www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মা আমার সবকিছু

একটা শহর আছে সেই শহর টা অনেক সুন্দর । এখানে একটি মেয়ে থাকে তার নাম নুহা । সে তার মা বাবার সাথে থাকে । সে তার জীবনটাকে যেমন ভাবে সাজাতে চায় ঠিক সে ভাবে সাজাতে পারে না । তার মা অনেক রাগী । মেয়েকে খুব কড়া শাসনে রাখে । পড়ালেখার বাইরে একটুও যেতে দেয় না । বিনোদন হিসেবে অল্প টিভি দেখা বা গান শোনা সেটাও করতে দেয় না । মেয়েকে স্কুল ছাড়া বাহিরে কোথাও নিয়ে যায় না । সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে সে । স্কুল থেকে তার বাবা তাকে আনতে যায় । তার তেমন কোনো বন্ধু বা বান্ধবী নেই, চুপচাপ থাকে সে, তার ক্লাসমেটরা তার সাথে কথা বলে না, বান্ধবীরা কেমন অদ্ভুত কথা বলে ব্যবহার করে, তার সেটা ভালো লাগে না । সারাক্ষণ আনমনা হয়ে থাকে সে । সে ভাবে, এভাবে আমি বাঁচতে পারব না, আমাকে নিজে কিছু করতে হবে । শুধু মাত্র বাবা আমাকে ভালবাসে কিন্তু সারাদিন বাসায় থাকে না । সকালে যায় , রাতে আসতে দেরি হয় । আমি সবার কাছে হেয়, সবার কাছে অবহেলিত, কেউ আমাকে ভালোবাসে না । বাবা মাকে ভয় পায় তাই মা বাসায় না থাকলে বা রাতে ঘুমিয়ে গেলে বাবা আমার রুমে আসে । আমাকে খাইয়ে দেয়, আদর করে, যা চাই তাই দেয় কিন্তু এভাবে থাকা সম্ভব নয়, যদিও আমি অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি । সামনে আমি জেএসসি পরীক্ষা দিব, তবুও আমি এভাবে বেঁচে থেকে কি করবো ? কার জন্য বাঁচব ? বাবা ছাড়া কেউ আমায় ভালবাসে না, সাহায্য করে না । কিন্তু বাবা তো সারা জীবন থাকবে না । আমি জানি মানুষ মরণশীল । তাই আমি আত্মহত্যা করব । অনেকগুলো ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পরে । পরদিন সকালে , তার মা ঘুমিয়ে আছে, বাবা এসে ডাকছে নুহা মা ঘুম থেকে উঠে পর স্কুলের দেরি হয়ে যাচ্ছে ওঠ মা এভাবে অনেকবার ডাকার পর যখন ডাকে সাড়া দিচ্ছে না তখন বাবার মন কেঁদে উঠে । পার্লস চেক করে দেখে মেয়ে মারা গেছে , সাইডে পড়ে থাকা বেশ কয়েকটা ট্যাবলেট এর পাতা চোখে পড়ে তার বাবার । মেয়ে মারা গেছে বুঝতে পেরে নিজেকে সামলাতে পারে না । কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে । কান্নার আওয়াজে মায়ের ঘুম ভেঙে যায় কিন্তু মা যতই কঠোর হোক না কেন সন্তানের ভালো ভেবেই করে । নুহার মায়ের মন কেঁদে ওঠে । মনে হতে থাকে আমার কি হলো ? আমার কি হারিয়ে গেল ? কেন এত কষ্ট হচ্ছে নুহার কিছু হলো নাকি ? এইভাবে মা নুহার ঘরের সামনে যেতেই দেখে মেয়ের অবস্থা খারাপ । মা ভেঙে পড়ে । ভাবে আমি কঠোর ছিলাম কিন্তু মেয়েকে এক বিন্দু ভালোবাসা দিতে পারিনি । আমার ভুলের জন্য আজ আমার মেয়েকে হারালাম । মেয়ের কাছে গিয়ে মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে । বলে মা তুই বুঝিয়ে বলে দেখতিস , আমি তোকে ভালবাসতে পারি কিনা । তাই বলে এভাবে কেন চলে গেলি ? তুই যে আমার কাছে কি ছিলি তা আমি তোকে বোঝাতে পারবো না । আমার অনেক বড় ভুল হয়েছে তোর ভালো ভাবতে গিয়ে যে তোকে এভাবে হারাতে হবে বুঝতে পারিনি কখনো । নুহার মা কাঁদতে থাকে । হঠাৎ করে তার ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসে । ভাবে এ আমি কি স্বপ্ন দেখলাম ? কেন দেখলাম ? নুহা ঠিক আছে তো ? ওর সাথে আমার এত কঠোর ব্যবহার করা ঠিক হচ্ছে না । ও এখন কি করছে ? দৌড়ে নুহার রুমে যায় । দেখে ঘুমের ঔষধের কৌটা ধরে ঔষধ মুখে ঢালতে যাবে তখন দৌড়ে গিয়ে কেড়ে নিয়ে বলে, মা তুই এটা কি করছিস ? এ ধরনের কাজ কখনো করবি না । নুহা মা বলে কেঁদে ওঠে । নুহার মা মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে বলে তুই তৈরি হয়ে নে তোকে নিয়ে ঘুরতে যাব। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি । ঘরে এসে স্বামীকে বলে তুমি তৈরী হয়ে নাও তিনজন মিলে ঘুরতে যাই । নুহার বাবা বল , আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ? তুমি কি সত্যি মেয়ের কথা ভাবো ? মেয়েকে এত মারো, বকাবকি কর, কড়া শাসনে রাখ । হঠাৎ তোমার কি হলো ? নুহার মা বলছে দেখো নুহার ভালো ভেবেই তো করতাম কিন্তু আমার এত বড় ভুলের জন্য যে নুহাকে হারাতাম । তা আমি মানতে পারব না । সহ্য করতে পারব না । নুহা তো আমাদের মেয়ে তাই না বল, আর ওর প্রতি কিছু দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে আমাদের । চল না তিনজন মিলে ঘুরে আসি কোন এক জায়গা থেকে । নুহার বাবা মুচকি হেসে বলল আচ্ছা । নুহার মা তৈরি হয়ে গেছে । নুহা ও তৈরি হয়ে গেছে । নুহা মায়ের কাছে এসে বললো মা আমার চুলটা বেধে দাও, খুব আবদারের সুরে সে কথাটা বলল । নুহার মা বলল ঠিক আছে আয় তোর চুল সুন্দর করে বেঁধে দিচ্ছি । চুল বাধা হয়ে গেল । তিনজন মিলে ঘুরতে গেল , অনেক মজা করলো , বাসায় এসে বিশ্রাম নিল । পরদিন মা বলছে আজ থেকে আমি নিজে তোকে পড়াবো । নুহার মা নুহাকে পড়ায় , মাঝেমধ্যে অসুস্থ থাকলে খাইয়ে দেয় । এসবে নুহা অনেক খুশি । জেএসসি পরীক্ষা শুরু হলো । পরীক্ষা শেষে তিনজনে অনেক জায়গা ঘুরলো ।নুহার মা নুহাকে ট্যাব কিনে দেয় । তাতে সে গেম খেলে , ছবি তুলে , গান শুনে । জেএসসি পরীক্ষা রেজাল্ট দেখে খুব খুশি হয় সে কারণ সে GPA 5 পেয়েছে । তার মা-বাবাও অনেক খুশি । নুহা তার মাকে বলে মা তুমি আমার Best Friend in the world
এবং সবকিছু , তুমি খুব ভালো । তোমাকে ছাড়া আমি এক মুহূর্ত থাকতে পারবো না । মা মেয়েকে অনেক আদর করে । তিনজন অনেক আনন্দে খুশিতে থাকে এবং তাদের দিনগুলো খুব ভালোভাবে কাটতে থাকে ।

[যারা আমার এই গল্পটি পড়বেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ রয়েছে-
কিশোর-কিশোরীদের কাছে আগে বলি তোমরা কখনও মা-বাবাদের শাসনকে ভয় পেয়ে কখনো খারাপ দিকে যেও না বা কখন আত্মহত্যার কথা ভেবো না কারণ তারা তোমাদের ভালো ভেবেই শাসন করে । তোমরা তাদের বুঝিয়ে বলবে , তাদের ভুলটা ধরিয়ে দিবে । তাহলে তারা ঠিকটা বুঝতে পারবেন । আর যারা কিনা মা-বাবা তাদের কাছে অনুরোধ আপনারা প্লিজ কঠোর শাসন করবেন না অতিরিক্ত কঠোর শাসনে করলে ছেলে-মেয়ে খারাপ পথে চলে যায় । অনেক ছেলে-মেয়ে তো আত্মহত্যার কথা চিন্তা করে অনেক ছেলে-মেয়ে আত্মহত্যা করে ফেলে । তাই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ বেশি কড়া শাসন করবেন না আবার অতিরিক্ত আদর করলেও বাঁদর হয়ে যায় , তাই বেশি অতিরিক্ত আদরও করবে করবেন না ।]




The End
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৩১৭ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/১২/২০২০

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast