www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আহমেদ আল-খালদুনের কথা

কাইরোর জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার
পর আমি ভেঙে পড়েছিলাম,
প্রয়োজন ছিল সতেজ বাতাসের।
তাহরির স্কোয়ারের আগুন
হাতছানি দিয়ে ডেকেছিল বারবার,
স্বার্থপরের মত শোরগোল এড়ানো
মন চেয়েছিল দূরে কোথাও …
আলেকজান্দ্রিয়া থেকে বহু পশ্চিমে
সাদা বালি আর নীল সমুদ্রের
মিশেলে শরীর এলিয়ে দিতে,
মেরসা মাত্রুহ-র নরম অবগাহনে।
চিরকূট পাঠিয়েছিলাম খেয়ালে
আল-হারুণর বিলাসগৃহের
আরবী ভৃত্যকে;
জানতাম না কাজ হবে কিনা,
তবে হয়েছিল,
অ্যালোলি দেখা করেছিল
জ্বলন্ত মিশরের বুকে।
তারপর অসীম পথ,
পেরিয়ে গেছিলাম দু’জনে
অনন্তের উদ্দেশ্যে যেন …
হারিয়ে যেতে চেয়েছিলাম দুনিয়া থেকে …।
ঘর বেঁধেছিলাম আর
অ্যালোলির চোখেমুখে ভালোবাসা
উপচে পড়েছিল
আমার হৃদয়ের কঠিন সুরাপাত্রে।
মদিরতা মাখা জীবন
ভূমধ্যসাগরের মত সঙ্গীতময়
হয়ে ভেসে চলেছিল
যতদিন না কাইরোর আগুনভভেজা রাস্তায়
আল-হারুণের লোকেরা নেমে এসেছিল,
অ্যালোলির খোঁজে।
ছবিগুলো ঝাপসা হয়ে ভেসে আসে
মাঝে মাঝে,
দেড়বছর আগে কোনো ফূর্তিবাজ
বন্ধুর পাল্লায় পড়ে
গিয়েছিলাম আল-হারুণের বিলাসগৃহে,
রাজকীয় আয়োজনের ঔজ্জ্বল্যে
একদিকে মধ্যপ্রাচ্য সুরায় ডুবেছিল
আর অন্যদিকে সুন্দরী নর্তকীদের
শরীরের আরবী সৌরভ অবশ
করে দিয়েছিল তুচ্ছ ঘ্রাণেন্দ্রিয়।
বিলাসিতার অবকাশে
এক অসহায় সুন্দরী পরিচারিকা
এসেছিল সুরাপাত্রের পসরা সাজিয়ে,
অ্যালোলি, আমার অ্যালোলি!
গাঢ় কালো কোহল দিয়ে আঁকা
টানা টানা চোখ আর
স্যালমনের রুজ বোলানো
মোহময়ী মুখে ভয়!
আলাপ করিয়েছিল সেই আরবী ভৃত্য;
অনেক কথা বলেছিলাম,
সে বলেনি।
তারপর প্রায়ই যেতাম সেখানে
অ্যালোলির আকর্ষণে
মাতোয়ারা হয়েছিলাম আমি-
ভয় কেটেছিল সামান্য ওর।
ইতোমধ্যে মিশরে আগুন লাগলো,
আমি তলিয়ে গেলাম বিদ্রোহের আঁচে,
পোড়ালাম অত্যাচারীর কুশপুতুল,
যোগ দিলাম নিষিদ্ধ সংগঠনে,
টহলদার সেনাদের ওপর গুলি চালালাম,
তারপর … তারপর সোজা জেলে।
জেলে বসে কত কি ভেবেছি
কত কি লিখেছি আপন মনে,
তবে বিশ্বাস ছিল
যেদেশে ফ্যারাওদের প্রতাপ ধুলোয় মিশেছে,
মুবারক তো কোন ছার!
জেল থেকে বেরিয়েই চলে আসা
মেরসা মাত্রুহ-র বাহুপাশে …।
এইতো সেদিন নীল আকাশের নীচে
নরম বালির ওপর শুয়ে
অ্যালোলির নরম চুল নিয়ে খেলার সময়,
একটা শুকনো ক্ষত দেখলাম ঘাড়ের কাছে,
আমি প্রশ্ন করার আগেই
ও উঠে চলে গেল … নীরবে …।
সেই মায়াবী রাতেই সমুদ্রতীরে
ধরা পড়লাম
আল-হারুণের পোষা পিশাচগুলোর হাতে,
প্রথমে কাইরোতে নজরবন্দী হলাম
আর তারপর আবার সেই জেলে।
দীর্ঘ দু’বছর পর অ্যালোলির খবর পেলাম
নির্বাসিত সেই আরবী ভৃত্যের কাছে:
অ্যালোলির আসল নাম মুকানতাগারা,
আল-হারুণ ওকে তুলে এনেছিল
হুরঘাদা থেকে,
নিজের বিলাসগৃহে ওকে পতিতা
নিযুক্ত করেছিল,
অ্যালোলি চাইতো না যে আমি
এটা কোনোদিন জানতে পারি,
ওকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি …
সুদূর মরুভূমির ওপর দিয়ে
ধীরগতিতে এগিয়ে চলে উটের সারি
লিবিয়া সীমান্তের দিকে-
হয়তো আমি ওপারে যেতাম না,
হয়তো আমি নিজের সাথে লড়তাম,
কিন্তু সবাই যে ভালো থাকতে চায়!
রাজত্বের পর রাজত্ব ধ্বসে যায়,
শরীরের পর শরীর ছাই হয়ে যায়,
রয়ে যায় শুধু স্মৃতি
রয়ে যায় শুধু ভালোবাসা।
বিষয়শ্রেণী: কবিতা
ব্লগটি ৪৪০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৫/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অসাধারণ কবিতা
  • ইব্রাহীম রাসেল ২৫/০৯/২০১৩
    অনেক ধৈর্য আছে তোমার, খুব ভালো--
  • Înšigniã Āvî ২৫/০৯/২০১৩
    দুর্দান্ত
 
Quantcast