www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বার্থান্ধ (১পর্ব)

ফোনের মাঝে কিছু ছবি ভাসছে, উজ্জ্বল হাসি মুখ, একটা সুখী সুখী ভাব।সিয়াম আর নুহা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। পাশে আছেন ভাবি, বাচ্চারা।
আজ দুদিন পর আমি এটা জানলাম। উনি বিয়ে করেছেন। আমার চোখে অশ্রু নেই তবে বুকে আছে কিছু স্বপ্নের জমা হাহাকার।

--বুক ভারি লাগে মন দুর্বল হয়ে আসে। আমি যাকে ভালোবাসলাম যে ভুলে গেল আমায়। যার দুর্দিনে পাশে, দূরে আলাদা থেকেছি তার শান্তির জন্য। কখনো কখনো কথাও বলতো না দুই,তিন দিন প্রয়োজন ছাড়া। ও কখনো নিজের কিছু ছুতে দিতো না আমায়, প্রর্থম প্রথম ভালো লাগলেও তা আবার বদলে যায়। আমি মানিয়ে নিয়েছি। আমার প্রতি মায়া বা ভালোবাসা আমি দেখি নি দেখেছি কেবল দ্বায়িত্ব। আমার কান্নায় কখনো সে চোখের জল মুছে দেয় নি। আমার পছন্দসই জিনিসে সে খুব না খোশ ছিলো।

বিয়ের প্রথম রাত্রে উপহার দেয়া আংটি সে দু'দিন পরেই ফেরত দিয়ে ছিলো। জিজ্ঞেস করতেই বলল, তার ভালো লাগে না এসব। সে আংটি পরে, তজবি গোটা পড়া ঠিক না বলে, সে এটাও নেয় নি। আংটি ছোট হলে বড় করা যায়। অনেক জুয়েলার্সের দোকান আছে কিন্তু সে নিলো না। আমার দেওয়া কোনো কিছুই আমি দেখি নি উনাকে বা উনার মাকে পড়তে। কখনো এই চার বছরে ও যান নি আমাদের বাড়ি আমার শাশুড়ী। আমার বাবা প্রায়ই বলতেন যাবার জন্য।আমার শাশুড়ী বিরক্ত হতেন আমার বাবা কেন এতো বলেন তাদের।

-- একবার আমার শাশুড়ী বলে দিলেন বাবার বাড়ি ছেড়ে দাও।আমার এখনো মনে আমার শাশুড়ী বিয়ের দুই তিন দিন পর বলেছিলেন এতো দূর কাপন মুড়িয়ে মেয়ে বিয়ে দেয় কেউ। আমার অন্তরে দাগ কেটে যায় আমি শুধু হেসেছিলাম। বুঝা হয়ে গেল এ বিয়ে স্বার্থের জন্য হয়েছে।
সিয়াম আমায় বিয়ের প্রথম ইদের রাত্রে বলে ছিলো তুমি খাট, হাত, পা ছোট ছোট বিশেষ মানুষ স্বাভাবিক না। আমার বাবা মিথ্যে বলে বিয়ে দিয়েছেন। এর আগের রাতে ঝগড়া হয়েছে আমাদের বিদেশ যাওয়া নিয়ে। সে ঈদে সে আমার সালাম ও নেয় নি।

-- তবুও মানিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এ মানিয়ে নেওয়া কত দিন। সে আমার সাথে কোথাও যেত না। দাওয়াতে বাবার, বা বোনের বাড়ি যেতে চাইলে বলত সিলেট শহর থেকে গাড়ি গ্রামে যায় না। আমি তখন বুঝতে লাগলাম তার সাথে আমার মানায় না।আমার ছোট ছোট রাগ,অভিমান যখন প্রকাশ করতাম সে আমায় জড়িয়ে ধরতে আসতো না। আমার শরীরের ঘামের দুর্গন্ধ তার লেগে যাবে বলে । আমি রাগ করে না খেলে, সে দেখেও প্রথম বলেও, পরে আর কখনো আমার না খাওয়ায় সে কিছু বলে নি। বললে বলতো তুই না খেলে আমার কি? না করেছি কি খেতে। এই চার বছরের সংসার জীবনে প্রথম দু'বছর আমি নিজের চাহিদায় শখে কিছু রেধে খাই নি। উনার তুই করে কথা বলা বদলাতে পারি নি, প্রতিবাদ করলেই বলতেন চলে বন্ধুর সাথে।

মুখের ভাষা ছিলো খুব রুঢ় কথার আঘাত লাগতো গিয়ে বুকের মাঝে। আমার মন পুড়তো। এ আমি কাকে ছেয়ে এসিছি আল্লাহর কাছে । আমায় ক্ষমা করে ইয়া আল্লাহ।

--বাবা না তুলে সিয়াম কখনো গালি দিত না।কথায় কথায় একটু ভুল হলে কানার বাচ্চা, গরুর বাচ্চা বলত। আর পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এমন ছিলো যে আজকে মেহমান কেউ বা পাশের বাসার কেউ এলে রুম মুছা, বেড শিড ধুয়া লাগত। আমার চোখে ভাসে আমি একটা বালিশ খুজে ছিলাম সিয়ামের কাছে। সে বলেছিলো বাড়ি থেকে নিয়ে আসি না কেন। আমার শাশুড়ীকেও বলেছি উনি আমলে নেন নি। আমার বালিশটা ছেপে গেছিলো বেশ ঘুমাতে অসুবিধা হতো। একদিন বাহিরে গেলে আসার সময় কিনে নিয়ে আসি।


