www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গন্ধ - ৫ম পর্ব

( আগের সংখ্যার পর )

আমরা সবাই স্যুইট রুমের লিভিং এরিয়ায় যে যার নিজের মত সোফাতে জায়গা করে বসে আছি। আমার হৃদপিণ্ডের ধড়ফড়ানি ক্রমেই বেড়ে চলেছে, বেশ বুঝতে পাড়ছি। অর্ক আর আমি একদিকে একটা আলাদা সোফাতে, অপরদিকে আর একটা সোফায় মিঃ তিচেরো আর মিঃ তাকাহাসি বসে আছেন। জ্যেঠু, প্রিতমদা, আর জাপানী কনস্যুলেটের ডেলীগেট মিঃ কাতসুমি বসে আছেন, ভদ্র মশাই তার এক বিঃশ্বস্ত অনুচর কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন দরজার কাছেই। রুম সারভিসের ছেলেটা সবাই কে চা দিয়ে গেছে, সবাই হাতে চায়ের কাপ নিয়ে একদৃষ্টিতে অর্কর দিকে তাকিয়ে আছে।
অর্ক মিঃ তিচেরোর দিকে তাকিয়ে বলল – আচ্ছা, মিঃ সুযুকি, আপনি এখন, সঞ্জয়বাবুর রুমে কি কোনও কাজ করছিলেন এত রাত্রে? এটা শুনে মিঃ তাকাহাসি বলে উঠলেন- না আসলে, আজ সকালেই তো আমাদের ফ্লাইটের টিকিট কাটা আছে, তাই আমরা একটু গোছগাছ করছিলাম। মিঃ তিচেরো এই রুমে দেখছিলেন যে কোনও দরকারি কিছু কাগজ পত্র এখানে রয়ে গেছে কিনা। আসলে সঞ্জয় তো অনেক কিছুই দেখত, তাই আমরা পুলিশকেও অনুরোধ করেছিলাম, যেন এই রুমটা সীল না করে দেওয়া হয়। পুলিশ আমাদেরকে এই ব্যাপারে সাহায্যও করেছে।
অর্ক জিজ্ঞেস করল – আচ্ছা, সঞ্জয়বাবু ঠিক কি কি কাজ করতেন আপনাদের?
এর উত্তরে মিঃ তিচেরো বল্লেন-সঞ্জয় আমাদের অনেক কিছু কাজই করত। আমার পিএ এর মত ছিল। ও আমার ইংরাজীর স্পীচ থেকে সুরু করে, কখনও দোভাষীর এবং কখনও ইভেন্ট ম্যানেজারের কাজও করত।
অর্ক ভাবলেশহীন মুখে বলল – আর কিছু ?
এর উত্তরে দুজনেই ঘাড় নেড়ে জানালেন যে, না আর কিছু সঞ্জয়বাবু দেখতেন না।
হুমমম... কিন্তু আমি একটা জিনিস বুঝতে পারছি না, যে তাহলে, সঞ্জয়বাবু আপনাদের গবেষনার ব্যাপারে কিরকম সাহায্য করতেন? – অর্ক জিজ্ঞাসা করল। মিঃ তিচেরো একটু ভেবে বললেন- না, সঞ্জয় আমাদের গবেষণায় কোনওরকম যুক্ত ছিল না।
তাহলে, আপনাদের গবেষণার ব্যাবহূত জিনিস সঞ্জয়বাবুর রুমে কি করে এল? – অর্কর অকস্মাৎ প্রশ্নটা করেই আঙুল দিয়ে সোজা ওই ভাঙ্গা বয়মটার দিকে সবার দৃষ্টিপাত করাল। মিঃ তাকাহাসি এবারে কার্যত রেগে গিয়ে বললেন -দেখুন, এটা আমাদের নিজস্ব ব্যাপার। যেটা বলতে এসেছেন, তারাতারি সেটা বলে ফেলুন। আমরা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নই আপনাদের।
অর্ক, মিঃ তাকাহাসির দিকে ঘুরে বলল-স্যর, আপনি কি জানেন যে আপনার পুত্র একটা আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল চক্রের সাথে যুক্ত হয়ে পড়েছিল, এবং আপনাদের এই গবেষণার সমস্ত ব্যাপার ও তাদের কাছে বিক্রি করতে চেয়েছিল? কথাটা শুনে, রাগে মিঃ তাকাহাসির মুখের চেহারা পাল্টে গেলো তৎক্ষণাৎ, উনি সোফা ছেড়ে দাঁড়িয়ে উঠে বললেন, কি যা তা বলছ তোমরা আমার ছেলের নামে? তোমরা জানো আমাদের পরিবারের সুনাম? আমার ছেলে এইসব করতে পারেই না। আমরা জাপানের রাজপরিবারের পারিবারিক বন্ধু। এইসব ফালতু কথা ছেড়ে আমার ছেলেকে কে খুন করেছে, সেইতা বল, নয়ত তোমরা এখন আসতে পার, আমাদের শান্তিতে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে দাও।
আমিও অর্কর এই কথায় যারপরনাই বিস্মিত হয়েছিলাম, কিন্তু শোনা ছাড়া আমারও বিশেষ কিছু করার ছিল না। অর্ক খুব শান্ত স্বরে বলল – আপনার ছেলের খুনিকে আমরা পেয়ে গেছি মিঃ তাকাহাসি, আপনি শান্ত হয়ে সোফাতে বসুন। সেই এই কথা আমাদেরকে জানিয়েছে।
মিঃ তিচেরো এতক্ষণ চুপ করে শুনছিলেন সব, এবার রেগে গিয়ে বলে উঠলেন, হোয়াট রাবিশ?কি ভুলভাল বকছ তোমরা? অর্ক প্রিতমদার দিকে এবারে ঘুরে তাকাতেই প্রিতমদা ইশারা করল মিঃ ভদ্রকে। সাথে সাথে, ভদ্রমশাই বাইরে গিয়ে, সুকুমারবাবুকে ঘরে ডেকে নিয়ে এলেন। সুকুমারবাবু ঘরে ধুক্তেই, অর্ক ওনাকে উদ্দেশ্য করে বলল- দেখুন তো সুকুমারবাবু, আপনি এনাদের মধ্যে কাউকে চেনেন? সুকুমারবাবু ভাল করে দুজনাকে দেখে মিঃ তাকাহাসিকে দেখিয়ে বললেন যে উনি ওনাকে চেনেন কারণ সঞ্জয়বাবু ওনাকে ফটো দেখিয়েছিলেন।
এরপর মিঃ তিচেরোর দিকে ঘুরে বললেন – আর ইনি তো মনে হয় সেই বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক মিঃ তিচেরো তাই না, খবরের কাগজে এনার ফটো দেখেছি। অর্ক বলল – আচ্ছা আপনি এবারে বাইরে যান, দরকার পরলে ডাকব। সুকুমারবাবু পিছন ফিরে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনি মিঃ তিচেরো হাত তুলে বলে উঠলেন – এটা কি হল? কি প্রমান হল এতে? কি হে ছোকরা, যখন উনি ধরাই পরে গেছেন, তখন কেন গরাদে পুরছ না? শুধুশুধু সঞ্জয়ের উপরে দোষ দিচ্ছ।
মিঃ তিচেরোর কথাটা শুনে, সুকুমারবাবু হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন, আমাদের কার চোখ এরাল না ঘটনাটা। এবার অর্ক হেসে বলল – আচ্ছা এটাই শেষ প্রশ্ন আপনাকে আমার, আপনার পুরো নামটা আর একবার বলবেন আমাদেরকে প্লীস?
মিঃ তিচেরো দুদিকে ঘাড় নারিয়ে চেঁচিয়ে উঠলেন – আমি হলাম তিচেরো সুযুকি, জাপানের বৈজ্ঞানিক, কিন্তু আর কিছুক্ষন পরে আপনাদের এই অভ্যর্থনাতে আমি পুরো পাগল হয়ে যাব। যদি জানতাম ইন্ডিয়া একটা এরকম দেশ, তাহলে কখনই আমি এখানে আমার গবেষণা নিয়ে আসতাম না।
অর্ক অবিচলিত ভাবে মিঃ তাকাহসির দিকে ফিরে বলল – মিঃ তাকাহাসি, যদি আপনাকে বলি যে আপনার ছেলেকে সে নিজেই খুন করেছে, বা করিয়েছে...।
মিঃ তাকাহাসি লাফিয়ে উঠে বললেন- মানে? এটা আবার কি নতুন তত্ব নিয়ে এলে? যে নিজে মারা গেছে সে কি করে নিজেকে খুন করাতে পারে, বা করতে পারে? আপনারা হয় নিজেরা পাগল হয়ে গেছেন, বা আমাদেরকে পাগল ভাবছেন যে আপনাদের এই মস্করা আমরা বিশ্বাস করব। তাহলে যে মার্ডারারকে ধরে এনেছ, তাহলে সে কে? অর্ক হেসে বলল - সেতো ওনার সাথি কে ধরে এনেছি। আসল মাস্টারমাইনড তো আপনার ছেলে মিঃ তাকাহাসি? সবার সাথে, আমার মাথাটাও ভোঁ ভোঁ করছিল, সমস্তকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিল। কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।
অর্ক নীচু হয়ে বেডের তলা থেকে একজোড়া শুকনো কাদা লাগানো জুতো বার করে বলল – আচ্ছা মিঃ তাকাহাসি, সঞ্জয়বাবুতো সোজা এয়ারপোর্ট থেকে আপনাদের সাথে একসাথে হোটেলে এসে উঠেছিলেন, যা হোটেলের রেজিস্টারে রেকর্ড করা আছে। আপনারা সকলে, একসাথে ডিনার করতে গিয়েছিলেন এবং সেখান থেকেই, সঞ্জয়বাবু বেপাত্তা হয়ে যান, তারপরে আমরা ওনার লাশটা খুঁজে পাই, ঠিক কিনা প্রিতমদা?
প্রিতমদা আর মিঃ ভদ্র দুজনেই একসাথে ঘাড় নেড়ে অর্কর কথার সায় দিলেন। জ্যেঠু অর্কর দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে একটা থাম্বস আপ সিগন্যাল করল, যা আমার নজর এড়াল না।
অর্ক একটু থেমে আবার বলতে আরম্ভ করল – তাহলে, এই জুতোজোড়া কাদালাগানো অবস্থায়, এই ঘরের রুমের ভিতরে এল কোথা থেকে? এটা নিশ্চই আপনাদের দুজনের কারুর না, কারণ আপনাদের জুতো আমি দেখে এসেছিলাম, আপনাদের রুমে। যদিও পুলিশ আবার একজোড়া জুতো পেয়েছিল, লাশ এর সাথে। তো একটা মানুষ একসাথে দু জোড়া জুতো কি করে পরতে পারে, আবার তার মধ্যে একজোড়া কি করে ফিরে চলে আসতে পারে নিজের জায়গায় নিজে থেকে? এই দুটো কি যথেষ্ট পরস্পরবিরোধী নয়?
মিঃ তাকাহাসি অস্ফুট স্বরে বললেন – এটা ঠিক হচ্ছে না, আমার মৃত ছেলেকে নিয়ে এরকম রসিকতা আপনাদের শোভা পায় না। আমরা জাপানীস এমব্যাসিতে এর জন্য নালিশ করব।
ওদিকে সুকুমারবাবু চলে যাওয়ার জন্য বেরোতে যেতেই, অর্কর আবার অনুরোধ-সুকুমারবাবু, আর একটু কাজ আছে, একটু এগিয়ে আসুন এইদিকে। সুকুমারবাবু অর্কর দিকে এগিয়ে যেতেই, অর্ক নিজের পকেট থেকে একটা প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ বার করে, তার থেকে একটা উইগ আর একটা নকল গোঁফ বার করে সুকুমার বাবুকে জিজ্ঞাসা করল- আপনি এগুলো চেনেন?
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬২০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৭/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • রেনেসাঁ সাহা ১৪/১০/২০১৫
    খুব ভাল
  • অভিষেক মিত্র ২২/০৮/২০১৫
    বাঃ।
  • ২৯/০৭/২০১৫
    সুন্দর ...।
  • কিশোর কারুণিক ২৭/০৭/২০১৫
    বেশ
  • কিশোর কারুণিক ২৪/০৭/২০১৫
    ভাল
  • T s J ২৪/০৭/২০১৫
    সুন্দর
 
Quantcast