www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

রমজান মাসের ৩০ আমল (সংক্ষিপ্ত)

এ মাসে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল রয়েছে, যেগুলো পালন করার মাধ্যমে আমরা জান্নাতে যেতে পারি, জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে পারি। নিম্নে রমাদান মাসের আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হলো। তবে এ আমলগুলো করার জন্য শর্ত হলো:
এক. ইখলাস অর্থাৎ ‘‘একনিষ্ঠতার সাথে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যে আমল করা। সুতরাং যে আমল হবে টাকা উপার্জনের জন্য, নেতৃত্ব অর্জনের জন্য ও সুনাম-খ্যাতি অর্জনের জন্যে সে আমলে ইখলাস থাকবে না অর্থাৎ এসব ইবাদাত বা নেক আমলের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে না বরং তা ছোট শির্কে রূপান্তরিত হতে পারে।
দুই. ইবাদাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ। সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে সকল ইবাদাতের কথা উল্লেখ আছে সেগুলো পরিপূর্ণ অনুসরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো বাড়ানো বা কমানোর সুযোগ নেই। কারণ, ইবাদাত হচ্ছে তাই যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিখিয়ে দিয়েছেন।

রমাদান মাসের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো হলো-
[১] সিয়াম পালন করাঃ
ইসলামের পাঁচটি রুকনের একটি রুকন হল সিয়াম। আর রমাদান মাসে সিয়াম পালন করা ফরজ। সেজন্য রমাদান মাসের প্রধান আমল হলো সুন্নাহ মোতাবেক সিয়াম পালন করা।
[২] সময় মত সালাত আদায় করা
সিয়াম পালনের সাথে সাথে সময় মত নামায আদায় করার মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার পথ সুগম হয়।
[৩] সহীহভাবে কুরআন শেখা
রমাদান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। এ মাসের অন্যতম আমল হলো সহীহভাবে কুরআন শেখা। আর কুরআন শিক্ষা করা ফরয করা হয়েছে।
[৪] অপরকে কুরআন পড়া শেখানো
রমাদান মাস অপরকে কুরআন শেখানোর উত্তম সময়। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে সাহাবীদেরকে কুরআন শিক্ষা দিতেন।
[৫] সাহরী খাওয়া
সাহরী খাওয়ার মধ্যে বরকত রয়েছে এবং সিয়াম পালনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
[৬] সালাতুত তারাবীহ পড়া
সালাতুত তারাবীহ পড়া এ মাসের অন্যতম আমল। তারাবীহ পড়ার সময় তার হক আদায় করতে হবে।
[৭] বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা
এটি কুরআনের মাস। তাই এ মাসে অন্যতম কাজ হলো বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত করা।
[৮] শুকরিয়া আদায় করা
রমাদান মাস পাওয়া এক বিরাট সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য আল্লাহ তা‘আলার বেশি বেশি শুকরিয়া আদায় করা এবং আগামী রমাদান পাওয়ার জন্য তাওফীক কামনা করা।
[৯] কল্যাণকর কাজ বেশি বেশি করা
এ মাসটিতে একটি ভাল কাজ অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেশি উত্তম। সেজন্য যথাসম্ভব বেশি বেশি ভাল কাজ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
[১০] সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়া
রমাদান মাস ছাড়াও সালাতুত তাহাজ্জুদ পড়ার মধ্যে বিরাট সাওয়াব এবং মর্যাদা রয়েছে। রমাদানের কারণে আরো বেশি ফজিলত রয়েছে। যেহেতু সাহরী খাওয়ার জন্য উঠতে হয় সেজন্য রমাদান মাসে সালাতুত তাহাজ্জুদ আদায় করার বিশেষ সুযোগও রয়েছে।
[১১] বেশি বেশি দান-সদাকাহ করা
এ মাসে বেশি বেশি দান-সাদাকাহ করার জন্য চেষ্টা করতে হবে। ইয়াতীম, বিধবা ও গরীব মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া ও বেশি বেশি দান খয়রাত করা। হিসাব করে এ মাসে যাকাত দেয়া উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ মাসে বেশি বেশি দান খয়রাত করতেন।
[১২] উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা
রমাদান মাস নিজকে গঠনের মাস। এ মাসে এমন প্রশিক্ষণ নিতে হবে যার মাধ্যমে বাকি মাসগুলো এভাবেই পরিচালিত হয়। কাজেই এ সময় আমাদেরকে সুন্দর চরিত্র গঠনের অনুশীলন করতে হবে।
[১৩] ই‘তিকাফ করা
ই‘তিকাফ অর্থ অবস্থান করা। অর্থাৎ মানুষদের থেকে পৃথক হয়ে সালাত, সিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, দোয়া, ইসতিগফার ও অন্যান্য ইবাদাতের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সান্নিধ্যে একাকী কিছু সময় যাপন করা। এ ইবাদাতের এত মর্যাদা যে, প্রত্যেক রমাদানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমাদানের শেষ দশ দিন নিজে এবং তাঁর সাহাবীগণ ই‘তিকাফ করতেন।
[১৪] দাওয়াতে দ্বীনের কাজ করা
রমাদান মাস হচ্ছে দ্বীনের দাওয়াতের সর্বোত্তম মাস। আর মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকাও উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কুরআন ও হাদীসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কুরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা।
[১৫] সামর্থ্য থাকলে উমরা পালন করা
এ মাসে একটি উমরা করলে একটি হাজ্জ আদায়ের সমান সাওয়াব হয়। আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে এসেছে,
[১৬] লাইলাতুল কদর তালাশ করা
রমাদান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম।
[১৭] বেশি বেশি দো‘আ ও কান্নাকাটি করা
দো‘আ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। এজন্য এ মাসে বেশি বেশি দো‘আ করা ও আল্লাহর নিকট বেশি বেশি কান্নাকাটি করা।
[১৮] ইফতার করা
সময় হওয়ার সাথে সাথে ইফতার করা বিরাট ফজিলাতপূর্ণ আমল। কোন বিলম্ব না করা ।
[১৯] ইফতার করানো
অপরকে ইফতার করানো একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ। প্রতিদিন কমপক্ষে একজনকে ইফতার করানোর চেষ্টা করা দরকার।
[২০] তাওবাহ ও ইস্তেগফার করা
তাওবাহ শব্দের আভিধানিক অর্থ ফিরে আসা, গুনাহের কাজ আর না করার সিদ্ধান্ত নেয়া। এ মাস তাওবাহ করার উত্তম সময়। আর তাওবাহ করলে আল্লাহ খুশী হন।
[২১] তাকওয়া অর্জন করা
তাকওয়া এমন একটি গুণ, যা বান্দাহকে আল্লাহর ভয়ে যাবতীয় পাপকাজ থেকে বিরত রাখে এবং তাঁর আদেশ মানতে বাধ্য করে। আর রমাদান মাস তাকওয়া নামক গুণটি অর্জন করার এক বিশেষ মৌসুম।
[২২] ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা
ফজরের পর সূর্যোদয় পর্যন্ত মাসজিদে অবস্থান করা। এটি একটি বিরাট সাওয়াবের কাজ।
[২৩] ফিতরাহ দেয়া
এ মাসে সিয়ামের ত্রুটি-বিচ্যুতি পূরণার্থে ফিতরাহ দেয়া আবশ্যক। ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
[২৪] অপরকে খাদ্য খাওয়ানো
রমাদান মাসে লোকদের খাওয়ানো, বিশেষ করে সিয়াম পালনকারী গরীব, অসহায়কে খাদ্য খাওয়ানো বিরাট সাওয়াবের কাজ ।
[২৫] আত্মীয়তার সম্পর্ক উন্নীত করা
আত্মীয়তার সম্পর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর তা রক্ষা করাও একটি ইবাদাত।
[২৬] কুরআন মুখস্থ বা হিফয করা
কুরআন হিফয করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা আল্লাহ তা‘আলা নিজেই কুরআন হিফযের দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি এ দায়িত্ব মূলত বান্দাদেরকে কুরআন হিফয করানোর মাধ্যমেই সম্পাদন করেন। যে যত বেশি অংশ হিফয করতে পারবে তা তার জন্য ততই উত্তম।
[২৭] আল্লাহর যিকর করা
এ মাসে বেশি বেশি আল্লাহকে স্মরণ করা ও তাসবীহ পাঠ করা। সময় পেলেই
سبحان الله ، الحمدلله ، لا إله إلا الله ، الله أكبر পড়া।
[২৮] মিসওয়াক করা
মেসওয়াকের প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন।
[২৯] একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো
রমাদান মাসে একজন অপরজনকে কুরআন শুনানো একটি উত্তম আমল। এটিকে দাওর বলা হয়।
[৩০] কুরআন বুঝা ও আমল করা
কুরআনের এ মাসে কুরআন বুঝা ও আমল করা গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত। কুরআন অনুযায়ী নিজের জীবনকে গড়ে তোলা।
যা করণীয় নয়
রমাদান মাসের ফজিলত হাসিল করার জন্য এমন কিছু কাজ রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা দরকার,
সেগুলো নিম্নে উপস্থাপন করা হলো :

১. বিলম্বে ইফতার করা,
২. সাহরী না খাওয়া,
৩. শেষের দশ দিন কেনা কাটায় ব্যস্ত থাকা,
৪. মিথ্যা বলা ও অন্যান্য পাপ কাজ করা,
৫. অপচয় ও অপব্যয় করা,
৬. তিলাওয়াতের হক আদায় না করে কুরআন খতম করা,
৭. জামা‘আতের সাথে ফরয সালাত আদায়ে অলসতা করা,
৮. বেশি বেশি খাওয়া,
৯. রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদাত করা,
১০. বেশি বেশি ঘুমানো,
১১. সংকট তৈরি করা জিনিস পত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য,
১২. অশ্লীল ছবি, নাটক দেখা,
১৩. বেহুদা কাজে রাত জাগরণ করা,
১৪. বিদ‘আত করা,
১৫. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা
মুল রচনা ঃ রমজান মাসের ৩০ আমল
বিষয়শ্রেণী: সমসাময়িক
ব্লগটি ৯৫৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২১/০৬/২০১৬

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast