www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমরা দৌড়াচ্ছি অসুস্থ প্রতিযোগিতায়

সবাই বলে প্রতিযোগিতার নাম সফলতা।সফলতা পেতে হলে প্রথমে প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করতে হয়। অন্য কেউ পারে নি আমি পেরেছি এটাই আমার সফলতা। কারণ প্রতিযোগিতা করে বিজিত হয়েছি।আসলেই কি আমি প্রতিযোগিতায় নেমেছি? আসলেই কি বিজিত হতে পেরেছি নাকি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় জড়িয়ে পড়েছি। সফলতার সঠিক জ্ঞান কি? সঠিক সংজ্ঞায়ন কি?সফলতা মূলতই কোথায়? সফলতার সরূপ,সফলতার উৎস কোথায়? আসলেই কি কখনো খোঁজার চেষ্টা করেছি?এখানেই দর্শন এর উপলব্ধি, দর্শনানুরাগী,জ্ঞান পিপাসু মানুষের কৌতুহলে জাগ্রত হয়।
হয়তো রবীঠাকুর,জীবনান্দ,নজরুল,সুকান্ত কিংবা তারও আগে বডু চন্ডীদাস, শাহ মুহাম্মদ সগীর কিংবা কাহ্নপা,লুইপা পর্বতচারী গুহাবাসী সাধকগোষ্ঠী বর্বতার মাঝেই সফলতার সান্নিধ্য পেয়েছিল। আমার কাছে প্রযোগিতাই আমাদের তীব্র থেকে তীব্রতর অসুস্থ বানিয়ে ফেলছে।টাকার পেছনে টাকা পচা বাসি কাগজের জন্য মুখ চুবাচ্ছে নর্দমায়।মুখে কালি মাখছে।দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে দুনিয়ার তন্দ্রে রন্ধ্রে বাতাসের কণায় কণায় লেগে যাচ্ছে পচা বাসি গন্ধ, চাপিয়ে দিচ্ছে অসুস্থ প্রতিযোগিতার মঞ্চে। ছিটাছিটি করছে এর গায়ে ওর গায়ে,এর গোত্রে ওর গোত্রে,ভরছে পকেটে,বস্তায়, লকারে, সিন্ধুকে,মাঝে মাঝে চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে, গন্ধ শুকছে। পরক্ষণেই বর্ষার ঘনকালো ঘুটঘুটে মেঘরাশির মতো কালো অন্ধকারে ছেয়ে যায় মুখ মন অতৃপ্ততায় ছটফট করে তার এইটকু পচা কাগজের গন্ধে মন ভরে নাই তার আরো চাই। কোথায় গেলে পাওয়া যাবে ছটফট করে। নেমে পড়ে সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতায়।কখনো কখনো পৌছে যায় সমাজে রাষ্ট্রে।হয়তো কখনো কাউকে লেঙ্গী মারছে,কারো বুকে পাথর চাপা দিচ্ছে,পায়ের উপর চেয়ারের পায়া চাপা দিয়ে আরাম করে বসছে।ভাতের থালায় বালু ছিটাচ্ছে, কারো গোত্রে চালিয়ে দেয় লাগামহীন উদাত্ত অশ্বধারা। ছিটায় বিষাক্ত কটুদৃষ্টি,অবজ্ঞার সব থুথু।পচাবাসী কাগজের জন্য প্রতিযোগিতা চলছে। কে কতো পচাবাসী কাগজের গন্ধ গায়ে মাখতে পারে। ফুলের সুভাসের পিছনে কেউ ছোটে না। কি হবে সেদিকে ছুটে সেদিকে তো কোন প্রতিযোগিতা নেই। থুথু, মুত্র, মাখানো পচা বাসি কাগজ গুণতে সকলে ব্যস্ত।আজ সম্মান আত্মমর্যাদা তাদের স্বকীয় অবস্থান হারিয়েছে। সম্মান আত্মমর্যাদা গৌরব নিজস্ব স্বকীয়তাতে নেই। তারাও আজ যেন পচাবাসি গন্ধযুক্ত অসুস্থ প্রতিযোগিতার ভীড় ভীড় করছে। সম্মান আজ কাঁচা লংকা আর নুন পান্তা ভাতে নেই। সম্মান আত্মমর্যাদা আজ বশ্যতা স্বীকার করেছে। মহাভারতে যদি পঞ্চপান্ডব আর কুরুবংশের সেই অসুস্থ প্রতিযোগিতা না শুরু হতো তবে হয়তো সর্ব সমক্ষে দ্রোপদীর সম্মানহানী হতো না। কর্ণকে লাঞ্চনায় প্রবঞ্চনায় জীবন অতিবাহিত করতে হতো না। পান্ডবদের জীবন বনে অতিবাহিত হতো না। দময়ন্তীর পতিভক্তি মলিনতায় মুহ্যমান থাকতো না। কুরুক্ষেত্রের মতো বিষাক্তযুদ্ধ সংগঠিত হতো না।আজকাল সম্মান লাভে, আত্মমর্যাদা অক্ষুন্ন রাখতে উচ্চশিক্ষায় ও চলছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। সামনে সারিতে থাকতে, ভাল নম্বরের আশায়,পচাবাসী ম্যাড়ম্যাড়ে সনদ খানা চকচক করতে চলছে বিদ্বানের বাড়ি অফিস বাজারের ব্যাগ বহনে চাটুকারিতা। রবীন্দ্রনাথ প্রতিযোগিতা করেছেন নিজের সাথে,পরমসত্তা জানার কৌতুহলে, প্রকৃতির সাথে। জীবন অতিবাহিত করেছেন জ্ঞানের সন্ধানে। ময়লাধরা মরিচা পড়া ইদুঁরে কেটে দেবার ভয়ে অতি যত্নে রাখা কয়েক টুকরো ম্যাড়ম্যাড়ে কাগজের জন্য ছুটেন নাই। পন্ডশ্রম করেন নাই।তবু তার জ্ঞানের কমতি নেই। সাহিত্য, দর্শন,ধর্ম,সমাজ,রাজনীতি, শিক্ষা প্রতিটি অঙ্গনেই রেখে গেছেন অসামান্য অবদান।কাহ্নপা,লুইপা,ঢেগুন পা তাদের কোথাও উদ্ধৃত হয় নাই যে তারা কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নিয়েছিলেন কি না। ভাঙ্গা ঘরেই রচিত হয়েছে জন মানুষের কথা।রবীঠাকুর ঘাটলে কোথাও দেখতে পাওয়া যাবে কি না তিনি অসুস্থ প্রতিযোগিতায় জড়িয়েছিলেন কি না।আমার জানা নেই। সক্রেটিসের বিখ্যাত সেই উক্তি "আমি কিছুই জানি না আমি জানার চেষ্টা করি।"সেই সক্রেটিসই দর্শনে নতুন সূচনা এনে দেয়। মানুষের মস্তিস্কে চিন্তার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। ভাবতে শিখিয়েছেন। আদর্শ রাষ্ট্র গঠণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। অথচ জীবন যাপন করেছেন সাদামাটা।কোন অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাকে স্পর্শ করেনি। যুব সমাজ যখন তাকে অনুসরণ করতে শুরু করলো অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাকে ফাঁসির মঞ্চে চড়ালো। তাকে বাজতে দিলো না।তারই শিষ্য প্লেটো রাজনীতি,রাষ্ট্রে নতুন দিগন্ত সূচনা করলো। সবাই হয়তো বলবে প্লেটোর রাষ্ট্রনীতি এখন চলে না কিন্তু গভীর দৃষ্টি দিয়ে দেখলে বোঝা যাবে তার তত্ত্ব ভেঙ্গে ভেঙ্গে হলেও এখন মেনে চলি।এখনো রাষ্ট্র গঠনে তাকে পাওয়া।দর্শন চর্চা তাকে রেখে করা যায় না। নজরুল অনাথ শিশুটি অসুস্থ প্রতিযোগিতা উপেক্ষা করে লিখে গেছেন বিদ্রোহের সব লিপিমালা। গেঁথে গেছেন অজস্র সব বিদ্রোহী কবিতা অসুস্থ প্রতিযোগিতার বিপরীতে। অসুস্থ প্রতিযোগিতা তাকেও কুড়ে ঘরে শান্তিতে ঘুমতে দিলো না। কারাগারে বন্দি করা হলো। নিষিদ্ধ করা হলো তার কবিতা। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় সুস্থ প্রতিযোগিতার স্থান নাই। এখন প্রতিযোগিতা চলে ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে। নিজের সাথে জ্ঞানানুরাগে কোন পরতিযোগিতা নেই। কে কত পচা বাসি দুর্গন্ধ যুক্ত থুথু মূত্র ভরা অশৌচ কাগজ খানা হাতে নিলেই গায়ে যেন গরম লেগে যায়। বিদ্যুৎ ঝলকানিতে চকমক করে। এমনভাবে উদ্যত্ত ভাব বজায় চলে যেন সম্মান গৌরব গাঁথা পকেটে পুড়ে নিয়েছে। লালসালু উপন্যাসে তাই সৈয়দ ওয়ালিউল্লাহ বলেছেন,"মানুষের চেয়ে আগাছা,ধর্মের চেয়ে টুপিই বেশি।" মজিদ রূপি মানুষে পুরো পৃথিবী ছেয়ে গেছে। আজ নিজ সম্প্রদায়ের উন্নয়নে যতটা না চর্চা চলে তার থেকে অন্য সম্প্রদায়ের সাথে সাদৃশ্য বৈসাদৃশ্য খুজতেই ব্যস্ত। অধিক শ্রম সেখানেই পন্ড করা হয়। সম্প্রদায়ের কোন পদক্ষেপে সম্প্রদায় উন্নত জীবন যাপন করবে সেখানে মেধার কোন বিনিয়োগ নেই। মন্দিরে আত্মোন্নয়ের সুফল সম্পর্কে যতটা না আলোচনা করা হয় তার থেকে কতো জন মন্দির প্রাঙ্গনে আসলো সেটারই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত। মসজিদে নামাজ কেন পড়বে তা নিয়ে যত চর্চা চলে তার থেকে মসজিদে মানুষের সংখ্যা বাড়লো কি না সেটাই চর্চা চলে। এখন সব সম্প্রদায়ই চলে নব্য সদস্য কে কত জন বাড়াতে পারলো। সেই প্রতিযোগিতাই চলছে। যতটা না ধর্মের চর্চা চলছে তার থেকে অধর্মের চর্চাই বেশি। মনুষত্বের অবক্ষয়, আর নির্মম অমানবিক কর্মকান্ডই বেশি।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ২৬৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৭/০৬/২০২১

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast