www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মনে রাখিস আমাকে

-- তুই আমাকে এখন আর ভালোবাসিস না !
-- এই অর্ণব, তুই সুস্থ আছিস তো !!
-- না, নেই ।
-- কেন কি হয়েছে তোর ?
-- আমি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি। তুই আমাকে এখন আর ভালোবাসিস না !!
-- না।
কিছুক্ষণ উভয়পক্ষ একদম চুপচাপ। তারপর তৃষা আবার লিখলো,
-- আর শোন, যদি মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করিস তাহলে ডাক্তার দেখা।
অর্ণব কি বলবে বুঝতে না পেরে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখটি বন্ধ করলো। আজ কেন জানে না অর্ণব, নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। একটা অভিমান কি সব শেষ করে দিতে পারে !! অর্ণব বুঝতে পারছে না কিছুই। কোমর পর্যন্ত পাঁচিল দেওয়া ছাদও যেন আজ ওকে ধিক্কার জানাচ্ছে। অর্ণব শুনতে পাচ্ছে কেউ যেন ওর কানে কানে বলছে, "তুমি একজন ব্যর্থ পুরুষ, একদম ব্যর্থ.......
অর্ণব শুনতে পাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকাগুলো যেন হাসছে, চিৎকার করে ওকে ধিক্কার জানাচ্ছে। যেন অর্ণব শুনতে পাচ্ছে ঝিঁ ঝিঁ পোকাগুলো বলছে, " তুমি ভালোবাসা আগলে রাখতে পারো না, তুমি হেরে গেছো।"
রাতের কুয়াশা ভেজা গন্ধে অর্ণব একটা ঠান্ডা ভালোবাসা অনুভব করলো, অর্ণব উপলব্ধি করলো ওর ভালোবাসা হয়ত রাতের মতোই গভীর, চুপচাপ...... হয়ত এই জন্যই তৃষা ....... এসব কি ভাবছে অর্ণব। তাড়াতাড়ি চোখটা খুললো। ছাদের পাঁচিলে হেলান দিয়ে বসলো। তারপর একটা সিগারেট বের করলো। একটা লম্বা টানে একগাল ভর্তি ধোঁয়া ধীরে ধীরে কুন্ডলী পাকিয়ে আকাশের দিকে দিল। অর্ণব যেন চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছে সেই প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি।

তখন অর্ণব প্রথম বর্ষের ছাত্র। সবে সবে কলেজ উঠেছে, তাই মনটা বড্ড ফুরফুরে। আর তৃষা, সেও প্রথম বর্ষের ছাত্রী তবে অন্য কলেজ। আর রইলো অর্ণব আর তৃষার যোগাযোগ, সেটা ছোটোবেলা থেকেই ছিল, মানে প্রথম শ্রেণী থেকে। এককথায় অর্ণব আর তৃষা ছেলেবেলার বন্ধু। হ্যাঁ, বন্ধুই, খুব ভালো বন্ধু। পড়াশোনার দিকটাই দুজনই বেশ ভালো। এইভাবে তাদের বন্ধুত্ব দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত টানা চললো। তৃষা আর অর্ণব এতটাই ভালো বন্ধু যে তাদের অনেক কথা মুখে না বললেও চোখের ইশারায় তারা বুঝে নিত। তারপর এই গল্পে একটা লম্বা ব্রেক, অনেক অদল বদল আসলো, শুধু প্রত্যেকের জীবনে নয় তাদের বাসস্থানেও। যেমন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে তৃষা চলে গেলো কলকাতা শহরে, আর পড়াশোনার জন্য অর্ণবকে পাড়ি দিতে হলো হোস্টেল লাইফে। আর তাদের সেই চেনা বন্ধুত্ব থেকে গেলো WhatsApp এ। তাদের চোখে চোখে বুঝে নেওয়া কথাগুলো অজানায় থেকে গেলো।
আসলে সময়ের স্রোতে ভেসে যাই অনেক কিছুই তার মধ্যে একটা প্রধান হল, সম্পর্ক, যে কোনো সম্পর্ক। বর্তমান সময়ে যতই সামাজিক মাধ্যম আসুক না কেন, সমাজ ব্যবস্থা যতই উন্নত হোক না কেন, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার ক্ষমতা এগুলো কারোর ক্ষেত্রেই নেই। সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে গেলে তো কোনো মাধ্যম নই বরং সময়ের প্রয়োজন। কিন্তু এই ব্যস্ততার শহরে অন্যের জন্য এতটুকু সময় হয়ত কেউ বের করতে চাই না বা হয়ত পারে না।
অনেকদিন পর অর্ণব আর তৃষার আবার সেই বন্ধুত্বের আঙিনায় কথাবার্তা শুরু হল এবং খুব শীঘ্রই সেই সম্পর্ক অন্য একটা রূপ নেয়। অন্য পাঁচটা গল্পের মতো এ গল্পও মোড় নেয় বন্ধত্ব থেকে ভালোবাসায়। দুজনেই বুঝে যাই তাদের ভালোবাসার জন্ম হয়েছিল সেই দশম শ্রেণীর দূরন্ত সময় থেকেই কিন্তু কোনো কারণবশত কেউ কাউকে বলে উঠতে পারিনি।
যখন দুজনেই জানতে পারলো তাদের ভালোবাসার কথা তার কয়েকদিনের মধ্যেই যখন দুটো হাত আরও কাছাকাছি আসা উচিত ঠিক সেই মুহুর্তে সম্পর্কের মাঝে ভীড় করলো অভিমান যাকে সরিয়ে হয়ত কেউ সম্পর্ক রাখতে চাইনি আর হয়ে ওঠেনি। কিন্তু অভিমানের কারণ খুব সাধারণ। রাত্রি তখন ন'টা বা সাড়ে ন'টা। হঠাৎ তৃষার কল। অর্ণব ফোনটি ধরলো এবং দু'একটা কথা বলার পর অর্ণব বললো, "এখন আমি পড়ছি, পরে ফোন করবো।" তৃষা ফোনটা কেটে দিল। আসলে তৃষা খুব একটা ফোন করে না কোথাও, আসলে ওর ফোনে কথা বলতে ভালোও লাগে না। সেদিনই সম্ভাবত তৃষা নিজে অর্ণবের কাছে প্রথম ফোন করেছিল। কিন্তু এটুকুই কি যথেষ্ট অভিমান করার জন্য...... এ প্রশ্নের উত্তর অর্ণবের জানা নেই। তবে সবকিছু ভুলে অর্ণব বারবার সরি বলেছে তৃষাকে। অনেকবার ফোন করেছে তৃষাকে। অনেকবার এস এম এস করেছে তৃষার কাছে কিন্তু কিছুতেই কিছু হল না। ঠিক তখনই অর্ণবের মনে হল, তার দোষটা কি কতটা !!
আজ আবার অনেকদিন পর তৃষাকে এস এম এস করলো অর্ণব। আজ ঠিক একটা বছর পর বোধ হয়।

জলন্ত সিগারেটটা ঠোঁটের কোণায় হালকা ছ্যাঁকা দিলে অর্ণব হুশ ফিরে এলো। তারপর সিগারেটটা ফেলে WhatsApp টা খুললো, তৃষার পনেরো মিনিট আগের শেষ কথাটা লেখা আছে "আর শোন, যদি মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করিস তাহলে ডাক্তার দেখা।"
অর্ণব ধীরে ধীরে টাইপ করতে শুরু করলো, " তুই আমাকে সত্যিই আর ভালোবাসিস না !! সত্যি বল, আমার দিব্যি ।
সঙ্গে সঙ্গে তৃষা লিখলো, " দিব্যি দিচ্ছিস কেন ?"
-- " আমি জানতাম, তুই কখনও আমায় চাইলেও ভুলতে পারবি না।"
-- তোর কি হয়েছে বল তো !! আজ এতদিন পর হঠাৎ এসব বলছিস কেন ?
-- আমার নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে কিন্তু কেন বুঝতে পারছি না ।
-- অপরাধ করেছিস কি !!
-- জানি না।
-- তাহলে ?
-- তুই এতটা কঠোর হয়ে যাচ্ছিস কেন ? আগে তো এমন ছিলি না। আমি এর আগেও কতবার তোকে ফোন করেছি, sms করেছি কিন্তু কোনো উত্তর নেই।
-- আমার আর কথা বলতে ভালো লাগে না রে। একা থাকতে চাই, চুপ থাকতে চাই।
-- কিন্তু কেন নিজেকে এভাবে সরিয়ে নিচ্ছিস সবার থেকে ?
-- আমাকে কেউ বোঝে না। আমি পরিবারের বোঝা। আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। আমি আর বেশি কিছু বলতে পারবো না। আর জিজ্ঞাসা করিস না।
-- শুধু একটু বল, আমিও তোকে বুঝি না !!
-- কেউ না, কেউ ......
-- তোর কি হয়েছে সত্যি করে বল না, প্লিজ আর লুকাস না। তুই এত ভেঙে পড়ছিস কেন ?
-- আমার হাতে সময় খুব কম অর্ণব। আমি হেরে গেলাম বোধ হয়। চেয়েছিলাম নিজের পায়ে দাঁড়াতে, সে আর কখনও পারবো না।
-- কিন্তু কেন পারবি না, বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেবে নাকি !!
-- হ্যাঁ, সে তো দেবেই, কলেজ শেষ হলেই ......
-- কি ? কি বলছিস এসব ? তোর বাবা, মা বা দাদা কেউ তো এরকমই নয়। আর তুইও পড়াশোনা করতে চাস, তোর বিরুদ্ধে গিয়ে কীভাবে সম্ভব।
-- সবই সম্ভব। মেয়েরা যে সমাজের চোখে বোঝা। আমি আমার অতীতকে ভুলতে চাই, অর্ণব, প্লিজ ...... ।
অর্ণব কি লিখবে বুঝতে পারলো না। কিছুক্ষণ পর তৃষাই লিখলো, " তুই অনেক বড়ো হ, চাকরি কর নিজের প্যাশানটাকে আগলে রাখিস, নামডাক হলে, বিখ্যাত হলে আমি পৃথিবীর যেখানে থাকি না কেন বা পৃথিবীতে না থাকলেও শুনে খুব খুশি হব।
অর্ণবের চোখের কোণে হয়ত জল জমেছিল অল্প কিন্তু রাতের অন্ধকারে কেউ তার সাক্ষী থাকলো না। বেশ কিছুক্ষণ পর অর্ণব লিখলো, " অতীতকে ভুলে থাকতে গেলে নিজেকে ব্যস্ত রাখিস। চুপ থাকলে অতীত ভোলা যাই না, বন্ধুদের সাথে মন খুলে গল্প করলে অতীত খুব সহজ হয়ে যাই যা আর কোনো কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় না।
সেই সঙ্গে রবী ঠাকুরের একটা সুন্দর উপন্যাস তৃষাকে দিয়ে অর্ণব বললো " যদি আমায় সেই আগের মতো ভালো বন্ধু ভাবিস তাহলে এটা পড়িস মন ভালো হয়ে যাবে, নিজেকে হালকা লাগবে। " যদি কখনও কোনোদিন তোর ব্যক্তিগত বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি তাহলে 'ভুল প্রশ্ন' ভেবে skip করে দিস।
শুভ রাত্রি.. "
হয়ত কিছু কথা থাকে যার কোনো প্রত্যুত্তর হয় না। সমস্ত নিরবতা কখনও অভিমান সম্বোধন করে না। হয়ত এক টুকুই বুঝতে এত সময় লাগলো অর্ণবের ......

সমাপ্ত
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২৪৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৭/০৩/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast