আমি ও স্বদেশে ভাবান্তর পর্ব ৩
আমার পরিবারেও রাজনীতি চলে, সেটাও কিন্তু বিট্রিশদের অবদানে।
ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে একশ্বের বাদে বিশ্বাসী
দেবেন্দ্রনাথ পূজা-পার্বণাদি বন্ধ করে ‘মাঘ উৎসব’, ‘নববর্ষ’, ‘দীক্ষা দিন’ ইত্যাদি উৎসব প্রবর্তন করেন। ১৮৬৭ সালে তিনি বীরভূমের ভুবনডাঙ্গা নামে একটি বিশাল ভূখণ্ড ক্রয় করে আশ্রম স্থাপন করেন। এই আশ্রমই আজকের বিখ্যাত শান্তিনিকেতন । এছাড়াও হিন্দু চ্যারিট্যাবল ইনস্টিটিউশনের বেথুন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্ম ধর্ম ১৮২৮ সালে। এটি সংস্কার হয়ে ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ভারতের প্রিভি কাউন্সিল ঘোষণা করে যে, “ব্রাহ্মদের অধিকাংশ হিন্দু নয়৷ তাঁদের নিজস্ব ধর্ম রয়েছে৷
১৮৫৭ : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইউনিটারিয়ান প্রচারক চার্লস ডালকে জানান যে, ডালকে আর কলকাতা ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং “তিনিও সমাজে যিশুর নাম শুনবেন না৷” ডাল তখন রামমোহন রায় সোসাইটি গঠন করে উদারপন্থী ব্রাহ্মদের দেবেন্দ্রনাথের কাছ থেকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন৷[১২] কেশবচন্দ্র সেন কলকাতা ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন৷ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই সময় সিমলায় ছিলেন৷ সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয়৷ ব্রাহ্মসমাজের অছি পরিষদের প্রায় সকল সদস্য ব্রিটিশ রাজশক্তিকে সমর্থন করেন এবং বিদ্রোহীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান৷
১৮৬০ : চার্লস ডাল খোলাখুলি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আক্রমণ করেন এবং থিওডোর পার্কার ও উইলিয়াম চ্যানিঙয়ের হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার পদ্ধতি অনুসারে উদারপন্থী ব্রাহ্ম নব্য-খ্রিস্টান গোষ্ঠীটিকে অনুমোদন করেন৷
১৮৬৬ : প্রগতিশীল বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীটির থেকে নিজেদের পৃথক করার জন্য ব্রাহ্মসমাজের প্রথম অংশ ও কলকাতা ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’৷
ঢাকায় ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী আছেন বলে জানা ছিলো না। কিন্তু পাটুয়াটুলী ব্রাহ্ম সমাজ মন্দির আছে ইন্টারনেট ঘেঁটে জানলাম। ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের গোটা দুই পরিবারের বসবাস সীমানার ভেতর।
ঢাকাতে ‘ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজ’ এর প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৪৬ সালে। আবগারি ইন্সপেক্টর ব্রজসুন্দর মিত্রের উদ্যোগে কুমারটুলির গোলাম মিস্ত্রীর বাড়িতে। স্থায়ী কোন উপাসনালয় ছিলো না। সদস্য ছিলো কম। তখোনো ‘ধর্ম’ হিসাবে স্পষ্ট হয়নি, ‘সমাজ’ হিসাবেই পরিচিত ব্রাহ্ম সমাজ।
কেশব চন্দ্র সেন যোগদান (১৮৫০) করলে বেগবান হয় ব্রাহ্ম আন্দোলন। তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৮৬৫ সালে। তাঁর আগমনেই সাড়া পড়ে ঢাকা সমাজে। শিবনাথ শাস্ত্রীর ভাষায় ‘কেশব চন্দ্র সেনের উন্মাদিনী বক্তৃতা ঢাকার যুব সমাজকে মাতিয়ে তুলে।’ স্থাপিত হয় ‘সঙ্গত সভা’।
কেশব সেন দ্বিতীয়বার আসেন ১৮৬৯ সালে।
১৯৩০ এর ৯শে মে শুক্লা চতুর্দশিতে, শক্রবার, এক দেখায় কুলীন হিন্দু লাবণ্য দাশগুপ্তের সাথে ব্রাহ্ম মতে বিয়ে হয় কবি ব্রাহ্ম জীবনানন্দ দাশের। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধদেব বসু সহ অন্যান্য কবি বন্ধুরা।
-দেবেন্দ্রনাথের পিতা দ্বারকানাথ ঠাকুর নিজের জাকজমকপূর্ণ পাশ্চাত্য জীবনের অভিলাষে বিট্রিশদের সন্তুষ্টির জন্য মনোরঞ্জনের চেষ্টা চালান। বিট্রিশদের আগমণে সাধরে তাদের পৃষ্ঠপোশকতা করে ঠাকুর পরিবার।
১৮৬২ সালে নগরকথক কালীপ্রসন্ন সিংহ লিখছেন “বেশ্যাবাজিটা আজকাল এই শহরে বাহাদুরের কাজ ও বড়মানুষের এলবাত পোশাকের মধ্যে গণ্য, অনেক বড়মানুষ ভুকাল হল মরে গ্যাচেন কিন্তু তাঁদের রাঁড়ের বাড়িগুলি আজও মনিমেন্টের মত এঁদের স্মরণার্থ রয়েছে … কলকাতা শহর এই মহাপুরুষদের জন্য বেশ্যাশহর হয়ে পড়েচে, এমন ঘর নাই যেথায় দশঘর বেশ্যা নাই; হেথায় প্রতি বৎসর বেশ্যার সংখ্যা বৃদ্ধি বই কমচে না।”
রবীন্দ্রনাথের দাদা খুব পতিতাপ্রিয় ছিলো। এ সম্পর্কে আখতার উদ্দিন মানিকের লেখা , শাহজাদপুরের জমিদার : দ্বারকানাথ ঠাকুর’ বইয়ের ৭৫ পৃষ্ঠায় লেখা আছে-
“দ্বারকানাথ নিজের বসবাসের জন্য বৈঠকখানা তৈরী করেছিলো। সেখানেই সে রাত্রী যাপন করতো। বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। ইংরেজ কর্মকর্তারা সেখানে আমন্ত্রিত হতো। সেখানে চলতো রাতভর আমোদ-প্রমোদ, সুন্দরী নতর্কীদের নাচগান, মাংসের ভুরিভোজ আর মদে মদে চুর হওয়া।”
শাহজাদপুরের জমিদার : দ্বারকানাথ ঠাকুর’ বইয়ের ৭৬ পৃষ্ঠায় লেখা আছে
“১৮৪৫-৪৬ এর শীতকালে দ্বিতীয় ও শেষবারের মত দ্বারকানাথ প্যারিসে নগরীতে সময় অতিবাহিত করে। তখন ফ্রান্স সরকারের বৈদেশিক প্রটোকল বিভাগীয় সহকারি পরিচালক মি. কোঁৎ ফ্যুইয়ে দ্য কঁশ তার সাথে সবিশেষ ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো। শেষ জীবনে কোঁৎ তার আত্মজীবনীতে দ্বারকানাথ ঠাকুর সম্পর্কে বলেছিলো- দ্বারকানাথ বিলাসী ও ইন্দ্রিয়পরায়ন ছিলো বলে সব সময় রুপসী, সুন্দরী অথবা অদ্ভূত সব বিদেশী নটীদের দ্বারা পরিবৃত থাকতে ভালোবাসতো"।
তথ্যসূত্রঃ তথ্যসূত্র- 'ঠাকুরবাড়ির জানা অজানা' (সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর), দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী (সম্পাদক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী), আনন্দবাজার পত্রিকা, এইসময়, প্রহর।
-সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরকলকাতার একটি এলাকায় প্রায় তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন।
(তথ্যসূত্র: সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, ১৯৬২, পৃ. ৩৫৮-৬০;। 'ঠাকুরবাড়ির জানা অজানা' (সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর), কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮শে কার্তিক, ১৪০৬, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়)।
১৮৭২ সালের এক সরকারি বিবরণী থেকে জানা যায়, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের যৌনকর্মীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তাঁতি, মালি, যোগী, কুমোর, কামার, চামার, সোনার বেনে, তেলি ইত্যাদি সম্প্রদায়ভুক্ত। যেখানে এই শহরের প্রথম দিকে অন্তজ শ্রেণির মুখ খুব একটা এইসব গণিকালয়গুলিতে দেখা যেত না।
তথ্য সূত্র : tv9 বাংলা ২০২১,১০ সেপ্টেম্বর কলকাতা।
-বেশিরভাগ ব্রিটিশ, যারা বাংলায় এসেছিলেন, তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী হিসাবেই এসেছিলেন। অধিকাংশই ছিলেন তরুণ এবং অবিবাহিত। ব্রিটিশ এই কর্মীদের যৌন বিনোদন জোগাতে দ্বারকানাথ ৪৩ টি যৌনপল্লীর মালিকানা নেন। এই যৌনপল্লীগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, এক বা একাধিক ভারতীয় যৌনকর্মী এই জাতীয় ব্রিটিশ অভিজাত এবং কর্মচারীদের যৌনবিনোদন দিতেন। কেবল ব্রিটিশদেরই নয়, ধনী বাঙালি বাবুদেরও চাহিদা মেটাতেন তারা।
দ্বারকানাথের বাড়িতে ব্রিটিশ বন্ধুদের নিয়মিত আনাগোনা ছিলো। সমসাময়িক সংবাদপত্রগুলিতে দ্বারকানাথ ও ব্রিটিশদের সখ্য নিয়ে নিয়মিত লেখা বেরোত, ব্যঙ্গ ও সমালোচনাও ধেয়ে আসত সমাজ থেকেই।
১৮৫৩ সালের এক ব্রিটিশ সমীক্ষা জানাচ্ছে, সেই সময় প্রায় ৪,৪৪৯ টি যৌনপল্লী ছিল, প্রায় ১২,৪০০ বা ১৩,০০০ যৌনকর্মী থাকতেন সেইখানে । এই জায়গাগুলির মধ্যেই অন্যতম সোনাগাছি। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, দ্বারকানাথের মালিকানাধীন ছিল ৪৩ টি যৌনপল্লী। সোনাগাছির মতো বিখ্যাত যৌনপল্লীর বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল দ্বারকানাথেরই।
-রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর দাদা দ্বারকনাথ ঠাকুর সম্পর্কে নিজের লেখায় বিশেষ উল্লেখ করেননি। শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারকানাথের বেশিরভাগ নথিই পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। পরাধীন ভারতে, ব্রিটিশদের ব্যাপক অত্যাচারের মধ্যেও একজন ভারতীয় হিসেবে দ্বারকানাথের সঙ্গে ব্রিটিশদের এই সখ্য ভালোভাবে নেয়নি বাংলা, নেওয়ার কথাও না। কলকাতার প্রথম পুঁজিবাদী দ্বারকানাথের অবশ্য তাতে কিছু এসে যায়নি, লাভের দিকেই ছিল তাঁর সম্পূর্ণ মনোনিবেশ। একজন খাঁটি ব্যবসায়ী চরিত্রকেই আজীবন লালন করেছেন দ্বারকানাথ, তার জন্য যতদূর যাওয়ার কথা, গিয়েছেন। নীতি-আদর্শের পথকে গুরুত্ব দেননি কখনই।
সুত্র: inscript.me
ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে একশ্বের বাদে বিশ্বাসী
দেবেন্দ্রনাথ পূজা-পার্বণাদি বন্ধ করে ‘মাঘ উৎসব’, ‘নববর্ষ’, ‘দীক্ষা দিন’ ইত্যাদি উৎসব প্রবর্তন করেন। ১৮৬৭ সালে তিনি বীরভূমের ভুবনডাঙ্গা নামে একটি বিশাল ভূখণ্ড ক্রয় করে আশ্রম স্থাপন করেন। এই আশ্রমই আজকের বিখ্যাত শান্তিনিকেতন । এছাড়াও হিন্দু চ্যারিট্যাবল ইনস্টিটিউশনের বেথুন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
রাজা রামমোহন রায় প্রতিষ্ঠিত হয় ব্রাহ্ম ধর্ম ১৮২৮ সালে। এটি সংস্কার হয়ে ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ভারতের প্রিভি কাউন্সিল ঘোষণা করে যে, “ব্রাহ্মদের অধিকাংশ হিন্দু নয়৷ তাঁদের নিজস্ব ধর্ম রয়েছে৷
১৮৫৭ : দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ইউনিটারিয়ান প্রচারক চার্লস ডালকে জানান যে, ডালকে আর কলকাতা ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না এবং “তিনিও সমাজে যিশুর নাম শুনবেন না৷” ডাল তখন রামমোহন রায় সোসাইটি গঠন করে উদারপন্থী ব্রাহ্মদের দেবেন্দ্রনাথের কাছ থেকে সরিয়ে আনার উদ্যোগ নেন৷[১২] কেশবচন্দ্র সেন কলকাতা ব্রাহ্মসমাজে যোগ দেন৷ দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই সময় সিমলায় ছিলেন৷ সিপাহি বিদ্রোহ শুরু হয়৷ ব্রাহ্মসমাজের অছি পরিষদের প্রায় সকল সদস্য ব্রিটিশ রাজশক্তিকে সমর্থন করেন এবং বিদ্রোহীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান৷
১৮৬০ : চার্লস ডাল খোলাখুলি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আক্রমণ করেন এবং থিওডোর পার্কার ও উইলিয়াম চ্যানিঙয়ের হিন্দুদের খ্রিস্টধর্মে দীক্ষিত করার পদ্ধতি অনুসারে উদারপন্থী ব্রাহ্ম নব্য-খ্রিস্টান গোষ্ঠীটিকে অনুমোদন করেন৷
১৮৬৬ : প্রগতিশীল বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীটির থেকে নিজেদের পৃথক করার জন্য ব্রাহ্মসমাজের প্রথম অংশ ও কলকাতা ব্রাহ্মসমাজের নাম হয় ‘আদি ব্রাহ্মসমাজ’৷
ঢাকায় ব্রাহ্ম ধর্মাবলম্বী আছেন বলে জানা ছিলো না। কিন্তু পাটুয়াটুলী ব্রাহ্ম সমাজ মন্দির আছে ইন্টারনেট ঘেঁটে জানলাম। ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজের গোটা দুই পরিবারের বসবাস সীমানার ভেতর।
ঢাকাতে ‘ঢাকা ব্রাহ্ম সমাজ’ এর প্রতিষ্ঠা হয় ১৮৪৬ সালে। আবগারি ইন্সপেক্টর ব্রজসুন্দর মিত্রের উদ্যোগে কুমারটুলির গোলাম মিস্ত্রীর বাড়িতে। স্থায়ী কোন উপাসনালয় ছিলো না। সদস্য ছিলো কম। তখোনো ‘ধর্ম’ হিসাবে স্পষ্ট হয়নি, ‘সমাজ’ হিসাবেই পরিচিত ব্রাহ্ম সমাজ।
কেশব চন্দ্র সেন যোগদান (১৮৫০) করলে বেগবান হয় ব্রাহ্ম আন্দোলন। তিনি প্রথম ঢাকা আসেন ১৮৬৫ সালে। তাঁর আগমনেই সাড়া পড়ে ঢাকা সমাজে। শিবনাথ শাস্ত্রীর ভাষায় ‘কেশব চন্দ্র সেনের উন্মাদিনী বক্তৃতা ঢাকার যুব সমাজকে মাতিয়ে তুলে।’ স্থাপিত হয় ‘সঙ্গত সভা’।
কেশব সেন দ্বিতীয়বার আসেন ১৮৬৯ সালে।
১৯৩০ এর ৯শে মে শুক্লা চতুর্দশিতে, শক্রবার, এক দেখায় কুলীন হিন্দু লাবণ্য দাশগুপ্তের সাথে ব্রাহ্ম মতে বিয়ে হয় কবি ব্রাহ্ম জীবনানন্দ দাশের। বিয়েতে উপস্থিত ছিলেন বুদ্ধদেব বসু সহ অন্যান্য কবি বন্ধুরা।
-দেবেন্দ্রনাথের পিতা দ্বারকানাথ ঠাকুর নিজের জাকজমকপূর্ণ পাশ্চাত্য জীবনের অভিলাষে বিট্রিশদের সন্তুষ্টির জন্য মনোরঞ্জনের চেষ্টা চালান। বিট্রিশদের আগমণে সাধরে তাদের পৃষ্ঠপোশকতা করে ঠাকুর পরিবার।
১৮৬২ সালে নগরকথক কালীপ্রসন্ন সিংহ লিখছেন “বেশ্যাবাজিটা আজকাল এই শহরে বাহাদুরের কাজ ও বড়মানুষের এলবাত পোশাকের মধ্যে গণ্য, অনেক বড়মানুষ ভুকাল হল মরে গ্যাচেন কিন্তু তাঁদের রাঁড়ের বাড়িগুলি আজও মনিমেন্টের মত এঁদের স্মরণার্থ রয়েছে … কলকাতা শহর এই মহাপুরুষদের জন্য বেশ্যাশহর হয়ে পড়েচে, এমন ঘর নাই যেথায় দশঘর বেশ্যা নাই; হেথায় প্রতি বৎসর বেশ্যার সংখ্যা বৃদ্ধি বই কমচে না।”
রবীন্দ্রনাথের দাদা খুব পতিতাপ্রিয় ছিলো। এ সম্পর্কে আখতার উদ্দিন মানিকের লেখা , শাহজাদপুরের জমিদার : দ্বারকানাথ ঠাকুর’ বইয়ের ৭৫ পৃষ্ঠায় লেখা আছে-
“দ্বারকানাথ নিজের বসবাসের জন্য বৈঠকখানা তৈরী করেছিলো। সেখানেই সে রাত্রী যাপন করতো। বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো। ইংরেজ কর্মকর্তারা সেখানে আমন্ত্রিত হতো। সেখানে চলতো রাতভর আমোদ-প্রমোদ, সুন্দরী নতর্কীদের নাচগান, মাংসের ভুরিভোজ আর মদে মদে চুর হওয়া।”
শাহজাদপুরের জমিদার : দ্বারকানাথ ঠাকুর’ বইয়ের ৭৬ পৃষ্ঠায় লেখা আছে
“১৮৪৫-৪৬ এর শীতকালে দ্বিতীয় ও শেষবারের মত দ্বারকানাথ প্যারিসে নগরীতে সময় অতিবাহিত করে। তখন ফ্রান্স সরকারের বৈদেশিক প্রটোকল বিভাগীয় সহকারি পরিচালক মি. কোঁৎ ফ্যুইয়ে দ্য কঁশ তার সাথে সবিশেষ ঘনিষ্ঠতা হয়েছিলো। শেষ জীবনে কোঁৎ তার আত্মজীবনীতে দ্বারকানাথ ঠাকুর সম্পর্কে বলেছিলো- দ্বারকানাথ বিলাসী ও ইন্দ্রিয়পরায়ন ছিলো বলে সব সময় রুপসী, সুন্দরী অথবা অদ্ভূত সব বিদেশী নটীদের দ্বারা পরিবৃত থাকতে ভালোবাসতো"।
তথ্যসূত্রঃ তথ্যসূত্র- 'ঠাকুরবাড়ির জানা অজানা' (সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর), দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী (সম্পাদক সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী), আনন্দবাজার পত্রিকা, এইসময়, প্রহর।
-সতীশচন্দ্র চক্রবর্তীর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী থেকে জানা যায় প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরকলকাতার একটি এলাকায় প্রায় তেতাল্লিশটি বেশ্যালয়ের মালিক ছিলেন।
(তথ্যসূত্র: সতীশচন্দ্র চক্রবর্তী সম্পাদিত, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী, ১৯৬২, পৃ. ৩৫৮-৬০;। 'ঠাকুরবাড়ির জানা অজানা' (সুমিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর), কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকা, ২৮শে কার্তিক, ১৪০৬, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়)।
১৮৭২ সালের এক সরকারি বিবরণী থেকে জানা যায়, কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের যৌনকর্মীদের মধ্যে অধিকাংশই ছিলেন তাঁতি, মালি, যোগী, কুমোর, কামার, চামার, সোনার বেনে, তেলি ইত্যাদি সম্প্রদায়ভুক্ত। যেখানে এই শহরের প্রথম দিকে অন্তজ শ্রেণির মুখ খুব একটা এইসব গণিকালয়গুলিতে দেখা যেত না।
তথ্য সূত্র : tv9 বাংলা ২০২১,১০ সেপ্টেম্বর কলকাতা।
-বেশিরভাগ ব্রিটিশ, যারা বাংলায় এসেছিলেন, তারা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মচারী হিসাবেই এসেছিলেন। অধিকাংশই ছিলেন তরুণ এবং অবিবাহিত। ব্রিটিশ এই কর্মীদের যৌন বিনোদন জোগাতে দ্বারকানাথ ৪৩ টি যৌনপল্লীর মালিকানা নেন। এই যৌনপল্লীগুলিতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, এক বা একাধিক ভারতীয় যৌনকর্মী এই জাতীয় ব্রিটিশ অভিজাত এবং কর্মচারীদের যৌনবিনোদন দিতেন। কেবল ব্রিটিশদেরই নয়, ধনী বাঙালি বাবুদেরও চাহিদা মেটাতেন তারা।
দ্বারকানাথের বাড়িতে ব্রিটিশ বন্ধুদের নিয়মিত আনাগোনা ছিলো। সমসাময়িক সংবাদপত্রগুলিতে দ্বারকানাথ ও ব্রিটিশদের সখ্য নিয়ে নিয়মিত লেখা বেরোত, ব্যঙ্গ ও সমালোচনাও ধেয়ে আসত সমাজ থেকেই।
১৮৫৩ সালের এক ব্রিটিশ সমীক্ষা জানাচ্ছে, সেই সময় প্রায় ৪,৪৪৯ টি যৌনপল্লী ছিল, প্রায় ১২,৪০০ বা ১৩,০০০ যৌনকর্মী থাকতেন সেইখানে । এই জায়গাগুলির মধ্যেই অন্যতম সোনাগাছি। দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী থেকে জানা যায়, দ্বারকানাথের মালিকানাধীন ছিল ৪৩ টি যৌনপল্লী। সোনাগাছির মতো বিখ্যাত যৌনপল্লীর বিকাশে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল দ্বারকানাথেরই।
-রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর দাদা দ্বারকনাথ ঠাকুর সম্পর্কে নিজের লেখায় বিশেষ উল্লেখ করেননি। শোনা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দ্বারকানাথের বেশিরভাগ নথিই পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। পরাধীন ভারতে, ব্রিটিশদের ব্যাপক অত্যাচারের মধ্যেও একজন ভারতীয় হিসেবে দ্বারকানাথের সঙ্গে ব্রিটিশদের এই সখ্য ভালোভাবে নেয়নি বাংলা, নেওয়ার কথাও না। কলকাতার প্রথম পুঁজিবাদী দ্বারকানাথের অবশ্য তাতে কিছু এসে যায়নি, লাভের দিকেই ছিল তাঁর সম্পূর্ণ মনোনিবেশ। একজন খাঁটি ব্যবসায়ী চরিত্রকেই আজীবন লালন করেছেন দ্বারকানাথ, তার জন্য যতদূর যাওয়ার কথা, গিয়েছেন। নীতি-আদর্শের পথকে গুরুত্ব দেননি কখনই।
সুত্র: inscript.me
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।
মন্তব্যসমূহ
-
ফয়জুল মহী ২৪/১০/২০২৫চমৎকার
-
শঙ্খজিৎ ভট্টাচার্য ২৩/১০/২০২৫নাইস
