www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

অনাকাঙ্ক্ষিত শোকসভা

ডাকাত পড়েছে মোল্লা বাড়িতে। শিপার বিয়ে আজ। সকাল থেকেই ঝুম বৃষ্টি। কালো মেঘের মতোনই থমথমে মুখ নিয়ে সেজেগুজে বসে আছে মেয়েটা। মন ভালো নেই একদম। এই বিয়েতে তার মত নেই। পালাবে সে। কোনো পরিকল্পনা নেই এই নিয়ে। পছন্দের মানুষ সাদি হাজির হয়েছে বিয়ে বাড়িতে জানা গেছে এই খবর। শিপার সাথে যোগাযোগ করেনি এখনো ছেলেটা। তবে করবে। আর করলেই দুজন মিলে দেবে ছুট। বাবার তখন কী হবে? হার্ট অ্যাটাক নিশ্চিত!
শিপা, বসে বসে এইসব হাবিজাবি কথা ভাবলেও ডাকাতি হতে পারে এমন বিপদের কথা ভাবেনি একবারও। ভাবার কথাও না অবশ্য। ডাকাত কী বলে কয়ে আসে?

শিপা না জানলেও রীতিমতো বিয়ে বাড়িতে হট্টগোল শুরু হয়ে গেছে।ডাকাতরা বাড়িতে ডুকেই সর্দাররের আদেশ মতো নির্ধারিত পজিশন নিয়ে নিয়েছে।এ বাড়ির উপর বহুদিনের জানাশোনা তাদের।শিপার বাবার মাথায় শর্টগান ঠেকিয়ে সিগারেট ফুঁকছে ডাকাত সর্দার।ওদিকে বিয়েতে আসা অতিথিদের কাছ থেকে যা পাচ্ছে লুটে নিচ্ছে তার চ্যালারা।শিপার বাবা বড্ড ভীতু স্বভাবের মানুষ।মাঝে মাঝেই সর্দারের ছোঁড়া সিগারেটের ধোঁয়ায় তার খুকখুক করে কাঁশি উঠছে।
কালো বর্ণের আধাপাকা মোটা গোফওয়ালা সর্দার শিপার বাবার দিকে চেয়ে বললো-কি ব্যপার মিয়া,বিড়িটিড়ি খান-না নাকি?
চোখ বড় বড় করে চেয়ে থাকে শিপার বাবা।মুখে কোন শব্দ আসে না।সাদা পায়জামার ভিতর থেকে হাঁটু দুটো মৃদু কেঁপে তাদের অস্তিত্ব জানান দিতে চায়,কোন ভাবেই তাদের দমাতে পারেন না শিপার বাবা।

শিপাকে নিয়ে বিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার ক্ষীণ বাসনা নিয়ে এসেছিলো সাদি।সে জানে;সে কোন বীরপুরুষ না যে,ভরা বিয়ে বাড়ি থেকে সহজেই শিপাকে নিয়ে পালিয়ে যাবে।তারউপর তার বড় প্রতিকূলতা হচ্ছে বেকারত্ব।ঠিক এই কারণেই শিপার বাবাকে প্রস্তাব পাঠাতে পারেনি।তবুও শিপার কথাতেই বিয়ে বাড়িতে এসেছে সে।তাকে নিয়ে পালানোর বুদ্ধিও শিপা দিয়েছে কিন্তু কিভাবে পালাবে সেটা বলেনি।
এসব চিন্তাধারা যখন সাদিকে পীড়া দিচ্ছে,তখনই মুখ ঢাকা স্টেনগান হাতে এক হ্যাংলাপাতলা ছেলে তার সামনে এসে দাঁড়ায়।ড্যাবডেবে চোখে চেয়ে থাকে সাদি।
-কি আছে বাইর করেন...
-আমার কাছে তো কিছুই নেই।
-বিয়া বাইত খাইতে আইছেন আর কন কিছু নাই।উপহারের টেকা তো আনছেন,ওইটা দেন।
-সত্যি বলছি ভাই,আমার কাছে একটাকাও নেই।
-ফাইজলামি করেন।একবার টিগার চাপমু।সেকেন্ডে খুলি উইড়া যাইবো।
-আপনি আমাকে চেক করতে পারেন।
-আমগো কাছে এতো টাইম নাই।দেইখা তো ভদ্রলোক মনে অয়।কি করতে আইছেন বিয়া বাড়িতে,মিসকিন…
গড়গড় করতে থাকে ডাকাত ছেলেটা।অনিচ্ছা সত্ত্বেও সাদিকে চেক করে সে।মানিব্যাগ পেলেও তাতে টাকা ব্যাতিত ভিজিটিং কার্ডের অভাব নেই।সাথে শিপার একটি ছবি।
-এই মাইয়ারই তো আজকে বিয়া,ঠিক কইছি না?
-হুম,
-আপনের কি অয়?
-প্রেয়সী।
-পেরেয়সী আবার কী?বুঝাইয়া কন…

মোল্লা বাড়ির উঠোনের দক্ষিণ দিকের কোনায় বর বসার স্টেজ করা হয়েছে।বর শফিকুল।বিয়ে বাড়িতে আসার পর থেকে যতটা না দ্বিধায় ছিলো।ডাকাত পড়ার পর থেকে ভয়ে আরও মুচড়ে গেছে সে।
বরকে ঘিরে দুজন ডাকাত দাঁড়িয়ে ছিলো।ইতিমধ্যে তারা যা পেরেছে বর ও বরের আত্মীয়দের থেকে লুটে নিয়েছে।
বাড়ির ভেতরের মানুষদের থেকে লুট করে সর্দারের কাছে যাওয়ার পথে এক ডাকাত স্টেজে বসা বর দেখে থমকে দাঁড়ায়।
শফিকুল দেখছে তৃতীয় এক ডাকাত তারদিকে এগিয়ে আসছে।
-আপনে মুখের তে রুমালডা সরান তো…
ভীতসন্ত্রস্ত ভাবেই মুখ থেকে রুমাল সরায় শফিকুল।
রুমাল সরাতেই তৃতীয় ডাকাতের মুখ থেকে অঝোর ধারায় গালি বেরুতে থাকে।এবার বিয়ে বাড়ির সাধারণ মানুষ,ডাকাত সকলেই স্টেজে বসে থাকা বর ও গালিরত ডাকাতের দিকে অধীর আগ্রহে তাকায়।
...কুত্তার বাচ্চা,তুই আমার বইনটার জীবন শেষ কইরা এহন এই জায়গায় নতুন বিয়া করতে আইছোস...বলেই স্টেনগানের বাট দিয়ে শফিকুলের মুখে আঘাত করে সে।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবাক।বরের আত্মীয়রাও অবাক হয়ে চেয়ে থাকে।

ডাকাত সর্দার শিপার বাবাকে বন্দুকের মুখে রেখেই স্টেজের দিকে এগিয়ে যায়।মারমুখী হয়ে উঠলেও সহকর্মী দুই ডাকাত আটকায় বলে তৃতীয়জন আর শফিকুলকে আঘাত করতে পারে না।ডাকাত সর্দার ঘটনা জানতে চাইলে চ্যালা ডাকাতটি বলতে শুরু করে,ওস্তাদ ওয় চিটাগাং পোস্টিং এ থাকতে কইছে ওর বাপ-মা কেউ নাই।আমগো পরিবারের লগে ব্যাবাক খাতির জমাইছিলো।ওর চালচলনে ভালা লাগছিলো দেইখা আমার বাপ-মায় আমার ছোট্ট বইনটারে ওর লগে বিয়া দিছিলো।বিয়ার ছয় মাস পরেই ওয় কি যেনো কামে চাঁদপুর আইসা পরে।আর চিটাগাং যায় নাই...একদমে কথাগুলো বলে হাঁপাতে থাকে সে।

ডাকাত সর্দারের লাল টগবগে চোখের হুমকি আর চ্যালা ডাকাতের মারের ভয়েই কেউ কিছু না বলতেই শফিকুল তার অপরাধ স্বীকার করে।
"মরার উপর খারা গা" এর মতো আবারও হতবাক হয় শিপার বাবা।একটুর জন্য বোধহয় হার্টঅ্যাটাক হয় না তার।

শিপার নাক-কান-গলা-হাতে কোনো গহনা নেই।এমনিতেই সে নিরাশ ছিলো তারউপর আবার কিছুক্ষণ আগে এক ডাকাত ঘরে ডুকে তার সমস্ত গহনা নিয়ে গিয়েছে।তার মাথা আর কাজ করছে না।এখন যেনো সে সম্পূর্ণ কালো মেঘের ভেলায় ভাসছে।চারদিকে তার অন্ধকার।কোথাও একটু আশার বাণী নেই।

ডাকাতি শেষ।প্রায় সবই লুটে নিয়েছে তারা।কিন্তু শেষ সময়ে এসে তাদের এক সহকর্মীর বোনের জামাইকে তারা ছেড়ে যেতে পারে না।ডাকাত সর্দার শফিকুলকে নিয়ে যেতে চায়।তার বিচার হবে ডাকাতদের আস্তানায়।
এবার শিপার বাবা কাঁদোকাঁদো কন্ঠে ডাকাত সর্দারকে মিনতি করতে থাকে।বিয়েটা ভেঙে গেলে তার মেয়ের আর বিয়ে হবে না।
এমন সময় আরেক ডাকাত এক ছেলেকে হাত ধরে সর্দারের সামনে নিয়ে আসে।
-ওস্তাদ,এই পোলার বলে বউয়ের লগে পিরিত।আইজ বলে বউরে নিয়া পালাইয়া যাইতে আইছে হেয়…

এবারও সবাই হতবাক হয়ে তাকায় ডাকাত ও নতুন আগন্তুকের দিকে।আজ যেনো তাদের অবাক হওয়ার কোনো শেষ নেই।এ যেনো বিয়ে বাড়ি না,এ এক অনাকাঙ্ক্ষিত শোকসভা।
শিপার বাবা,ডাকাত সর্দার সবাই চেয়ে থাকে ছেলেটির দিকে।ছেলেটি সাদি।কিছুক্ষণ ভেবে ডাকাত সর্দার শিপার বাবার দিকে চেয়ে বলে-তাইলে আরকি মিয়া,ঘরে যাইয়া মাইয়ারে জিগান এই পোলারে বিয়া করবোনি?আমরা এই হারামজাদারে নিয়া যাই…
সম্ভাব্য সমাধানের কথা বলেই মিনিট পাঁচেকের মধ্যেই সমস্ত ডাকাতরা বিয়ে বাড়ি ত্যাগ করে।

শিপার বাবা ছলছল চোখে চেয়ে থাকে সাদির দিকে।তারপর কি যেনো ভেবে,সাদির ডান হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায় বাড়ির ভেতরে।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৫২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৭/০৯/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast