অমর ২১শে
অমর ২১শে আমি কি ভুলিতে পারি।
মাতৃভাষা দিবসের মাস ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই ভাষা সৈনিকদের যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ঢাকার রাজপথ। কী তাঁদের পরিচয়?
রফিকঃ রফিকের পুরো নাম রফিক উদ্দিন আহমদ। জন্ম '২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার পারিল বলধারা গ্রামে। বাবা আব্দুল লতিফ ছিলেন ঢাকার বাদামতলীর একটি প্রেসের মালিক। রফিক ম্যাট্রিক পাস করেন '৪৯ সালে স্থানীয় বায়রা স্কুল থেকে। তারপর তিনি ভর্তি হন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্রনাথ কলেজে। এই কলেজে তিনি আই. কম. (যেটা এসএসসি সমমানের) পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর তিনি কলেজের পড়া লেখা অসমাপ্ত রেখে ঢাকায় চলে আসেন বাবাকে প্রেস পরিচালনার কাজে সাহায্য করতে।এ সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা শহর। জারী করা হয় ১৪৪ ধারা। কিন্তু বাংলার সাহসী মানুষেরা সেটা মানবে কেন ? তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে চরমভাবে। রফিক যোগ দেন সেই বিক্ষোভ মিছিলে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের ঘাতক পুলিশ বাহিনী গুলি চালায় এই মিছিলের উপর। গুলি লাগে রফিকের মাথায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। সেদিন ছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয় রফিকের লাশ। সেদিন রাত তিনটায় সামরিক বাহিনীর পাহারায় তাঁর লাশ দাফন করা হয় আজিমপুর গোরস্তানে।
বরকতঃ বরকতের পুরো নাম আবুল বরকত। তার জন্ম ১৯২৭ সালের ১৩ জুন ভারতের মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামে। তিনি ১৯৪৫ সালে স্থানীয় তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। ১৯৪৭ সালে তিনি এই কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি মুর্শিদাবাদ ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে চতুর্থ স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এ অনার্স পাস করেন। তারপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ ক্লাসে ভর্তি হন। ৫২'র ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে গেলে সেই মিছিলের উপর গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন বরকত। মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে। ডাক্তাররা প্রাণপণে চেষ্টা করেন তাকে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাদের। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের ফলে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ঐ রাতেই তাঁর আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন হয় তাঁর লাশ।
সালামঃ শহীদ সালামের পুরো নাম আব্দুস সালাম। জন্ম ফেনী জেলার লক্ষীপুর গ্রামে। তবে তাঁর জন্ম তারিখ জানা যায়নি। পিতার নাম মো. ফাজিল মিয়া। পেশায় তিনি ছিলেন একজন পিয়ন। ২১ ফেব্রুয়ারির সেই ঐতিহাসিক মিছিলে সব ভয়কে দূরে ঠেলে যোগদান করেন সালাম। পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। দীর্ঘ দেড় মাস হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকেন তিনি। অবশেষে ৭ এপ্রিল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ কারণ। খালি হয়ে যায় তার দরিদ্র পিতা মাতার বুক।
শফিউরঃ শহীদ শফিউরের পুরোনাম শফিউর রহমান। তার জন্ম ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ভারতের চব্বিশ পরগনার কোন্নগর গ্রামে। তার পিতার নাম মাহবুবুর রহমান। তিনি ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। শফিউর ম্যাট্রিক পাস করেন স্থানীয় স্কুল থেকে। তারপর তিনি ভর্তি হন কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্সিয়াল কলেজে। এই কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে আই.কম পাস করেন। এরপর তিনি চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসের কেরানির চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি চব্বিশ পরগনা ছেড়ে পিতার সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। কিছুদিন পর তিনি ঢাকা হাইকোর্টের হিসাব রক্ষণ শাখায় কেরানি পদে যোগদান করেন। ৫২'র ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ৬নং রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে তিনি রওনা হন অফিসের উদ্দেশ্যে। এ সময় ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিল চলছিল। শফিউর যোগ দেন সেই মিছিলে। পুলিশ মিছিলে গুলি বর্ষণ করলে গুলি লাগে শফিউরের পিঠে। মারাত্মক আহত অবস্থায় এম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ডা. এলিনসন তার দেহে অস্ত্রোপাচার করেন। অস্ত্রোপাচার সফল না হওয়ায় ঐদিন সন্ধ্যা ৭টায় তিনি পরলোকগমন করেন। রাত তিনটায় পুলিশ পাহারায় তার লাশ দাফন করা হয় আজিমপুর গোরস্থানে।
জব্বারঃ ভাষা শহীদ জব্বারের পুরো নাম আব্দুল জব্বার। তাঁর জন্ম ১৯১৯ সালের ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার পাঁচুয়া গ্রামে। তবে তাঁর সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায়নি। তিনি স্থানীয় পাঠশালায় কিছুদিন পড়াশোনা করেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণ
মাতৃভাষা দিবসের মাস ফেব্রুয়ারি এলেই আমরা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করি সেই ভাষা সৈনিকদের যাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ১৯৫২ সালের ঢাকার রাজপথ। কী তাঁদের পরিচয়?
রফিকঃ রফিকের পুরো নাম রফিক উদ্দিন আহমদ। জন্ম '২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর থানার পারিল বলধারা গ্রামে। বাবা আব্দুল লতিফ ছিলেন ঢাকার বাদামতলীর একটি প্রেসের মালিক। রফিক ম্যাট্রিক পাস করেন '৪৯ সালে স্থানীয় বায়রা স্কুল থেকে। তারপর তিনি ভর্তি হন মানিকগঞ্জ দেবেন্দ্রনাথ কলেজে। এই কলেজে তিনি আই. কম. (যেটা এসএসসি সমমানের) পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। তারপর তিনি কলেজের পড়া লেখা অসমাপ্ত রেখে ঢাকায় চলে আসেন বাবাকে প্রেস পরিচালনার কাজে সাহায্য করতে।এ সময় রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবীতে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকা শহর। জারী করা হয় ১৪৪ ধারা। কিন্তু বাংলার সাহসী মানুষেরা সেটা মানবে কেন ? তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে থাকে চরমভাবে। রফিক যোগ দেন সেই বিক্ষোভ মিছিলে। কিন্তু পাকিস্তান সরকারের ঘাতক পুলিশ বাহিনী গুলি চালায় এই মিছিলের উপর। গুলি লাগে রফিকের মাথায়। ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। সেদিন ছিল ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয় রফিকের লাশ। সেদিন রাত তিনটায় সামরিক বাহিনীর পাহারায় তাঁর লাশ দাফন করা হয় আজিমপুর গোরস্তানে।
বরকতঃ বরকতের পুরো নাম আবুল বরকত। তার জন্ম ১৯২৭ সালের ১৩ জুন ভারতের মুর্শিদাবাদের বাবলা গ্রামে। তিনি ১৯৪৫ সালে স্থানীয় তালিবপুর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর তিনি ভর্তি হন বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজে। ১৯৪৭ সালে তিনি এই কলেজ থেকে আই.এ পাস করেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি মুর্শিদাবাদ ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৫১ সালে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণীতে চতুর্থ স্থান অধিকার করে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে বি.এ অনার্স পাস করেন। তারপর তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ ক্লাসে ভর্তি হন। ৫২'র ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে ১৪৪ ধারা উপেক্ষা করে মিছিল এগিয়ে গেলে সেই মিছিলের উপর গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। ঢাকা মেডিকেল কলেজের হোস্টেলের ১২ নম্বর শেডের বারান্দায় গুলিবিদ্ধ হন বরকত। মারাত্মকভাবে আহত হন তিনি। তাকে ভর্তি করানো হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে। ডাক্তাররা প্রাণপণে চেষ্টা করেন তাকে সুস্থ করে তুলতে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ হয় তাদের। অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণের ফলে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত আটটায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। ঐ রাতেই তাঁর আত্মীয় স্বজনদের উপস্থিতিতে আজিমপুর গোরস্থানে দাফন হয় তাঁর লাশ।
সালামঃ শহীদ সালামের পুরো নাম আব্দুস সালাম। জন্ম ফেনী জেলার লক্ষীপুর গ্রামে। তবে তাঁর জন্ম তারিখ জানা যায়নি। পিতার নাম মো. ফাজিল মিয়া। পেশায় তিনি ছিলেন একজন পিয়ন। ২১ ফেব্রুয়ারির সেই ঐতিহাসিক মিছিলে সব ভয়কে দূরে ঠেলে যোগদান করেন সালাম। পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। দীর্ঘ দেড় মাস হাসপাতালের বিছানায় পড়ে থাকেন তিনি। অবশেষে ৭ এপ্রিল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ কারণ। খালি হয়ে যায় তার দরিদ্র পিতা মাতার বুক।
শফিউরঃ শহীদ শফিউরের পুরোনাম শফিউর রহমান। তার জন্ম ১৯১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি ভারতের চব্বিশ পরগনার কোন্নগর গ্রামে। তার পিতার নাম মাহবুবুর রহমান। তিনি ছিলেন ঢাকার পোস্ট অ্যান্ড টেলিগ্রাফ অফিসের সুপারিনটেনডেন্ট। শফিউর ম্যাট্রিক পাস করেন স্থানীয় স্কুল থেকে। তারপর তিনি ভর্তি হন কলকাতা গভর্নমেন্ট কমার্সিয়াল কলেজে। এই কলেজ থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে আই.কম পাস করেন। এরপর তিনি চব্বিশ পরগনা সিভিল সাপ্লাই অফিসের কেরানির চাকরি গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি চব্বিশ পরগনা ছেড়ে পিতার সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। কিছুদিন পর তিনি ঢাকা হাইকোর্টের হিসাব রক্ষণ শাখায় কেরানি পদে যোগদান করেন। ৫২'র ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ৬নং রঘুনাথ দাস লেনের বাসা থেকে সাইকেলে চড়ে তিনি রওনা হন অফিসের উদ্দেশ্যে। এ সময় ছাত্র জনতার বিক্ষোভ মিছিল চলছিল। শফিউর যোগ দেন সেই মিছিলে। পুলিশ মিছিলে গুলি বর্ষণ করলে গুলি লাগে শফিউরের পিঠে। মারাত্মক আহত অবস্থায় এম্বুলেন্সে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ডা. এলিনসন তার দেহে অস্ত্রোপাচার করেন। অস্ত্রোপাচার সফল না হওয়ায় ঐদিন সন্ধ্যা ৭টায় তিনি পরলোকগমন করেন। রাত তিনটায় পুলিশ পাহারায় তার লাশ দাফন করা হয় আজিমপুর গোরস্থানে।
জব্বারঃ ভাষা শহীদ জব্বারের পুরো নাম আব্দুল জব্বার। তাঁর জন্ম ১৯১৯ সালের ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও থানার পাঁচুয়া গ্রামে। তবে তাঁর সঠিক জন্ম তারিখ জানা যায়নি। তিনি স্থানীয় পাঠশালায় কিছুদিন পড়াশোনা করেন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণ
মন্তব্য যোগ করুন
এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।