www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

তরঙ্গের তাৎপর্য - দ্বিতীয় পরিচ্ছদ

দ্বিতীয় পরিচ্ছদ

প্রায় মাসখানিক পর,
একদিন হঠাৎ খবর এলো, প্রফেসর আলবার্ট হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। আমি আর স্যার তড়িখড়ি করে বেরিয়ে পড়লাম। আমরা যাওয়ার আগেই দেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়ে গিয়েছিল। ওখানে গিয়ে জানতে পারি, পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, প্রফেসর আলবার্ট হার্ট ব্লকেই মারা যান। শরীরের কোথাও কোনো ক্ষতচিহ্ন ছিল না। তিনি টেবিলে বসে পড়ছিলেন, এবং পড়তে পড়তে হঠাৎ বুকে যন্ত্রণা অনুভব করেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যান। উনার বাড়ির কাজের লোক মাইকেল কাঁদতে কাঁদতে ইংরেজিতে এই কথাগুলোই বলেছিল। স্থানীয় পুলিশ অফিসার এ ডি এঞ্জেল কিছু নমুনা সহ সন্দেহসূচক সবই পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দিলেন। এমনকি একটা সাদা কাগজও বাদ গেল না। সেখানে কিছুক্ষণ পর দেখলাম, প্রফেসর কিটেলের চোখে জল, স্যারের চোখের কোণাও ভিজে গেছে। প্রফেসর কিটেল দুঃখ প্রকাশ করে স্যারকে বললেন, " প্রফেসর আলবার্ট তো চলে গেলেন। আমরাও চলে যাব। কয়েকদিন আগে ওর সঙ্গে আমার একটা গন্ডোগোল হয়েছিল, ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ...... ।
আমি তখন জিজ্ঞাসা করলাম, " আপনি কখন এসেছেন।"
প্রফেসর কিটেল আমতা আমতা করতে লাগলেন। তখন মাইকেল কাঁদতে কাঁদতে কিটেলের দিকে নির্দেশ করে বললেন, " উনি স্যার মারা যাওয়ার মিনিট পাঁচ আগে এসেছিলেন। স্যারের সাথে কি সব বিষয়ে তর্ক করছিল। তারপর বেরিয়ে গেল। উনি বেরিয়ে যেতেই এই দূর্ঘটনা ঘটে।"
আমাদের থেকে একটু দূরেই অফিসার আঞ্জেল দাঁড়িয়ে শুনছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ প্রফেসর কিটেলের দিকে সন্দেহসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললেন, " আচ্ছা। এই ব্যাপার!"
প্রফেসর কিটেল বারবার বলতে লাগলেন, " আমি সেই দীর্ঘদিনের ঝামেলা মেটাতে এসেছিলাম। একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল।" বলতে বলতে তিনি প্রায় কেঁদে ফেললেন।
বছর দুই তিন আগে তরঙ্গের উপর একটা অভিনব আবিষ্কারে প্রফেসর কিটেল ও প্রফেসর আলবার্ট যুগ্মভাবে নোবেল পান। পেনের মতো একটা যন্ত্র যার মাথার কাছে একটা বোতাম, যেটা চাপ দিতেই একটা শক্তিশালী আলোকরশ্মি বেরিয়ে যাবে এবং পুরো শরীরটাকে স্কান করে শরীরের যাবতীয় তথ্য কম্পিউটারের মাধ্যমে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জানা যাবে। এটা বিজ্ঞান মহল সহ ডাক্তারী মহলে দারুন ভাবে সাড়া ফেলেছিল। শুধু তাই নয়, শরীরের কি রোগ আছে, তা খুব দ্রুত জানা যাবে, শরীরে কোনো প্রকার ক্ষত ছাড়াই এবং তার উপযুক্ত প্রতিষেধকের নাম জানা যাবে।
অনেক কাকুতি মিনতির পরেও অফিসর অ্যাঞ্জেল শুনলো না, প্রফেসর কিটেলকে কয়েকদিন পুলিশ কাস্টার্ডীতে রাখতে হয়।

এর দুদিন পর, স্যার কয়েকদিনের জন্য কোথায় গিয়েছেন। আমাকে তেমন কিছু বলে যাননি। সেজন্য আমিও বাড়িতে শরীর এলিয়ে বসে ছিলাম। প্রায় দিন আড়াই পর হঠাৎ দেখি প্রফেসর অ্যাঞ্জেল আমার বাড়িতে। আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। বললাম, " কি হল অফিসার? সব ঠিক আছে তো ! হঠাৎ আমাদের এদেশে কি মনে করে ?"
অ্যাঞ্জেল বললেন, " প্রফেসর কিটেল মারা গিয়েছেন।"
আমি বললাম, " জেলের ভিতরেই ?"
অ্যাঞ্জেল বললেন, " হ্যাঁ। ফরেন্সিকের অনুমান হার্ট অ্যাটার্ক !"
-- আর আপনার অনুমান ?
-- আমার অনুমান এটা খুন। শুধু এটা নয়, প্রফেসর আলবার্টও খুন হয়েছেন।
আমার চোখ কপালে উঠলো। খুন, হার্ট ব্লক নয় ? কিন্তু কীভাবে ? প্রশ্নটা অ্যাঞ্জেলকে করেই বসলাম। উত্তরে অফিসার বললেন, " জেলে যাওয়ার পর প্রফেসর কিটেল একটা বই পড়তে চেয়েছিলেন। তো উনার বাড়ি থেকে সেই বইটা এনে দেওয়া হয়। যেহেতু উনি শুধুমাত্র একজন সন্দেহভাজন ব্যক্তি তাই সমস্ত রকম সুবিধা উনাকে দেওয়া হয়েছিল।"
আমি একটু অবাক হয়েই বললাম, " কিন্তু জেলের মধ্যে এত পাহারায় উনাকে খুন করবে কে ? আর উনার শরীরে কি কোনো ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে ?"
অ্যাঞ্জেল দু'পাশে ঘাড় নেড়ে বোঝালেন, না কোনো ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়নি। তখন আমি আবার বললাম, " তাহলে প্রফেসর কিটেল যে বলছিল, কোনো একটা অজ্ঞাত বিষয়ে উনার আর প্রফেসর আলবার্টের মধ্যে একটা ঝামেলা হয়েছিল। সেই অজ্ঞাত কারণটা কি জানা গেল !"
আবারও অফিসার দু'পাশে ঘাড় নেড়ে কপালটা এমনভাবে ভাঁজ করলেন যে তাতে আমরা বুঝতে অসুবিধা হল না যে প্রফেসর কিটেল কিছু বলার আগেই মারা গিয়েছেন । তারপর বললেন, " যেহেতু প্রফেসর কিটেলের এবং প্রফেসর আলবার্টের একাত্মা বন্ধু ছিলেন প্রফেসর বন্ধ্যোপাধ্যায়, তাই উনি এ বিষয়ে কি মতামত দেন, সেটা জানতেই এসেছিলাম। "
আমি একটু ভেবে বললাম, " উনি কবে ফিরবেন কিছুই তো বলে যাননি। তবে আসলে আমি আপনাকে জানিয়ে দেব।"

চলছে .......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৭৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৯/০১/২০২৩

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast