www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মেয়েরা কতটা স্বাধীন

সারাদেশ জুড়ে যখন শিক্ষা, শিক্ষা আর শিক্ষার বিতরণ চলছে ঠিক এমন সময় আমি বারান্দার ব্যালকনিতে বসে ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভেবে এক শব্দের পাহাড় সাজিয়ে ফেলেছি। যে শব্দ পাহাড় ভেদ করে যাওয়ার ক্ষমতা যদিও আমার হয়নি তবুও স্বপ্নের সাথে কল্পনা মিশিয়ে মিথ্যা ভবিষ্যতের জটলা পাকাতে অসুবিধা কোথায়? হ্যাঁ, মিথ্যা ভবিষ্যৎ ....স্বপ্নহীন পৃথিবী এই সব নিয়েই যে আগামী আমার জন্য অপেক্ষা করছে। কারণ আমার মতো পরিবারের মেয়েদের তো অন্ধকার নিয়েই জন্মাতে হয়। তাই আলোকিত জীবন আমাদের মানাই না। তবুও কাজের ফাঁকে আলোকিত জীবনের ছবি আঁকি, অনেক বড়ো হওয়ার, চাকরি করার, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর। আমার পাশের বাড়ির দিদির মতো নার্স হয়ে অসহায় মানুষের পাশে থাকতে ইচ্ছে করে, ইচ্ছে করে একজন সৎ মস্ত বড়ো পুলিশ অফিসার হই, দেশের জন্য প্রাণ দেব। ইচ্ছে করে আরও অনেক কিছু করতে কিন্তু আমার ইচ্ছেগুলো আমার থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে আমার বয়স। এই তো কয়েকদিন হল আঠারো বছর পূর্ণ হল। পাত্র দেখাশোনা চলছে বেশ কয়েকবছর ধরে। হয়ত পছন্দও হয়েছে অনেক পরিবারের।

একবার আমার যখন ষোলো বছর বয়েস তখন বাবা বিয়ে দেওয়ার জন্য খুব উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। বাবা যখন মেয়ের বিয়ের যাবতীয় আয়োজন প্রায় শেষ করে ফেলেছেন তখনই একদিন সকালে একটা পাশের বাড়ির কাকু এসে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী'র বিস্তারিত আলোচনায় জমে উঠলেন বাবার সাথে। বিয়েটা পিছিয়ে দেওয়া হল। আমি মনে মনে খুব খুশি হয়েছিলাম। সেদিন আমি বাবাকে অনেক বুঝিয়েছিলাম, আমি বিয়ে করতে চাই না, কিন্তু কে শুনবে? একটা মেয়ের দায়িত্ব কে নেবে? বয়স বাড়ছে। মেয়েরা তো কুড়িতেই বুড়ি। খুব অদ্ভুত এসব প্রবাদ। তবে যাই হোক আমার মন খুশির জোয়ারে ভেসেছিল বিয়েটা বাতিলে। আবার পড়াশোনা করার সুযোগ, স্বপ্নপূরণ ইত্যাদি সবই হবে। হয়েছিল সেটা তবে দু'বছরের জন্য। কন্যাশ্রী পেয়েছি কিন্তু বিয়ে না ঠিক হলে তো রূপশ্রী পাওয়া যাবে না। আবার পাত্র দেখা শুরু হল জোর কদমে। হয়ত দু'মুটো ভাতের জন্য, আশ্রয়ের জন্য আবারও আমি নীরব হলাম। অবশেষে পাত্র মিললো আমার থেকে বছর দশকের বড়ো। রূপশ্রী'র ফর্মও ফিলাপ হয়ে গেল খুব দ্রুত। হয়ত টাকাটা পাওয়ার পরেই বিয়ের পিরিতে বসতে হবে। সময়ের সাথে সাথে স্বপ্নগুলো অস্পষ্ট হয়ে দূরে মিলিয়ে যাচ্ছে। অনেক কিছু করার থাকলেও কিছুই করতে পারছি না।

এখন আমি ব্যালকনিতে বসে আছি। বাইরের বৃষ্টি দেখছি। বৃষ্টির শব্দের সাথে ভাবনার এক অদ্ভুত মিল খুঁজে পাচ্ছি। ভাবনাগুলো বন্ধ ঘরে আমায় গলা চেপে মেরে ফেলে দিতে চাই। টাকার কাছে বিক্রি হয়ে গেল আমার স্বপ্ন, খুব অল্প দামে। হয়ত কন্যাশ্রী রূপশ্রী'র জন্য আমার ষোলো বছরে ছন্দপতন হয়নি। তবে যাই হোক আমার ভাবনা এগুলো নয়। আমি ভাবছি আগামী প্রজন্ম কি আঠারোতেই আটকে যাবে নাকি স্বপ্নের কাছে পৌঁচ্ছাতে পারবে? জানি না তবে এটুকু বুঝতে পারছি বাল্যবিবাহ বন্ধ হলেও কোনো মেয়ের স্বপ্নপূরণের দায়িত্ব কেউ নেই না। এমনকি নিজের পরিবারও না। মেয়েরা যে কুড়িতেই বুড়ি।
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ২৮৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০২/২০২২

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • শাওন কুমার সিংহ ০১/০৩/২০২২
    🌷🌷
  • বেশ সুন্দর
 
Quantcast