www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

পূর্ণ চন্দ্রিমার বিষাদ

চন্দ্রিমা বা চাঁদ যাই বলা যাক । এর রুপালি আলো যে কত সুন্দর এবং সু প্রাচীন হতে লোকদের আনন্দ দিয়ে আসত আমরা তা জানি । এমন কোন কবি নেই যিনি কিনা একবার হলেও তার কবিতাও চাঁদের সৌন্দর্যের উল্লেখ করেননি । কেউ কেউ তো আবার চাঁদকে তার প্রিয়তমার সাথে তুলনা করেছেন , আবার কেউ কেউ কখনও প্রিয়তমাকে চাঁদ বলেছেন এইভাবে ,
     এখনও আছি রাত জেগে ,
     চন্দ্রিমাকে বুকে লালন করে ,
     পূর্ণিমার রুপালি আলো
     মোরে মুঠো মুঠো বেসে যায় ভালো ।
এরকম বলতে থাকলে  কখনও শেষ হবে না । পূর্ণিমা মাত্রই আনন্দদায়ক । আজ থেকে আট দশ বছর আগের কথা বলছি । যেদিন পূর্ণিমা হতো আমরা প্রায়ই বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার আশাকে বুকে লালন করতাম । মজার ব্যাপার এই যে , আমাদের আশা পূরণও হত।তখন আর কি!সমবয়সীর দল বের হতাম বাইরে মহল্লা জুড়ে লুকোচুরি খেলার জন্যে । চাঁদের রুপালি আলোতে সবকিছু চক চক করত । একদিন লুকোচুরি খেলানোর সময় আমার সহপাঠি,বন্ধু আবার প্রতিবেশি ছেলেটি মহল্লার বাগানের ঝুপের পিছনে লুকিয়ে পড়ে । খেলা শেষ হওয়ার দিকে । সব লুকিয়ে থাকা চোর ধরা পড়ল । কিন্তু আশ্চর্য্য তাকে আর মিলে না । কেউ খুজে পায় না তাকে । আর ঐ যে ঝুপ তার ও প্রান্তে যাবার সাহস তখনো আমাদের হয় নি । এক সময় বাসা হতে ডাক পড়ল । আমাদের সবার চেহারায় ভিতীর ছাপ ! সুজনকে ‘ছেলে ধরা’ নিয়ে গছে।সেসময় আমাদের ঐ লোকের ভয় দেখানো হত ।সবাই ভীতিপূর্ণ চেহারা নিয়ে  বাসায় উপস্তিত। সে আর নেই । মহল্লায় কোলাহোল শুরু হয়ে গেল ।সবাই তাকে খুজতে ব্যস্ত ।অথচ , ভয়ে আমাদের শরীর ঠাণ্ডা । বড়দের গরম ধমকও এই ঠাণ্ডা দূর করতে পারল না। সুজনের মা,ফুফু,খালার কান্না আর বাবা  চাচার দুশ্চিন্তা শুরু হল । আমাদের আর নড়তে দেয়া হলো না ঘর হতে । প্রতিবেশি কেউ কেউ মোটর সাইকেল দিয়ে তার খুজে বের হলেন । এতো চিৎকার , ডাক ঝোকের পরও তার সড়া নেই ।এক সময় ত ষসব স্থির হয়ে আসল। সবাই বুঝে নিলেন আপাত রূপে তারা ব্যর্থ । সুজন দূরে কোথাও চলে গেছে । রাত শেষ হওয়ার অপেক্ষায় সবাই । পুলিশ ডাকাবেন । অথচ সেদিন আর কারও ঘুম হয় নি । সেদিন আর কারও বাসার মেইন ফটক তালা দেয়া হয় নি । এভাবেই নির্ঘুম অর্ধেক রাত কেটে গেল ।ফজরের আজানের ঘন্টা খানেক পূর্বে মহল্লার মুরব্বি মসজিদ মাইকে সুজনের হারার ঘোষণা দিচ্ছিলেন । ঠিক তখন , সহসা সে হাজির হল তার বাসায় । সবার মুখে এক বাক্য, “ সে চলে এসেছে। ” আমারাও চলে গেলাম তার বাসায় রহস্যের উদঘাটন করতে , “ তুমি ছিলে কোথায় ? ” তখন জানলাম , ঝোপের পিছনে চোর ধরা যাওয়ার ভয়ে ঘাসালো ভুমিতে লোক চক্ষু এড়িয়ে সে শুয়ে পড়ে । তারপর আর কি ! ঘাসের নির্মলতায় , পবনের শিতল স্পর্শে , মায়াবী পরিবেশ পেয়ে ঘুম কাতুরে সেখানেই চোখ ভুজে দেয় । সে নিদ্রায় চলে যায় । সেদিনই জানলাম সে কতই না সাহসী । আর সেদিনই আমাদের পূর্ণিমার রাতে বের হওয়া বন্ধ হয়ে গেল। আজ যখন পূর্ণিমাকে হঠাত দেখলাম তখন ঘটনাটি মনে পড়ল । আজ কেউ বের হয় না খেলতে । কোন বয়সের ছেলে মেয়ে বেরই হয় না । তারা এই আনন্দ উপভোগ করতে চায় না। এটাই বুঝলাম যে , চন্দ্রিমা ব্যাপারটা বুঝেছে । তাই সে আগের মতো হাসে না । রুপালি আলো ছড়ায় না । তাই আজকে তাকে অনুজ্জ্বল দেখলাম , হয়তো এই দুঃখে তার হাসি মলিন হয়ে গেছে !
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৫০ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ১৩/০৭/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • ফয়জুল মহী ১৩/০৬/২০১৬
    স্নিগ্ধমধুর লেখা
  • ২৯/০৭/২০১৫
    দারুন লিখেছেন ......
  • জহরলাল মজুমদার ১৫/০৭/২০১৫
    ধন্যবাদ এমকম সময় আমিও কাটিয়েছি।
 
Quantcast