www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এক তরফা প্রেম

বর্তমানে.........

অনেকক্ষণ থেকে ফোনটা বেজেই চলেছে বেডের উপর। অনিক ফোনটা চার্জে বসিয়ে স্নানে গিয়েছিল। এসে দেখে চার বার মিসড্ কল। অনেকক্ষণ থেকে তাকে ফোন করছে অয়ন। অনিক তাড়াতাড়ি কল ব্যাক করতেই ওপাশ থেকে অয়ন বললো,
-- অনিক, মুভি দেখতে যাবি ?
-- কোন মুভি ?
-- এই তো কয়েকদিন আগে রিলিজ হয়েছে, 'বেলা শুরু'। ট্রেলার দেখেছি। সৌমিত্র আর স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত অসাধারণ অভিনয় করেছে। বাকিরাও খারাপ করেনি। সমস্ত বয়সের জন্য একদম আদর্শ ছবি। শিবু'দা(পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়) কোথাও এক জায়গায় বলছিলেন, 'এটা একটা সকল বয়সের প্রেমকাহিনী।' এমনি তো শিবু'দার সব মুভি ........... ইত্যদি।

এদিকে অনিক ভাবছে অন্য কথা। অয়ন যে কি বলছে সেদিকে তার মন নেই। অনিক মেসে থাকে। এই ছ'মাস হল ও এখানে এসেছে। এখানে পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশানিও করায়। অনিক আগে কখনও সিনেমা হলে সিনেমা দেখেনি। সুতরাং, এবার যাওয়া যেতে পারে তবুও মায়ের কাছে শুনে নেওয়া ভালো। অনিকের ইচ্ছা পুরোপুরি তবুও যেন কোথাও একটা বাধার ভয় পাচ্ছে সে।
-- হ্যালো... অনিক.... শুনছিস ?
হঠাৎ অয়নের আওয়াজে হুশ ফিরলো তার। বললো,
-- হ্যাঁ... হ্যাঁ... শুনছি তো ! বল ....
-- কি সিদ্ধান্ত নিলি ? যাবি তো !
-- যাবো কিন্তু ....
-- আবার কিন্তু কেন ?
-- না না কিছু না। যাবো।
-- তাহলে তোকে ধরে নিচ্ছি কিন্তু...
অনিক হাসতে হাসতে বললো, " আচ্ছা "
অয়ন ফোন রাখলে, অনিক সঙ্গে সঙ্গে মাকে ফোন করলো। দুবার ফোন বাজার পর অনিকের দিদি ফোন তুলে হ্যালো বলতেই, অনিক খুব উৎসাহের সঙ্গেই বললো,
-- এ দি, মায়ের কাছে ফোন দে। কিছু কথা আছে।
মা ফোন ধরলে অনিক বললো,
-- মা , আমরা 'বেলাশুরু' সিনেমা দেখতে যাবো। অয়নকে কথা দিয়েছি। প্লিজ, না বলো না।
-- কে অভিনয় করেছে ?
-- সৌমিত্র আর স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত। বলছি, উনারা তো আর বেঁচে নেই আর এটাই উনাদের শেষ সিনেমা। আর এদিকে প্রথম বার সিনেমা হলে গিয়ে দেখবো। তাই কথা দিয়েছি।
সম্ভাবত, মা বোধ হয় ছেলের ইচ্ছাশক্তি ভেঙে দিতে চায় না। তাই বললো,
-- যাও। তবে কবে, কোন সিনেমা হলে ?
-- সম্ভাবত ২৭ শে মে, শুক্রবার। কোথায় এখনও ঠিক হয়নি।
-- আচ্ছা । সাবধানে যেও। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেছো......... ইত্যাদি ইত্যাদি।

আরও কিছুক্ষণ পরে অনিক, অয়নকে ফোন করতেই অয়ন বললো,
-- আমি এক্ষুনি তোর কাছে কল করতে যাচ্ছিলাম।
-- কেন ?
-- বলছিলাম, অনলাইনে টিকিট বুকিং করতে হবে। তুই একটু করিস আমরা টাকাটা দিয়ে দেব। আমাদের কারোর অনলাইন ব্যাকিং এর সুবিধা নেই।
-- আচ্ছা। ঠিক আছে। আমরা কতজন যাচ্ছি ?
-- তোকে ধরে চারজন। আমি,তুই, তৃষা আর দেবস্মিতা।
-- অরিন্দম'কে বলেছিস ?
-- না এখনও বলা হয়নি।
-- ও হলে আমরা পাঁচজন হতাম। মানে সরস্বতী পুজোর সময় যারা বেড়াতে গিয়েছিলাম। মনে আছে !
-- তাই তো। একদম ভুলেই গিয়েছিলাম।
এরপর আরও অনেক কথা, হাসি ঠাট্টা হয়, অয়নের সাথে অনিকের।

কিছুদিন আগে..........

অনিক, অয়ন ও অরিন্দম একই ডিপার্টমেন্টের ছাত্র আর তৃষা ও দেবস্মিতা অন্য ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী। সেই সরস্বতী পুজোর দিন, তৃষা আর দেবস্মিতাকে প্রথমবার দেখেছিল অনিক। তারপর ভালো বন্ধু হয় ওরা। 'খুব' কথাটা এখন বলব না। যদিও তৃষা ও দেবস্মিতার সাথে অয়ন আর অরিন্দমের আগে থেকেই পরিচয় বা বন্ধুত্ব ছিল। সরস্বতী পূজার দিন তারা যেখানে বেড়াতে গিয়েছিল সেখানেই একটা মেসে অনিক থাকে আর তার থেকে কিছুটা দূরে তৃষা পিসির বাড়ি। বেড়িয়ে ফেরার সময় তৃষা পিসির বাড়িতেই ছিল।

বর্তমানে.........

কিন্তু অরিন্দম যদি যায় তাহলে তারা পাঁচজন আবার এক জায়গায় হতে পারবে। সেইমতো অনিক অরিন্দমকে কল করলো, ওপাশ থেকে অরিন্দম বললো,
-- হ্যালো, অনিক ....! বল
-- সরাসরি কাজের কথায় আসি। আমরা ঠিক করেছি আগামী ২৭ তারিখ, শুক্রবার 'বেলাশুরু' দেখতে যাবো। তুইও চল প্লিজ।
-- আচ্ছা। ভেবে দেখছি।

কিছুক্ষণ পর অরিন্দম অনিককে জানিয়ে দিলেন যে সেও যাবে।

এর মধ্যেই আরও একটা সমস্যা সৃষ্টি হল, তৃষা এবং দেবস্মিতাকে সন্ধ্যের মধ্যে ঘরে ফিরতে হবে। কোন সিনেমা হলে কখন কোন সিনেমা হবে, সবার বুকিং এর দায়িত্ব সবটাই অনিকের উপরে এসে পড়ে। অনিক অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই সেটা গ্রহণও করে। সঙ্গে সঙ্গে সময় সম্পর্কে এবং ট্রেন টাইম সম্পর্কে অবগত থাকতে হয়।

সিদ্ধান্ত তো হয়েছে একপ্রকার কিন্তু কোন সিনেমা হলে যাবে তারা। এই নিয়ে অনেক আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত হয় carnival arti cinemas, Barasat এ যাবে। সিলভারেই বসবে কারণ তা না হলে খরচ অনেক বেশি হয়ে যাবে।অনলাইনে চার্জ সহ খরচ অতিরিক্ত হওয়ায় অফলাইনেই টিকিট কাটা হল। শো শুরু হবে দুটো বেজে পনেরো মিনিটে। শো শুরুর আগে ওরা বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে ঘুরে দেখলো। বাঙালিদের চিরদিনের স্বভাব, অত্যধিক ফটো তোলা হল।

অবশেষে ওদের একটা ইচ্ছা পূরণ হল। শো শুরু হয়েছিল। প্রায় দু'ঘন্টা পনেরো মিনিটের সিনেমা। সিনেমা দেখে যখন বাইরে বেরোল তখন অলরেডি বিকেল হয়ে গিয়েছিল। সন্ধ্যে হব হব। যেহেতু গ্রীষ্মকালীন বেলা তাই সন্ধ্যে সাধারণত সাতটার আগে হয় না।

কিন্তু তবুও দেবস্মিতা একপ্রকার সন্ধ্যার ভয়ে সিনেমা কিছুটা বাকি থাকতেই বাড়ির জন্য বেরিয়ে পড়ে।সবাই তাকে আটকানোর একটু চেষ্টা করেছিল বটে। আর এখানেই দেবস্মিতার কাহিনী সমাপ্ত...... ।

এখন ওরা চারজন ট্রেনের ভিতরে। বসার সিট নেই তাই দাঁড়াতে হয়েছে। একটা সিট খালি হলে তৃষা'কে বসিয়ে দিল সেখানে। এরপর অনেক গল্প হয় যার মধ্যে একটা গল্প হৃদয়ে গেঁথে যায় অনিকের।

এখন তৃষা, অনিক আর অরিন্দম সিটে পাশাপাশি বসে আছে আর অয়ন ট্রেনের গেটে দাঁড়িয়ে বাইরের হাওয়া গায়ে মাখছিল,সেজন্য এই গল্প সম্পর্কে সে কিছুই জানে না।

যখন বন্ধুরা একজায়গায় থাকবে, তখন তো একটু প্রেমের গল্প হবেই। সেই মতো একটা শুরুর দরকার আর সেটা আয়নকে নিয়েই শুরু হল। তৃষা বললো,
"আচ্ছা, অয়ন কি প্রেম ট্রেম কিছুই করে না ? "
অনীকের এই প্রশ্নের উত্তর জানা থাকলেও খুব সুন্দর করে এড়িয়ে গেল। বরং সে কথাটাকে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করেই বললো, " আচ্ছা তৃষা, সমবয়সী প্রেম কি কখনও সার্থকতা পায় না ? " তৃষা একটু ভেবে নিয়ে বললো, " সমবয়সী প্রেমের ক্ষেত্রে সার্থকতা পায় না বলব না তবে একটা সময় পরে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আর সেজন্যই সমবয়সী প্রেমে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। " অনিক হালকা হেসে বললো, " আচ্ছা, মনে হচ্ছে, বেশ অভিজ্ঞতা আছে ! " তৃষা ও এবার হেসে ফেলল। বললো, " অভিজ্ঞতা নেই। তবে একটা প্রোপোজাল এসেছিল একটা বন্ধুর থেকে। আমি জানতাম, সে আমাকে ভালোবাসে কিন্তু আমি জড়ায় নি নিজেকে।"
- " এখন তার সাথে কথা হয় ?
- প্রথম দিকে মাঝে মাঝে বলতাম বন্ধু হিসেবে। কিন্তু এখন আর বলি না।
- তার অপরাধটা কি ! তোকে ভালোবেসেছিলো সেটাই !
- দেখ, এখানে তার কোনো অপরাধ নেই। ভালোবাসাটা কোনো অপরাধ নয়।
- তাহলে !
- মায়া। আসলে ওটা এক তরফা প্রেম ছিল। আমি ওর সাথে বন্ধর মতোই মিশতাম। কিন্তু...
- বুঝেছি, কিন্তু ও তোকে প্রেমিকা ভেবেই কথা বলতে চাইতো। সেটা হয়ত তুই চাইতিস না।
- একদম, ঠিক ধরেছিস।
- আমারও এটা মনে হয় কিনা আমি নিজেও নিশ্চিত নই। তবে একটা কথা ঠিক, একটা মেয়ে ও একটা ছেলের ক্ষেত্রে, সম্পর্কটা প্রথমে বন্ধুত্ব, পরে প্রেমে দিকে মোড় নিলে বিচ্ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। কিন্তু উল্টোটা হলে সম্পর্ক দৃড় হয়।
-- হ্যাঁ। একদমই তাই।

অরিন্দম এতক্ষণ চুপচাপ ছিল। এবার বললো, " অনিক প্রশ্নগুলো এমনভাবে করছে যেন ওর জীবনের সাথে আগে ঘটেছে, এমনকিছু ....... "
অনিক শুধু মৃদু হেসে বললো, " এ বিষয়ে পরে আলোচনা করব। "

প্রথমে অয়ন ট্রেন থেকে নামলে ঠিক তার পরের স্টেশনে তৃষা আর অরিন্দম নেমে গেল। এখনও তিনটি স্টেশন অনিক কে একাই যেতে হবে। নামার সময় তৃষা অনিককে বলেছিল, " আমি আগামীকাল পিসির বাড়িতে যাব। ফোন করিস, বেড়াতে যাব। "

তখনও সন্ধ্যা হয়নি। সন্ধ্যার ঘন কালো রং নেমেছে আকাশ জুড়ে। সেই সঙ্গে জানালার ধারে চলন্ত ট্রেনের হাওয়া। একটা অসাধারণ ভাবনার সাগরে ডুবিয়ে দিল অনিককে। অনিক যেন মনে মনে কোনোভাবেই মানতে রাজি নয় যে " সমবয়সী রিলেশনে জড়িয়ে পড়া উচিত নয়। আর যদি জড়াতেই হয়, তাহলে পরে তাকে ভুলে যেতে বাধ্য হতে হয় কেন !

পরের দিন, তৃষা পিসির বাড়িতে এসেছিল। অনিক ফোন করেছিল। এখন নিঃসন্দেহে বলা যেতেই পারে, তারা খুব ভালো বন্ধু। তারা বেড়াতে যাওয়ার সময় ঠিক করলো যথারীতি। কিন্তু বেড়াতে যাওয়ার সময় পুরো পথটাই চুপ থাকলো অনিক। তৃষা বারবার জিজ্ঞাসা করলো, " কি হয়েছে ! " কিন্তু অনিক কিছুই বললো না। তৃষা আবারও জিজ্ঞাসা করলো। এভাবে বারবার জিজ্ঞাসা করলে অবশেষে অনিক বললো, " আমি তোকে ভালোবেসে ফেলেছি। সেই প্রথম দিন থেকেই,যেদিন তোকে প্রথম দেখেছিলাম। আমি জানি তুই না বলবি .... সমবয়সী প্রেম বলে আমাকে অনেক কিছু বোঝাবি। কিন্তু কখনও জানতে চাইবি না আমার মধ্যে কি হচ্ছে। দেখ, তৃষা কাউকে ভালোবাসতে বয়স নয়, মন লাগে। ...... ইত্যাদি ইত্যাদি।

তৃষা অনেকক্ষণ থেকে সব শুনছিল। এবার বললো, " আচ্ছা, তোকে আমি একটাই কথা বলব। সেটা করতে হবে। যদি পারিস তবেই ..... । "
কথাটা শেষ করার আগেই অনিক বললো, " হ্যাঁ বল কি করতে হবে। "
তৃষা বললো, " এক সপ্তাহ আমার সম্পূর্ণ খরচ তোকে চালাতে হবে সম্পূর্ণ নিজের টাকায়। পারবি ! সবকিছু ব্যবস্থা আমি করে দেব। পারবি! ভেবে চিন্তে উত্তর দিস।"
অনিক আর একটা কথাও বলতে পারলো না।
তৃষা একটা দোকানের সামনে গিয়ে,দুটো চায়ের অর্ডার দিয়ে বললো, " আমি জানি, প্রত্যেকটি মেয়েকেও নিজের পায়ে দাঁড়ানো উচিত। তবুও বেলাশেষে, স্ত্রীর একটা স্বামীর আর প্রত্যেক স্বামীর একটা স্ত্রীর প্রয়োজন, অন্তত নিজের বেঁচে থাকার জন্য।
হয়ত সবার জীবনে বেলা শেষে আবার বেলা শুরু হয় না। সেজন্য বেলা শুরুর থেকে বেলা শেষের দিকে যাওয়া উচিত।
সামনে বি এস সি শেষ কর। নিজের লক্ষে পৌঁছে তারপর সবকিছু নিয়ে ভাবিস। "
উষ্ণ চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তৃষা আবারও বললো, " তোকে বন্ধু হিসেবে পাশে চেয়েছিলাম। চাইবো, তুইও সেটাই চাইবি। "

এসবের পরেও অনেকবার বন্ধু হয়েই তৃষার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছিল, ঠিক যেরকম সম্পর্কটা আগে ছিল, না হয়নি, কোথাও একটা যেন বাধা অনুভব করছে অনিক, হয়ত তৃষাও .......... ।

সমাপ্ত
---------------------
বি.দ্র. - গল্পটাই চরিত্র সংখ্যা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় আমি দুঃখিত। এই ঘটনা বাস্তবের কিছু ঘটনার সাথে মিল থাকায় চরিত্র বেশি আনা হয়েছে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৭৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০১/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast