www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

প্রবাসে শহুরে হাটে একদিন

ম্যারিল্যান্ডের ছোট একটি শহর সিলভার স্প্রীং। এই শহরের এলসয়ার্থ ড্রাইভে দিনের ব্যস্ততার মধ্যে ছুটে চলে হাজার হাজার মানুষ। কেউ পায়ে হেটে কেউ আবার নিজস্ব যানে।রাস্তার দু'পাশে নানা পন্যের বিপনী কেন্দ্র, জিম, শপিং সেন্টারসহ ভিবিন্ন দেশীয় খাবারের দোকান ও রেস্তোরা। দিনের আলোতে এসব দোকানপাট নিস্প্রভ থাকলেও রাত বাড়ার সাথে সাথে রঙ্গীন আলোর ঝলকানিতে মানুষের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠে এই রাস্তাটি।সন্ধ্যে ছয়টার পর থেকে এই রাস্তার যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। যাতে করে সাধারণ আমোদপ্রিয় মানুষগুলোর অসুবিধা না হয়। প্রতি দিনের জমজমাট আসরের মূল কেন্দ্র স্থল হলো থিয়েটার হল কেন্দীক। মধ্য রাত অবধী চলে এই থিয়েটার মানুষজন বিভিন্ন মুভি দেখে কেউ রাস্তার মাঝখানে বসে কেউ বা রাস্তার ফুটপাতে বসে আড্ডা দেয় এব্ং নানান দেশের খাবারের স্বাদ আস্বাদন করে। এখানে রয়েছে চাইনিজ, ভিয়েতনামী, মেক্সিকান, আমেরিকান খাবারের দোকান ও রেস্তোরা।

সামারের সময় এই রাস্তার আয়োজন হয়  ভিন্ন আমেজে। শনিবার সকাল থেকে এই রাস্তার সব যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। খাবারের দোকান/রেস্তোরা সকালে বন্ধ থাকে। সকাল থেকেই বিভিন্ন ফার্মের মালিকগন তাদের ফার্ম  থেকে তোলে আনেন নানা জাতের তরিতরকারী। আলু,টমেটু, কপি,শাক,মূলা,পিঁয়াজ থেকে শুরু করে নানা পসরা সাজিয়ে রাস্তার মাঝখানে বসে পড়ে। আর নানা বয়সের ক্রেতা ভীড় করে এব্ং কেনাকাটা করে।সব্জির পাশাপাশি কেউ পপকর্ন ভেজে বিক্রি করছে, কেউ আইসক্রীম কেউবা মচমচে চিংড়ী মাছ। ফ্রোজেন শাক সব্জী খেয়ে অভ্যস্থ আমেরিকানরা, টাটকা সব্জীর লোভ সামলাতে না পেরে চলে আসে তরুণ, মধ্য বয়সী বা বৃদ্ধ-বৃদ্ধরা।

রাস্তার একপাশে মঞ্চ বানিয়ে কোন সপ্তাহে চলে গানের আসর, আবার কোন সপ্তাহে বাদ্যযন্ত্র ঝনঝনানি, আবার কখনো বেহালার করুণ সুর। মূলত ক্রেতারাই গানের মূল শ্রোতা। খুশি হয়ে যে যা পারে তাই দেয়। এটাই মুলতঃ গান বা বাদ্যযন্ত্র দলের আয়ের উত্স। একদিন দেখলাম বেহালার করুণ সুরের সাথে এক তরুণীকে বেশ হেলিয়ে-দুলিয়ে নেচে চলেছে আর মুগ্ধ দর্শক ডলার রেখে দিচ্ছে তার পায়ের কাছে রাখা ছোট্ট বেহালার বাক্সে। ব্যাপারটা ছিলো সত্যিই উপভোগ্য।

গেলো খাবার-সব্জি-গান-নাচ আর বাদ্যযন্ত্রের কথা। এদের সাথে পিছিয়ে নেই কবিরাজরা। রাস্তার এক পাশে তারাও নানা পসরা নিয়ে দোকান খোলে বসে পড়েছে। নানা রকম তাবিজ,টুটকা সামগ্রী ও নানান ধরনের গাছ-গাছরার শিকড়-বাকড়। মূলতঃ আফ্রিকানারাই এই সব দোকানের মালিক। আমার ধারনা ছিলো কেবল এশিয়ান লোকেরাই তাবিজ-কবজ, টোকটা-ফোটকায় বিশ্বাসী! না, এখন দেখী আমাদের চেয়ে দক্ষিণ আমেরিকান ও আফ্রিকান মানুষের অবস্থা আমাদের চেয়ে ভয়াবহ। অনেককে দেখেছি কাজের জায়গায় বসের মন গলানোর জন্য, বা কাউকে বসে আনার জন্য এই টোটকা সামগ্রী ব্যাবহার করতে। পাশে দেখলাম আরেকটি দোকানে নানান ধরনের বাউল মালা, তজবী, সুরমা,আতর বিক্রি করছে। এই দোকানটিও আফ্রিকান।

