www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

যে ভালবাসা সরল সমীকরণে

এইবার ইস পার বা উস পার। একবুক ফুলানো আশা অরুপার সামনে গেলে ফুস করে যেন বুক ফুটো করে হাওয়ার মতো বেড়িয়ে যায় সায়নের। এই নিয়ে চতুর্থবারের
মতো সামনাসামনি দেখা হতে যাচ্ছে অরুপার সাথে।
দুইটা সাদা গোলাপ, একটি রজনীগন্ধা আর একটা চিরকুট প্রতিবারি সায়নের কাধে ঝোলানো ব্যাগটার তৃতীয় চেইনটা খুললে পাওয়া যাবে।
-এতো দেরি হলো আজ?
-ও, আমার মাথার ক্যাপটা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ঐটা খুঁজে পেতেই দেড়ি হয়ে গেল।
-ক্যাপ ছাড়াই তোমাকে সুন্দর লাগছে। কম পড়বা ওইটা।
-হেহেহে।
-কি ব্যাপার হাসছো কেনো? আমি কোন জোক্স বললাম নাকি?
সায়ন ঘাবড়ে গেল, অরুপা এতটা গম্ভীর থাকে যে কোন কথা ওকে বলতে গেলে কয়েকবার ভাবতে হয়
তারপরে কথাটা গুছিয়ে বলতে হয়। বরাবরের মতো সায়ন ঘাবড়ে গিয়ে মুখ ফসকে কিছু একটা বলে ফেলে।
-ইয়ে, মানে, আজ চোখে কাজল দাওনি যে?
-তুমি কাজল দেয়া চোখ পছন্দ করো?
-হ্যা, আমি মনে করি চোখে কাজল না দিলে মেয়েদের সাজ অপূর্ণ থাকে। কিন্তু তোমার চোখে কাজল না দিলেও সুন্দর লাগে।
অরুপা তার ব্যাগ থেকে কাজল আর ছোট্র আয়না বের করল।
চোখে কাজল দিয়ে সায়নকে দেখাতে লাগল -
-বলতো সায়ন এখন কেমন লাগছে?
-ঠিক যেন অপ্সরা। আমার সামনে বসে আছে।
-এই পাম দেয়া কোত্থেকে শিখছো তুমি?
-সোহাগের কাছ থেকে.....
সায়ন দাতে দাত পিষতে লাগল, ধুর কিচ্ছুই লুকানো যায় না মনে এই মেয়েটা সামনে এলে।
-মানে?
-সোহাগ বলেছিল মেয়েদের প্রশংসা করলে তারা খুশি হয়,
তাই তোমার প্রশংসা করছিলাম। তাছাড়া তুমি জানোনা আজ সত্যিই তোমাকে অপ্সরার মত লাগছে।
-হইছে বুঝেছি।
-আচ্ছা আমার কথা বিশ্বাস না হলে ঐ
পিচ্চিটাকে ডেকে জিজ্ঞেস করছি ও ই বলবে।
-এই, না সায়ন। আমি বুঝতে পারছি তুমি সত্যি বলছ।
সায়ন অরুপার কথা কানে না তুলেই পার্কের এক
পাশে চায়ের কেটলি নিয়ে দাড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে হাত নেড়ে ডাকল। ছেলেটি এক হাতে ঢিলা প্যান্টের
দড়ি ধরে রাখল আর অপর হাতে কেটলি নিয়ে ওদের
সামনে এল।
-জি, কন ভাই কয়কাপ দিমু?
-দে আদা দিয়ে দু কাপ চা। রঙ চাই ত?
-হ ভাই।
-আচ্ছা পিচ্চি...
-আমার নাম সবুর পিচ্চি না।
-ও আচ্ছা সবুর বলত এই আপুকে কেমন লাগছে?
-পরীর লাহান।
অরুপা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। সায়ন তাকিয়ে সেই
হাসি দেখছে। কত মুগ্ধতা মিশে আছে এই হাসিতে।
সায়ন ভাবছে চিরকুট আর ফুল গুলি বের করবে কিনা।
-আচ্ছা সায়ন, আজ একটা কাজ করতে হবে তোমাকে।
-হ্যা বলো।
-প্লিজ না বলবে না, তাহলে আমি হয়তো মরেই যাব।
সায়ন বিস্ময় নিয়ে অরুপার দিকে তাকালো। কি বলছে এই মেয়ে? গম্ভীর ভাব থেকে চেহারটায় যেন ভালবাসার ছাপ ভেসে উঠছে অরুপার। সায়নের বুক ধরফর করছে।
-আচ্ছা, বলো।
-তুহিন নামের একটি ছেলেকে আমি ভালবাসি। আজ
আমরা পালিয়ে যেয়ে বিয়ে করব। তুমি আমার খুব
ভালো বন্ধু তাই....
অরুপা সায়নের হাতটি ধরল। চোখ গুলা যেন টলমটল করছে সায়নের, মাথাটা উঠালেই অরুপার মুখটা দেখলে এই জল আর আটকে রাখা সম্ভব হবেনা।
অরুপা বুঝতে পারল সায়নের চোখে জলল
-কি হয়েছে সায়ন? তুমি কাদছো?
