www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিঝুম অরণ্যে সারাবেলা

কিছু দিন যাবত অফিসে কাজ খুব মাত্রায় বেড়ে গেছে। সময় সুযোগের অভাবে বাসায় মাকেও সময় দিতে পারছিনা। আম্মু অসুস্থ কিছু দিন যাবত ডায়বেটিকটস এর মাত্রাটা বেড়ে গেছে। মাত্রাটা এতো পরিমান বেড়ে গেছে যে রিতিমত ইনসুলিন মাংসে ঢুকিয়েরও নিয়ন্ত্রনে আনা কষ্টকর। সারা দিন এতো কাজের শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন ক্লান্তিতে চোখে ঘুম চলে আসে। চাইলেও জেগে থাকতে পারিনা।

নিঝুমের সাথে সেই গত রাতে এক বার কথা হয়েছে। প্রথম পরিচয়ের পর থেকে আজও পর্যন্ত একটি সেকেন্ডের জন্যও মেয়েটি আমার খবর নিতে ভুলে না। মেয়েরা পারে কি করে এতো সব মনে করতে ? কখন খেয়েছি? কখন রেস্ট নিবো, কখন ঘুমাবো সবই যেন ওর বেধে দেয়া সময়ের মধ্যেই করতে হবে? উফফ আর পারিনা !

সামনে তো কিছু বলতে পারিনা তাই ওর পেছনে এই অভিযোগটা করে নিলাম। তবে ও খুব ভালো একটা মেয়ে। আমি ওকে খুব ভালোবাসি। ভালোবাসবোই বা না কেনো? এমন একটা লক্ষি বঊ কি সবার ভাগ্যে জোটে নাকি? কি ভাগ্য করে আমি ওকে পেয়েছিলাম আল্লাহ মালুম।

আপনাদের বোধহয় মনে খটকা লাগছে আমি ওকে বউ বললাম কেনো ? ও তো আমার প্রেমিকা। আরে চুপ জান, ও আমার প্রেমিকা নয়। রবি ঠাকুর তার হৈমন্তী গল্পে অপুর মুখ দিয়ে বলিয়েছিলো “ সে আমার সম্পত্তি নয়, সে আমার সম্পদ” হ্যা আমার জন্য কথাটা যথাপোযুক্ত বলে গেছে রবি দাদু। আমার ধ্যানে, জ্ঞানে, অজ্ঞানে আমি ওকেই খুজে বেড়াই। ওর কথা ছাড়া জগতের আর কোন ভাবনা যে কেনো ভালো লাগে না তাই বুঝতে পারি না। তাই বার বার বলতে ইচ্ছে করে – আমি পাইলাম, ইহাকে পাইলাম।

