www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

বসন্তের রং

বসন্তের রং কেমন, আজও আমার দেখা হলো না। হয়তো বসন্তের রং’টা একার চোখে দেখা যায় না। প্রিয় কারোর চোখে চোখ রেখে দেখতে হয়। তেমন কেউ বসন্তের রং আমাকে দেখাতে আসে নি তাই হয়তো, আজও আমার বসন্তের রং দেখা হয় নি। সবার চোখেই নাকি ক্ষনসময়ের জন্য হলেও রংয়ের ছোঁয়া লাগে। রংয়ের ছোঁয়া লেগেছে কিনা জানি না তবে বসন্তের রং দেখার সৌভাগ্য আমার দ্বারে এসেছে।

মেয়েটার জন্যেই বসে আছি। ও আমার কাছে কখনও কখনও মানবী, কখনও কখনও মেয়ে আবার কখনও কখনও শিশির সম্বোধন। আজও মেয়েটার নাম জানা হয় নি। অবশ্য ও আমার নামও জানে না। তাই হয়তো মানব বলেই ডাকে। কেন জানি তার প্রতিটা বাক্যর আগে মানব ডাকটা শোনার সাথে সাথে আমি পৃথিবীর সমস্ত অনুভুতির উর্দ্ধে কোন এক অনুভূতির মাঝে হারিয়ে যাই।

শিশিরকে আমি ফেসবুকে পাই। প্রথমে চ্যাট, পরে মোবাইলে কথা। ওর চোখ থেকে নাকি অনেক আগেই বসন্তের রং হারিয়ে গেছে। আর আমি তো কখনো বসন্তের রংই দেখি নি। তাই চারটি চোখে বসন্তের রং দেখার জন্য বসে আছি। অপেক্ষা আমার কাছে কখনো খারাপ লাগে না। অপেক্ষার প্রতিটা মুহূর্ত অনুভূতিতে মিশে থাকে। আমি অপেক্ষা করছি একটা বিষন্ন হাসি দেখার জন্য, হাতের কম্পন দেখার জন্য, ধিরে ধিরে স্বাভাবিক হওয়ার রূপ দেখার জন্য। এখন মনে হচ্ছে এটাই মনে হয়, মানুষের চোখে রাঙ্গা বসন্তের রং।যা, প্রকৃতির নির্দিষ্ট কাল ছাড়াই অবলোকন করা যায়।
আমি আকাশের দিকে তাকালাম। প্রতি দিনের মতই মনে হলো আজকের আকাশও। বাতাসে কোন সুগন্ধ ভাসছে না। রঙ্গিন কোন প্রজাপতিকে আশেপাশে উড়তে দেখছি না। ঘাস-ফড়িংও দেখছি না।
মানবীকে দেখার পরেই কি, পৃথিবীর কোন স্বাভাবিকতাই আর স্বাভাবিক থাকবে না! কিছু স্বাভাবিক না থাকাটাই কি, বসন্তের রং।

চমকে উঠলাম, হঠাৎ করে পকেটে সেল ফোনটা বেজে ওঠায়। শিশির ফোন করেছে। হয়তো পৌঁছে গেছে। তাকে খুঁজে বের করার জন্য আমাকে ফোন করেছে। কাঁপা কাঁপা , ইতস্তত একটা কন্ঠ শুনবো ভেবেই রিসিভ করলাম। কিন্তু তা শুনলাম না। ব্যাস্ততম রাস্তায় উত্তেজিত একটা পুরুষ কন্ঠ শুনতে পেলাম। যে আমাকে প্রশ্ন করছে, ‘আমি মানব কি-না।’
আমি বললাম, ‘কেন?’
অপর প্রান্ত থেকে উত্তর এবং প্রশ্ন দুটোই করা হলো, ‘ডায়ালে একটা নাম্বারই আছে যা, মানব নামে সেভ করা। এখন বলেন, আপনি মানব কি-না?’
আমি বললাম, ‘হ্যাঁ, আমি মানব। এই মোবাইলের মালিকের কি হয়েছে? কোথায়?’

আমি যেখানে অবস্থান করছি সেখান থেকে হেঁটে যাওয়া পাঁচ মিনিট দূরের একটা স্থানের কথা বলা হলো। শিশির অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। আমি ত্রস্তপায়ে তিন মিনিটের মদ্ধ্যেই সেখানে পৌঁছে গেলাম। পৃথিবীতে এখনো অনেক ভালো মানুষ আছে। একজন মহিলা ভালো মানুষ মাটিতে বসে কোলের মদ্ধ্যে শিশিরের মাথাটা নিয়ে শিশিরের মুখের দিকে ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে। আমি শিশিরের পাশে গিয়ে বসলাম। ঐ মুহূর্তে একটা অ্যাম্বুলেন্স আসলো। শিশিরের চোখ দুটো খোলা। দু-চোখে ঘোড় বিস্ময় লেগে আছে। যখন অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল তখন মনে হয় তার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে, ‘সে মানবকে হারাচ্ছে। অনেকদিন পর বসন্তের রং দেখতে পাওয়ার কাছাকাছি এসেও চোখে রং মাখা হলো না।’
আমার কাছে কেন জানি মনে হলো, শিশির বেঁচে নেই। কিন্তু শিশিরকে কোলে নিয়ে বসে থাকা মমতাময়ী মহিলাটিকে দেখে মনে হচ্ছে, শিশির বেঁচে আছে। শিশিরকে অ্যাম্বুলেন্সে তোলা হলো। আমি অবাক হয়ে দেখলাম, আমার সাথে সাথে মহিলাটিও অ্যাম্বুলেন্সে উঠলো। আমি অ্যাম্বুলেন্সে উঠার আগে একবার আকাশ দেখার চেষ্টা করে ব্যার্থ হলাম। সবাই এমন ভাবে ঘিড়ে আছে যে, আকাশের বর্তমান রংটা আমার দেখা সম্ভব হলো না। মমতাময়ী মহিলাটি এবারও মানবীর মাথার কাছেই বসলো। আমি তার পাশে বসলাম। অ্যাম্বুলেন্স চলতে শুরু করলো। মানবী সাদা একটা শাড়ি পরেছে। শাড়ির উপর ছোপ ছোপ রক্তের দাগ লেগে আছে। চোখে বিস্ময় লেগে আছে। আবার আমার কেন জানি মনে হলো, এটাই বুঝি বসন্তের রং। একেক জন মানুষের চোখে একেক ভাবে ফুটে ওঠে। আমার গলার ভিতর ব্যাথা করতে লাগলো। চেষ্টা করেও ঢোক গিলে ব্যাথাটাকে ভিতরে পাঠিয়ে দিতে পারলাম না। আমি মানবীর চোখ দুটো বন্ধ করে দিলাম। তারপর মানবীর হাতটা চেপে ধরে নিজের অজান্তেই আনমনে বললাম, ‘সবকিছু মিলে তুমিই আমার বসন্তের রং। তুমি ছাড়া আর কোন দিন আমার চোখে বসন্তের রং ফুটবে না।’

একটু ঝাঁকি দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স থেমে গেলো। মানবীকে স্ট্রেচারে তুলে জরুরী বিভাগের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও স্ট্রেচারের সাথে সাথে হেঁটে যেতে পারলাম না। কিন্তু, আমাকে আবারও অবাক করে দিয়ে মমতাময়ী মহিলাটি এখনও মানবীর মাথার পাশে থেকেই জরুরী বিভাগের ভিতরে প্রবেশ করলেন।
আবার আমি আকাশ দেখার জন্য উপর দিকে তাকালাম। এবারও আমার আকাশ দেখা হলো না। কারন, আমার চোখের সামনে ঝুলে আছে সাদা চুনকাম করা হাসপাতালের ছাদ। হয়তো, আমার চোখ থেকে আকাশের স্বাভাবিক রং’টাও হারিয়ে গেল।
তবুও তো আমি বসন্তের রং দেখলাম। যে বসন্তের রং’য়ে হারানোর রং’ই বেশি ফুটে উঠেছে, সেই রং কখনো মুছবে না। কিন্তু, এই রং কি আমি দেখতে চেয়েছিলাম!
এমন বসন্তের রং’ই কি সবাই দেখতে চায়!!
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৫৬৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০১/০৬/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • কবি মোঃ ইকবাল ০১/০৬/২০১৪
    ভালো লাগার মত গল্প।
    • শূন্য ০৩/০৬/২০১৪
      ধন্যবাদ
  • রুমা চৌধুরী ০১/০৬/২০১৪
    শুভেচ্ছা রইল।
  • এস,বি, (পিটুল) ০১/০৬/২০১৪
    ভালো লাগলো গল্পটি,,,
    • শূন্য ০৩/০৬/২০১৪
      ভালো লাগাতে পেরেছি বলে আমারো অনেক ভালো লাগছে।
      ভালো থাকবেন সবসময়।
  • এস,বি, (পিটুল) ০১/০৬/২০১৪
    ভালো লাগলো কল্পটি,,,
  • অমর কাব্য ০১/০৬/২০১৪
    পড়লাম,ভাললাগল,শুভেচ্ছা নিন
 
Quantcast