www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বেশ্যা

ইট পাথরে গড়া চারদেয়ালের এ শহরের ঐ ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত জনশূন্য রাস্তা, মানবহীন রাস্তাতে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় মানবীর প্রতিবিম্ব আরিফ সাহেবের দৃষ্টিগোচর হলো। সচরাচর এ রাস্তার পাশে আরিফ সাহেব কুকুরের প্রতিবিম্ব দেখে, আজ হঠাৎ মানবীর প্রতিবিম্ব দেখে; সত্যিই আরিফ সাহেবের মন ছ্যাঁত করে উঠলো। শুধু কুকুর যে দেখে তা নই, কাক নামক কুৎসিত পাখির আনাগোনা আছে এ রাস্তায়। এ কুৎসিত পাখির বিরুদ্ধে শহরের আর দশটা মানুষের মত অভিযোগ নেই আরিফ সাহেবের, এজন্য আবার উনার যৌক্তিক ব্যাখ্যাও আছে! কা কা এ কুৎসিত ডাকে ঘুম ভাঙ্গে আরিফ সাহেবের সেজন্য এ ডাককে কখনোই কুৎসিত বলতে নারাজ আরিফ সাহেব। আরিফ সাহেব সবসময় বলে থাকেন- কুৎসিত বলতে এ ধরিত্রীতে কিছুই নেই, এটা শুধু আমাদের চোখের ভুল মাত্র। চোখ আমাদের হৃদয় পুঞ্জের অব্যক্ত কথনে সাড়া দেয় মাত্র। আমরা যেটাকে যেভাবে বিবেচনা করি সেটা আমাদের সম্মুখে সেভাবে ধরা দেয় মাত্র।
-
ইট পাথরের নগরী চট্টলার বহদ্দারহাটে "পাখি ভবন" নামক মেসে আরিফ সাহেব থাকেন দুই বছর হলো। আরিফ সাহেব এ শহরে প্রথম যখন আসেন, তখন তিনি বাসা বাড়ির সংকটে পড়েছিলেন। এ শহরের কেউ ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না। ব্যাচেলর সম্প্রদায় নাকি বাসা বাড়ির মালিকের মেয়ে এমনকি বউয়ের দিকে ড্যাব ড্যাব চোখে কুনজরে থাকিয়ে থাকে। ব্যাচেলরদের মাত্রারিক্ত স্মার্টনেস আর মিষ্টি মধুর কথনে, প্রেম দরিয়ায় আজকাল বাসা বাড়ির মালিকের মেয়ে তো পড়েই; সে সাথে বাড়ির মালিকের বউও বেশি পড়ে যায়। সবই যেন এক ইন্দ্রজালিক খেলা! আজকাল প্রেম ভালোবাসা তিনটি জিনিস থাকলে আলাদীনের প্রদীপের মত ধরা দেয় বলে, আরিফ সাহেবের ধারণা- একটু হ্যান্ডসাম, মিষ্টি মধুর কথার ফুলঝুড়ি আর সময় । এ তিনটি জিনিসই নাকি আজ প্রেমের জন্য মুখ্য বিষয়। কোনমতে আরিফ সাহেব অনেক খুঁজাখুঁজির পর "পাখি ভবন" এ স্থান পেয়েছিলেন সেদিন। সে থেকে "পাখি ভবন" এ ব্যাচেলর সম্প্রদায়ে এ আরিফ সাহেবের পথচলা। ব্যাচেলর সংঘে নামটা খচিত করে হামিদ শিকদারের সাথে মেসে সিট ভাগাভাগি করে একসাথে পথচলা আরিফ সাহেবের।
-
"পাখি ভবন" এর মালিক এনায়েত উল্লাহ। বাসা বাড়ি ব্যাচেলরদের ভাড়া না দেওয়ার অন্যতম এক কারণ বিদ্যমান এনায়েত উল্লাহ'র । সে অনেক আগের কথা সুস্ময় নামে এক প্রাইভেট টিউটর পড়াতো এনায়েতের ৩য় শ্রেণীতে পড়ুয়া মেয়ে সাইফাকে। বেশ ভালো পড়াতো সুস্ময়, কথাবার্তায় মাধুর্যে ভরা ছিলো। আজকের যে পাঁচতলা ভবন তখন সেটা শুধু একতলায় ছিলো। তার মিষ্টি মধুর কথার মোহে প্রেমে পড়েছিলো এনায়েতের বউ পাখিজা বেগম ডাক নাম পাখি। বউকে মাত্রারিক্ত ভালোবাসতো, যার কারণে নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে শখের বাড়ি গড়ে তুলে নাম দেয় "পাখি ভবন"। আজকাল আধুনিকতার স্রোতে পাখিজা, জরিনা নামগুলোতে এসেছে বেশ পরিবর্তন। বর্ণের পিঠে বর্ণ বসিয়ে গড়া এসব নামের একটি বর্ণ পরিবর্তন করলে পরিবর্তন এসে সেটা (পাখিজা> পাখি, জরিনা>রিনা) আধুনিকতার ছোঁয়ায় জয়উল্লাসে ফেটে উঠে নামগুলো। আজকাল নামের সাথে যুক্ত বেগম, খাতুন, নাহার, বিবি এ শব্দগুলো নিয়েও আধুনিক ললনা সম্প্রদায়ের বেশ আপত্তি আছে।
-
সাইফা দেখতে অনেকটা এনায়েত উল্লাহ এর মত, কৃষ্ণ বর্ণের। পাখির সাথে সুস্ময়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অনেকদিনের, সাইফার পড়ার টেবিলে যখন সুস্ময়ের জন্য নাস্তা নিয়ে আসতো তখন থেকে ওদের চোখাচোখি শুরু; হাতের স্পর্শ হয়েছে অনেকবারই। ক্রমান্বয়ে ভালোলাগা হতে ওদের এ সম্পর্ক ভালোবাসায় গড়িয়ে যায়। এনায়েত উল্লাহর প্রতি পাখির অনিহার অন্যতম কারণ পাখির বয়সের সাথে এনায়াত উল্লাহর বয়সের পার্থক্য দশ বছরের। মন থেকে এনায়েত উল্লাহকে মেনে নিতে পারে নাই পাখি । কাজের চাপে বেশ কিছুদিন ঢাকায় অবস্থানরত এনায়েত উল্লাহ, বিয়ের পর থেকে আজ পর্যন্ত তেমন সময় দিতে পারে নেই এনায়েত উল্লাহ। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েদের দুর্বলতা হলো তারা পরিবারের কথা চিন্তা করে নিজের প্রেম ভালোবাসা বিসর্জন দেয় নিমিষেই, তবুও তাদের তৃষ্ণার্ত হৃদয় ভালোবাসার ছোঁয়া পেতে চায় বারেবারে। ভালোবাসার ঘাটতি হলে তাদের মনে আরেকজনের বসবাস শুরু হয়ে যায় নিজের অজান্তেই। এনায়েত উল্লাহ বাসায় নেই, এ সুযোগে আচমকা সাইফাকে সাইফার মামা সিরাজীর বাড়িতে রেখে সুস্ময়ের সাথে পালিয়ে ঢাকায় চলে যায় পাখি। পালিয়ে যাওয়ার সময় স্বর্ণ টাকা যত পেরেছে নিয়ে চলে গেলো পাখি।
-
পাখির পালিয়ে যাওয়ার খবর শুনে চারিপাশের সবকিছু অন্ধকার এনায়েত উল্লাহর। জীবন নামক এ অনিশ্চিত ভ্রমণে যে চলে যাওয়ার সে কিন্তু চলে যাবেই শত বাঁধা হয়তো তাকে আটকিয়ে রাখা যাবে না, এ রীতিতে বিশ্বাস করে যন্ত্রণার বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আশার মহড়ায় এনায়েত উল্লাহ। মাসখানেক পাখির সহিত হোটেলে থাকার পর সুস্ময়ও পাখিকে ছেড়ে চলে যায়।
-
এতদিন মুক্ত পাখির ন্যায় উড়ন্ত পাখি আজ চারদেয়ালের ঐ খাঁচায় বন্দী। বাহিরের আবহাওয়ায় আজ তার ধম যেন বন্ধ হয়ে যায়। মানুষীরা যত পাপ ভুল করুক না কেন, এসমাজ তাকে মেনে নিতে না পারলেও; তার শেষ আবাসস্থল মা-বাবা। পাখির ভাগ্যে সেটা জুটলেও, বাহিরের মানুষের ভিন্ন দৃষ্টির কারণে সে লজ্জায় আত্মহত্যা করে না ফেরার দেশের উদ্দেশ্যে গমন করে পাখি। মা হারানো সাইফা আজ সিরাজীর বউ জান্নাতীর হাতে মানুষ হচ্ছে। জান্নাতীর কোন সন্তান না হওয়ায় সাইফাকে লালন পালন করে সন্তান না থাকার খোরাক মিটাচ্ছে জান্নাতী।
-
পাখি না ফেরার দেশে চলে যাওয়ার পরে বিদেশে পাড়ি জমায় এনায়েত উল্লাহ। আজ পাখি ভবন পাঁচতলা বিশিষ্ট হয়েছে, বাড়ির দেখাশোনা এনায়েতের ছোট ভাই মাকসুদ ঐ করেন।
-
আরিফ সাহেবের দৃষ্টিগোচর হওয়া মানবীর প্রতিবিম্ব সম্মুখে গিয়ে দাঁড়াতে রেশমী কালো চুলে অপরূপ সৌন্দর্যমন্ডিত অঙ্গনা দেখতে পেলো আরিফ সাহেব। মানবীকে দেখে আরিফ সাহেবের মনে হলো- মানবীর দু চোখ কান্নায় জলসিক্ত হলো না ঠিকই কিন্তুু মনের ভিতরে বিরহ জ্বালায় জ্বলছে মানবীটি। আরিফ সাহেব কান্না নিয়েও গবেষণার ছক এঁকে মাঝেমাঝে বলে- শ্রাবণধারায় দু নয়ন জলসিক্ত হওয়া মানে শুধুই কান্না নই। নৈশব্দ কান্না নিস্তব্দ অন্তরালে মিশে থাকে। মেয়েটির স্নিগ্ধ মুখখানা আরিফ সাহেবের কেন জানি পরিচিত মনে হলো। হ্যাঁ, এ মেয়েটাকে প্রায় স্বপ্নে দেখে আরিফ সাহেব। স্বপ্নে, নির্মল বিকেলে আবছা অভ্যন্তরীণ আঁধারে পতিতাপল্লীর আশেপাশের রাস্তায় আরিফ সাহেবের সহিত দর্শন হয় এ মানবীর।
-
সচরাচর ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত এ শহরের রাস্তাগুলোতে নিশিরাতে ললনাদের চলাচল নেই বললে চলে। কিন্তু হঠাৎ এ নিশিরাতে ইটপাথরের এ রাস্তায় মানবীর অস্তিত্বের অবস্থান বুঝতে পেরে আরিফ সাহেবের মনে খটকা লাগলো। স্বপ্নের সে পতিতাপল্লীর মানবী বাস্তবে সম্মুখে এসে মাঝরাস্তায় তাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবে সে কখনো কল্পনাও করে নাই। হঠাৎ মেঘের গর্জনে আলোকিত নগরী আলোহীন হয়ে পড়লো। মুহূর্তের মধ্যে যেন দৃশ্যপটের পরিবর্তন। প্রতিদিন দেখা সে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ আরিফ সাহেবের কানে বাজলো। মেঘের গর্জন যত ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানবী তত আরিফ সাহেবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে। হঠাৎ মেঘের অভিমানের অশ্রুতে মানবী আরিফ সাহেবকে জড়িয়ে থাকার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিলো।
-
হঠাৎ মেঘের অভিমানের অশ্রু ধর্মঘট করলে, জলসিক্ত টিস্যু কাথানের নীল শাড়িতে মোড়ানো মানবীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে রইলো আরিফ সাহেব। মাঝেমধ্যে এ সমাজের পুরুষদের মধ্যে শকুনের পশুত্ব চলে আসে, তখন হয়তো শান্ত মনে বসবাসরত নেকড়ের দল খামচি মারতে চায় মানবীদের শরীরের উপর। মানবীর শরীরের পুরো গঠন, মানবীর সেন্টার অব গ্রাভিটি নাভির পাশে কৃষ্ণ বর্ণের তীল আরিফ সাহেবের দৃষ্টিগোচর হলো। পরোক্ষণে নাভির বামপাশে মানবীর সুশ্রী শরীরে নখের আচড়ে রক্তিম লাল চিহ্ন আরিফ সাহেব স্পষ্ট দেখতে পেলো। পুরুষদের ঐ এক জায়গায় দুর্বলতা ললনা দেখলে পশুত্ব মাথা নেড়ে বসে তবুও আরিফ সাহেব নিজেকে শান্তনা রাখার চেষ্টায় মগ্ন।
-
দীর্ঘক্ষণ ধরে একজন আরেকজনের চোখের দিকে থাকিয়ে থাকলেও কোন সাড়া শব্দ নেই। আলোহীন নিস্তব্দ নগরীর রাস্তায় হঠাৎ লুটে পড়লো মানবী। মানবীর শরীরে হাত দিতেই আরিফ সাহেব বুঝতে পারলো মেয়েটা বেহুঁশ হয়ে পড়লো। অচেনা অজানা মেয়েকে কি করবে বুঝে উঠতে পারতেছিলো না আরিফ সাহেব। সিএনজিতে মানবীকে তুলে চট্টগ্রাম মেডিকেলের দিকে রওনা হলো আরিফ সাহেব।
-
এ শহরের আপনজন বলতে শুধুই রেবেকা আর হামিদ শিকদার। হামিদ বেশ কয়েকদিন হলো মেসে নেই, বাবার অসুস্হতার জন্য। রেবেকাকে ও আজ ফোন দেওয়া যাবেনা, বেশকয়েক দিন হলো সে নিজেও অসুস্থ। সেদিন লালখান বাজারে কোচিং থেকে আসার সময় রোড এক্সিডেন্টে গুরুতর আহত হয়েছে।
-
অচেনা মানবীর ব্যাগে হাত দিতে বাদামী রঙের একটা ডায়েরী দৃষ্টিগোচর হলো আরিফ সাহেবের। ডায়েরীর উপরে লিখা আছে, আমি অবান্তিকা। ব্যাগের ভিতরে হাত দিতেই এক টুকরা কাগজ পাওয়া গেলো, ফোন নাম্বারের সহিত লিখা আছে সুব্রুত হাওলাদার। আরিফ সাহেব তাড়াতাড়ি ফোন করে সুব্রুতকে জানালেন। সিএনজি চলছে মেডিকেলের উদ্দেশ্যে, আরিফ সাহেব ডায়েরীর পৃষ্ঠা উল্টাতেই চমকে উঠলেন-
-
আজ আমি বেশ্যা! সমাজের কাছে বেশ্যা নামে আমার পরিচয়। মানুষের মুখে এ নাম শুনতে শুনতে অবান্তিকা নামে যে আমার একটা নাম আছে আজ সেটা আমি ভুলতে বসেছি।
-
ভদ্রপল্লিতে দিনের বেলায় যারা সাদা মনের মানুষ সাজে, নিশিরাত হতেই তারা আমার বুকে ঠাই খুঁজে। এ সমাজের কাপুরুষরা আমাকে ভোগ্য পণ্যের মত ভোগ করছে প্রতিনিয়ত। জানোয়ারের মত তারা আমাকে চুষে খায় তবুও তাদের তৃষ্ণা যেন মিটে না। আজ নিজের শরীরটাই টাকার বিনিময়ে তুলে দিচ্ছি ভদ্রপল্লির দাদাবাবুদের হাতে, আজ হয়তো এর হাতে, কাল হয়তো ওর হাতে। আজ শত শত প্রশ্ন আমায় যেন তাড়া করে বেড়ায়। তবুও কিছু প্রশ্নের উত্তর যেন শেষ হয় না পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখেও। দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে তখন বেশ্যাবৃত্তির মত ঘৃণিত কার্যকলাপে জড়িয়ে যায় আমার মত নির্যাতিত শত শত অবান্তিকারা।
-
ভালো লাগা থেকে শুরু হওয়া ভালোবাসা আজকাল বীর্যপাতে শেষ হয় সেটা আমার জানা ছিলো না কখনোই। বিশালতার ভালোবাসার শেষ আবাস্থল ঐ চারদেয়ালের খাটযুদ্ধে সেটা কখনো ভেবে দেখিনি আমি। শুধু বুকভরা প্রেম চেয়েছিলাম ভালোবাসার মানুষটির কাছে, বিনিময়ে পেয়েছিলাম আমার শরীরের উপর চারদেয়ালে আলোহীন প্রকোষ্ঠে তাহার আধিপত্য। আবেগের বশে প্রেমে মগ্ন হয়ে প্রথমবারই ভুলে স্ব শরীর বিলিয়ে কতটা যে ভুল করেছি সেটা পরোক্ষণে বুঝেছি। তবুও সবকিছু ভুলে নতুন করে আবার বিশুদ্ধ ভালোবাসার বীজ বোপণ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু সে প্রতিবারই আমার দুর্বলতাকে পুঁজি করে নানান অঘটন ঘটিয়েছে। পুনঃবারই সে আমাকে ভোগ করার মহড়ায় মাতাল হয়েছিলো। সেদিন আমার ভালোবাসার কাপুরুষ মানুষটি সাইফুল আর তার বন্ধুরা মিলে আমাকে ধর্ষণ করেছিলো। আমার ডাকে সেদিন কেউ সাড়া দেয় নাই। আমার আর্তনাদ চারদেয়ালেই রয়ে গেলো।
-
ক্রমান্বয়ে আমার গর্ভে বড় হতে লাগলো, দেহ ভোগের মহড়ার ফসল স্বরূপ এক অবৈধ ফসল। জানি, এ সমাজ আমার গর্ভে বসবাসরত পিতৃ পরিচয়হীন এ সন্তানকে জারজ বলে থুথু ছিটাবে। সেদিন অনেক কষ্টে "Abortion" করে দুনিয়াতে এ অবৈধ ফসলকে না আনার ব্যবস্হা করেছিলাম। আমার কানে আজও যেন স্বপ্নের সে কথাটি বেজে উঠে-
-
মা, আমি বাঁচতে চায়।
আমার হৃদস্পন্দনকে
নিস্তব্দ করে দিওনা।
দুচোখকে এ পৃথিবীর আলো বাতাসের
স্পর্শ থেকে বঞ্চিত করিও না।
মা আমি বাঁচতে চায়, আমি বাঁচতে চায়
(আজও তার জন্য আমার দু নয়ন অশ্রুজলে সিক্ত হয়)
-
আমার জীবনে ঘটে যাওয়া চারদেয়ালের সে ঘটনাটি যেন আমার জীবনের অভিশাপ হয়ে বসলো।
বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে অসুস্থ মাকে নিয়ে চলে গিয়েছিলাম অন্যত্র। সেখানেও রেহায় হয়নি আমার, অসুস্থ মাকে সুস্থ করতে অনেকের কাছে মাথা নত করেছি সবাই আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিবারই আমার দেহের বিনিময়ে পাষণ্ড হৃদয়ের কাপুরুষরা টাকা দিতে রাজি হয়েছিলো। সেদিন প্রথম মাকে বাঁচানোর জন্য নিজ দেহ কাপুরুষের হাতে তুলে দিয়ে অর্থ যোগাড় করেছিলাম। সে মাকে আমার পাপের টাকা দিয়ে বাঁচাতে পারি নাই সেদিন। তারপর থেকে সবখানে শকুনেরা আমার শরীর ভোগ করতে এসেছিলো। তারপরে কিছু করার ছিলো না আর, বেশ্যাবৃত্তি করে বেঁচে থাকার সংগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ি। আজ নিজের শরীর- বাঁচার তাগিদে অর্থের জন্য, দুমুঠো ভাতের নেশায় সঁপে দিই ঘন্টাখানেকের জন্য খদ্দরের কাছে। প্রতিরাতে যেন পণ্যের মত আমি আজ এর হাতে, কাল ওর হাতে। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মানুষের কাছে শরীর সঁপে দিচ্ছি, বিনিময়ে নতুন নতুন অত্যাচারের চিহ্ন আবিষ্কার করছি। আজও নতুন খদ্দরের আশায় রঙ্গ সাজে দাঁড়িয়ে থাকি এ শহরের অলিতে গলিতে সুব্রুতের সহিত।
-
ডায়েরীর পাতার বাস্তবিক ঘটনা সমাপ্তের ক্ষণে মেয়েটার হুশ এলো। অবান্তিকার ঘটনা পড়ে মন খারাপের বিষণ্ণতার বাজ পড়লো, আরিফ সাহেবের। অবান্তিকা ইশারায় যেন কিছু একটা বুঝাতে চায়লো, আরিফ সাহেবের বোধগম্য হলো না। সিএনজি মেডিকেল রোডে এসে থামতেই , দূর থেকে একজন ভদ্রলোক অবান্তিকার দিকে ইশারা করলো। আরিফ সাহেবের বুঝতে কষ্ট হলো না উনি যে সুব্রুত। যিনি অবান্তিকার জন্য খদ্দের যোগাড়ের নেশায় মগ্ন থাকেন। ডায়েরী শেষ পৃষ্ঠা উল্টাতে আরিফ সাহেব নির্বাক।
-
আমার বুক ফাঁটা আর্তনাদের কথা কখনো বুঝতে চেষ্টা করে নাই কেউ, সমাজের কাছে আমি বাক প্রতিবন্ধী এক বেশ্যা বলে। জানি, সামান্য জলস্রাণে এ সমাজের পুরুষ পবিত্র হয়ে যায়! সাথে সাথে মুছে যায় তার সব কালো দাগ, কিন্তু আমার মত ললনার সে দাগ মোছন হয় না কোনদিন! আমার মত সহস্র বেশ্যাদের বুকে হাত দিতে সবাই চায়, কিন্তু বুকে আগলে রাখতে কেউই চায়নি কখনো।
-
সুব্রুতকে সাথে নিয়ে চলে গেলো সে অবান্তিকা! আবারো হয়তো নিশিরাতে এশহরের অলিতে গলিতে খদ্দেরের অপেক্ষার প্রহর গুণবে অবান্তিকা....
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৪৬৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০২/০৯/২০১৭

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • মোনালিসা ০৫/০৯/২০১৭
    দারুণ
  • ফয়জুল মহী ০৫/০৯/২০১৭
    উপযুক্ত বিষয়বস্তুর দারুণ উপস্থাপন
  • শ.ম. শহীদ ০৪/০৯/২০১৭
    বাহ্।
    আপনার লেখার হাত তো চমৎকার।
    এরপর আরো ভালো গল্প চাই। শুভেচ্ছা।
  • Mohammad Mintu ০৪/০৯/২০১৭
    গল্পটি পূর্বেও চয়ন করেছিলাম, বাস্তব রুপে অঙ্কিত হয়েছে...
  • মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়লাম,পড়লাম এবং পড়লাম।
    • বিদ্রোহী শিহাব ০৪/০৯/২০১৭
      দাদা, লিখনির স্বার্থকতা তখনই- যখনই মানব হৃদয়ে গল্পের আড়ালে বলা বাস্তব কাহিনী খানিকটা স্থান দখল করে নিতে পারে।

      সীমাহীন শুভকামনা রইলো দাদা..
  • মোনালিসা ০৪/০৯/২০১৭
    ভাল
  • মুক্তপুরুষ ০৩/০৯/২০১৭
    ভালোবাসা রেখে গেলাম!
    • বিদ্রোহী শিহাব ০৩/০৯/২০১৭
      প্রিয় মানুষের ভালোবাসা
      আমায় সত্যি ধন্য করেছে....
      -ধন্যবাদ, দাদা
      সীমাহীন ভালোবাসা আপনার তরে
  • সমির প্রামাণিক ০৩/০৯/২০১৭
    বাহ! বেশ ভালো। শুভেচ্ছা রইলো।
  • সাঁঝের তারা ০২/০৯/২০১৭
    অনবদ্য!!! মুগ্ধ হলাম ...
    • বিদ্রোহী শিহাব ০৩/০৯/২০১৭
      -ধন্যবাদ, দাদা....
      অফুরান ভালোবাসা রইলো
      ভালো থাকুন সবসময়
      করি এ কামনা...
 
Quantcast