সেদিন সন্ধার মধ্যে বাসায় ফিরতে পারলাম অনেক কষ্টে। ঘরে ফিরার পর মূহুর্তে আম্মু এসে বলে গেলো- - এই শোন, তোর বাবার তোর সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলতে চায়।
- আমি আকাশ থেকে পরি। আজব এই সাজ সন্ধায় আমি আবার কি করলাম যে বাবা আমার সাথে এতো জরুরী বৈঠক ডেকে বসেছেন। মনে মনে ভাবনার জগত ঘেটে ঘেটে ধুলা উড়িয়ে দিলাম কিন্তু সঠিক হেতু বুঝে উঠতে পারলাম না। শুধু ভাবছি বাবা তো আমার সাথে বেশি কথা বলেন না। তো কি এমন ঘটনা ঘটলো? ধুর ছাই কি ভাবছি আমি ? বাবা যা বলার বলবে, আগেতো শুনে আসি?
যথারিতি ফ্রেস হয়ে বাবার রুমে আমার পদার্পন। বাবা খাটে শুয়ে পত্রিকা পড়ছিলেন। বললাম বাবা ডেকেছো আমাকে ? কোন সমস্যা বলতো?
বাবা খুব ধিরে ধিরে পত্রিকাটা পাশে রেখে দিলেন। খুব নিচু সরে আমাকে বললেন বসো বাবা আমার পাশে বসো। আমি বসলাম।
বাবা বলতে শুরু করলেন- দেখো বাবা তোমার মা ডায়বেটিকসের রোগি, আমারও শরীরটা বিশেষ ভালো যাচ্ছেনা। তুমিও বাসায় থাকোনা। সারা দিন কিভাবে যায় তা শুধু আমি আর তোমার মা জানি।
আমি বললাম, বাবা সব বুঝলাম কিন্তু আমি কি করতে পারি তোমাদের জন্য তাই বলো?
বাবা বললেন যা করার তোমাকেই তো করতে হবে বাবা? আমি ২য় বারের মত আকাশ থেকে পড়লাম। আমি কি করবো সেটাতো বল আগে?
বাবা খুব গম্ভির গলায় বললেন, আমরা তোমাকে বিয়ে দিতে চাই বাবা।
এ কথা শুনে খুশিতে প্রানটা নেচে উঠছিলো, মনে মনে হৃদয়টা বুকের ভেতর থেকে বেরিয়ে যেন লাফিয়ে ঊঠতে চায়। কিন্তু ছেলে মানুষতো এতো সহজে মেনে নিলে নিজের ইজ্জত পামচার হয়ে যাবে না? তাই একটু ভাব নিয়ে বললাম বাবা কি যে বল না ? আমার কি বিয়ের বয়স হয়েছে নাকি ? আমি এখনো কত বাচ্চা, বলে লুতুপুতু ভঙ্গীতে লজ্জা পেতে থাকলাম।

বাবা বললেন, হয়েছে হয়েছে লজ্জা পেতে হবেনা। বুঝতে পেরেছি তুমি রাজি আছো। এখন বল মেয়েকি আমরা দেখবো নাকি তোমার কোন পছন্দ আছে?
আমি ৩য় বারের মত আকাশ থেকে পড়লাম। বিয়ের কথা ভাবতেই। নিঝুমের মায়াবী চেহারাটা চোখের সামনে জলজল করে উঠে। কিন্তু আবার কাছে কি করে নিজের প্রেমের কথা বলি? লজ্জায় নিজের মাঝে নিজেই কাচুমাচু করে উঠলাম। রবি দাদুর হৈমন্তীতে অপু যে ভুলটা করেছিলো আমিও ঠিক একই ভুল করে বসলাম । মুখে ফুটে পছন্দের কথা বলতে পারলাম না। মনে মনে ভাবছি আমার এই কাপুরুষতার কথা যদি নিঝুম জানতে পারে তবে ও আমাকে কি ভাববে? আমার প্রতি এতোটা বিশ্বাস নিয়ে যে মেয়েটা প্রতি রাতে ঘুমাতে যায় তার বিশ্বাসটা আমি ভাঙ্গলাম কি করে ?
না এ আমি কিছুতেই করতে পারি না আমি তো অপু নই, আমি অরণ্য। অরণ্য এতো সহজে নিজের ভালোবাসাকে ব্যর্থ হতে দিতে পারেনা।

সেদিন রাতে আর ঘুম হলনা দুচোখে। শুধু ভাবছি এ আমি কি করলাম ? বাবার কাছে আমি কেন বলতে পারলাম নিঝুমের কথা? হায় হুতাস করে করে দুপুর বেলা নিঝুমের ফোন আসলো আমার মোবাইলে।
- হ্যালো অরণ্য?
- হ্যা বলো নিঝুম?
- গত কাল আম্মুর সাথে খালামনিদের বাসায় চলে এসেছি , ফোনটা অফ হয়ে গিয়েছিলো তাই তোমাকে কল করতে পারি নাই সোনা রাগ করনা।
- না না না লক্ষিটি রাগ করবো কেনো?
- কিন্তু একটা প্রশ্ন হচ্ছে তুমি হঠাৎ খালামনির বাড়ী কেনো গেলা? কোন বিশেষ কাজ আছে নাকি?
- আরে আর বইলোনা, আম্মু বললো খালার নাকি কোন আত্নীয়র সাথে আমাকে দেখা করাতে নিয়ে যাবে। তাই ইচ্ছা না থাকা শর্তেও খালামনি আর আম্মু জোর করে নিয়ে আসছে আমাকে তাই আসার সময় তোমাকে বলতেও পারিনি বাবু? তুমি কিন্তু আবার রাগ করনা। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে নিও আর আমার জন্য দোয়া কইরো।
- আচ্ছা লক্ষি পাখিটা।

বলে ফোনটা কেটে দিলাম। কিন্তু আমার মনে বার বার প্রশ্ন আসতে লাগলো কি ব্যাপার নিঝুমকে আবার বিয়ে টিয়ে দিয়ে দেওয়ার ধান্দা নয়তো? হে আল্লাহ এমন টা যেন না হয়। তাহলে আমার কি হবে? তৎক্ষণাৎ আমার ভিতর থেকে জলজ্যান্ত আরেকটা অরণ্য বেরিয়ে এসে আমার সামনের চেয়ারে বসল। আমি তো ভয়ে অস্থির। ওরে বাবা তুমি কে ? খুব সুন্দর করে খেয়াল করলাম ঐ নরপিচাশটা অবিকল ঠিক আমারই মত। আমি বললাম এই এই তুমি কে ? ও আমাকে বলল- ভয় পেওনা আমি যে, তুমি সে। আমি হিসাব মিলাতে বসে গেলাম। নিচ দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করছি আর বির বির করে বলে চলেছি – আমি যে, তুমি সে, আমি যে তুমি সে। এরই মাঝে হঠাৎ তার কন্ঠ থেকে শুনতে পেলাম, “আরে তুই একটা গাধা, বিলাই, ছাগল, রাম ভেড়া, তা নাহলে নিজের ভালোবাসার কথা বাবাকে বলতে পারিস না আর প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে কিনা সেটা ভেবে মরিস?” আমি তার দিকে ফিরে তাকাতেই দেখি পিওনটা চায়ের ট্রে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বিরবির করে হাসছে।

মাথাতো পুরাই নষ্ট ধুর সালা চাকরীই করবোনা। আজ আমার এক দিন কি বাবার এক দিন। বাসায় গিয়ে জোড় গলায় বাবাকে বলে দিবো আমি নিঝুমকে ভালোবাসি আর ওকেই বিয়ে করবো। যে কথা সেই কাজ।
সন্ধার আগেই বাসার কলিং বেলটা বাজিয়ে দিয়ে দরোজায় বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে পরলাম। আসুক আজ মা, দেখবে তার ছেলে কত সাহসী। কিন্তু দূর্ভাগ্য বুঝি আমাকে ছাড়ে না। দরোজা খুলে দেখি বাবা?

বুকটা অটোমেটিকেলি নিচে নেমে গেলো ভয়ে। সাথে সাথে আমার অন্তর আত্না আমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্রা শুরু করে দিলো? হাহাহাহাহা অরণ্য বাবু তুমি যে কত সাহসী । আমি চিৎকার করে উঠলাম এই চুপ এই চুপ।
যথারিতি বাবার ঘরে আবার আমার তলব পড়লো। এবার ভাবলাম মাথাটা উচু করে ঘরে ঢুকবো। কিন্তু ঘরে ঢুকার আগেই আমার গায়ের রক্ত হিম শিতল হয়ে গেলো। আমার ভিতরে বসে থাকা আরেক আমি আমাকে সাহস দিতে চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে গেলো।
বাবা হাসি মুখ করে আমাকে বললেন, তুমিতো বলেছিলে তোমার কোন পছন্দ টছন্দ নেই। তাই তোমার জন্য একটা মেয়ে ঠিক করেছি কাজ আমরা দেখতে যাবো। আমি বললাম বাবা শোনো একটা কথা আছে আমার। বাবা কোন কথা শুনতে রাজি নন বললেন যা শোনার কাল শুনবো আগে মেয়ে দেখে এসো।

সারটা রাত নিঝুমকে ফোন করলাম কিন্তু ঐ ফাজিল মহিলাটা বার বার যখনি বলছিলো “এই মুহুর্তে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা” কান্নায় চোখ ভিজে যাচ্ছিলো আমার। আমার মনে হচ্ছিলো নিঝুমকে বুঝি আমার হারাতে হবে। আমি ওকে কথা দিয়েছিলাম জীবনে মরনে সব সময় সংগে থাকবো কিন্তু এ আমি কোন পরীক্ষায় পরলাম? আমারত ভাগ্যটা এতো খারাপ কেনো?
.
সকালে উঠে বাসায় হই হই রব পরে গেছে। বড় আপু আসলো, দুলা ভাই তার বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে বাসায় হাজির । আমাকে দেখে দুলাভাই পেটে মোচর দিয়ে বলল, “শালা এবার কোথায় পালাবা? দিল্লিকা লাড্ডু খেয়ে দেখো এবার কেমন লাগে?” আমি দুলা ভাইকে ধরে কেদে দিলাম। আমার অবস্থা দেখে দুলা ভাই কিছুটা বুঝলেন। টেনে আমার ঘরে নিয়ে গিয়ে সব কথা জিজ্ঞেস করলেন। আমি নিঝুমের বেপারে সব বলে দিলাম। দুলা ভাই খুব বুদ্ধিমান মানুষ, আমাকে বললেন, শালা বাবু কোন চিন্তা করনা, দেখার কাজ দেখবা, শেষে জানিয়ে দিবা পছন্দ হয়নি ব্যস শেষ।

ঠিক তাই ভেবে ভেবে বাসা থেকে বের হলাম। দুপুর তিন্টার দিকে মেয়ের বাড়ীতে পৌছুলাম। নিজের কাছে নিজেকে কতটা ছোট লাগছিলো তা বলে আর কি বুঝাবো? বার বার শুধু আমার নিঝুমের কথা মনে হচ্ছিলো। ইস ও যদি জানতে পারে আমি কনে দেখতে গিয়েছি তাহলে আমাকে কি ভাববে?

খাওয়া দাওয়া শেষে, মুরুব্বিরা কথা বলছিলো, আমি সোফার এক কোনে চুপ করে বসে আছি। মনে মনে আল্লাহ্‌ র নাম নিচ্ছিলাম। দুলা ভাই বললেন, কই কোনে কে নিয়ে আসুন, সময় অনেক হয়েছে। কথাটা শুনতেই আমার বুকের ভিতর ধরফর করে ঊঠলো। আমি চোখ বুজে থাকলাম, এই মেয়ের মুখ যেন আমাকে না দেখতে হয়তা আল্লাহ্‌।

মেয়েটি ধির পায়ে এগিয়ে আসলো। ঘোমটা পড়া অবস্থায় বেশি কিছু দেখতে পারিনি। শুধু ওর চুলের বেনিটা দেখে আমিতো মুগ্ধ না হয়ে পারিনা। আমার নিঝুমের কথা মনে পরে যাচ্ছে বার বার। আমি ওর চুলের জন্য পাগল বিশ্বাস করুন, আমি ওর চুলের জন্য পাগল।
মনের কথা গুলো মনেই থেকে যায়। মুখ ফুটে এক বারোও বলতে পারলাম না আমি। মেয়েটির চেহারা দেখা হয়নি এখনো। দুলা ভাই বললেন, দেখি দেখি মেয়ের মুখটা দেখি? আমাকে কোনুই দিয়ে ধাক্কা দিয়ে ওদিকে দেখার ইসারা করলেন। আমি ওর দিকে তাকাতেই হতবাক !!!! ও আল্ললাহ এ কি করে সম্ভব? আমি এই মেয়েকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করবো না। আমি ওর জন্য পাগল, আমি ওর চুলের জন্য পাগল। এ মেয়ে আমার কল্পনায় বাস্তবে সদা বিচরন করা বালিকা, এ আমার ভালোবাসার শেষ কথা। এতো আমারই নিঝুম।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৯৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৯/২০১৮

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast