www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

কোথায় আছো

তোমার ঠিকানা আমার অগোচর। দেখা হয়নি বছর বাইশ হল। কেমন আছো জানতে চাইলেও কখনও জানতে পারিনি। পারিনি তোমার বাড়িয়ে দেওয়া হাতকে শক্ত হাতে ধরতে। সত্যি ঈশ্বর না চাইলে কখনও দুটি মানুষ চাইলেও এক হতে পারে না। তুমি সেসময় বলতে আমি বিশ্বাস করতাম না, বলতাম, 'আমাদের পারতেই হবে। ' তুমি খুব হালকা ভাবে বিষয়টা নিতে আর হালকা হেসে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করতে বাস্তব বড়ো কঠিন। জানো সৌম্য আমি বুঝতে পারতাম কিন্তু মেনে নিতে পারতাম না কারণ টা ঐ যে 'তোমাকে হারানোর ভয়।' আজ বাইশ বছর পেরিয়ে গেল, বিয়ের পর খুব কষ্ট হত তোমাকে হারানোর ...... কিন্তু আজ বুঝতে পারছি সেদিন তোমার সবকিছু চুপচাপ মেনে নেওয়ার কারণ , জানি তুমি আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতেই পারতে কিন্তু ঐ তুমি আমার বাবা - মাকে কষ্ট দিতে চাওনি। সেদিন আমি তোমার সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারিনি। খুব রাগ হয়েছিল সেদিন। সত্যি আমি কত বোকা ছিলাম। আজ সময় আমায় বুঝিয়ে দিয়ে গেল, বাস্তব বড়ো কঠিন। তুমি বলতে 'প্রতিশ্রুতি দেওয়া আর রাখার মধ্যে ফারাক অনেকখানি।' আমি সেদিন এই সহজ সত্যটা মেনে নিতে পারিনি। জানো সৌম্য আমি অনেকখানি স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলাম তোমাকে নিয়ে। তুমি পাহাড় ভালোবাসতে, খরস্রোত নদী ভালোবাসতে। মনে আছে, তুমি বলেছিলে, অফিসে যখন লম্বা ছুটি পাবে তখন আমাকে নিয়ে পাহাড়ে ঘুরতে যাবে। আমি আজ লম্বা ছুটিতে পাহাড়ে যাই সৌম্য, কিন্তু তোমাকে পাশে পাই না। বিয়ের পর যখন খুব তোমার কথা মনে পড়ত, মনে হত, ছুটে তোমার কাছে যাই। তোমার বুকে মাথা রাখলে তোমার প্রতিটি নিশ্বাস আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাত। কখনও যেতে পারিনি। কিন্তু একদিন, হ্যাঁ একদিন, সৌম্য আমি তোমার বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু গিয়ে শুনলাম তুমি ঠিকানা পরিবর্তন করেছো। কোথায় আছো কেউ জানে না। তোমাকে ফেসবুকে সার্চ করলাম, না তোমার এফ বি অ্যাকাউন্ট লগ আউট করেছো। না তোমাকে আর কোথাও পাইনি। ফোন নম্বরটা তো অনেক আগেই পরিবর্তন করেছিলে। জানো সৌম্য, তোমার মানিয়ে নেওয়ার নীতিটা আজও আমাকে বাঁচতে শেখায়। যখনই খুব রাগ হয়, নিজেকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করি। তুমিই তো বলতে, ' যে মানুষ নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে পারে না সে এই সমাজকে নিয়ন্ত্রন করবে কীভাবে !' তোমার প্রতিটি কথা আমার কাছে নিশ্বাসের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। তুমি আজ পাশে না থেকেও যেন খুব কাছে আছো, যতটা কাছে থাকলে শুধু অনুভব করা যাই, স্পর্শ করা যাই না। সৌম্য আজ আমি পেরেছি, পেরেছি, পেরেছি ........ ।

আজ সকালে আনন্দবাজারে একটা খবর দেখলাম, ' পাহাড় থেকে পড়ে মৃত এক ব্যক্তি' । খবরটা দেখা মাত্রই বুকটা ধরাস করে উঠল। মৃত দেহটার খোঁজ করছে পুলিশ ।

আমার স্বামী, অভিরূপ বাইরে থেকে এসে বললেন, " মৃত ব্যক্তিটি দেহ উদ্ধার হয়েছে। দার্জিলিং এ একটা ছোট্ট কুঠিরে একা থাকতেন আজ আন্দাজ বছর বাইশ। বিয়ে করেননি। চাকরি করতেন কিন্তু পরবর্তীকালে ছেড়ে দেন, লেখালেখি করতেন । আরে, তুমি কলেজস্ট্রিটে গিয়ে যে লেখকের বই খোঁজ করো, যার বই পড়তে এত ভালোবাসো সেই 'অনুভব কর'। গল্প লেখা এই লেখকের একটা ডাইরি জুড়ে একটাই কবিতা -

আজও বেঁচে আছি আগামীর সূর্যোদয় দেখবো বলে
যা আছে মনে, লিখে রাখি এই কাগজের ভাঁজে
তুমিও আজ ভালো থেকো, অযথা দুঃখ করো কিসে
আমি তোমার পাশেই আছি, তোমার সকল কাজে।

কত সুন্দর কবিতাটি। তার থেকে ইন্টারেস্টিং খবর কি জানো, উনার আদি বাড়ি আমাদের এখানেই। আসল নাম সৌম্যজিৎ চক্রবর্তী। তিনি নাকি পাহাড় ভালোবাসতেন বলেই নাকি সব ছেড়ে পাহাড়ে থাকতেন। "

অভি, সামান্য দুঃখ প্রকাশ করেই চলে গেলেন। আর আমার চোখ আর মানতে পারছে না। আজ তোমার ঠিকানা পেলাম, সেই অনন্ত নীলাকাশ। বেঁচে গেছো তুমি, তোমার উপন্যাসের সেই ঈশার মতো বলতে ইচ্ছে করছে, ' মৃত্যুতেই আছে মুক্তির আস্বাদ, পরম স্নেহের অবহেলা, তুলসি পাতা দিয়ে চোখ ঢেকে নিলে, এই খেলার নাম হোক জীবন মরণ খেলা। '
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১৮৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২২/১২/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • বেশ!
  • দারুণ
  • ফয়েজ উল্লাহ রবি ২২/১২/২০২২
    বেশ
 
Quantcast