www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নয়ন মাষ্টার

আকাশে মেঘের ছিটে-ফোটা অংশটা মাত্র নেই। কয়েকদিন বেশ গরম পড়েছে। বৃষ্টি হবে বলেও মনে হচ্ছে। হোক বা না হোক এ নিয়ে পেরেরা সাবের মাথা ব্যাথা নেই। পেরেরা সাব থাকেন তেজকুনিপাড়া একটি মেসে। থাকা খাওয়া বাবদ মাসে তাকে আটশত টাকা দিতে হয় মন্দ না। চলে যায় বেশ ভালই। মেসের জীবনে আবার ভাল মন্দ কি?

আজ সকাল সকাল সে বেড়িয়ে পড়ে। উদ্দেশ্য সাভারে যাবে। সাভারে পেরেরা সাবের বন্ধু নয়ন মাষ্টারের বাড়ী। নয়ন স্থানীয় একটি স্কুলে  পড়ায়। বিয়ে-শাদী অনেক আগেই সেরে ফেলেছে।অকাল পক্ক ছেলেদের যা হয়। পেরেরা সাব বিয়ে করেনি। কে করবে? না আছে টাকা-পয়সা, না আছে চেয়ারা সুরুত। জীবনে তার শখ ছিল কাউকে ভালবেসে বিয়ে করবে। কপাল মন্দ কেউ আসে নি।

দীর্ঘ দুই ঘন্টা ফার্মগেইট ওভার ব্রিজের নীচে দাড়িয়ে থেকে অতি কষ্টে দু'তলা বাসে উঠে পড়লেন। বাস মিরপুর পার হতেই বিশাল ট্রাফিক জ্যামে আটকা পড়ে রইল। মিরপুর থেকে গাবতলী আসতে বারোটা বেজে গেল। পেরেরা সাব মনস্থির করলেন, সামনে আমিন বাজার নেমে স্যালো ইঞ্জিন নৌকায় সাভার যাবেন। গরমের কথা ভেবে আর নাম্লেন না।

বাস সাভার চৌরাস্তা পৌছতে বেজে গেলো দুইটা তিরিশ। অনেক দিন সাভার এসে পেরেরা সাবের বেশ ভালোই লাগছে।

বাসস্ট্যান্ডে নেমে দেখে নয়ন মাষ্টার তার দুই ছাত্রসহ মোটর সাইকেল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।বিড়ি ফুকছে। মাষ্টার আবার মোটর সাইকেল কিনল কবে? এতো টাকা পেলো কোথা থেকে?চলো দোস্ত, মোটর সাইকেলের পিছনে উঠ। পেরেরা সাব তাই করলেন। অর্ধেক রাস্তায় গিয়ে পেরেরা সাব আর পারলেন না,লজ্জ্বা ভেঙ্গে বলেই ফেললেন মাষ্টার নামাইয়া দাও পা ব্যাথা করছে। নয়ন মাষ্টার পিছনে তাকিয়ে দেখে পেরেরা দুই পা দুই দিকে ঝুলিয়ে বসে আছে! 'কর কি দোস্ত, পাদানি নামিয়ে বস। পেরেরা মোটর সাইকেলে চড়ে অভ্যস্থ নয়। তাই জানে না পিছনে পা রাখার দন্ড আছে।

পেরেরা ভাবছে। আধুনিক মাষ্টারা মোটর সাইকেল চালায়! তার ধারণা ছিলো, মাষ্টার মানুষ থাকবে আধ ময়লা সাদা পাঞ্জাবী-পাজামা, বগলে বা মাথায় কাঠের ডাসার ছাতা। না না এটা প্রচীন যুগের কথা হয়ে গেল। তাহলে কভারবিহীন একটি সাইকেল, সাইকেলের মধ্য দন্ডে ছাতা বাঁধা। প্যান্টের এক পা ভাঙ্গা অথবা রাবার ব্যান্ড লাগানো। না পেরেরা সাবের হিসেব মিছলে না!

মাষ্টারের বউ আগেই রান্না-বান্না রেডি করে রেখেছিল। মাষ্টারের দুই ছেলে কাছে আসতেই পরিচয় করিয়ে দিলো, এটা তোদের জ্যাঠা হয়! বদ মাষ্টার বলে কি? আমাকে কি লজ্জা দিলো, বিয়ে করিনি বলে?

খাবারের পর মাষ্টারের সাথে লম্বা আলাপ। বিষয় আদিযুগ, মধ্যযুগ ও বর্তমান যুগের মাষ্টারী।আদি যুগের মাষ্টার মানে কঠিন একজন মানুষ চোখে চশমা, রাশভারী, কথা কম বলেন, ছাত্রদের বিনা পয়সায় পড়াতেন। টিঊশনির কথা ভুলেও চিন্তা করতেন না। চেহারায় একটা গরীবি ছাপ লক্ষ্য করা যেত।  মধ্য যুগের মাষ্টার টিঊশনি করতে শুরু করেন চেষ্টা করতেন বিদেশী বাপের ছেলে-মেয়ের পড়াতে। টাকা ভালো পাওয়া যায়। আর এসব ছ্ত্র/ছাত্রীরা পড়াশোনায় অমনযোগী। আর মাষ্টারদের হাতে শোভা পেত বিদেশী সিকো ফাইভ ঘড়ি! কারো কারো গলায় স্বর্ণের চেইন!

আর বর্তমান! নয়ন মাষ্টার তার জ্যান্ত প্রমাণ! অঢেল টাকার মালিক।কীভাব? পেরেরা সাব ভাবতে পারে না। ঢাকা টু ধামরাই কাঠবডি বাসে বসে মাথা চুলকায়। বাস ঢাকার পথে এগিয়ে চলে।

০৯/১৮/২০১৩
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৭৮২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৯/০৯/২০১৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ওয়াহিদ ১৯/০৯/২০১৩
    পেরেরা সাব টা কেরে ?আমার দাদা ভাইটা নাকিরে ? B)

    দাদার প্রথম গল্প পড়লাম ,ভালো লাগলো ।

    দোয়া রয়ল :)
  • Înšigniã Āvî ১৯/০৯/২০১৩
    অনবদ্য.......
    সমসাময়িক জীবনের চিত্র ।
  • suman ১৯/০৯/২০১৩
    অসাধারন বিষয়ব্স্তুর অবতারনা করেছেন গল্পকার, অত্যন্ত সমসাময়িক ...আমরা আরো লেখার অপেক্ষায় রইলাম
  • রোদের ছায়া ১৯/০৯/২০১৩
    ছোট গল্পের মাধ্যমে বেশ জটিল ভাবনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন দেখছি। ভালো লাগলো। আগে আপনার কবিতা পড়েছি শুধু গল্প এই প্রথম।( মনে হচ্ছে খুব কম সময়ে এই লেখাটি পোস্ট করেছেন কিছু বানান আবার দেখে নিলে ভালো হবে।) আমারও একটি গল্প আছে এখানে সময় করে পড়লে খুশি হবো।
 
Quantcast