www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

শীতের শরীরে মেঘহীন বসন্তের গল্প

তপ্ত রৌদ্রে তৃষ্ণার্ত ক্লান্ত শরীর বয়ে নিয়ে যাওয়ার বিরামহীন সময় চলছে যেন অনন্ত যন্ত্রণার দিকে।সে যন্ত্রণায় ঠিক সুখ নাকি দুঃখ,নাকি এটা কোন মেঘহীন বসন্তের তীব্র সস্তির নিঃশ্বাসের ঠিকানা খোঁজার একটা সেতু হিসেবে চলেছে বোঝার উপায় নেই। মস্তিষ্কে-মগজে,চিন্তায়-মননে,সময়ের সাথে সাথে নদীর মতোই প্রবাহিত হওয়া দরকার তাই হয়তো ছুটছি, অগ্রসর হচ্ছি আগামীর পথে ভবিষ্যতের দিকে।জীবনের চেয়ে জীবিকাই যখন মূখ্য সেখানে জীবন নেই, শুধু প্রাণটা বাঁচিয়ে চলেছি দিনের পর দিন।আজকাল জীবনের পরিচর্যার তেমন একটা সময় মেলে না। সময় যেটুকু মেলে প্রাণটাকে কোন রকম বাঁচিয়ে আগুনে ঝাঁপ মারো, সমুদ্রের প্রবল স্রোত গভীরতার মাঝখানে কিংবা পাহাড়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ থেকে লাফ দাও।এখানেআরাম-আয়েস,আমোদ-প্রমোদ,বিলাসিতা বলতে অভাব অনটন,হিসেব-নিকেশ,দুঃখ-কষ্ট বিলোতে বিলোতে যতটুকু সুযোগ পাওয়া যায় সেটুকুই প্রাণ ভরে উপভোগ করতে পারলেই একটা স্বাধীন প্রাণে জীবনের সঞ্চারণ ঘটতে পারে। নতুবা যে অন্ধকার ঘরে শীতের শরীরে হালকা চাঁদর মুড়িয়ে তীব্র শীতে থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে যে একটা সুন্দর মেঘহীন বসন্তের স্বপ্ন সেটা স্বপ্নই থেকে যাবে। রাতে অসহ্য যন্ত্রণা নিয়ে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে আজ ওকে কাল ওকে অকপটে গালিগালাজ করি। ভোর রাতে ঘুমোতে যেয়েও মনে আঁশ মিটে না তখন নিজেই নিজেকে বেধুমচে গালিগালাজ শুরু করি।কি হয় তাতে?হয়তো মানসিক একটা প্রশান্তি পাওয়া যায়, এর বাইরে কিছু না।আজকাল ভাল লাগাটা পালটে গেছে। ছোট বেলায় যখন ছিলাম টাকায় চারটা মিষ্টি চকলেট,দুইটা ঝাল চকলেট,দুইটা ছেঁড়া জুতার ফিতা দিয়ে আটা মেশানো তেঁতুল(নামমাত্র) আচার,এক মগ গম কিংবা ধান দিয়ে একটা কিংবা দুইটা নারকেল মেশানো বরফ আইসক্রিম,লোহার টুকরো,ভাঙ্গা মরচে পড়া টিন জমিয়ে রেখে কবে আসবে হাওয়াই নাড়ু ওয়ালা তার অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকা,কাছায় মারবেল,সিগারেটের খামের তাস, ভাঙ্গা পাতিলের কড়ি নিয়ে শীতের সকালে বেড়িয়ে পড়া,বিকেল হলেই গোল্লাছুট, বৌচি,ঘুড়নিবাতাস,দাঁড়িয়াবান্ধা,হা-ডু-ডু,ডাঙ্গগুলি(ইরি,বিরি,তিরি,চাল.....),দুই দলে ভাগ হয়ে ঢিল ছুড়াছুঁড়িতে যতটা ভাললাগা কাজ করেছিল এই বিশাল ক্যাম্পাসে বিশাল বিশাল গেমস রুম আমাকে ভাললাগা দিতে পারে নাই।সেই খোলা বাতাস আমাকে যতটা প্রশান্তি দিয়েছিল এই বিশাল বিশাল ক্লাস রুম আমাকে ততটা প্রশান্তি দিতে পারে নাই।তখন যতটা মুক্ত বিহঙ্গের মতো সময় কাটিয়েছি এখানে যদিও মুক্ত বিহঙ্গের মতো চলেছি সত্যিই কতোটুকু চলেছি আর কতটুকু উপভোগ করেছি আজো সংশয় কাজ করে। এখানকার বাতাস বিষাক্ত।এখানে আমাকে যতটা উন্নত হওয়ার জ্ঞান দিয়েছে ঠিক তার চেয়ে বেশি দূরে ঠেলে দিয়েছে। এখানে আসার পূর্বে মনে হতো এখানে পৌছালেই একটা মেঘহীন বসন্তের স্পর্শে পৌছে যাবো। এটা যেন সেই ছোটবেলার না পাওয়া ভালবাসা গুলোর মতোই। প্রত্যন্ত গ্রামে বসবাসের ফলেই হয়তো মায়ের তিক্ত ভালবাসা গুলো পাওয়া হয়েছে। বাবার অবহেলার ভালবাসা গুলো পাওয়া হয়েছে। ছোট বেলায় যেদিন জ্বর হলো মা ভাঁটি গাছের সেই কড়া তেঁতো বিষাক্ত রস খাইয়ে দিল সেই মুহুর্তে মনে হলো সে শত্রু কিংবা রাবনের বোন নিকষা কিংবা আর যাই হোক হতে পারে, আমার মা হতে পারে না।বাড়ির কোণায় নিতান্ত অসহায়ের মতো পরে আছি তবু মায়ের যেন চোখ পড়ছে না। এটা করে ওটা করে সাথে বিড়বিড় করে কারো উপর রাগ করে,ক্ষেপে গিয়ে বোকা ঝোকাও করে, তার উপর আমি যখন মায়ের কোলে উঠতে চাই মা তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে যখন আছাড় মারে পিঠের উপর কড়া দু ঘা মারে তখন মনে হয় মা জাতটার মতো জঘন্য আর কিছুই হতে পারে না।আমার প্রতিদিন এক খাবার খেতে ভাল লাগে না, যাতে ডিম ভাজি করে দেয়, আমার পাশের বাড়ির মানুষ জন যখন ভাল কিছু রান্না করে তখন আমিও খেতে চাইলে তা রান্না করে দিতে বললে মা যখন তার কোন তোয়াক্কাই না করে কোন কিছুই আমার জন্য করে না।অমাবস্যার মতো অন্ধকার প্যাঁচার মতো মুখ করে মাকে অনুসন্ধ্যান করে মায়ের কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে কাছে গিয়ে রাগে আগুনের ফুলকির মতো চিৎকার করে যখন বলি কাল রাতে যে বললাম তুমি রান্না করো নাই কেন? তোমার কাজ রাখো, আমার কথা আগে শোনো।কাজে বিরক্ত করছি বলে মা যখন একনাগারে বোকা দিতে দিতে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে যখন মারতে তেড়ে আসে তখন মনে হয় এই মা আমার আপন মা না। আর যাই হোক মা হতে পারে না।আজ রাতে বাবা আসুক সব বলে দিবো। বাবার সাথে সারাটাদিন তেমন দেখা হয় না রাতে যখন ঘরে ফিরে ততক্ষণে আমার এক ধাপ ঘুম হয়ে গেছে তাই মায়ের নামে বিচার দেওয়া আর হয়ে ওঠে না।বাবাটাও এমন করে প্রায় সময় কোন কিছু আনতে বললে ভুলে যায়।আমার যেন গুরুত্বই নেই।অসহ্য রকম নিজের উপর বিরক্ত লাগে।মনে এই পৃথিবীতে আছি কেন? এখানে আমার মূল্যায়ন নেই।এই পৃথিবী আমার নয়।বাবার যেন অবহেলার সন্তান।সারাটাদিন টইটই করে ঘুরে,খেলে, জামাকাপড়, বিছানা নষ্ট করি শীতের সকালে তীব্র বরফের মতো ঠান্ডা পানিতে নেমে বকতে বকতে পরিষ্কার করে শুকোতে দেয় একটা দিন জ্বর জ্বর লাগে না সর্দি লাগে না।তখন মনে হয় মা জিনিসটা এমনই।তাদের শরীর শীতের শরীর। আস্তে আস্তে কালক্রমে কখন বড় হয়ে উঠলাম বুঝে ওঠা হলো না।তবে তখনকার যে খারাপ লাগাগুলো আমাকে শীতের তীব্র ঠান্ডার মতো অনুভুতি দিয়েছিল সেখানেই ছিল মায়ের তিক্ত স্নিগ্ধ গভীর ভালবাসা গুলো।বাবার সেই না দেখা পাওয়া দিন গুলোর মাঝেই ছিল অবহেলার কোলে অধিক প্রেমময় পবিত্র ভালবাসা গুলো।সেই কষ্ট গুলোর ভেতরেই ছিল অসংখ্য সুভাসমিশ্রিত বাহারি রঙ্গের বসন্তের গোলাপ,টগর,পলাশ।পৃথিবীর বাতাস পানি কিছুই দেখার সৌভাগ্যটুকুও হয় নাই। দুইটা শীতের শরীর আমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে। মেঘহীন বসন্তের স্বপ্ন।বর্ষায় তীব্র বর্ষনে ঘরের চালা উড়বে না, মধ্যরাতে দুঃচিন্তা হবে না, শীতের রাতে তীব্র শীতের প্রকোপে থর থর কাঁপতে কাঁপতে রাত্রি যাপন হবে না। স্বর্গ নেমে আসবে, দেবতারা হাহাকার করবে, চাঁদটা কিনে নেওয়া হবে,সারাক্ষণ পূর্ণিমার পূর্ণ জ্যোৎস্না আঙ্গিনায় ঝলঝল করবে।চারদিক চাঁদের হাট বসবে হুইহুল্লোর হবে।তখন বিনিময় প্রথার বহুকাল পূর্বের সেই মানুষটাকে খুঁজে পেতে ইচ্ছে করে। মনে হয় তাদের আবার কবর থেকে তুলে এনে গল্প করি। কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেই।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৩০৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৫/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast