www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রহস্যময় মৃত্যু লীলা - দ্বিতীয় পরিচ্ছদ

দ্বিতীয় পরিচ্ছদ

তখন বেলা প্রায় দশটা। উপরের ঘরে জানালার ধারে বসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের 'দেবদাস' পড়ছিলাম। এই জানালা দিয়ে বাড়িটার সামনের অংশ সহ রাস্তাও দেখা যায়। বাড়িটি পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। মেন গেট সবসময় বন্ধ থাকে। বেশ পুরানো গেট। বাড়িটাও বেশ পুরানো। হঠাৎ গেট খোলার কচ্ কচ্ শব্দে বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখি, প্রান্তর বাড়ির ভিতরে ঢুকছে। মিনিট তিনের মধ্যে প্রান্তর ঘরে ঢুকলে আমি কিছু বলার আগেই প্রান্তর বললো, " ইন্সপেক্টর অভিজিৎ স্যার এসেছিলেন নাকি !
- হ্যাঁ ... এসেছিলেন। কিন্তু তুই জানলি কীভাবে ?
- উনার সাথে দেখা হয়েছিল। কিন্তু কথা হয়নি। দীপঙ্কর বাবু কোথায় ?
- এইমাত্র তো বেরোলেন দেখলাম। একটা কল এসেছিল। কিন্তু......
আমার প্রশ্নটি করার আগেই প্রান্তর বললো, "আরও একটা খুন হয়েছে। সেই একইরকম নৃশংস খুন। আচ্ছা, অভিজিৎ বাবু কেন এসেছিলেন জানিস ??
- না, আমি তখন উপরে ছিলাম। এখান থেকে যেটুকু দেখা যায় সেটুকুই দেখেছি। মিনিট পনেরো মতো ছিলেন। বোধ হয় বাড়ির মালিক ...
সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তর বললেন, " হরিচরণ মজুমদার মহাশয়ের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন।কিন্তু প্রশ্ন'টা কি বলতে এসেছিলেন ?"
আমি ভ্রু কুঁচকিয়ে ঠোঁট উলটিয়ে বুঝিয়ে দিলাম, আমি কিছু জানি না। কিন্তু প্রান্তর আমার তোয়াক্কা পর্যন্ত করলো না.....
এতক্ষণে ও ড্রেস পরিবর্তন করে, ঘাড়ে গামছা নিয়ে বলল, "স্নান করতে গেলাম। "
আমিও স্নান করতে গেলাম। পাশের ঘরে একবার উঁকু মেরে দেখলাম রাজ আর কমল মুর্শিদাবাদের মীরজাফরের কর্মকাণ্ডের গল্পে নিমগ্ন হয়ে পড়েছে। দেখে মনে হল ওদের স্নান হয়ে গেছে।

মুর্শিদাবাদ বাংলার এক অনন্য ঐতিহাসিক স্থান। যেখানে একদিকে যেমন আছেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ অন্য দিকে কূটনৈতিক শিল্পচর্চার অন্যতম নিদর্শন ঘসেটি বেগম। আছে প্রচুর প্রেম, আছে প্রচুর সামাজিক ঘটনা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই দীপঙ্কর বাবু ফিরলেন। দেখলাম, চোখে মুখে সন্দেহ আর চিন্তার এক সংমিশ্রণ। সেই সংমিশ্রণ বোধ হয় খুঁজে বেড়াচ্ছে একটা সমাধান। কিন্তু কিসের সমাধান, খুনের নাকি অন্য কিছুর .......

এসেই দীপঙ্কর বাবু প্রান্তরের খোঁজ করলেন। হয়ত তিনি এটুকু আজ বিশ্বাস করেছেন যে সকল সমস্যার সমাধান হয়ত প্রান্তর, আমার ডিটেকটিভ বন্ধু প্রান্তর রায়। প্রান্তর এতক্ষণ একটু বাইরের দিকে ছিলেন। ঠিক সেই মুহুর্তে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন, " আজ সন্ধ্যার পরে, অভিজিৎ বাবুকে এখানে আসতে বলবেন।" বলতে বলতে প্রান্তর চেয়ারটি টেনে দীপঙ্কর বাবুর কাছে দিয়ে বললেন, "বসুন স্যার, বসুন।" আর নিজে আমার বিছানায় বসলেন।
বোধ হয় দীপঙ্কর বাবু বুঝতে পারলেন না, কেন অভিজিৎ বাবুকে এখানে আসতে বলা হচ্ছে। এমনকি আমিও বুঝতে পারলাম না। কিন্তু মনে মনে এটুকু আন্দাজ করেছিলাম যে, ভালো কিছু হতে চলেছে।

প্রান্তর মিনিট কয়েক পরে দীপঙ্কর বাবুকে বলল, "তখন নিশ্চয়ই অভিজিৎ স্যার ফোন করেছিলেন।"
- " হ্যাঁ। ওই মানে একটা খু ........ "
- দীপঙ্কর বাবুর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে প্রান্তর বললো, " একটা খুন হয়েছে। নৃশংসভাবে খুন করেছে ছেলেটাকে। বয়স খুব বেশি নয় বলেই মনে হল।" আমি তাড়াতাড়ি পুনরায় হাতে থাকা 'দেবদাস' টা বন্ধ করে গল্পে মনোনিবেশ করলাম। প্রান্তর আবার বলতে শুরু করলো, " খুনের পদ্ধতিটি পুরোপুরি কালকের মতো নয় কিন্তু। একেও শরীরের বিভিন্ন অংশে ব্লেড মারা হলেও একে ঝুলিয়ে রাখা হয়নি। গতকালের খুনের মতো কোনো বড়ো জঙ্গলে মৃত দেহ পাওয়া যায়নি।"
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, " মৃত দেহ কোথায় পাওয়া গিয়েছে ?"
প্রান্তর কয়েক সেকেন্ড ভেবে নিয়ে বললো, " এখান থেকে পূর্বে প্রায় তেরো মিনিটের রাস্তা। একটা বড়ো রাস্তার পাশেই.........মৃত দেহটা একটা গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায় ছিল।"

লাঞ্চের জন্য ডাক পড়লো। খেতে বসে অনেক আড্ডা হল। গতকাল বিকেলে আমরা এখানে এসেছি কিন্তু এখনোও আমাদের মুর্শিদাবাদ ঘুরে দেখা হল না। কিন্তু আমাদের মা বাবা এবং বাকি দুই বন্ধু অনেক জায়গায় ঘুরে দেখে এসেছে। এছাড়াও আরও নানান বিষয়ে গল্পের মাধ্যমে লাঞ্চ শেষ করলাম।

খাওয়া দাওয়া শেষ করলাম প্রায় দুটো নাগাদ ..... । এবার সটান হয়ে লম্বা একটা ঘুম দেব ভেবে যেই মাত্র বিছানার কাছে গেলাম, অমনি পিছন থেকে প্রান্তর বললো, " চারটে নাগাদ একটু বেরোতে হবে কিন্তু, তৈরি থাকিস।" অসম্মতি দিতে গিয়েও অগত্যা বাধ্য হয়েই বললাম, " ঠিক আছে। কিন্তু কোথায় যাবি ! " প্রান্তর বালিশ টেনে মাথার নীচে নিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে বললো, " হালকা করে বিশ্রাম করে নেয়, দেরী হয় না যেন !"

শেষ পর্যন্ত, প্রান্তরের ডাকে ঘুম ভাঙল। তাড়াতাড়ি গুছিয়ে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

কোথায় যাচ্ছি, কেন যাচ্ছি জানি না। তবে অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও যেতে হচ্ছে। শেষে এক প্রকার বাধ্য হয়েই বললাম, " আচ্ছা, আমরা কোথায় যাচ্ছি বল তো! " প্রান্তর বললো, " এমনি তো ঘুরতে যাচ্ছি, তবে আরও একটা উদ্দেশ্য আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই জানতে পারবি। "

প্রান্তর যে কোনো কাজে এতটাই সাসপেন্স রাখে যে শেষ পর্যন্ত অধৈর্য হয়ে যেতে হয়। তবুও শেষে একটা ট্রাজেডি থাকে বলেই অধৈর্য টা বোধ হয় আনন্দে পরিণত হয়।

প্রথমে আমরা একটা জনমানবহীন বাড়ির সামনে গেলাম। বাইরে থেকে তালা বন্ধ ছিল। পাঁচিল টপকে বাড়ির ভিতর ঢুকলাম। ব্যাপারটা আমি বুঝতে পারলাম না, কি করছি, কেন করছি। কয়েক মুহুর্ত আমি যেন এক কাঠের পুতুলের মতো প্রান্তর যা বলছিল তাই করে যাচ্ছিলাম। বাড়িটির সামনের দিকটাও বন্ধ থাকায় আমরা পিছন থেকে কাচের জানালা ভেঙে বাড়ির ভিতর ঢোকার পরিকল্পনা করলাম। কিন্তু কাচে হাত পা কেটে যেতে পারে এই ভেবে আমি আস্তে আস্তে প্রান্তরকে বললাম," দেখ, ভাই ,আমি কিন্তু জানালা ভেঙে ভিতর ঢুকতে পারবো না। কাচ ভাঙার আওয়াজ এর সাথে সাথে বাড়ির ভেতর থেকে একটা পায়ের আওয়াজ শুনতে পেলাম। সম্ভবত কেউ একজন ভাঙা জানালার দিকেই আসছেন। প্রান্তর তাড়াতাড়ি জানালার পাশে থাকা একটা কাঠের দরজার ছোট্ট ছিদ্র দিয়ে বাড়ির ভিতরটা দেখে নিল। তারপর তাড়াতাড়ি সামনের একটা গাছের এসে লুকিয়ে পড়লাম। দূর থেকেই দেখলাম, লোকটা জানালার ধারে আসলেন, আশপাশটা দেখলেন। তারপর দরজাটা খুলে বাইরে বেরোলেন। ঠিক এমন সময় অন্য এক ধারে অর্থাৎ বাড়িটির সামনের দিকে আরও একটা কাচের জানালা ভাঙার আওয়াজ পেয়ে, বেশ অবাক হয়ে যেই মাত্র পাশে তাকালাম, দেখি পাশে প্রান্তর নেই।

এদিকে যে লোকটা দরজা খুলে বাইরে এসেছিলেন, দেখলাম কাচ ভাঙার আওয়াজ শুনেই তাড়াতাড়ি চলে গেলেন। আর এরপর পাশের থেকে প্রান্তর বলল, " চল, দেবা দরজা দিয়েই ভিতরে ঢুকি।" আমি বললাম, " দ্বিতীয় কাচটাও তুই ভেঙেছিস বল !" প্রান্তর একটু ব্যাঙ্গাত্মক সুরেই বললেন, " কি আর উপায় আছে বল, তুই তো ভাঙা জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকবি না। সেইজন্যই বাধ্য হয়ে এরকম করতে হল। এখান তাড়াতাড়ি ভিতরে চল, তা না হলে বড্ড দেরী হয়ে যাবে।" আমি বললাম," আচ্ছা প্রান্তর, তুই কীভাবে নিশ্চিত হলি যে এবার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ নেই।" দরজা খুলে প্রান্তর ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললো, " যদি কোনো মানুষের দ্বারা ভুল করাতে চাও তাহলে অবশ্যই প্রথমত, তাকে চিন্তায় রাখো, দ্বিতীয়ত, সেই সঙ্গে তাকে ব্যস্ততায় রাখো।"

এতক্ষণে আমার একদমই বুঝতে বাকি নেই যে আমরা কাউকে বাঁচাতে এসেছি। কাকে বাঁচাতে এসেছি, সেরকম কোনো ধারণায় করতে পারছি না। তবে পরবর্তীতে যে ঘটনাগুলো ঘটেছিল তা আমার জীবনের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ও শিহরিত ঘটনা হয়েই থাকবে।

চলছে ......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ২০২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৮/০৬/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Md. Rayhan Kazi ২৪/০৬/২০২২
    অসাধারণ
  • Md. Rayhan Kazi ১৮/০৬/২০২২
    দারুণ
  • ফয়জুল মহী ১৮/০৬/২০২২
    চমৎকার প্রকাশ
 
Quantcast