www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

আদিবাসী -৬

গুহার ভেতর থেকে উদ্ধার করা ছবিগুলো ও দলিলগুলো ছড়িয়ে আছে পুরনো কাঠের উপরে। একেকটা ছবি, একেকটা দলিল যেন সময়ের হৃদয় বিদারক চিৎকার।

নিশি পাথরের গায়ে হেলান দিয়ে বসে বলল, — “এই কাগজগুলো শুধু প্রমাণ নয়... এরা ইতিহাসের রক্তাক্ত হৃদস্পন্দন।”

রুদ্র চুপচাপ বসে আছে। হাতে ধরা সেই ছবি—“Abhijit Sen – final day – buried alive”। চোখ দুটো তার ফাঁকা। যেন হাজার শব্দ জমে আছে, কিন্তু উচ্চারণ নেই।

তখনই ইজোমো চুপচাপ বলে উঠল, — “এই গুহার ভেতর একটা শব্দ আমার কানে লেগেছে... যেন কেউ হাঁটছে।”

সবার দৃষ্টি চমকে উঠল।

রক্তিম টর্চ জ্বালিয়ে গুহার এক পাশ ঘেঁষে এগিয়ে গেল। রিক্তা তার পেছনে। হঠাৎ তারা থেমে গেল।

একজন লোক—কালো পোশাক, মুখে কাপড় বাঁধা। হাতে ক্যামেরা।

স্টালিন ফিসফিস করে বলল, — “ওটা কি... আমাদের পিছু নিয়েছে?”

লোকটা কিছু না বলে ক্যামেরা দিয়ে তাদের দিকেই তাক করল। এক মুহূর্তের ভেতরেই সে দৌড়ে পালাতে চাইল, কিন্তু রুদ্র আর স্টালিন মিলে তাকে ধরে ফেলল।

মুখের কাপড় সরাতেই সবার চমক।

— “সাংবাদিক?”

লোকটা মাথা নোয়াল।

— “আমার নাম রাফি রায়হান।এই আমিয়াপাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন দিন ধরে স্টাডি করে আসছি।আমিয়াপাড়া ট্রাজেডির তৎকালীন সাংবাদিক ছিল আমার বাবা রায়হান আহমেদ।ঐ সময়ের অনেক কিছুই আমার কাছে সংরক্ষণ আছে। শুধু মেজর অভিজিৎ সেন হত্যার কোন কিছু আমার কাছে নেই।আমি মাঝেমাঝেই ট্যুরিস্ট হয়ে এই পাহাড়ে আসি। তোমাদের টিম দেখে আমার সন্দেহ হয়েছিল,,তোমরা ট্যুরিস্ট নও_অনুসন্ধানী।তাই চুপিচুপি অনুসরণ করছিলাম।”

রুদ্র বলল, — “তুমি যদি সত্যিই সত্যের পক্ষে থাকো, তাহলে এভাবে লুকিয়ে আসলে কেন?”

রাফি গলা নামিয়ে বলল, — “কারণ এই ডায়েরি প্রকাশ হলেই যারা ওর মৃত্যুর জন্য দায়ী, তারা আমাদের সবাইকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। আমি শুধু চাইছিলাম প্রমাণগুলো একসাথে নিয়ে ঢাকা পৌঁছাতে। পত্রিকায় ছাপাতে।”

নিশি রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলল, — “তবে তো আমাদের পথে একজন মিত্রই এলো...”

থান ম্রো এবার সামনে এগিয়ে বলল, — “এই লোককে আমি চিনি। তিনদিন আগেও এই পাহাড়ে তার ক্যাম্প ছিল। আমার বিশ্বাস, ও সত্যিই সাহসী।”

রুদ্র ধীরে মাথা নাড়ল— — “তবে এবার কাজ শুরু করতে হবে। পাহাড়ের সত্য শুধু পাহাড়ে থাকলে চলবে না।”


---

সেদিন সন্ধ্যা।

পাহাড়ি সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কাঠের ঘরে একটার পর একটা কাগজ স্ক্যান করে পাঠাচ্ছে রাফি। দেশের প্রখ্যাত মানবাধিকার সংস্থা, আন্তর্জাতিক মিডিয়া—সবাইকে।

নিশি জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বলল, — “একটা যুদ্ধ শুরু হয়েছে রুদ্র, কিন্তু সামনে আরও অনেক পথ বাকি।”

রুদ্র পিছনে এসে বলল, — “আমরা ছায়ার আড়াল থেকে আলোয় টেনে এনেছি সত্যকে। এবার শুধু সময়ের অপেক্ষা।”

নিশি বললো...."সব ঠিকঠাক আছে কিন্তু একটা হিসেব আমি মেলাতে পারছি না।"
"কোনটা বলো"
"মূর্তির কাছে অভিজিৎ সেনের আত্মার সেই ছায়া।যে আমাদের বিশ বছরের চাপা থাকা ইতিহাস স্বয়ং নিজে এসে উদ্ধার করে দিলো। আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে এটার কি ব্যাখ্যা আছে?"
রুদ্র মিষ্টি হেসে বললো-"ওটা কোন আত্মা ছিলো না।সে একজন জলজ্যান্ত মানুষ ছিল। ছদ্মবেশে প্রমাণ গুলো আমাদের হাতে পৌঁছে দেয়াই তার উদ্দেশ্য ছিলো।"
নিশি স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো রুদ্রর দিকে।আকাশ ভাঙ্গা কন্ঠ নিয়ে বললো,,,,"কি বলছো তুমি?কে সে?"
"অনুমান করো"

(চলবে...)
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৪ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৪/০৬/২০২৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ২৬/০৬/২০২৫
    সুন্দর লিখেছেন ।
  • নাইস
 
Quantcast