কাপড় ব্যাবসায়ীরাও বসে নেই, তারাও খোলে বসেছে রংবেরঙ্গের কাপড় নিয়ে। এখানে স্থান পাচ্ছে আফ্রিকান ও দক্ষিণ আমেরিকান কাপড়। দাম একটু বেশী হলেও সব্জির পাশাপাশি কাপড় বিক্রি হচ্ছে সমান তালে।

রাস্তা ধরে হাটতে বেশ ভালোই লাগছিল। যখন চলে আসব। হঠাত খোল আর মন্দিরার শব্দ শুনে থমকে দাঁড়ালাম! সামনে দিয়ে দেখি একদল খোল,মন্দিরা, ঝিপসি নিয়ে গেয়ে চলেছে,'হরে কৃষ্ণ হরে রাম।' বেশ ভালো লাগল। আমরাও ওদের সাথে যোগ দিলাম। আলাপকালে জানতে পারলাম। এদের দলের নাম 'হরে কৃষ্ণ সংঘ' এরা বিভিন্ন জায়গায় কৃষ্ণের কৃর্তন গেয়ে ভিনদেশী/ভিন ভাষি মানুষের মুগ্ধ করে। আমেরিকার রাস্তায় কৃর্তন অবাক করার মতো। তাই দলের সাথে তোলে নিলাম কয়েকটি ছবি। আস্তে আস্তে বেলা গড়িয়ে যায় মানুষজনও ছুটে যায় আপন ঠিকানায়। ভেঙ্গে যায় শহুরের হাট।

১০/১২/২০১৩
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৭০৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৪/১০/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সত্যিই চমৎকার দেশের বাইরের দৃশ্য।আপনি আপনার শৈলী লেখনীতে যে দৃশ্য ফুটিয়ে তুলেছেন খুবই ভালো লাগলো।আর ভিনদেশের যে বৈচিত্রময় আচাার লেখা র মাধ্যমে আমাদের উপহার দিয়েছেন তার জন্য আপানাকে ধন্যবাদ।শুভকামনা আপনার জন্য।
  • אולי כולנו טועים ১৫/১০/২০১৩
    বন্ধু সুবীর, তোমাকে আর তোমার পরিবারের সবাইকে
    পুজো, ঈদ আর থাঙ্কস গিভিং এর শুভেচ্ছা ! মেরিল্যান্ড এ
    নিশ্চয় মজা হচ্ছে খুব ?

    তুমি করে বলাতে কিছু মনে করনিতো ? ভালো থেক ll
    • না না মনে করিনি। আপনাকেও শুভ বিজয়া ও ঈদ মোবারক জানাই,
      • אולי כולנו טועים ১৫/১০/২০১৩
        নটরডেম ৯৩ ব্যাচত ? তুমি করেই বলতে পার আমাকে ?
  • প্রবাসী পাঠক ১৪/১০/২০১৩
    খুব সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন। নতুন একটি শহরের ঐতিহ্য ও অনুষ্ঠানের সাথে পরিচিত হলাম। বাংলাদেশের বাইরে যারা থাকেন তারা সবাই কম বেশি এই ধরনের অনুষ্ঠানের সাথে পরিচিত। প্রবাসে থাকার কারনে আমিও এই ধরনের কিছু আচার অনুষ্ঠানের সাথে পরিচিত। অনেক জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান হলেও বড্ড মিস করি বাংলাদেশের অনুষ্ঠানগুলো। একুশের প্রভাত ফেরি, পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠান, ঈদ মেলা , পূজা , বই মেলা এগুলোর কথাই মনে পরে।
    • পরবাসী ভাই, দেখলাম আপনি কানাডা প্রবাসী। আমাদের এখানে অনেক অনুষ্ঠান হয় এব্ং সময় পেলেই ছুটে যাই। এখানে অনেক বড় বড় সংগঠ্ন আছে যারা এসবের আয়োজন করে থাকে। তাছাড়া বাংলাদেশ দূতাবাসে অনুষ্ঠান হলে আমরা যোগ্দান করি। আমার মেয়ে এসব অনুষ্ঠানে নাচ করে।
  • নাজমুন নাহার ১৪/১০/২০১৩
    তুমি কি দেশের বাইরে থাকো নাকি সুবীর ?
    লেখার জন্য ভাললাগা ।
  • সহিদুল হক ১৪/১০/২০১৩
    দারুণ একটা বিষয় জানা হলো।
  • אולי כולנו טועים ১৪/১০/২০১৩
    এক নিঃশ্বাসে পড়লাম -
    অসম্ভব ভালো লাগলো !!
 
Quantcast