সায়ন মুখ তুলল, হ্যা সায়ন আটকাতে পারেনি চোখের জল।
-হাহাহা
হঠাত অরুপা হেসে উঠল। সায়ন বুঝে উঠতে পারলনা একজন পূর্ণ বয়স্ক ছেলে কাঁদছে অতচ
তাকে শান্তনা না দিয়ে পাশে বসা রমণী হেসে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
চা বিক্রি করে সবুর নামের যে ছেলেটা ছিল সেও ফিক করে হেসে উঠল। সায়ন যেন আহাম্মক হয়ে গেল। ক্যাবলার মতো একবার অরুপা আরেকবার ছেলেটার দিকে তাকালো। আর পারছেনা নিজের উপর কন্ট্রোল করতে সায়ন।
-দেখো অরুপা, আমি তোমাকে ভালবাসি।
-কি?
-হ্যা যা শুনছো সত্যি। তুহিন টুহিন ভুলে যাও তুমি শুধু
আমার।
-হাহাহা।
-হুম। আমিও পাগল। জোর করে কি ভালবাসা হয় নাকি।
সরি অরুপা....ওয়েট...
সায়ন ওর ব্যাগ থেকে গেলাপ আর রজনীগন্ধা বের
করে অরুপার হাতে দিল...
-তোমাদের জন্য শুভ কামনা।
-আর কিছু?
-নাহ :)
-কেন চিরকুট টা অন্য কারোর জন্য?
সায়ন আবার বিস্মিত হল। অরুপার তো জানার
কথা না যে ওর কাছে চিরকুট আছে।
-ভাবছো আমি জানলাম কিভাবে?
-হুম.....না। মানে......
-হাহাহ। তুমি আমার সামনে এলে ঘাবড়াও কেন? আমি বাঘ না ভাল্লুক?
-আসলে.........
-তোমার মনের সব কথাই আমি জানি সায়ন। আর তুহিন
নামের কেউ কখনো ছিল না, না আছে এখন।
-মানে? তাহলে যে বললে।
-এটা তোমার বন্ধু শিপুর আইডিয়া ছিল।
যাতে তুমি আমাকে প্রোপোজ করো।
সায়ন মাথা চুলকতে লাগল, শিপু ত সেইরাম একটা কাজকরছে বেষ্টফ্রেন্ড একেই বলে। হাজারটা চুম্মা থ্যাংকস দিল শিপুকে সায়ন মনে মনে।
-তা মিষ্টার চিরকুট টা দেন?
-চিরকুটের কি দরকার আমি নিজ মুখেই বলব।
-বাহ! সাহস দেখি বেড়ে গেল।
-জি। will u marry me অরুপা?
-ডাইরেক্ট বিয়ে?
-হ্যা, আমি কোন কনফিউশন রাখতে চাইনা।
-চাকরি বাকরি ঠিক হইছে।
-জি ম্যাম, আগামী মাসেই বাইরে যাচ্ছি দেশের।
ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানি, সিনিয়র সফটওয়্যার
এডভাইজার।
অরুপার মুখটা কালো হয়ে গেল।
-চলে যাবে একা রেখে আমাকে?
সায়নের কাধে অরুপা মাথা রাখল। সায়ন অরুপার হাতটা ওর মুষ্টিতে বন্দি করে অভয় জানাল-
-ছোট্র নীড় চাইনা তোমার?আমার?
-হুম......
-তাহলে একটু ত কষ্ট করতেই হবে।
সবুর হঠাত বলে উঠল, স্যার ট্যাকা দেন চইলা যাই।
সায়ন মানিব্যাগ বের করে ১০০ টাকার নোট দিয়ে বলল-
-বাকিটাকা তোর বখশিশ। রেখে দে।
সবুরের মুখে হাসি ফুটে উঠল। কেটলি তুলতে তুলতে সবুর বলল-
-সেলাম স্যার, আর সইত্যই মানাইব আফনাগো দুজনরে।
অরুপা আর সায়ন হেসে উঠল সবুরের কথা শুনে.......
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ১০১৩ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ০৮/০২/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • জাহিদুর রহমান ১১/০২/২০১৫
    সুন্দর ।
  • ০৯/০২/২০১৫
    সুন্দর গল্প ।
  • অরুদ্ধ সকাল ০৯/০২/২০১৫
    সুন্দর
  • আফ্রিদী ০৯/০২/২০১৫
    অনেক ভাল লাগলো
  • সবুজ আহমেদ কক্স ০৯/০২/২০১৫
    অনেক ভাল লাগলো অনেক ভাল লিখা ......।
  • আপনার অনেক গুলো লেখা প্রিয়তে রাখছি। আজ আপনাকেই আমার প্রিয়তে রেখে দিলাম।
  • সুব্রত দাশ আপন ০৯/০২/২০১৫
    বেশ ভালো লাগলো আপনার গল্পটি। ভবিষ্যতে আপনি কথা সাহিত্যিক হতে পারবেন বলে আমার ধারনা। আপনার জন্য অনেক দোয়া থাকবে।
 
Quantcast