www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

স্বামী অদ্রীজানন্দ - ২য় পর্ব

(আগের সংখ্যার পর ) .........


রাতে খাটে শুয়ে শুয়ে, পর্ণার কথা ভাবছিলাম আর ওর মুখটা থেকে থেকে চোখের সামনে ভেসে উঠছিল। যদিও আগেই দেখেছি, তবুও কলেজের নবীন বরণ উৎসবেই পর্ণাকে প্রথম ভালো করে দেখা, স্টেজে, ইংরাজী কবিতা আবৃত্তি করতে উঠেছিল। এরমধ্যেই যদিও ওর প্রতি আমার দুর্বলতা বন্ধুদের কাছে লুকোতে পারি নি। না, আসলে ইচ্ছে করেই লুকোই নি, একটা উদ্দেশ্য অবশ্যই, যাতে আমাদের মধ্যে আর কেউ না হাত বাড়ায়! যা কম্পিটিশনের বাজার, যাকেই দেখি, পিছনে বিশাল লাইন। অয়ন্তিকা তো বলেই ফেলল একদিন, তোরা তো মনে হচ্ছে, আমাদের মেয়েদের রেশনের চিনি বা কেরোসিন তেলের সমগোত্রে ফেলে দিয়েছিস। আর আমাদের বাবারা রেশনের বা কেরোসিনের ডিলার ! সকাল থেকেই লাইন দেওয়া শুরু। এই হল পুরুষশাসিত সমাজের ফল !  

আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম, শুধু অদ্রীজ বলে উঠল, আমি কমপ্লীটলী এগ্রী করছি তোর সাথে,  কিন্তু এটা পুরুষশাসিত সমাজের কুফল নয়, সুফল, দেখিস না, নিরানব্বই ভাগ সময়ে, কেরোসিন বা রেশনের চিনি ব্ল্যাকে অন্যহাতে চলে যায়।  সেরকম তোরাও, সারাজীবন এরকম রাজকুমারী মার্কা অ্যাটিটিউড করে, মুখটা বেঁকিয়ে, ঘাড়টা ঘুরিয়ে, মিচকি হেসে, আশা জাগিয়ে, বুকটা তোলপাড় করে, লাইন দেওয়া উপভোগ করে কেটে পড়িস অন্য একজনের সাথে।

অয়ন্তিকা রেগে গিয়েছিল, তুই কি বলতে চাইছিস? আমরা কি ছেলেদের বলি, এসো আমাদের পেছনে পেছনে ঘোরো !  

না, না, আমি তা বলতে চাই নি, ঠিকই তো আমরা কি আর মিষ্টির রস মাটিতে ফেলে, পিঁপড়েদের বলি, আয় ভাই, খেয়ে যা... ওটাতো পিঁপড়েদের নেওয়া পেটেন্ট। আমি শুধু সেটাই বলতে চাইছিলাম।

অয়ন্তিকা, আর কিছু বলতে না পেরে, উঠে চলে যাচ্ছিল, নীল ওকে ধরে বেঁধে আবার বসালো। আমি বললাম, দেখ এইসব ভেবে লাভ নেই, আমার কেসটার কি হবে একবার ভেবে দেখ ।  সকলে ঘাড় নেড়ে কি যে বলতে চাইল, কিছুই বুঝলাম না, ততক্ষণে বাংলা স্যার বি. এন. এইচ বা বেঞ্চীবাবু ক্লাসে ঢুকে পড়াতে, সেদিনকার মত ইতি টানতে হল আলোচনায়।

পর্ণা একদম যাকে বলে টকটকে ফর্সা, তা নয়, তবে গায়ের রঙে একটা আলাদা হলদে ঔজ্জ্বল্য আছে। ত্বক একদম মোলায়েম, ঠিক যেমন আমরা টিভিতে দেখে থাকি সচরাচর। মুখে একটা সম্ভ্রান্ত ভাব, চোখ, নাক-মুখ খুব টানা টানা, ঠোঁটে এক অদ্ভুত মিষ্টি মায়াবিনী হাসি লেগে আছে যেন সবসময়। পরে দেখেছিলাম, বেশী জোরে হাসলে দুগালেই টোল পড়ে। তবে যেটা সবচেয়ে আকর্ষণীয় লেগেছিল আমার, সেটা হল পর্ণার চুল, এত লম্বা, ঘন আর সিল্কের মত চুলের গোছা এখনকার মেয়েদের দেখাই যায় না। লম্বাতে প্রায় কোমর ছাড়িয়ে নীচের দিকে নেমে গেছে আরো কিছুটা, আর এটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। এসব দেখে আমি প্রথম দিনেই কাৎ হয়ে পড়লাম। প্রথম দেখাতেই প্রথম প্রেম মনে উথলে উঠল, মানে ঐ আর কি যাকে সবাই বলে লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট।

আবৃত্তিটা বলাই বাহুল্য, আমার খুব স্বাভাবিক ভাবেই মাথার উপর  দিয়ে যাচ্ছিল, আর সকলেরও তাই যাওয়াতে সবাই বাইরে বিড়ি ফুঁকতে যাবার আগে আমাকে ডেকে গিয়েছিলো, কিন্তু আমি তখন আর আমার মধ্যে কোথায়? আমি তখন পর্ণার রূপে মুগ্ধ। আবৃত্তি শেষ হবার পরে আচমকা আবার নিজের হাতদুটোকে বিস্ফারিত চোখে তালি দিয়ে উঠতে দেখলাম। এই একটা ব্যাপার আমি কদিন ধরে দেখতে পাচ্ছি, আমার হাত আমার কথা শুনছে না, যখন তখন হাততালি দিয়ে নিজেকেই বিড়ম্বনায় ফেলে দিচ্ছে। আবৃত্তির মাথামুণ্ড আমিই বুঝতে পারলাম না, কিন্তু আমার হাত যে কি কিরে তার রসস্বাদন করল, তা বুঝতে পারলাম না। খুব ভালো ভাবে খে্যাল করলাম, হাততালির চোটে আবৃত্তির পর আমার দিকে একবার তাকিয়ে সেই ভুবনমোহিনী হাসিটি হেসে, ও স্টেজ থেকে নেমে গেল, বুঝলাম, সবচেয়ে দূরের লাইনে আমাকেই একমাত্র শ্রোতা পেয়ে যেন ও ধন্য হয়ে আমাকে তার কৃতজ্ঞতা জানিয়ে গেল।

পর্না স্টেজ থেকে নেমে যাবার পর বন্ধুদের কাউকে দেখতে না পেয়ে ইতি-উতি তাকাতেই হঠাৎ, “এক্সকিউজ মী” - মিষ্টি মেয়েলী গলার স্বরে পিছনে ফিরে তাকাতেই, দেখলাম এক গাল হাসি নিয়ে পর্ণা, আমার মুখোমুখী দাঁড়িয়ে গজ দাঁতের মুক্তো ঝরিয়ে হেসে আমায় জিজ্ঞাসা করল – আপনি বুঝি কীটসের কবিতা খুব ভালোবাসেন?  

কীকীকীটসসসসস...? আমার প্রায় ভিরমি খাবার জোগাড়, পেটের মধ্যে সাইক্লোন শুরু হয়ে গিয়েছিলো, বুকের খাঁচাটা খুলেই পড়ছিল প্রায় ! সে আবার কে? কৃত্তিবাস বলে একজনের নাম শুনেছিলাম অনেক আগে বাংলা বইতে, সেই কি ইংরেজদের কাছে নাম বদলে...? কে জানে? হতেও পারে, যা দিনকাল পড়েছে...... কোনোরকমে শুকনো হাসি হেসে মাথা নাড়িয়ে বলে ফেললাম – ইয়ে, মানে ইয়া, মানে হ্যাঁ, মানে ইয়েস, ভেরী গুড! আপনি দারুণ করেছেন, খুব ভালো লাগল, কিন্তু আমার বন্ধুরা কোথায় গেল, বলেই প্রায় উর্দ্ধশ্বাসে ঝড়ের গতিতে চলে এলাম। বেশ বুঝতে পারছিলাম, ব্যাপারটা ঠিক হল না, একজন নিজে যেচে এসে, ধন্যবাদ দিচ্ছে, আর আমি কিনা, ছিঃ!, একবার ভাবলাম না ফিরে গিয়ে কথাটা বলেই আসি, কিন্তু যেই ভাবা, তখন দেখি পা’টাও আর কথা শুনছে না, কেউ যেন ফেভিকুইক দিয়ে আটকে রেখেছে। কিছুতেই ইউ টার্ণ আর নেওয়া হল না। অগত্যা আর কি করা, বাইরে এসে, প্রাণটা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল ।  

বাইরে বেড়িয়ে দেখি, সকলে মিলে, আইসক্রাইম খাওয়া হচ্ছে, সোজা গিয়ে তোতলা অর্ণবের হাত থেকে আইসক্রিমটা কেড়ে নিয়ে বললাম, কি রে? খুব মজা না? আমাকে ফেলে চলে এসে, এখানে আইসক্রিম সাঁটানো হচ্ছে ? এবার দেখ কেমন লাগে, বলেই আইসক্রিমটা মুখে দিতে যাব, দেখি, অর্ণব, মুখটা বিকৃত করে, কিছু একটা বলার চেষ্টা করছে, কিন্তু  তোতলা হবার জন্য পুরোপুরি বলে উঠতে পারছে না, শুধু শুনতে পেলাম, - না, না – আ, আ, আ, আ...

পিছন থেকে অদ্রীজ বলে উঠল, আরে আস্তে, আস্তে, যা দেখছি, তাতে তো তোর টনসিল খুলে বেরিয়ে আসবে। কতদিন বলেছি, একটা ছোট সুপুরী জিভের তলায় রেখে দে, তুই ওরাল পরীক্ষা কি করে দিতিস স্কুলে, এটা নিয়ে এবার আমাকে রিসার্চ করতে হবে বলে মনে হচ্ছে।  

এই কথায়, অর্নব পুরোপুরি ফিউজ হয়ে গেল। যদিও বা আরো কিছু বেরোতো মুখ দিয়ে, তাও আর বেরোলো না, মুখটা যেন চেন টেনে বন্ধ করে দিলো ! আমি জিভ দিয়ে আইসক্রিমটার, রসস্বাদন করতে করতে অদ্রীজকে বললাম, যা ওকে ওরকম করে কেন বলছিস? বেচারা... অদ্রীজ হা হা হা করে সেই বিকট  অট্টহাস্য করে সকলকে উদ্দেশ্য করে ঐ দেখ শুঁড়ির সাক্ষী মাতাল ! এক তোতলা, আর এক তোতলাকে স্বান্তনা দিচ্ছে । এই শুনে সবাই তো সবাই, অর্ণবও দেখি, ফিচফিচ করে হাসতে শুরু করেছে কথাটা শুনে। রাগে গা’টা চিড়বিড় করে উঠল । একেই বোধহয় কলিযুগ বলে, ব্যাটার পাশে এই শর্মাই দাঁড়ালো, আর ও কিনা, এই প্রতিদান দিল। আমি ঘুরে প্রতিবাদ করলাম, এই ফালতু কথা বলবি না, আমি আবার কবে তোতলা হলাম ?

অয়ন্তিকা, ফুট কেটে বলল, এই তো একটু আগে, পর্ণার সাথে কথা বলতে গিয়ে, তুইও তো তোতলা হলি, স্বামী অদ্রীজানন্দ বললেন যে ! এর পড়েই  আবার সবাই দাঁত খিচিয়ে হো হো করে আর এক রাউন্ড হাসি সার্ভ করে দিল। লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছিল, কোনোরকমে বললাম, ওহ! তার মানে অদ্রীজ  আমার উপরে নজর রাখছিলিস। তা বন্ধুকে সাহায্য করতে কেউ এগুবি না, তাই না?  খালি টাঙ্গ খিঁচতেই পারিস তোরা। এই বলে রাগের মাথায় হাতের আইসক্রিমটায় এক কামড় বসিয়ে দিতে গিয়েও অর্ণবের দিকে তাকালাম একবার, দেখলাম, ব্যাটা আর নিজের মুখের ভরসাতে না থেকে, ক্রমাগত আমাকে হাত নেড়ে না – না করে যাচ্ছে। ব্যাপারটা কি? ওর হাতে তো একটা আইস্ক্রিম আছে, তবে আমাকে না করছে কেন? আমি মুখের কাছ থেকে কষ্ট করে নামিয়ে নিয়ে, অর্নবের কাছে গিয়ে শান্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, কি ব্যাপার, তুই এটাকে খেতে না করছিস কেন?

ও কিছু বলার আগেই, অদ্রীজ বলে উঠল, আরে তোতলার কথা ছাড়, পর্নার কথা ভাব আর আইসক্রিমটা টুক করে খেয়ে নে। এবারে দেখবি, গলে পরে গেছে। আমিও আর কালবিলম্ব না করে স্বামী অদ্রীজানন্দের কথা পালন করে ফেললাম।

কিছুটা খাওয়ার পরে, অর্নব আমার কানের কাছে মুখটা নিয়ে এসে বলে গেল, - তু, তু, তু তুই, কা-কা-কা-আ-আ-আর, আআইআইয়াইক্রিম......খে-য়ে-য়ে-ইয়ে-ইয়ে-ছিস  জানিসসস?

ঘড়ি দেখলে হয়তো, পুরো একমিনিট কি ভাবে হয় বোঝা যেত, আর বিজ্ঞানের বইয়ে সময়ের এককের সংজ্ঞায় আমাদের অর্নবের নাম উঠে যেত। হাতে সময় থাকলে আর ফিজিক্সের স্যর কাছাকাছি থাকলে হয়ত তাই করতাম, কিন্তু এখন আর ওসবের মধ্যে বিস্তারিত না গিয়ে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- কার ? উত্তরে অর্নব ভালোই শুরু করেছিল, কিন্তু বুঝতে পারলাম ভিতর থেকে আগত একটা চাপা ও দম-ফাটানো হাসির উত্তেজনা ওকে কিছুতেই পুরো কথাটা বলতে দিল না, শুধু বলল- ও-ও-ঐ, ছা-আ-আ-আ-আ-আ-আ-আ...

আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম- কার? কিন্তু ওর গলার টেপে ক্যাসেটের ফিতে জড়িয়ে গিয়েছিল, বুঝতে পারলাম, তাই আর রিস্ক না নিয়ে অন্যদের দিকে তাকাতেই, আবার একবার হাসির চোট সামলিয়ে যা বুঝতে পারলাম, তাতে আমার গলা দিয়ে বমি উঠে আসাটা শুধু বাকি ছিল।

অয়ন্তিকা যা বলল, আইসক্রিমটা নাকি অর্নবের হাত থেকে পড়ে গিয়েছিলো, আর পড়ে যেতেই, সেটা, একটা ছাগলের বাচ্চা গলাধঃকরণ করেই নিয়েছিল প্রায়, কিন্তু ঠান্ডার চোটে, মুখ দিয়ে তড়িঘড়ি বার করে, এই শীতের শেষে, জয়নগরে, হঠাত তুষারপাত কেন হল, চিন্তা করতে করতে, মনের ভ্রান্তি দূর করতে আরো দুবার চেটে নিয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে আবহাওয়া দপ্তরের বাপ-বাপান্ত করে ব্যাঁ-আ-আ, ব্যাঁ-আ-আ করতে করতে এক ছুটে কলেজের গন্ডীর বাইরে চলে যাওয়াতে, বেচারা অর্নব অটাকে তুলে ফেলে দিতে যাচ্ছিল, আর সেইসময়ে আমি ঠিক শিকারী বাজপাখির মতোই ছোঁ মেরে ওটাকে ওর হাত থেকে তুলে নিয়ে নিজের পিপাসা মিটিয়েছি।

বমি করতে চেষ্টা করেও যখন বমি হল না, তখনী স্বামী অদ্রীজানন্দর আগমন, কাছে এসে, গায়ে হাত দিয়ে বলল, দেখ ভাই, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের মতানুসারে, তুই খুব ভালো কাজ করেছিস, কেন আমাদের উচ্ছিষ্টই ওরা খাবে? ওরা অবলা প্রানী বলে? আজকে তুই প্রমাণ করে দিলি যে, সত্যি মানুষ আজ মহৎ প্রানী, ছাগলের উচ্ছিষ্ট খেয়ে, তুইও মহৎ ছাগল হয়ে গেলি, স্বামী বিবেকানন্দ থাকলে আজকে তোকে বুকে টেনে নিতেন, কারণ তোর এই যে জীবের প্রতি প্রেম, তার মানে আসলে তুইই শুধু ঈশ্বরের সেবা করছিস। তাদের ভাবশিষ্য হয়ে আমি আর কি করে তোর থেকে দূরে থাকি, তাই তোকে বুকে টেনে নিলাম, বলে আমার সাথে কোলাকুলি করতে এসেও দূর থেকেই বলে উঠল, কিন্তু তুই তো এখনো শুদ্ধ হস নি, তোর মনে প্রাণে এখনো পর্ণার চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, আগে কাল স্নান করে শুদ্ধ হয়ে আমার কাছে আয়, তবে আলিঙ্গন করব তোকে! জামার হাতাটা প্রায় গুটিয়ে নিয়েছিলাম, একটা বিরাশি সিক্কার ঘুঁসি মারব বলে, কিন্তু তারপরের কথাটায় মনটা আশ্বস্ত হওয়াতে এবারের মতো মাফ করে দিলাম।

অদ্রীজ হঠাৎ চোখ টিপে বলল, এর ফলে তুই তোর অভীষ্ট ফল পেতে পারিস, যদি, ফিল্ডিংটা ঠিকঠাক করতে পারিস। এই স্বামী অদ্রীজানন্দ তোমাকে হেল্প করবে, যথাসাধ্য, তোমাকে তোমার লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবার জন্য চেষ্টা করবে, বসন্ত-পর্ণাকে একত্রিত করতে পারে যদি উপযুক্ত দক্ষিণা পাওয়া যায় তবে! আমি বুঝলাম, এসবের মূলে আসলে অদ্রীজই, ঐ আমার উপরে নজর রাখছিল, আর তাই আমার কাণ্ডকারখানায় ধরা পড়ে গেছি, তাই আর রাগ না দেখিয়ে বলে উঠলাম, পারবি তুই আমাকে এব্যাপারে সাহায্য করতে ? তারপর মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে বললাম-  দক্ষিনা কি বল, সাধ্যমত দেব ঠিক।

একগাল হেসে স্বামী অদ্রীজানন্দ বলে উঠলেন, বৎস্য, বসন্ত, চিন্তার কিছু নেই, দক্ষিণা যৎসামান্যই, শুধু টিউশনী থেকে ফেরার পথে আমার সান্ধ্য-ভোজনের ভার নিতে হবে তোমায়, তবেই তুমি আমার বহুমূল্য টিপস ও সাহায্য পাবে, এবারে ভেবে দেখো, কি করবে?

আর কি করব, আমার যা অবস্থা দেখছি, মনে হচ্ছে যেন, রিং ছাড়া সাইকেলের টায়ার, কিছুতেই সোজা ভাবে দাঁড়াতে পারছি না পর্নার সামনে, তবে একটা রফা হল, বিল যদি ত্রিশ টাকার বেশী যায়, তবে অদ্রীজও কন্ট্রিবিউট করবে।

হা কপাল, এই নিয়ে পনেরো দিন চলে গেল!, এখনও কিছুই করে উঠতে পারলাম না, দক্ষিনার ঠ্যালায় আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়, ওদিকে, অমিয়টা বেশ ভালোই বন্ধুত্ত্ব জমিয়েছে, এখন আবার যেন পারলে সেঁটে থাকে পর্ণার সাথে, সকলেতো প্রায় বডিগার্ড বলে খ্যাপায়। কিন্তু কি করে যে ও উড়ে এসে জুড়ে বসল, বোঝা গেল না । ওকে এতও টিটকিরি দেই, তবুও কোনো হেলদোল দেখি না, মালটাকে ঠিক সুবিধার লাগে না আমার। আবার এদিকে পর্ণা আবার আমার দিকে তাকায়ই না একদম, প্রথম দিনের সেই অভিজ্ঞতা ভুলতে পারে নি মনে হয় আসলে। হয়ত, আমাকে বেয়াদব ছেলে ভাবে। কি যে করি!  হে ভগবান, হে রামকৃষ্ণদেব একটু আলো দেখাও প্লীজ...আর পনেরো দিন বাদে সরস্বতী পুজা, কিছু একটা না হলে আমার মাথা কাটা যাবে। জীবনে প্রথমবার ভ্যালেনটাইন ডে মানাবার প্ল্যানটা না অকালেই ঝরে যায় !!


( ক্রমশঃ )
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১২১৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৫/০২/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • Bithi Chakraborty ১৭/০২/২০১৬
    চলবে চলবে ৷ ফাটাফাটি .....
  • রুমা ঢ্যাং ১৬/০২/২০১৬
    মনে মনে ভাবলাম সিনেমার প্লট দেখছি। খুব ভাল লাগছে। পরেরটার আশায় রইলাম।
    • ধন্যবাদ রুমাদি । ভালো লাগছে জেনে মনে হচ্ছে পরিশ্রম স্বার্থক। কমিক স্টোরি লেখা কি কঠিন কাজ, বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারছি ।
  • রহস্য নয় মজা। ভালো কথা। কিন্তু পাঠকের কৌতুহল কি ভাবে ধরে রাখতে হয় তা শান্তনু ব্যানার্জী জানে। ভালো চলেছে , একটা পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এগিয়ে চলো।
  • অভিষেক মিত্র ১৬/০২/২০১৬
    আমিও আজিজ ভাইয়ের সাথে এক মত।
    দারুন! দারুন!
  • ধ্রুব রাসেল ১৬/০২/২০১৬
    অনেক রসালো গল্প। ভাল লাগলো অনেক।
  • অসাধারণ ভাবনার প্রতিফল॥
  • আজিজ আহমেদ ১৫/০২/২০১৬
    ভাই শান্তনু, আমি আমার হাসি থামাতে পারছি না। এটা কি...।
    ঐ কিটস্ এর ব্যক্ষা, সুপারী... my goodness. হা...হা...হা...

    সব কিছু ছেড়ে তুমি কমিক স্টোরীতে মন দাও স্বামী শান্তনুনান্দ।
 
Quantcast