়।।
      ভালো থাকুন।
  • লিখন মাহমুদ ০৮/০৯/২০১৮
    বেশ ভালো লাগলো।
    • শ.ম. শহীদ ২৭/০৭/২০১৯
      অনেক ধন্যবাদ।
      পাতায় ফিরলাম বহুদিন পর।
      বিলম্বিত সাড়ার জন্য ক্ষমা করবেন প্রিয়।।
      ভালো থাকুন।
 
Quantcast