www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আমাদের পেকু ও রোগি

বছরের প্রথম দিন। শহরের মত আমাদের গ্রামে এতসব হৈ হুল্লোড় কান্ড হয় না। এখানের মানুষগুলো যেমন বড় সরল-সাদামাটা তেমন তাদের আবেগগুলোও সাদামাটা। ঠিক হৃদয়ের বহিঃপ্রকাশ তাতে কোন ন্যাকামো নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠেই দরজার পাশে দেখলাম মা ভরা কলসে আম পাতা ভিজিয়ে রেখেছে। বছরের প্রথম দিনে নাকি খালি জিনিস দেখলে অমঙ্গল হয়। এটা নাকি আমার মায়ের নানির দাদি বলতেন। বংশ পরাম্পরায় তিনিও বলেন। বিশ্বাসও করেন। ঘুম থেকে উঠেই ভরা কলসি দেখলাম। তারপরও মনে হয় অমঙ্গলের ভূতটা গাড়ে চেপে আছে। বাড়ির উঠনের এক কোনে বড় বোনের মেয়েটা গরাগরি দিয়ে সেকি কান্না, কি হয়েছে কাউকে বলছে না। আমি আদর করে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে মা! বল। মামাকে বল। মামা তোমাকে অনেক চকলেট কিনে দিবে”। কান্নাবিজড়িত কণ্ঠে সে যা বলল তার মর্মার্থ হচ্ছে পেকুকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি ছাড়া সবাই বেশ চিন্তিত হয়ে পড়ল। পেকুটা অনেক দিন ধরে এ বাড়িতে আছে। দিনে দিনে একেবারে সবার আপন হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ঐ পিচ্চিগুলোর কাছে। কারণও অবশ্য আছে। পেকু তাঁর এই সমবয়সী পিচ্চিগুলোকে ভীষম ভালবাসে। এক সঙ্গে খেলে, বেড়াতে যায়, আবার দুপুর বেলা ওরা যখন খেয়ে ঘুমিয়ে যায়, পেকুও ওদের খাটের কাছে ঘুমায়। পিচ্চিগুলো বলছি এ কারণে আমার দু বোনের তিনটা বাচ্চা। ওরা আমাদের বাড়ী বেড়াতে এলে পাশের বাড়ীর চামেলীর ছোট মেয়েটাও ওদের সাথেই থাকবে। খেলবে। আলাদা করতে গেলে বিশাল হট্টোগোল বেধে যায়। যাইহোক মা মুসকি হেসে আমাকে বলল যা না দেখ, কোথাও খুজে পাস কিনা। প্রথমে বললাম খুজতে হবে না পেটে টান পড়লে এমনিতেই আসবে। পরে সবার চাপাচাপিতে পড়ে সাইকেলটা নিয়ে বের হলাম। পেকুর দরদী পিচ্চিটাকে সাইকেলের পিছনে নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় খুজছি। পিচ্চিটা পিছনে বসে পেকু-পেকু করে চিল্লাচ্ছে। দিলাম এক ধমক। পিচ্চিটা চুপ হয়ে গেল। অনেক খোজাখুজি করলাম কোথাও পেলাম না। আমিও একটু চিন্তিত হয়ে পড়লাম তবে কি ছেলে ধরায় নিয়ে গেল। অবশ্য ছেলে ধরায় নিয়ে গেলে জামেলায় পড়তে হবে আমাকেই কারণ এই পিচ্চিগুলো হাতপায়ে ছোট হলেও মারামারিতে খুব পাকা। আর যদি কোন কারণে আমাকে ভাগে পায় তবে তো রামলীলা। হঠাৎ আমার পিঠে একটা খামচি কেটে বললঃ মামা পেকুর গলা।
বুজুন, কেমন শয়তানের হাড্ডি! গলা শুনেই বঝে ফেলল পেকুর গলা।
আমি জিজ্ঞেস করলামঃ কোথায়?
সে রোগিদের বাড়ীটা দেখিয়ে বললঃ ঐ বাড়িতে।
ভাবছেন রোগি আবার কেমন নাম? না আসলেই ওর নামটা রোগি না। আমরা ওকে ঠাট্টা করে এ নামে ডাকতাম। ওর আসল নামটা হচ্ছে রোজি। সপ্তম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার সময় ওকে বলেছিলামঃ এই রোগি, ০৪ নম্বর প্রশ্নটা দিয়েছিস?
ব্যাস। মেয়েদের অভ্যাসগত কারণে যেটা হয় তাই হল। কেঁদে দিল। আমার কপাল খারাপ। গার্ডে ছিল সালাম স্যার। আর এই স্যারটা ছিল আমাদের মত ডানপিটে ছেলেদের চোখের সূল। যেকোন বিষয়েই উনি সবসময় মেয়েদের পক্ষ নিতেন। যার কারণে উনাকে সহ্য করতে পারতাম না। সালাম স্যার ওর মাথায় হাত বুলিয়ে ন্যাকাভরা কণ্ঠে ঃ কি হয়েছে গো, আমার আম্মা’টা কাঁদছে কেন?
এইবার আমি অদম কই যাই। সে কেঁদে কেঁদে যা বলল তা হচ্ছে আমি ওনাকে ভিষম খারাপ কথা বলেছি। ছাত্রীভক্ত স্যার এই সাঙ্গাতিক বিষয়টি হেডস্যারের নজরে নিল। পরীক্ষা শেষে আমার জন্য বিশাল এক বিচারের আয়োজন হল। অন্য স্যারেরা পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করায় সে আবারও কেঁদে কেঁদে কলল যা বলল তা হচ্ছে আমি ওনাকে ভিষম খারাপ কথা বলেছি। কিন্তু কি খারাপ সেটা উনি বলবেন না, তবে কথাটা ছিল ভিষম খারাপ। বিচারের সারমর্ম হচ্ছে আমার জন্য পঁচিশটা বেত্রাঘাত ধার্য্য করা হল। অভ্যাসগত কারণে সহ্য করতে পারলাম। দু-চোখ দিয়ে দুটো জলও মনে হয় গড়াল। বাড়ি ফেরার পথে অবশ্য রোজি এবং তাঁর সকল বন্ধুরাই সরি বলেছিল। বিষয়টি এতবড় হয়ে যাবে সেটা নাকি ওনারা বুঝতে পারেনি। আমারও কেন জানি ওদের কথাগুলো বিশ্বাস হয়ে গেল তাই হেসে হেসে বলেছিলাম “রোগি বলে রোগি হতে বসেছি”। আমার কথায় ঐ দিন রোজি ও তার বন্ধুরা সবাই অনেক হেসেছিল। আমি এতকিছুর পরও তার উপর রাগ দেখাতে পারলাম না। জানি না কেন এমন হল। ঐ একটু হাসির মধ্যে আমার সব রাগ শেষ হয়ে গেল। যাই হোক আমি পিচ্চিটাকে জিজ্ঞেস করলামঃ কেমনে বুঝলি যে ওইটা পেকুর গলা। আর পেকু এ বাড়িতেই আছে। ওঁ কনফিডেন্সলি বললঃ আমি বুঝেছি ওটা পেকুর গলা আর ওঁ এ বাড়িতেই আছে। তুমি চল মামা। আমরা একবার দেখে আসি।
আমি বুঝতে পেরেছি এখন ওঁর কথা না শুনলে জামেলা হবে। আমি ওঁর পিছনে পিছনে আর ও আগে আগে যাচ্ছে। ভিতরে গিয়ে দেখলাম সত্যিইতো পেকু ওঁদের বাড়ীর উঠনে চেয়ারের সাথে বাধাঁ।
পেকু আমাদের দেখেঃ ঘেউ! ঘেউ করে যা বললঃ আমি কিছু করিনি, আমি ওদের মুরগি বাচ্চাদেরও ভয় দেখাইনি। তাও আমাকে খালি খালি বেধেঁ রেখেছে। কিছু খেতেও দেয়নি। আর রোগিটা আমার পশ্চাদ দিকে দুটো লাথিও মেরেছে।
পিচ্চিটা গিয়ে ওকে আদর করতে শুরু করল। পেকু ওর সাথে কথা বলতে শুরু করল।। পিচ্চিটা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলছে আচ্ছা ঠিক আছে, ঠিক আছে। এমন ভাব যেন পেকুর সব কথা সে বুঝ ফেলেছে।
পিচ্চিটা এবার হুঙ্কার দিলঃ কে আমার পেকুকে বেঁধে রেখেছে? কে?
রোজি জানালার ওপাশ থেকেঃ এই পেকুর বাপ, আমি বেঁেধ রেখেছি। কি করবি,কর। বেশি কথা বললে তোকে আর তোর সাথে যেই পেকুর নানাটা আছে তাকেও বেঁেধ রাখব।
পিচ্চিটা এইবার তেরে উঠলঃ ঐ ছ্যাড়ি ... আমি সাথে সাথে ওঁর মুখটা চেপে ধরলাম। রোজির মা ঘর থেকে বেড়িয়ে এল। খুব ভাল মানুষ।
হেসে হেসে বললঃ দেখ তো ছেলেমেয়ের কান্ড! এটা তোমাদের বুঝি...? ঠিক আছে নিয়ে যাও। আমি ওকে বকে দিব, তুমি কিছু মনে করনা বাপু আমার মেয়েটার মাথায় ছিট আছে।
রোজির আম্মুর কথা শুনে আমরা হেসে দিলাম। আর রোজির অভিমানি কণ্ঠেঃ মা তুমি কিন্তু ওদের সামনে আমাকে অপমান করছ।
পিচ্চিটা পেকুকে কোলে নিয়ে সাইকেলের পিছনে চড়ল। আর আমি সাইকেলটা নিয়ে হেঁটে হেঁটে বাড়ির দিকে রওয়ানা হলাম। খানিক দূরে গিয়ে পিছন ফিরে একবার তাকালাম, ঠিক দুই বা তিন সেকেন্ডের জন্য। রোজি জানালা ধরে মিষ্টি করে একটা হাসি দিল। সেই হাসিতে আমি নিজেকে হাড়িয়ে ফেলেছিলাম কিছুক্ষুনের জন্য। পিচ্চিটা ধমক দিলঃ মামা চল। আবার সাইকেল নিয়ে আগে বাড়ালাম। সেই হাসি হয়তো রোজি এখন আর হাসে না। এখনও হয়তো হাসে তবে তা স্কুল পালানো শিক্ষার্থীর মায়ের ভুমিকায় ঠিক যেখানে যতটুকু দরকার। আর আমাদের সেই পিচ্চিটারও দু’বছর হল একটা পিচ্চি হয়েছে। আর পেকুর (প্রেম কুমার) শরীরের একটাও লোম এখন অবশিষ্ট নেই।
==০==
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬০৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • সবুজ আহমেদ কক্স ১২/০২/২০১৫
    sonder golpo @@@@@@@@
  • জাহিদুর রহমান ১১/০২/২০১৫
    Valo laglo
  • ১১/০২/২০১৫
    সুন্দর গল্প ।
 
Quantcast