www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভাষা দৈন্যতার পরিনতি - এক

এক ডাক্তার বন্ধুর মুখে শোনা সত্য কাহিনী দিয়েই গল্পটি শুরু করছি।

আমার সেই ডাক্তার বন্ধুটি একজন গবেষকও। কর্মোপলক্ষে তাকে নানান দেশে যেতে হয়, এছাড়া তিনি নানান সময়ে বিভিন্ন দেশে নিজের লেখাপড়া এবং অধ্যাপনার কাজও করেন। একবার পড়াশুনার জন্য বেশ কিছুকাল তাকে সুইডেন থাকতে হয়েছিল।

উত্তর ইউরোপের দেশ হলেও ইউরোপের অনেক দেশের মতোই সুইডেনেও ইংরেজী ভাষার তেমন প্রচলন নেই। তাই দায়ে পড়ে শেখা দু’চারটি সুইডিশ শব্দের পাশাপাশি মানব সভ্যতার অতি পুরাতন ও আদি ভাষা - ইশারা ও অঙ্গভঙ্গিতেই দৈনন্দিন চলাফেরা ও স্থানীয় লোকজনের সাথে ভাবের আদান প্রদান করতে হত।

দেশ-বিদেশে যাদের যাতায়াত আছে তারা ভাল করেই জানেন যে, বিদেশ বিভূঁইয়ে বিশেষতঃ যেখানে হাতের কাছে স্বদেশী খাবারের ব্যবস্থা নেই সেখানে দেশী খাবারের কথা কল্পনাও করা যায় না। নিজের দেশে থেকে আমরা বিদেশী খাবারে প্রতি যত অনুরক্তই থাকি না কেন বিদেশে অবস্থান করা বাঙালী মাত্রই জানেন, স্বদেশী খাবারের স্বাদ নিতে তাদের মন যে কত আঁকুপাকু করে। বিদেশ বিভূঁইয়ে বাস করে একনাগাড়ে ভিনদেশী খাবার খেতে খেতে অরুচি ধরে গেছে তাই প্রবাসী বন্ধুরা একদিন স্থির করলেন; যেমন করেই হোক দেশী খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।

যেমন ভাবা তেমনি কাজ; দুই বন্ধু গেলেন স্থানী্য় ’চেইন স্টোরে'। উদ্দেশ্য দেশী খাবার তৈরীর জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে আনবেন। আগেই বলেছি; সেখানে ইংরেজী ভাষার তেমন প্রচলন নেই কাজেই তাদের যেসব পণ্যের প্রয়োজন তা সংশ্লিষ্ট পণ্য বা প্যাকেটের আকার আকৃতি ও ছবি দেখেই সংগ্রহ করতে হবে। দোকানে সাহায্যকারী থাকলেও ভাষা দৈন্যতার কারণে তার কাছে কোন সহায়তা পাওয়ার আশাও খুব কম। এছাড়া কোন পণ্যের গায়ে বা প্যাকেটে কোথাও ইংরেজীতে কিছু লিখা নেই। অতএব, প্রয়োজনীয় জিনিস নিজেদেরকেই খুঁজে নিতে হবে।

বিশাল ’চেইন স্টোরে' হাজারো পণ্যের আড়তে ঘুরতে ঘুরতে টিনজাত মাংশ দেখতে পেয়ে দুইবন্ধু বেশ খুশী হলেন। যুক্তি-পরামর্শ করে ঠিক হল মাংশই কিনবেন, আজ মাংশই রান্না হবে। শেষমেষ, এককৌটা টিনজাত মাংশ ও প্রয়োজনীয় সওদা নিয়ে দুইবন্ধু বেশ খুশী মনে ঘরে ফিরলেন।

ঠিক হল - আজ দেশী কায়দায় মাংশ রান্না হবে, দেশী বন্ধুদের দাওয়াত করে স্বদেশী খাবার খাইয়ে তাক লাগিয়ে দিবেন। মহা সমারোহে রান্না-বান্না হল, নিমন্ত্রিত স্বদেশী বন্ধুরা এলেন, তাদের নিয়ে বেশ উল্লাসে বিদেশে বসে ঘরোয়া খাবার খেয়ে সবাই তৃপ্তও হলেন। আমন্ত্রিত অতিথি বন্ধুরা তাদের রান্না ও আয়োজনের খুব প্রশংসা করলেন। এমন একটা সুন্দর আয়োজন স্বচ্ছন্দে করতে পারায় আয়োজক বন্ধুরাও বেশ পুলকিত হলেন যে, এখন থেকে যখনই ইচ্ছা হবে এভাবেই মাংশ এনে স্বদেশী খাবারের স্বাদ উপভোগ করা যাবে। বন্ধুরাও এই ভেবে আশ্বস্থ হলেন; যাক বাবা বাঁচা গেল। অনবরত ভিনদেশী খারার খেয়ে খেয়ে আর অরুচিতে ভোগতে হবে না, শেষ পর্যন্ত তবু একটা স্বদেশী খাবারের ব্যবস্থা হাতের নাগালে পাওয়া গেল।

কিছুদিন পর আবারো স্বদেশী ভোজ খাওয়ার ইচ্ছে হলে বন্ধুরা আবার সেই দোকানে গেলেন। খুঁজেপেতে সেই টিনজাত মাংশের কৌটাও পাওয়া গেল। প্রথম দিন তো মাংশ দেখা মাত্রই আবেগের অতিসহ্যে কৌটা নিয়ে দৌড় দিয়েছিলেন। আজ সেসব কৌটার পাশে আরো কিছু মাংশের কৌটা দেখতে পেয়ে সেগুলোও হাতে নিয়ে দুই বন্ধু পরামর্শ করছেন যে, আগেকার সেই কৌটাটিই নিবেন নাকি আজ অন্যটি নিয়ে দেখবেন কোনটি ভাল। তাদের মধ্যে ব্র্যান্ড নির্বাচনের এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দেখে দোকানের কর্তব্যরতা এক সুন্দরী তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন....

তরুণী এসে সুইডিশ ভাষায় অত্যন্ত বিনীত ভাবে জানতে চাইলেন; তোমাদের ‘প্যাটের’ জাত কি? ‘জার্মন শেফার্ড’ হলে এটা ভাল হবে, ‘হাউন্ডস্’ হলে ঐটা, আর যদি ‘এ্যল্‌সেশিয়ান’ হয় তাহলে দাঁড়াও তোমাদেরকে যথার্থ ম্ংশটাই এনে দিচ্ছি। এই বলে কর্তব্যরতা সুন্দরী যেই না অন্য ব্র্যান্ডের মাংশ আনতে গেছেন তখন দুই বন্ধু একে অন্যের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করছেন....

বন্ধুদের বুঝতে আর বাকি রইল না যে; আগে যে কৌটাটা কিনে নিয়ে মাংশ রান্না করে এতো তৃপ্তি ভরে খেয়েছেন ওটা সহ এখানকার অন্য সব কৌটার মাংশের কোনটাই মানুষের ভোজ্য নয়। ওগুলো ছিলো কুকুরের ভোজ্য....

বাল্যবন্ধুর এমন একটি করুণ রসের গল্প শোনার পর কৌতুহল হওয়াটাই স্বাভাবিক যে, আতঃপর - কখনো কি তাদের ঘেউ-ঘেউ করতে বা লেজ নাড়াতে ইচ্ছে হয়েছিলো কি না? তা না করে থাকলে যে মাংশ খেয়েছেন তাতে দোষের কিছু নেই।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮২৯ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/১১/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • হাহাহাহাহাহহা। খুব ভালো লাগলো। স্যার আমি ও এখানে একটি চাইনিজ কোম্পানি তে জব করি যেখানে প্রায় ৬০% চাইনিজ আর তাদের মধ্যে প্রায় ৪০% ই ইংলিশ জানে না তাদের সাথেও মাঝে মধ্যে ঘটে এমন সব মজার ঘটনা।
    • অনিরুদ্ধ বুলবুল ০২/১২/২০১৪
      চায়নীজরা এখন ভালই ইংরেজী জানে ১৯৮৪তে প্রথম সাংহাই গিয়ে বড় হোটেলেও ইংরেজী জানা স্টাফ পাই নি। তারা তখন বাংলাদেশকে চিনতোই না, বলতো 'মুঙজ্বালা' আর ভাবতো এটা ইন্ডিয়া। আশির দশকে সিঙ্গপুরে আমার ব্যাঙ্ক থেকে প্রায়ই চিঠি আসতো, ঠিকানায় বাংলাদেশের পরে ইন্ডিয়া লেখা থাকত। পরে ম্যানেজারের সাথে দেখা করে আমাদের ইতিহাস বয়ান করে তবে তাকে বুঝাতে পেরেছিলাম।

      ধন্যবাদ
  • ২৯/১১/২০১৪
    অনেক মজা পেলুম ।
  • আলোকিত অন্ধকার ২৯/১১/২০১৪
    বাহ! বেশ লিখেছেন, বাল্যবন্ধুর রসগল্প। যদিও কিছুটা করুণ ...।
  • রেনেসাঁ সাহা ২৯/১১/২০১৪
    দারূণ, দারূণ, খুব মজা লাগল।
    • অনিরুদ্ধ বুলবুল ২৯/১১/২০১৪
      আমার মাথায় গল্প আসে না, তোমার মত লিখতে পারি না। সত্য ঘটনাই গল্পাকারে তুলে ধরলাম। তবু ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হলাম।
      শুভেচ্ছা বন্ধু -
 
Quantcast