www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

উতপল মাষ্টার

সকালে খুব ভয়ানক একটা ব্যাপার ঘটে গেছে। শুধু ভয়ানক না, তার চেয়েও বেশী। পেরেরা সাব বার বার মোবাইল টিপাটেপি করছে। এটা তার প্রায়ই হয়, যে কোন বিপদে অযথা মোবাইল টিপবে। এ নিয়ে তার চম্পাকলি্র কাছে তাকে বেশ কয়েকবার ধমক খেতে হয়েছে। ঘটনাটি হলো, আজ সন্ধ্যায় উত্পল মাষ্টারকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। খবরটি তিনি পেয়েছেন,কবি অভির কাছ থেকে। ওর কবি নাম ইনসিগনিয়া (অভি)  ছেলেটা বেশ চটপটে।যেকোন কাজ অনায়াশে করে দিতে পারে। ওর উপর ভরসা করা যায়।তবে ব্যাপারটা অভি কিভাবে জানে? পেরেরা সাব তা জানেন না। তবে তিনি বেশ টেনশনে আছেন। কি করবেন ভেবে পাচ্ছিলেন না। উতপল মাষ্টার পেরেরা সাবের স্কুল জীবনের বন্ধু। মাষ্টারের ছেলে বলে সবাই সবাই তাকে মাষ্টার নামে চিনে।। এ ছাড়া সে প্রছুর টিউশনি করত।মাষ্টার বেশ কবিতা টবিতা লিখে। তার নিজ উদ্যাগে পড়া ছিন্নমূল কবিতা পরিষদের সভাপতির দায়িত্বে আছে।

এর মধ্যে অভির ফোন, 'দাদা আপনি থানায়?
-না ঘরে।
-কিছু করতে পারলেন?
-না বুঝতে পারছি না, কি করব।
-আপনার চ্যানেলে কোন মন্ত্রী, এমপির জানা শোনা নাই?
-ভালো কথা মনে করেছ অভি, আমার এলাকার আক্তার ভাইয়ের সাথে বেশ জানাশোনা আছে। কিন্তু সে তো এখন এমপি না।আক্তার ভাইয়ের বাসায় বহু গিয়েছে। তার বাসায় অনেক রাজশাহীর আম খেয়েছি। এলাকার এক ভাই হারূন আম কেটে দিত। আ : কি মিষ্টি সেই আম।
-দাদা আম পরে খান। এখন উতপল মাষ্টারকে বাইর করার বন্দোবস্থ করেন। দেখেন আক্তার ভাইকে ফোন করে। দাদা, মাষ্টার বলেছে ব্যাপারটা যেন কেউ না জানে।
-অভি শোন ছোট একটা সমস্যা ।বর্তমান এমপি হলে চুমকি আপা। তার সাথে তেমন জানাশোনা নাই। তারপরও চেষ্টা নিতে পারি।
-প্লিজ দাদা দেখেন।
আচ্ছা দেখি। পেরেরা সাব প্রথমে ফোন করে ধানমন্ডি থানায়। কারণ উতপল ধানমন্ডি লেকে শিউলীকে নিয়ে প্রায়ই বাদাম খায়, গল্প-গুজব করে। ধানমন্ডি থানায় উতপল মাষ্টার নেই। শেষে তাকে পাওয়া গেল। পুরান ঢাকার কোতোয়ালী থানায়।

পেরেরা সাব ইতোমধ্যে চুমকি আপার ফোন নাম্বারে ফোন দিলেন। কিন্তু কেউ ধলেন না। পরে তার অফিসে ফোন দিলে। এবার ধরেছে তার পিএস। হ্যালো চুমকি আপা কি আছে?
-না নাই। কে বলছেন?
- আমি উনার এলাকার একজন নাদান। পরিচয় দেবার মত কিছুই নাই।
-বলেন কি ব্যাপার?
না মানে আমার এক বন্ধুকে পুলিশে ধরে নিয়ে গেছে।
-কি কেস? চুরি?ডাকাতি?আন্দোলন?
-না না, নবাবপুর রোড থেকে পুলিশ ধরেছে।
-চুট্টামি কেস।
-ছি ছি না না। টিউশনি থেকে আসার পথে এরেষ্ট হয়েছে।
-বুঝছি, নবাবপুর রোড  তো ইংলিশ রোডের কাছেই।আচ্ছা আসামীকে কি পুলিশ চালান দিয়ে দিয়েছে?
-আসামী বলছেন কেন?
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে আসামী বলব না।ভদ্রমহোদয়কে কি চালান দেয়া হয়েছে।
-জানি না।
-নাজেনে কোন করছেন কেন? আগে জেনে নেন, পরে ফোন দেন।

পেরেরা সাব অগ্যতা একাই কোতোয়ালী থানায় রওনা হলেন।থানায় ওসিকে পাওয়া গেলো না। এক সাব ইন্সপেক্টর্চেয়ারে বসে আরামে বাদাম খাচ্ছে। সামনে চেয়ারে উগ্রসাজে এক মহিলা। অন্য চেয়ারে এক ভদ্রলোক।  গলায় এসএলআর ক্যামেরা। মনে হলো সাংবাদিক।
-পুলিশ সাহেব, এখানে উতপল চন্দ্র মন্ডল নামে কেউ আটক আছে।
-হ্যা আছে কি হয়?
-আমার বন্ধু। মাষ্টারী করে।পুরান ঢাকায় টিউশনি করে।
-দেখা করতে চান?
-জ্বি না জামিন নিতে এসেছি।
-কোন মন্ত্রীর ত্দবির আছে?
-জ্বি না

উগ্র মহিলাটি বত্রিশ দাঁত বের করে হাসছে। বলল, শোনেন ভাইসাব মন্ত্রী এমপি কাম নাই। আহ আমার লগে। বলে রুমের বাইরে নিয়ে বলল, কিছু টেকা ছাড়েন, সব ঠিক কইরা দিমু। বুঝলেন না চুট্টামী কেস! বলেই খিল খিল করে হাসতে লাগল।
-শোনেন আপা আমার কাছে কোন টাকা নাই। যদি পারেন তো এমনিই  উপকার করেন।
এর মধ্যে ভিতরের লোকটিও চলে এসেছে বাইরে। পেরেরা সাবের হাতে তার একটি ভিজিটিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলল, 'আমি সাংবাদিক। দৈনিক তেমাথা পত্রিকায় কাজ করি। আপনি নিশ্চয় ফজলু মিয়ার নাম শুনেছেন। বিশিষ্ট ভরেওলোক। বাড়ী পাবনা। দশটা ইটের ভাটার মালিক। বিরাট ব্যাবসায়ী। রিনি এই পত্রিকার মালিক।'
পেরেরা সাব মাথাভাঙ্গা পত্রিকার নাম শোনেছেন। কিন্তু তেমাথা পত্রিকার নাম কোনদিন শোনেনি।
-পত্রিকা নিয়মিত বাইর হয়না ভাইসাব। নামে দৈনিক, কামে নাই। মাঝে মাঝে থানায় বসে থাকি। কোণ চুট্টামী কেস পাইলে, এই গোলাপী নিয়া হাজির হই। আসামীরে ভয় দেখাই, একসাথে ছবি তোলে পত্রিকায় ছাপাব বলে। আসামীরা ভরে কিছু ছাড়ে। এর মধ্যে টাকার কয়েকটা ভাগ হয়। ওসিসহ সবাই ভাগ পায়।

পেরেরা সাবের মাথা ঘুরছে। এর মধ্যে এক কনস্টেবল তাকে ডাকে ভিতরে নিয়ে গেল। সাব ইন্সপেক্টর তাকে বললেন, আপনার বন্ধুর জামিন হয়ে গেছে।
-কীভাবে স্যার?
-নটর ডেম কলেজ থেকে প্রিন্সিপাল ফোন করেছিলে। আমার ছেলে নটর ডেম পড়ে। খুব ভাল কলেজ। যান আপনার বন্ধুকে নিয়ে যা।

উতপল মাষ্টার এলো খুড়িয়ে খুড়িয়ে।তার এক চোখ কালো হয়ে ফোলে গেছে।বুঝা গেছে কিঞ্চিত ডলা দিয়েছে পুলিশ।থানার বাইরে এসে পেরেরা
সাব জিজ্ঞেস করল,'মাষ্টার পুলিশ মারধর করেছে?
-সামান্য করেছে।
-পা খুড়িয়ে হাঁটছ কেন?আর বল কি ঘটেছিল? গেছিলা খারাপ পাড়ায়?
-দুর বাজে কথা। সন্ধ্যায় টিউশনি করে ফিরছিলাম। রাস্তায় জ্যাম দেখে নবাবপুর রোড ধরে হাঁটছিলাম।হটাথ দেখি মানুষের দৌড়াদৌড়ি। ভাবলাম। মিছিল বা অন্য কোন গন্ডগোল। আমিও দিলাম দৌড়।সামিনে ছিলো ম্যানহোল। পড়ে গেলাম। ভীষণ ব্যথা পেয়ে বসে গেলাম। সামনে ছিল পুলিশ ভ্যান। ব্যাস আমাকে ধরে ফেলল। ওরা নাকি ইংলিশ রোডে রেড দিয়েছিল।

এখন রাত বাজে একটা। মাষ্টারকে নিয়ে তেজকুনী পাড়া কলমীলতা বাজার গলিতে ঢূকতেই শর্লীর সাথে দেখা। তাদের দু;জনের দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন চিড়িয়াখানায় বাদর দেখছে।
-দুই বান্দর দেখি এক সাথে। এই মাষ্টার তোমারে না বলছি, কবিদের সাথে চলবানা? মাষ্টার মাথা নিচু করে রইল।

পেরেরা সাব ঘরের দিকে পা বাড়ালো। সেও জানেনা ঘরে তার জন্য কি অপেক্ষা করছে?

০৯/২৫/২০১৩
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮১৫ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৬/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • পুলিশ অপরাধীকে ধরতে পারে না, নিরপরাধ অসহায় সাদাসিধে মানুষকে হয়রানি করে। এরকম অজস্র ঘটনা প্রতিদিন ঘটে যায় অগোচরে। তার একটা আপনার লেখায় উঠে এসেছে। পড়ে খুব ভালো লেগেছে
  • ভানম আলয় ২৭/০৯/২০১৩
    ঠিক বলেছেন সুবীরদা, থানা বড় বাজে যায়গা......।। দারুণ লিখেছেন......
  • Înšigniã Āvî ২৬/০৯/২০১৩
    অদ্ভুত.....
    এরকম ও হয় !!
    • অভি হয়, এমন হয়
    • Înšigniã Āvî ২৬/০৯/২০১৩
      থানায় এরকম ঘটনা জানা ছিল না,
    • Înšigniã Āvî ২৬/০৯/২০১৩
      "পেরেরা সাব অগ্যতা একাই কোতোয়ালি থানায় রওনা হলেন।থানায় অসিকে...."

      'অগত্যা' ও 'ওসি' হবে বোধহয়, একটু দেখে নিন সুবীরদা ।
  • ইব্রাহীম রাসেল ২৬/০৯/২০১৩
    --বাহ! তুমি গুরু সব জায়গায় সমান। চলুক গল্প আরো
 
Quantcast