www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এভাবেই কাছে আশা( জীবনের গল্প) পর্ব-১০

দু’জন পাশাপাশি হেঁটে গিয়ে ক্যন্টিনে ঢোকে। তারপর কর্ণারের একটা টেবিলের মুখোমুখি বসে দুজন।সেখানে ঠিক মত বাতাস পৌঁছচ্ছিলো না দেখে উঠে গিয়ে নিশান ক্যন্টিনের রেসিপশনিস্টে যে লোকটাছিলো আছে তাকে গিয়ে বলল এই যে ভাই আপনাদের কোনো স্টান্ড ফ্যান নাই? ওখানে তো ফ্যানের বাতাস পৌঁছচ্ছে না। লোকটি বলল আপনি গিয়ে বসেন স্যার ফ্যান পাঠিয়ে দিচ্ছি।নিশান ফিরে এসে প্রশ্ন করবো কি খাবেন?
লিজাঃ কিছু না।
নিশানঃ তাতো হবে না।কিছু তো খেতেই হবে।তা না হলে টাকাটা খুচরা করা যাবে না যে।
হেসে ওঠে লিজা।বয় কে ডেকে বলে পরাটা ডাল ভাজি আর দুটা ডিম দাও।
বয়ঃ আইচ্ছা আপা
লিজাঃ ডিম কি পোছ নাকি অমলেট কি ভাবে খাবেন বলেন?
নিশানঃআপনি যখন ওর্ডারটা দিয়েছেন তখন আপনিই বলেন।
লিজাঃ পোছ করে নিয়ে আয় কেমন?
বয়ঃ আইচ্ছা আপা।
নিশান অপলক তাকিয়ে আছে লিজার দিলে।ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লিজা ভীষণ লজ্জা পায়।দু’জনেই চুপচাপ।নিরবতা ভাঙ্গে লিজা।
লিজাঃ অমন হা করে দেখছেন?
নিশানঃ আমার বন্ধুকে।
লিজাঃ অমন হা করে দেখার কি আছে?
নিশানঃ অনেক সুন্দর আপনি তার থেকে বেশি সুন্দর আপনার হাসি আপনার কথা আপনার ভাষা।
লিজাঃ কি যে বলেন না।আমি দেখতে মটেও সুন্দর নই।তাছাড়া আমার .........।।
নিশানঃ থাক আপনার ব্যাখ্যা আপনাকে না দিলেও চলবে।আমি আমার চোখ দিয়ে আপনাকে দেখছি আপনার চোখ দিয়ে নয়।
হঠাৎ ঘড়ির দিকে চোখ যায় লিজার সর্বনাশ ছেলের স্কুল ছুটি সময় হয়ে গেছে।আর দেরি করতে পারছি না।এক্ষুনি যেতে হবে।কিন্তু এতটা পথ এত দ্রুত যাব কি ভাবে?
নিশানঃ আমার বাইক আছে আপত্তি না থাকলে আমি পৌঁছে দিতে পারি।
হাতে সময় নেই তাই কোনো রকম ভনিতা না করে রাজি হয়ে যায় লিজা। নিশানের বাইকে এসে থামে স্কুল গেটে।বাবু গেটের ভিতর অপেক্ষা করছে।মাকে বাইক থেকে নামতে দেখে প্রশ্ন করে
বাবুঃ উনি কা মামণী?
লিজাঃ উনি তোমার আংকেল হন।
বাবুঃ আসসালামুয়ালাইকুল। মামণী ম্যাম তোমাকে দেখে করতে বলেছেন।
লিজাঃ কেন বাবা?
বাবুঃ জানিনা।
লিজাঃ একটু দেরি হলে কোনো অসুবিধা হবে নাতো?
নিশানঃ না কোনো অসুবিধা হবে না। কাজ সেরে আসুন।
লিজা চলে যায় অফিস রুমে ম্যামের সাথে দেখা করতে।বাবু গেটের ভিততে আর নিশান বাইরে দাঁড়িয়ে।
নিশানঃ কি নাম বাবু তোমার?
বাবুঃ আমার নাম তো আপনি জানেন?
নিশানঃ আমি জানি? কিভাবে?
বাবুঃএই তো আপনি আমার নাম ধরে ডাকলেন।
নিশানঃ ও আচ্ছা তাই বুঝি?কোন ক্লাসে পড়?
বাবুঃ ক্লাস থ্রী তে।
নিশানঃ তোমার বাবা কি করেন?
(বাবুর মুখ কালো হয়ে যায়।বাবার আদর কখনো পায়নি।বাবা দেখতে কেমন ছিলো জানে না সে।বুঝতে শিখে বাবার কোনো ছবিও সে দেখেনি)
কি হলো বাবু বললে না তোমার বাবা কি করেন।
বাবুঃ আংকেল আমার তো বাবা নেই।
নিশানঃ বাবা নেই মানে!
বাবুঃ আমি আমার বাবাকে দেখিনি কখনো।
আর কোনো প্রশ্ন করে না নিশান।কিছুক্ষণ পর ফিরে আসে লিজা।
লিজাঃ Sorry অনেক দেরি করিয়ে দিলাম আপনাকে।
নিশানঃ না মোটেও দেরি হয়নি।আমার তো আর কোনো কাজ নেই যে দেরি হলে ক্ষতি হবে।
লিজা ছেলে চোখে মুখে চুমো খেয়ে বলে
লিজাঃ চলো বাপী।
বাবুঃ আমার ক্ষুধা পেয়েছে মামণী।
লিজাঃ ক্ষুধা পেয়েছে?
বাবুঃহুম।
নিশানঃ কি খাবে বাপী?
বাবুঃ এখানে তো কিছু পাওয়া যাবে না। একটা রোল দাও।
নিশানঃ রোল? না রোল না চলো অন্য কিছু খাই?
বাবুঃ কিন্তু এখানে আর তো কিছু পাওয়া যাবে না ।
নিশানঃ এখানে পাওয়া যাবে না তো কি হয়েছে।আমার তো বাইক আছে তোমার মামণীর আপত্তি না থাকলে চলো কোনো ফাস্ট...............।
লিজাঃ না না এখন কোনো ফাস্ট ফুডের দোকানে যাব না।এখন বাসায় ফিরব।
নিশানঃ এতো তাড়া কেন? মা-ছেলের সংসার একটু দেরি হলে কোনো ক্ষতি হবে না।
লিজাঃ মা-ছেলের সংসার ঠিকই কিন্তু কাজ না করলে কি আর পেটে ভাত যাবে বলুন?
নিশানঃ তা যাবে না সত্যি কিন্তু এক দিন একটু দেরি হলে তেমন ক্ষতিও হবে না।
বাবুঃ মামণী তুমি তো বাইকে উঠে এসেছ।আংকেল আমাকে বাইকে উঠাবেন না?
নিশানঃ উঠাতেই তো চাচ্ছি কিন্তু তোমার মামণী তো রাজি হচ্ছে না বাপী।
বাবুঃ চলনা মামণী আংলেকের বাইকে উঠে বাসায় যাই।
নিশানঃঠিক বলেছ বাবা,তোমাদের বাসাতেই যাওয়া যাক।
লিজাঃ না বাবা আজ আর বাইকে উঠে কাজ নেই অন্য একদিন ওঠা যাবে।
বাবুঃ না না আমি আজই উঠব।ঙইলে আমি বাসায় যাব না।
লিজাঃ আহ বাবু বায়না কোরো না তো
বাবু কান্না শুরু করে হুম হুম হুম্মম্ম তুমি আমাকে বকলে মামণী হুম হুম হুম ছেলের বায়না রাখতে রাজি হতে হয় লিজাকে।বাবুকে বাইকের সামনে বসায় তারপর নিশান পেছনে লিজা।ছুটে চলে বাইক।
নিশানঃ তুমি আমার গাইড কোন দিকে যেতে হবে আমাকে বলেদিও কেমন।
বাবুঃ আচ্ছা।
কিছু দূর গিয়ে একটা ফাস্ট ফুডের সামনে বাইক থামায়।
লিজাঃ কি হলো গাড়ি কেন থামালেন?
নিশানঃ এমনি।
লিজাঃ এমনি কোনো কথা হলো।
নিশানঃ হয়েই তো গেছে।এবার একটু নামুন প্লিজ।
নেমে দাঁড়ায় লিজা।বাবুলে নামিয়ে নিজে নামে।তারপর বাবুর হাত ধরে দোকানে ঢোকে নিশান।
নিশানঃ কি খাবে বাপী।
মায়ের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাতে থাকে বাবু।মা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। বাবুর দিকে তাকিয়ে নিশান বলে
নিশানঃ ওদিকে কি?আমার দিকে তাকাও।
বাবুঃ না আংকেল কিছু খাব না।
নিশানঃ তাকি হয়।এই যে ভাই,একটা জুস,এক প্যাকেট ড্রাই কেক, আর ........................প্যকেট করেন দুইটা স্যাডুইস একটা কোক আর এক বোতল পানি দেন।
লিজাঃ এতো কিছু কেন কিনতে গেছেন?
নিশানঃ তো কি হয়েছে?
লিজাঃ কিছু হয়নি?আমি খুবই গরিব কেন বুঝতে চাইছেন না আপনি।
নিশানঃ থাক আমাকে আর বুঝিয়ে কাজ নেই।আমি আপনার বাসায় কিছু খাব না বাবুকে নামিয়ে দিয়েই চলে আসব।
লিজাঃএই যাঃ রেগে গেলেন? বাসায় যাবেন কিছু খাবেন না তাকি হয়? এতো কিছু কিনে দিলেন আর সৌজন্য এককাপ চাও খাওয়াবার সুযোগ আমাকে দিবেন না?
নিশানঃদিতেই তো চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি.....................।বাপী কেকটা খাওয়া শেষ,পানি খাবে নাকি কোক।
বাবুঃপানি।
পানির বোলতের মুখ খুলে দেয় নিশান।পানি খাওয়া শেষ হলে পরম যত্ন বাবুকে বাইকের সামনে বসায় আবার।তারপর নিজে বসে বাইক স্টার্ডা দেয়।
বাবুঃ আংকেল মামণী তো রয়ে গেলো?
নিশানঃ থাকবে না বাবা তোমার মামণীকে কি রেখে যাওয়া যাবে বলো।
লিজা বাইকে উঠতেই হাওয়াই বেগে ছুটে চলে বাইক।অত জোরে টানতে দেখে লিজা বলে আস্তে টানুন প্লিজ বিপদ হতে সময় লাগবে না।
নিশানঃ কিচ্ছু হবেনা আপনি আমাকে ধরে বসুন।
লিজাঃ মানে?
নিশানঃ কিছু না।
ছুটছে বাইক।সামনে স্প্রিডব্রেকার দেখেও স্লো করেনা গাড়ি।তাতে করে জোরে একটা ধাক্কা আসে।নিশান এটাই চেয়েছিলো। ধাক্কাটা সামলাতে পারেনা লিজা।লিজার শরীর স্পর্শ করে নিশানের পিঠে।ধক্কা সামলাতে নিশানের পিঠে হাত রাখতে হয় লিজাকে।
লিজাঃ এটা কি হল?
মুচকী হেসে বলে
নিশানঃ কিছুনা।সেই তো কথা রাখলেন তবে সময় মত কেন রাখলেন না?
এর ভিতর অনেক ফ্রি হয়ে যায় লিজা
লিজাঃ দেব কিন্তু ঘাড়ে উপর বসিয়ে একটা।
নিশানঃতোমার ওই মিষ্টি হাতের একটা না একশটা কিল খেতেও আমি রাজি লিজা।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৩৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/১২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast