www.tarunyo.com

ডায়েরি- মুন্সীগঞ্জ

ডায়েরি লেখার ইচ্ছে আমার থাকলেও কোনদিনও কেতাবি ঢঙে আমি তা লিখতে পারিনি। মনে মনে অনেক কথা বা ঘটনা সংরক্ষণ করেছি আবার ভুলেও গেছে বা যাচ্ছি ক্রমাগত। সবচেয়ে বড় বিষয় হল, লিখতে গেলে আমার হাত এবং আঙুল দুটোই ব্যাথা করে। ভাবনাগুলো যেভাবে সাজিয়ে নিয়ে লিখতে বসি তা দলছুট হয়ে অন্য মাত্রায় চলে যায়। লেখার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা খুব একটা সহজ কাজ নয় আমার কাছে। সে যাই হোক, আমার কর্ম জীবনের একটা চমৎকার সময় কাটে মুন্সীগঞ্জে। ওখানে যাদের বাড়ি তারা জানেন মোক্তারপুর ব্রিজ হবার আগে ধলেশ্বরী নদী পার হতে হলে ফেরি অথবা ইঞ্জিনবোটে পার হতে হতো। যদিও আমি থাকতে থাকতেই ব্রিজটি চলাচলের জন্যে খুলে যায়। মনে পড়ে সেই সকালে, আনুমানিক ৬টা সাড়ে ৬টা নাগাদ বের হতাম বাসা থেকে। মতিঝিল থেকে ডি.টি.এল (ঢাকা ট্রান্সপোর্ট লাইন) নামের একটা বাস ছেড়ে যেতো সরাসরি মোক্তারপুর ঘাটের দিকে। এখন আর নেই এই বাস সার্ভিসটা। তাছাড়া মুন্সীগঞ্জ যাবার পথে সৈয়দপুর নামে একটা জায়গায় একটা স্টিলের ব্রিজ ছিলো, মাসে ২/১ বার ভেঙে যেতো এদিকে সেদিকে। তখন নারায়ণগঞ্জ হয়ে শীতলক্ষ্যা দিয়ে লঞ্চে মুন্সীগঞ্জ যেতাম। এই যাওয়াটাও খুব ভালো লাগতো। ঘাটে নেমেই আগে আলুভর্তা আর ডাল দিয়ে ভাত খেয়ে নিতাম। এরপর ২টাকা দিয়ে পার হতাম নদী। ধলেশ্বরী আর শীতলক্ষ্যার সেই মাঝ গাঙের বাতাসটা এখনও গায়ে লেগে আছে। এপারে এসে একটা রিক্সা নিতাম। সেই রিক্সা নামিয়ে দিতো ছবিঘরের সামনে। ঐতিহ্যবাহী একটা প্রেক্ষাগৃহ এই ছবিঘর। আর আমার অফিসটা ছিলো ইতিহাসের আরেক কীর্তি ইদ্রাকপুর কেল্লা’র খুব কাছে। কি দারুণ ছিলো সে দিনগুলো। সন্ধ্যার পর লঞ্চ ঘাটে নোঙর করে রাখা লঞ্চের ছাদে শুয়ে আড্ডা মারতাম সুপ্রিয় মাসুদ ভাই, অপু, আসিফ, গালীব, দ্বীপ, মিজান ভাই আরও অনেকের সাথে। ঘাটের সেই ঝাল আর লাল ঝোলের স্বাদ আজও ভুলিনি। উফ, কি বলবো! লেখা আসছে না। গুছিয়ে প্রকাশ করতে পারছি না অনুভূতিটা। মুন্সীগঞ্জে থাকাকালীন সময়ই আমি প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখতাম গ্রামীণফোনের এটা ডায়েরিতে। যেটা হারিয়ে ফেলেছিলাম। গত ২/৩ দিন আগে সেটা পেয়েছি। পড়তে গিয়ে ভয়াবহ নস্টালজিক হয়ে গেলাম, ভয়াবহ। সেই সময়াকার দিনগুলোর বেশ কিছু দুপুর আর বিকেলের ছবি আমাকে মুহূর্তে নিয়ে গেলো থানা রোডের সেই চৌধুরী মার্কেটে। ডায়েরির পাতা থেকে হুবুহু লিখে ফেলা আমার খুব আপন অতীতের সেইসব কথা এইখানে তুলে দেবো (একটুও না বদলে) কাল থেকে। আমার কবিতা আকুতির বহু আবেদন নানাভাবে নিজেই নিজের কাছে প্রার্থনার মতো করে লিখেছিলাম সেখানটায়। যে কথা পড়ে আমার চোখ ভিজেছে বহুবার, বহুকাল পর। শেষ কবে কেঁদেছিলাম জানি না। সেই কান্না কিসের ছিলো তাও ভুলে গেছি। আনন্দ আর কষ্ট ছাড়াও মানুষ কাঁদে। যে কান্না শিরোনামহীন।
বিষয়শ্রেণী: প্রবন্ধ
ব্লগটি ৮৭৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১১/০৪/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

 
Quantcast