www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

নিরীহ ( উপন্যাস)


আকাশে চাঁদ উঠেছে। সেজান এক দৃষ্টিতে অবলোকন করছে। কতবার এভাবে লেখক তার লেখা শুরু করেছে। কিন্তু সমাপ্তি করতে পারে নাই। লেখকের দুঃখ, তার প্রতিভার কেউ স্বীকৃতি দেয় না। কেউ তার লেখা পড়ে না। তাও সে লেখে যায়। অর্থাৎ, তার আর কিছু করার না থাকলে সে করবেটা কি? জীবিকা নির্বাহ করার ক্ষমতা তার নেই। তাও, যদি লেখালেখি করে কিছু খেতে পারে।অর্থাৎ, এই লেখক পেটুক। লেখক তার লেখা লেখে যায়।
চাঁদের মধ্যে কাউকে খুঁজছে। তার বন্ধু মোবারক তাকে চাঁদের মধ্যে কাউকে খুঁজতে বলেছে। কোন এক নারীকে । যে তার জন্য তার বিধাতা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু সেজান শুধু চাঁদ দেখে একটি দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে।
এইটুকু লেখে লেখক থামে। কারণ, দীর্ঘনিশ্বাস সেও ফেলে। এখন কি নিজের জীবনের কোন কাহিনী লেখবে ! নাকি কল্পনার এই নায়ককে এক নতুন কাহিনীর মাধ্যমে ওই দীর্ঘনিশ্বাসের কারণ প্রকাশ করবে।
এই চাঁদ আস্তে আস্তে ক্ষয়ে যাবে।যেমন তার প্রিয়া ক্ষয়ে যাচ্ছে।
প্রিয়ার একটি নাম দিতে হবে। নায়কের নাম সেজান। নায়িকার নাম কি হবে? নূরজাহান। থাক নিশাত রাখা যাক। লেখকের ইচ্ছা সেজান-নিশাত অমর জুটি হয়ে যাক।যেমন, লইলি-মজ্জনু বা জুলিয়ট-রোমিও।
নিশাত-নামটি ধ্বনিত হলে যন্ত্রণার ঘন্টা জোরে জোরে বাজতে থাকে আমিনের হৃদয়ের প্রতি কোনায়। সে যে কোথায়, তা সেজান জানে না। তবে, তার প্রতিচ্ছবি আজও তার চোখের মধ্যে প্রতিসরণ হয়ে রয়েছে। মরীচিকার মতো স্বপ্নে তাকে খুঁজে।
ভাষা কি কঠিন হয়ে যাচ্ছে? লেখক চিন্তায় পড়ে যায়। লেখক চিন্তা করে, এখন আরো কিছু চরিত্র প্রবেশ করতে হবে। সাথে কিছু সংলাপ জুড়ে দিতে হবে।
মোবাইলটা বেজে উঠল।
-হাই।
-কি রে ,কি করছিস?
-আকাশ দেখছি। আকাশের টিপ ওই চাঁদকে দেখছি।
-চাঁদের মধ্যে কাকে দেখছিস?
-কাউকে না।
লেখক আবার থেমে গেল।সংলাপগুলো হালকা হয়ে যাচ্ছে। আরেকটুক ভারি করতে হবে।
- এই তুই কার সাথে কথা বলছিস?
- নাইমের সাথে।
- কি দিয়ে?
- মোবাইল দিয়ে।
-তোর কাছে তো মোবাইল নেই!
সত্যি আমিনের কাছে মোবাইল নাই। সে চাঁদ দেখছি না। তার হাত পা বাঁধা।তার রুমে কেউ নাই। সে পাগলের হসপিটালে।
লেখক এই লেখে তার লেখা শেষ করল। হঠাৎ শুরু হঠাৎ শেষ। ছোট এই কাহিনীতে রয়ে হাজার প্রশ্ন। কি দিবে এর উত্তর?

লেখকের তার প্রথম লেখাটা ভালই লাগল। যদিও খুব ছোট হয়ে গেছে। লেখক চিন্তা করছে, দ্বিতীয় লেখাটি কি লিখবে? যেকোনো লেখকের কলমে প্রচুর শক্তি। এক কলমের ঘষাতে সে একটি মৃত্যু ঘটাতে পারে,আবার আরেক ঘষাতে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারে ।এবার শুরু করবে মোবারককে দিয়ে।
মোবারক খবর শুনে খুব খুশি হয়েছে তা নয়। তবে এমন যে ঘটবে,তা সে আগেই জানতো। ছেলেটি কম পাগলামি করেনি! তবে ওর কি দোষ? ও কি বুঝেছিল, ও কি করছে? তবে যদি বুঝে থাকেও, ওর কিছু করার ছিল না। সে এমন একটি বেড়াজালে আটকা পড়েছে , যা থেকে সে সারাজীবন বের হতে পড়বে না। ওর আত্মীয়-স্বজন আর তথাকথিত বন্ধুরাই ওকে আগলে রেখেছিল। কিন্তু সবকিছুর একটা সীমা রয়েছে। ওর জীবনে যা হয়ে গেল তা লিখলে একটি উপন্যাস হয়ে যাবে।
লেখক তার কলমকে ক্ষান্ত দেয়। সব প্রকাশ হয়ে যাচ্ছে। কাহিনীটি প্রকাশ হয়ে গেলে অনেক কিছু পরিবর্তন হয়ে যাবে। লেখক ভয় পাচ্ছে। সে এক অন্ধকার জগতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। যা কোনদিন জগতের আলোয় আসবে না।
মোবারক গ্রামের ছেলে। তবে তার এই ছাব্বিশ বছরের জীবনের বেশির ভাগ সময় কেটেছে ঢাকায়। সে যেভাবে জীবনকে চিনেছে, তার বন্ধু সেজান সেভাবে চিনেনি। যার জন্য তাকে আজ পাগলের হসপিটালে যেতে হয়েছে।
আবার এসে গেল আমিনের কথা । লেখক এই সেজানকে নিয়ে লেগে গেছে উপন্যাস লেখার জন্য। এখন একটু পিছনে যাওয়া ভাল।
আমিনের সাথে মোবারকের সম্পর্ক প্রায় একদশক হতে চলল। ক্লাস নাইনে তাদের পরিচয়। একসাথে এস এস সি দিয়েছে। একসাথে এইচ এস সি দিয়েছে। তবে মোবারক পাস করে ঢাকা ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে আর সেজান ফেল করতে লাগল সেই এইচ এস সি তে । সবসময় হীনম্মন্যতায় ভুগত ছেলেটি। আর একদিন শুনল একটি ঘটনা ঘটে গেছে।
লেখক আবার থেমে গেল। এখনই কি প্রকাশ করবে ঘটনাটি? পাঠক কিভাবে দেখবে ঘটনাটি? এটি প্রকাশ পেলে হাজার প্রশ্ন উঠবে। লেখক ক্ষান্ত হয়। চিন্তা করে লেখক, “ কাহিনী একটু ঘুরিয়ে দেই, যাতে এখনই হাজার প্রশ্ন না উঠে।”
মোবারক ভাবে আগের কথা চিন্তা করে আর ভাল লাগে না। একজনের জন্য এতো মানুষের জীবন তচনচ হয়ে গেল। সে বুঝেও ,না বুঝার ভান করে।
এইটুকু লেখে কাহিনী আবার শেষ করে লেখক। যাক দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ শেষ হল। কমপক্ষে এরকম পঞ্চাশ অনুচ্ছেদ হলে সম্পাদক গিলবে। তাও ছাপায় কি না কি জানে?
সম্পাদকের জীবনের কি মায়া নেই?

দজ্জালের আবির্ভাব হয়েছে। সে যেদিকে তাকায়, সেদিকে ধ্বংস হয়ে যায়। ইমামি লোক তার বিরুদ্ধে জিহাদ করছে, তাঁরা বেহেশতবাসী হচ্ছে আর যারা সেজদা দিচ্ছে তারা জাহান্নামি হচ্ছে।
লেখক ভাবছে,“কি সব লিখছি।আমি তো কোন ইসলামিক লেখক নই।কিন্তু কি করব, আমার কাহিনীর চরিত্র সেজান ইসলামিক মানসিকতা সম্পন্ন ছেলে। ছেলে কোথায় যুবক!”
কোথায় ইমাম মেহেদি(আঃ)? কোথায় হজরত ঈশা(রাঃ)? আমাকে এসব দজ্জাল থেকে কে রক্ষা করবে? আল্লাহ আল্লাহ একমাত্র আল্লাহ।
লেখক আবার থেমে গেল। বর্ণনাটি কি ঠিক হচ্ছে? সেজানকে বেশি ধার্মিক বানালে চলবে না।
এই আহাকার নিয়ে সেজান চোখ খুললো। সে কোথায় তা বুঝার চেষ্টা করল। একটি বেডে শুয়ে আছে। এই বেডে কাল রাত থেকে শুয়ে আছে। বেডের পিছনে জানালা। একটি বাজার দেখা যাচ্ছে। বাজরে কিছু লোক আসছে।পিছনের দেওয়ালের ঘড়িতে এখন সকাল ৬।৩০ বাজে । আমিনের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছে। সবকিছু দুঃস্বপ্নের মতো লাগছে। আগেরদিনও সে বাসয় ছিল।
বলবে কি কাহিনীটা ? নাকি রহস্য রাখবে? লেখক চিন্তায় পড়ে গেল।
এখন সে কোন হসপিটালের বেডে। সে আশা করেনি তার মা কিংবা বাবা এখানে পাঠাবে। তবে একদিক দিয়ে হালকা লাগছে, আর কোন বোঝা নাই। কিসের বোঝা ছিল? কেন সেই বোঝা বহন করতে হয়েছিল? কে উত্তর দিবে, এসব প্রশ্নের?
লেখক কেমন যেন কৃপণ! সে গল্পের ভাণ্ডার নিয়ে বসে আছে, কিন্তু পাঠকের কাছে প্রকাশ করছে না। এভাবে কি লেখা হয়?
ঘটনা এক
নভেম্বর মাসের ঘটনা।ঢাকার কোন কলেজ। সেজান চতুর্থবার এইচ এস সি পরীক্ষা দিবে। কলেজে খোঁজ নিতে এসেছে। ওখানকার ছাত্র সংগঠন নেতারা তাদের নেত্রীর সাথে দেখা করতে যাবে।লোকবল বাড়াতে সাধারণ ছাত্রদের উপর চাপ দিচ্ছে। সব ছাত্ররা পালিয়ে রয়েছে। সেজান সাইকেল নিয়ে কলেজে এসেছিল এবং কাজ শেষ করে নির্ভয়ে বেরিয়ে গেল।
ঘটনা দুই
সেজান নামাজ বেশি বেশি পড়ছে। কিন্তু, ঠিক মতো পড়তে পারছে না। সে শুধু দুটি সুরা মনে থাকে। আর কোন সুরা মনে থাকে না।
ঘটনা তিন
বাসায় কেউ নেই, একমাত্র সেজান ছাড়া। সে পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। যা পড়ছে তা বুঝতে পারছে না। কিছু মুখস্ত হচ্ছে না । আমিনের লাইফস্টাইল কেমন চেঞ্জড হয়ে গেছে। জিনস পড়ে, বুক ফুলিয়ে হাটে। কেমন জানি চারিত্রিক পরিবর্তন হয়েছে।
ঘটনা চার
সেজান দুতলা থাকে। নিচে কিছু ছেলেরা আড্ডা মারে। হঠাৎ একদিন সেজান বুঝতে পারে আড্ডার বিষয় সে নিজে। একসময় সে শুনে তার চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে।সে প্রচণ্ড রেগে যায়।
ঘটনা পাঁচ
কিছুদিন ধরে সেজান লক্ষ্য করে, কিছু লোক ওকে ফলো করছে। বাসর সামনে ক্যান পেতে রাখছে। যেখানে যায় সেখানে তাকে উদ্দেশ্য করে কথা বলছে। সেজান কেয়ার করে না।
ঘটনা ছয়
২৫সে মার্চ রাতে সেজান প্রচণ্ড ভয় পায়। তার মনে হয় , তার পরিবারের উপর হামলা হওয়ার আশংকা রয়েছে। সে দুটি ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে ব্যায়াম করে। রাতে তার ঘুম আসে না। তার পাশের বিল্ডিং এ একটি রুমে কিছু সন্দেহজনক ঘটনা ঘটছে। রাস্তায় একটি সাদা মাইক্রোবাস কিছুক্ষন পরপর আসছে আর ওই রুমের আলো জ্বালিয়ে নিভিয়ে সংকেত দিচ্ছে। আমিনের সন্দেহ হয়। হঠাৎ মনে হয় তার পিছনে লোক লেগেছে। কেন লেগেছে সে তা বুঝতে পারে না। সেজান তার আব্বাকে ডেকে বলে। ওর আববা বলে এসব ফালতু কথা। সেজান সকাল পর্যন্ত ভয়ে ভয়ে জেগে থাকে।
ঘটনা সাত
সকালে উঠে সেজান চিৎকার করতে থাকে। তার মনে হয় ইকবালের লোকরা তার পিছনে লেগেছে। সকাল ১০টার দিকে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠে , হুন্ডার পর হুণ্ডা আসছে। সেজান আর আমিনের আম্মা সাড়ে দশটায় ঘর তালা দিয়ে বের হয়। সেজান বুক ফুলিয়ে হাটতে থাকে। আশেপাশে বেশ কিছু গুন্ডা টাইপের লোক হাটছিল। রিকশাআলাদের মারছিল। সেজান একটি রিকসা করে তার আম্মাকে নিয়ে মামাদের বাসার দিকে রওনা হয়। ওর আম্মা ওকে ইয়া রহমানু পড়তে বলে।
- এরপর হলো, রনির এলাকা। এখানে আমরা নিরাপদ।
এইটুকু লেখে লেখক ক্ষান্ত দেয়। এরপরের ঘটনা সব আবছা ঘটনা। কিছুটা কল্পনা, কিছুটা বাস্তব। বাস্তব হচ্ছে কঠিন বাস্তব আর কল্পনা হচ্ছে করুন বাস্তব।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৭৬ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০৭/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast