www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

ভালোবাসা দায়ি

আবেগ এবং রহস্য__                                             ১৪/০২/২০১৪

লক্ষ্যহীন পথিককেও একসময় থামতে হয়। পথের মোহ ত্যাগ করে বন্ধনের মোহতে জড়িয়ে পরতে হয়। সে বন্ধন যে কোন কিছুর অথবা যে কারও সাথেই হতে পারে।
২বছর আগেই পুবিল থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। আবেগ, ভালোবাসার মোহ পুবিল এবং মিশুকে পুরো-পুরিভাবে গ্রাস করে ফেলেছে। ওরা দুজন যখন মুখোমুখি দাঁড়ায় তখন ভুলে যায় যে, ওদের এই সম্পর্কের পরিনতী অসম্ভবের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যখন একা থাকে তখন, নিজেদের মনের সাথে নিজেরাই যুদ্ধ করে। যার বিরুদ্ধে এই যুদ্ধ তা ধ্বংস করা ওদের কারো পক্ষেই সম্ভব না।
পুবিল আর মিশুর সম্পর্ক ২বছর পূর্ণ হয়েছে ২মাস আগেই কিন্তু ২বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্টির তারিখ ধার্য করা হয়েছিল ১৪-ই ফেব্রুয়ারী। ভালোবাসা দিবসে, ভালোবাসার পার্টি। আর এই পার্টি দিচ্ছে পুবিলের বন্ধুরা। আজ ১৪-ই ফেব্রুয়ারী। কিন্তু পুবিলের মন ভালো নেই। গত ১সপ্তাহ হল মিশু কেমন যেন অন্যমনষ্ক হয়ে থাকছে। তেমন একটা কথা বলে না,হাসে না। কি যেন সারাক্ষন চিন্তা করে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে মোবাইলের সুইসটাও অফ করে রেখেছে। কি যে হয়েছে ওর, আল্লাই ভালো জানে। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে পুবিল ফেসবুকে ঢুকলো। মিশু একটা মেসেজ দিয়েছে। পুবিল পড়তে ধরেই থমকে গেল, “পুবিল, এখন থেকেই আমি তোমার সাথে আমাদের সমস্ত সম্পর্ক শেষ করে দিলাম। কেন, কি হয়েছে, কি অপরাধ আমার এগূলো কোন কিছুই জানতে চাইবে না। আমার সাথে যোগাযোগ করার কোন চেষ্টাই করবে না। আমার খোঁজে আমার বাড়িতে যদি আস অথবা, কাউকে দিয়ে খোঁজ করো তাহলে, তুমি আমার মাথা খাও। তোমার মা এবং আল্লার কসম খেয়ে বলছি, তুমি আমার কোন খোঁজ করবে না।”
মেসেজ পড়ে তো পুবিলের মাথা খারাপের মত অবস্থা হল। পুবিল মাথার চুল টানতে টানতে বাইরে বেরিয়ে আসলো। কোন কিছু না ভেবেই বাড়ির ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনের দিকে রওনা দিল। কিন্তু, পুবিলের জানা হলো না, ওর বন্ধুরা উন্মোচিত রহস্য নিয়ে আগামিকাল ওর বাসায় এসে ওকে না পেয়ে ফিরে যাবে।

বন্ধু এবং ডায়েরী__                                                          ১৪/০২/২০১৮

মিরান এবং অনামিকা পাশাপাশি হাঁটছে। অনামিকাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। তাই মিরান আশে-পাশে শুধু তাকাচ্ছে। যখনই দেখছে, রাস্তার কেউ হা করে অনামিকাকে গিলছে তখনই মনে মনে নিজেই নিজের গালে কষে একটা চড় মারছে। আর ভাবছে, আজ বিকালে বের হওয়াই উচিত হয় নি।
হঠাৎ করে মিরান কষে একটা চড় মারলো নিজের গালে। কিন্তু ও ভাবার আগেই ওর অবচেতন মন ভাবলো, ‘আজ বের না হলে অনেক বড় মিস হয়ে যেত।’
মিরান জোড় পায়ে সামনের দিকে হেঁটে গিয়ে পিছন থেকে একটা লোকের কাঁধের উপর হাত রাখলো। লোকটা আস্তে আস্তে ঘুরলো। একে অপরের মুখো-মুখি হলো প্রিয় দুই বন্ধু।
১ঘন্টা আগে মিরান, পুবিলকে নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছে। অনামিকার সাথে পুবিলের পরিচয় পর্ব শেষ করেই জানতে চেয়েছিল, গত ৪বছরে কেন ওকে খুঁজে পেল না। পুবিল কোন উত্তর দেয় নি। শুধু, এক টুকরো দুঃখি হাসি ফিরিয়ে দিয়েছিল।
মিরান বললো, “মিশুর একটা জিনিস আছে আমার কাছে। তোর জন্য রাখা।”
পুবিল জানতে চাইলো, “কি।”
__ ডায়েরী।
__ কই?
মিরান ডায়েরীটা এনে দিল। পুবিল ডায়েরীটা খুলে দেখলো প্রথম পৃষ্ঠায় সুন্দর করে ওর নাম লেখা আছে, ‘অর্পিতা সেন মিশু।’

স্মৃতি এবং অনুভূতি__                                             ২৪/০৭/২০৩৯

__ কেমন আছ তুমি?
__ জ্বি।, আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?
__ ভালো। তোমার বাবা-মা কেমন আছে?
__ ওনারা ভালো আছেন।
__ ও।
__ গত ২১বছরে বাবা আপনাকে বেশ কয়েকবার খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছে কিন্তু আপনাকে পায় নি। ৬মাসের মত সময় ধরে অনেক চেষ্টা করে আপনাকে এখানে খুঁজে পেলাম।আপনি তো আবার একজায়গায় বেশি দিন থাকেন না।
__ মিরান খুঁজেছে কারন ও আমার বন্ধু কিন্তু, তুমি খুঁজলে কেন?
__ আপনার বান্ধবীর ডায়েরীটা আমি পড়েছি যেটা, আপনি নাকি না পরেই আমাদের বাসায় রেখে এসেছিলেন।
__ হুম।
__ আমার কাছে মনে হয়েছিল, ডায়েরীটা আপনারও পরা উচিত। ভুল ধারনা নিয়ে বেঁচে থাকার চাইতে, কষ্টময় সত্যটা জানা অনেক ভালো। এই জন্যই আপনাকে খুঁজে বের করা।
__ ও।
__ আপনি পড়বেন?
__ দাও। আন্য কোন একসময় পড়বো।
__ আচ্ছা। আঙ্কেল একটা কথা বলবো, যদি কিছু মনে না করেন?
__ বলো। কিছু মনে করবো না।
__ জীবনে কী আর কোন পরিবর্তন আনবেন না?
__ ভবিষ্যতের চাইতে বর্তমান ভালো। আর বর্তমানের চাইতে অতীত ভালো। আমার অনুভূতি, স্মৃতিগুলোতে মিশে আছে। আমি বেশ ভালো আছি।

বিশ্বাস এবং অনুরক্ত__                                                    ১৩/০২/২০৬৪

দাদু পাশের রুমে বিশ্রাম নিচ্ছে। আমি দাদুর বন্ধু, পুবিল দাদুর সাথে কথা বলছি। পুবিল দাদু অসুস্থ। পুবিল দাদুকে দেখার জন্য দাদু আমাকে নিয়ে এসেছে।
__ আপনার সম্পর্কে সব গল্পই আমি দাদুর কাছ থেকে শুনেছি।
__ তাই। কি শুনেছ!!
__ সব। সব শুনেছি। শুধু ডায়েরীর লেখাগুলোর কথা শুনিনি। ডায়েরীর লেখাগুলোর কথা আমার খুব জানার ইচ্ছা। আমাকে কি বলবেন?
__ ডায়েরীটাই দিচ্ছি। তুমি পড়ে নিও।
__ আপনি জীবনটা একা একা কাটিয়ে দিচ্ছেন কেন!! যে মারা গেছে সে তো গেছেই। তার জন্য জীবনটা থামিয়ে রাখলেন কেন?
__ কেউ যদি আমার জন্য জীবনটা বিসর্জন দিতে পারে তাহলে, তার জন্য জিবনটা থামিয়ে দেওয়াটা খুব কষ্টের না। বেঁচে থাকাটাই অনেক কষ্টের। এটা স্পর্শময় অনুভূতির বিষয়। তুমি হয়তো বিশ্বাস করবে না কিন্তু, আমি ওকে দেখি, স্পর্শ করি, গল্প করি। আমি আসলে একা না। ও আমার সাথে আছে। আমার মাঝে ও থাকতে কেন আমি আন্য কাউকে গ্রহন করবো? ভালোবাসার আর ভালো থাকার শক্তিশালী একটা অস্ত্রের নাম হলো বিশ্বাস। যে বিশ্বাসের উপর ভর করেই ও মারা গেছে আর আমি আমার অনুভূতিতে ওর স্পর্শ নিয়ে বেঁচে আছি।

একটানা কথাগুলো বলার জন্য দাদু হাঁপাতে শুরু করলেন। আমি আমার ডান হাতটা দাদুর বুকের উপর রাখলাম। দাদুও তার ডান হাতটা আমার হাতের উপর রাখলো। দাদুর হাতের স্পর্শ পেতেই মনে হলো, এই স্পর্শের মাঝেই মৃত ভালোবাসা আজও জিবীত আছে।

মৃত্যু এবং ভালোবাসা__                                                    ১৪/০২/২০৬৪ (মধ্য রাত)

পুবিল দাদু পাশের ঘড়ে শুয়ে আছে। আমি জানালা খুলে দিয়ে ঘড়ের ভিতর বসে থেকে ডায়েরিটা পড়ছি। জানালা গলে জ্যোৎস্না ভিতরে এসে ঘড়টাকে আন্যরকম রূপ এনে দিয়েছে।
পুরো ডায়েরীটিতে শুধুমাত্র দুটো জায়গায় লেখা হয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠায় লেখেছে নাম, ‘অর্পিতা সেন মিশু।’ আর ডায়েরীর মাঝখানে লিখেছে তার কথাগুলো।
“আমি আমার ধর্মকে ভালোবাসি, পুবিলকেও ভালোবাসি। বাবা-মাকেও ভালোবাসি। পুবিলের জন্য ধর্ম এবং বাবা-মাকে ছাড়া আমার পক্ষে সম্ভব না। আবার, ধর্ম এবং বাবা-মার জন্য পুবিলকে ছাড়াও আমার পক্ষে সম্ভব না। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নিজেই নিজেকে মুক্তি দিয়ে দেবো। মা, বাবা। আমাকে ক্ষমা করে দিও। হে ভগবান, আত্নহত্যা করা ছাড়া আমার কোন উপায় নাই। ড্রাগসের ইঞ্জেকশানটা হাত দিয়ে ধরে আছি। হাতটা খুব কাঁপছে। খুব কান্না পাচ্ছে আমার। পাশের রুমে বাবা-মা শুয়ে আছে। বাবা-মাকে দেখার খুব ইচ্ছে হচ্ছে। পুবিলের সাথে কথা বলতেও খুব ইচ্ছে হচ্ছে। ইঞ্জেকশান হাতে পুশ করলাম। এখন আর কিছু করার নাই। সকালে যখন মিতু আমার মৃত মুখটা দেখবে তখন তো ও অনেক কাঁদবে। আমি আমার ছোট্ট আপুটাকে কাঁদাবো!! আমি বাবা-মাকে কাঁদাবো!! পুবিলকে কষ্টের সাগরে ভাসিয়ে দিলাম!!
আমার মৃত্যুর জন্য ভালোবাসা দায়ী। এই ভালোবাসার জন্যই-তো আমি কাউকে ছাড়তে পারলাম না।
গলার ভিতর একটা কষ্ট আটকে আছে। এটা পুবিলকে না পাওয়ার কষ্ট, হারানোর কষ্ট। বারবার বাবা-মার ঘড়ের দিকে চোখ যাচ্ছে। মনে হচ্ছে ছুটে গিয়ে বাবা-মাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদি। কেঁদে কেঁদে কষ্টগুলোকে বুক থেকে ঝেড়ে ফেলে দেই। আমি আর লিখতে পারছি না। চোখের পাতা নাড়াতে পারছি না।
পুবিল ভালো থেকো। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আনেক ভালোবাসি। আমার ভিতর এখন দুটো ইচ্ছে কাজ করছে। পুবিল তোমার বুকেও মাথা রাখার ইচ্ছে হচ্ছে আবার, মা-কে জড়িয়ে ধরেও শেষ ঘুমটা দেওয়ার ইচ্ছে হচ্ছে। আর লিখতে পারছি না। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে।
বিদায়!! আমার ভালোবাসারা। আর পৃথিবী।
পুবিল, যদি কখনও ডায়েরীটা তুমি পাও তাহলে তুমি এটা……।”

নিজের অজান্তেই চোখ থেকে জল বেরিয়ে এসেছে। লেখা শেষ করতে পারেন নি উনি। কিন্তু সত্যিকারের আবেগ দিয়ে লিখেছেন। যে আবেগের মাঝে কোন ফাঁক নেই।
হঠাৎ আমি চমকে উঠলাম!! আমার কেন জানি মনে হলো- পুবিল দাদুর রুম থেকে মেয়েমানুষের ফিসফিস কথার আওয়াজ আসছে। আমি লাফ দিয়ে উঠে ওনার ঘড়ের ভিতর প্রবেশ করলাম। রুমের দরজাটা পুরোপুরি খোলা। হু হু করে জানালা দিয়ে বাতাস ঢোকার কারনে পর্দাটা উড়ছে। পর্দাটা ওড়ার কারনে জ্যোৎস্নার আলো পুবিল দাদুর মুখটাকে রহস্যময় কোরে তুলেছে। আমি এক পা, দু পা কোরে পুবিল দাদুর বিছানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। দাদু নিথর হয়ে শুয়ে আছে। দেহটা প্রানহীন। চোখে-মুখে প্রশান্তি এবং তৃপ্তির হাসি। যেন অনেক অপেক্ষার পর আজ প্রিয় সময়ের দেখা মিললো।
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৮৬২ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৩/০৭/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

 
Quantcast