www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

গহীন বনের মুখোশ (৪র্থ পর্ব)

নীলাভ শিখার আলোয় ঝলসে উঠছিলো নিশির মুখ। তার বুকের ভেতর ভয় আর দৃঢ়তা দুই-ই দাপাদাপি করছিলো। রুদ্র, যে এখন মুখোশের অন্ধকার শক্তিতে জর্জরিত, ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তার দিকে। নিশি পিছিয়ে গেলো না। বরং কণ্ঠ কাঁপলেও চোখে স্থিরতা-

“তুমি রুদ্র। তুমি আমার সঙ্গী। আমি জানি তুমি লড়াই করছো ভেতরে…”

অন্ধকার কণ্ঠ ভেসে এলো শীতল হাহাকার হয়ে-
“বোকা মেয়ে! যে বাহক একবার নির্বাচিত হয়, তাকে আর বাঁচানো যায় না।”

তবুও রুদ্রের চোখে ক্ষণিকের জন্য আবার ঝলসে উঠলো সেই প্রতিরোধের আলো। তার ঠোঁট কাঁপলো, ভেতর থেকে চাপা চিৎকার বের হলো—
“নিশি… পথটা… খুলো…”

নিশি আর দোটানায় রইলো না। সাহস সঞ্চয় করে সে বেদির নিচের ফাটলের দিকে ঝুঁকলো। শীতল বাতাসে চুল উড়ে যাচ্ছিলো। ভেতরে তাকাতেই দেখা গেলো-অন্ধকার গুহা নেমে গেছে অনেক গভীরে, কিন্তু দেয়ালে দেয়ালে জ্বলছে অদ্ভুত নীল প্রতীক। প্রতীকগুলো যেন রুদ্রের যন্ত্রণার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কেঁপে উঠছে।

হঠাৎই গুহার ভেতর থেকে ভেসে এলো শৃঙ্খল টানার শব্দ, আর সাথে করুণ সুরের মতো প্রার্থনা-
“মুক্ত করো… মুক্ত করো…”

নিশি চমকে উঠলো। কণ্ঠটা যেন কারো নয়, অনেকগুলো কণ্ঠ একসঙ্গে মিলেমিশে চিৎকার করছে। যেন অগণিত আত্মা বন্দি হয়ে আছে সেই অন্ধকারে।

রুদ্রের শরীর হঠাৎ কাঁপলো। মুখোশের আগুন তাকে টেনে নিয়ে গুহার দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো। নিশি তাড়াতাড়ি তার হাত ধরলো। অদৃশ্য শক্তি আবার তাকে ছুঁড়ে ফেলার চেষ্টা করলো, কিন্তু এবার সে ছাড়লো না। চোখ বন্ধ করে ফিসফিস করে বললো-
“আমি তোমার সঙ্গে আছি রুদ্র। যত অন্ধকারই হোক, আমি তোমাকে ছাড়বো না।”

সেই মুহূর্তে বেদির প্রতীকগুলো আরো তীব্র হয়ে জ্বলে উঠলো। গুহার ভেতরের প্রার্থনা মিলেমিশে পরিণত হলো এক প্রচণ্ড গর্জনে-
“সত্যকে উন্মোচন করো… নইলে বাহক গ্রাসিত হবে চিরতরে।”

রুদ্র হঠাৎ হাঁটু গেড়ে পড়ে গেলো। তার চোখে আগুন আর প্রতিরোধের ঝলক একসঙ্গে লড়াই করছিলো। নিশি কাঁপতে কাঁপতে তাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর দৃঢ় কণ্ঠে বললো-
“আমরা ওই পথেই নামবো। যদি অন্ধকার অন্তঃপুর হয়েও থাকে, ওখানেই আমাদের উত্তর আছে।”

অদৃশ্য ছায়ার হাসি প্রতিধ্বনিত হলো হলঘরে-
“তাহলে এসো… কিন্তু সাবধান, অন্তঃপুরে প্রবেশ মানেই নিজের ভয়কে বুকে আগলে নেওয়া। যে ভয়কে জয় করতে পারবে না, সেখানেই আত্মা গ্রাসিত হবে।”

নীলাভ আলোতে গুহার গভীরতা তখন আরও অন্ধকার হয়ে উঠছিলো। নিশি রুদ্রকে কাঁধে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে নামতে শুরু করলো। দু’জনের পায়ের শব্দ মিলিয়ে যাচ্ছিলো অন্তহীন আঁধারে।

আর বনভূমির বুকজুড়ে গর্জন করতে লাগলো সেই রহস্যময় ঘোষণা-
“অন্তঃপুরে স্বাগত… বাহক আর তার ছায়াকে।”

,,,,,,চলবে
🖊️ রবিউল হাসান
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৬৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৯/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • নাইস
  • ফয়জুল মহী ২৯/০৯/২০২৫
    অসাধারণ লেখা
    পড়ে ভালো লাগলো
 
Quantcast