-- আমি যেখানে ছোট ছোট জিনিসে, কমদামি, বা দামি জিনিসে খুশি হতে চাইতাম। ও তখন ব্রান্ডের জিনিস খুঁজতো। কারণ আমি খাট সাইজে না হলে কিনে দিবে না। দোষ আমার হয়নি কেন দামি জিনিসই তো দিতে ছেয়েছিলো। বেস হয়ে গেল । কেনাকাটায় কখনো আমার মূল্য দিতে চাইতো না।

আমি প্রথম ঈদে যখন একটা বাদাদি রঙের ড্রেস কিনেছিলাম দেখে সিয়াম বলে ছিলো কাজের লোকের কাপড় পড়েছি। সেই রাগে সে আমার ছবিও তুলে নি। সে তার কথায় বুঝাতে চাইতো গ্রামের মানুষ নোংরা, অপরিষ্কার। স্বামী স্ত্রী একে অপরের পোশাক স্বরুপ। কিন্তু সে বুঝাতে চাইতো সে দামি আর আমি কম দামি। মতের অমিল বা একটু পার্থক্য হলেই বলতো তরে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেব।আমায় যখন ছোট ভাই ফোন চেইঞ্জ করে দিল, উনি সেটা নিয়ে নিতে চান। দেই নি বলে অনেক কথা বলেন শেষে বলেন তুই মোবাইল চালানোর যোগ্য না।

তার সাথে থাকব বলেই জবের চেষ্টা। উনি উনার মাকে বললেন যানেন না এসব। আমি জাহান্নামে যাই তার কিছু না। আমি বলে দিয়েছি বিদেশ ভাই ভাবির কাছে। এরপর উনার নামে অভিযোগ দিতেই উনার ভাই ভাবি অভিযোগ তুললেন তাদের কাছে আমি খানি খরচের টাকা খুঁজেছি। আমার আত্ত্বসম্মানে গিয়ে লাগলো। আমার শাশুড়ীকে সব কিছু বলায় বললেন আর কোনো কথা বলার প্রয়োজন নাই। কিন্তু সিয়াম নিরব ছিলো, কিছুই বলেন নি সেদিন।এরপর রাগ হলে না খেয়ে থাকতাম, প্রায় রোজা রাখতাম। অনন্ত আমার দুঃখ গুলো কমবে। কিন্তু সিয়াম জানতে ও চাইতেন না আমি খেয়েছি কিনা। আমারা আলাদা রুমেও থেকেছি। যাতে আমার থেকে উনার অসুখ বিসুখ না হয়।আমার আড়ালে সিয়াম মাকে বলতেন ইগু বারমাইয়া (সব সময় ছোট ছোট অসুখ লেগে থাকা) আমার চোখে জল আসতো। আমার অনেক চুল ঝরে ছিলো সেসময়।

—আমদের তো অভাব ছিলো না, তবু্ও একটা বাচ্চা নেই নি সিয়াম বেকার থাকায়। মনুষত্ত্বের খুব অভাব ছিলো তার মাঝে সাথে আন্তরিকতার।জানালার গ্লাসের বাহিরে হিমেল হাওয়ায় তুষার পার ঝরছে। ❝দেহের ভেতর প্রাণ নামক জায়গায় শুধু হাহাকার অনুভব করছে, কি নিদারুণ মিথ্যে প্রণয়ের বলি হলো কেউ কি তা দেখছে ❞ বাস্তবতা ভিন্ন এটা স্বাভাবিক বিষয়। ভাবির সাথে আমার আর কখনোই কথা হয় নি আজ অবদি। ❝ছোটদের অভিযোগ, বিচার বড়রা করে থাকেন,কিন্তু বড়রা পক্ষপাতিত্ত্ব করলে তার বিচার আল্লাহ করে থাকেন নিশ্চয়ই❞। আজ মনে হচ্ছে ভালোই হয়েছে সে,আসে নি আমার এই ব্যর্থ জীবনে।

—❝স্বামী ভালোবাসা চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তবে আমি সেই অপরাধ করেছি। খুনসুটি, গল্প, কিছু স্বপ্ন মিশ্রিত প্রতিশ্রুতি চাওয়া যদি অপরাধ হয়, তবে আমি সেই অপরাধ করেছি। একান্ত কিছু সময়, মধুর আলাপণ যদি অপরাধ হয় তবে হে আমি অপরাধী শাস্তি হোক আমার কঠিন থেকে কঠিন❞। পৃথিবী জানুক সে কোনো মাতাল,নির্বুধ,বোকা বা প্রতিবন্ধী ছিলো না। সুস্থ্য একটা মানুষ ছিলো যার, প্রাণে ভালোবাসা আছে, যেটা স্ত্রী বৈকি আমার জন্য না। প্রেমিকার জন্য পূর্ণ।





--চলবে
বিষয়শ্রেণী: অন্যান্য
ব্লগটি ১২১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৯/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast