www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

এক চিলতে হাসি

বিকেল সাড়ে ৪ টায় কোচিং আর এখন ই বাজে ৩ টা ৪৫। বাসা থেকে কোচিং যেতে আরো ৪৫ মিনিট লাগবে আর যদি বাস জ্যামে পড়ে তো ১ ঘন্টা এর আগে কোনো ভাবেই পৌছানো সম্ভব নয়, এমন সাত পাচ ভাবতে ভাবতেই ব্যাগ গুছিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে পড়ল তূর্য। মিরপুর থেকে বিহঙ্গ বাস ধরতে হবে ফার্মগেটে যেতে, লোকাল বাস তাই যাত্রী চাহিদা কম নয় ব্যাপক ভীড় থাকে তবে এই টাইমে তেমন একটা ভীড় থাকেনা।
সপ্তাহে ৪ দিন এইভাবে যেতে হয় তূর্যর আর স্টুডেন্ট খারাপ না খুব ই ভালো SSC ও HSC দুটাটেই গোল্ডেন পেয়েছে। এখন স্বপ্ন বুয়েটে ভর্তি হবার, বাবা মা তেমন আশা করেনি ওর থেকে তবে প্রতিবার ও বাবা মাকে তাদের স্বল্প চাহিদার চেয়ে অপ্রত্যাশিত ভাবে একটু বেশী ই দিয়েছে.

আর বাবা মাও তুর্যকে অপ্রত্যাশিতভাবে একা করে দূর দেশে চলে গেছেন। মাঝ রাতে ঘুম না এলে মা'র সেই পুরনো ছবিটা বইয়ের ভাজ থেকে বের করে দেখে আর কাদে তূর্য, ওর কান্নার সাথে নিস্চুপ রাত্রিও যেন নিজের কান্না চেপে রাখতে পারেনা তাই বৃষ্টি ঝরিয়ে দেয়। হীম শিতলে যখন সবাই এক সুখময় নিদ্রার আশায় ঘুমুতে যায় ঠিক তখন তূর্যর ব্যাথা গুলি আরো তীব্র আকার ধারন করে। এসএসসি পরিক্ষার রেজাল্ট দেয়ার পরেই এক সড়ক দূর্ঘটনায় বাবা মা দুজনেই মারা যান। পৃথিবীতে রইল কেবল ৩ ভাই বোন। তূর্য সবার ছোট তাই সবার আদুরেই তবে তার লক্ষ্যটা সেই আদুরে থাকতে দেয় নি কারন তার পড়া লেখার খরচ কেউ বহন করতে রাজী নয়, বাবাও তেমন ধণী ছিলেন না যে তিন মারা গেলে তার সম্পদ থাকবে তা দিয়ে পড়া লেখাটা চালিয়ে যাবে।

তবে তূর্যের উদ্যমী আগ্রহ আর পড়ালেখার নেশাটা তাকে এগিয়ে যেতে প্রেরণা জোগাতে থাকল, বোনের বাসায়, ভাইয়ের বাসায় কিছু দিন থেকে থেকে ইন্টারটা কোনভাবে কাটালো। টিউশনি, নিজের কলেজ আর নিজে কিছু ছেলে মেয়েদের পড়ায়েই দিন আর মাস কেটে যেত।
খুব একটা মন্দ ছিলনা তবে খুব একটা ভালো থাকা থেকে অনেক বেশী ভালো আছি এমন কিছু হবে বলে ধারনা করল তূর্য আর এই অনেক বেশী ভালো থাকার কারণটা হবে নবনী। তূর্যের ব্যাচমেট ও ভালো ফ্রেন্ড। তেমন ভালো ফ্রেন্ডশীপ না থাকলেও খুব আগ্রহ করেই নিয়মিত স্টাডিতে নোট সহ বিভিন্ন সাজেসন দিয়ে নবনীকে হেল্প করত তূর্য। তূর্যের প্রতি নবনীর আগ্রহটাও কম ছিল না, নবনী তূর্যের অবস্থা জানত আর কেবল নবনী না কোচিং এর কম বেশী সবাই জানত তাই কোচিং এ ভালো ছাত্রের সুবাদে তূর্য ফ্রী ই পড়ত। বন্ধু মহলেও যথেষ্ট হাস্যউজ্বল তূর্য আর নবনী।
নবনী তূর্যের খুব কাছা কাছি চলে এসেছিল, সব বিষয়ে তূর্যকে জিঞ্জাসাবাদ করত। এই যেমন, তুমি ঠিক ঠাক খাও না কেন, রাত এতো জাগো কেন? কোচিং এ দু একদিন না এলে বলে
- তুমি তো ভালো ছাত্র তুমি যদি ভালো রেজাল্ট না করো তো আমরা তো গোল্লায় গেলাম, রেগুলার কোচিং করবা চামচিকা বুঝলা! আর তূর্যের সেই এক হাসি আর এক কথা-
-আরে চাশমিস, আপনার কথা অগ্রাহ্য করিবার কোন হেতু তো খুজিয়া পাইনা… এই কথার শেষে নবনীর ঠোটের কোনে এক চিলতে মিষ্টি হাসি উকি দিয়ে যায়… মনের ভিতর অনেক কষ্ট থাকলেও এই মেয়েটার মুখটা দেখলে নিমেষেই দুঃখ গুলি কোথায় যেন মিলিয়ে যায়।

কোচিং ঢুকতেই একটু লেট হলো, তবে স্যার কিছু না বলে ইশারাতে ঢুকতে বল শিহাব ওর সাথে বসার জন্যে ৩ নাম্বার বেঞ্জে একটা সিট খালি রেখেছিল আর তূর্যকে দেখেই ওকে ওর সাথে বসতে বলল। শিহাব আস্তে আস্তে তূর্যকে বলল
-তূর্য শুনছিস গতকালকে পিয়াস নবনীকে প্রপোজ করেছে? তূর্য পুরাই হতভম্ব, অবাক হয়ে শিহাবের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল।
অবাক হওয়ার কারন পিয়াস হল এই কোচিং এর সবচেয়ে স্মার্ট আর বড়লোক ছেলে।
-নবনী কি একসেপ্ট করছে?
-জানি না, আজ তো আসেনাই, আর দেখ পিয়াস কি মাঞ্জা মারছে। তূর্য ঘার ঘুড়িয়ে পিছে তাকালো, তবে পিয়াসকে না নবনীকে দেখতে। আসলেই আজ আসেনি মেয়েটা!
সোজা হতেই দেখল শিহাবের হাতে একটি গোলাপ আর একটি চিঠি যা শিহাব পড়ছে। আসলে এগুলা সব তূর্যের। শিহাব পুরো চিঠিটা পড়ল তূর্য কোন বাধা দিল না আর বাধা দিয়েই কী লাভ, যেকোন মেয়ে পিয়াসের অফার একসেপ্ট করবে আর হয়ত নবনীও করবে। শিহাব খুব উৎকণ্ঠ নিয়ে তূর্যকে জিঞ্জাস করল
-দোস্ত এতো ভালোবাসিস ওকে? সেই কবে লিখেছিস চিঠি কিন্তু দিলিনা কেন?
-হুম বাসি! কিন্তু ভয় হয়, আমার তো তেমন কিছু নেই আর ও আমার বন্ধু! থাক হয়ত ও আমার ছিল না…
শিহাব নীরবে দেখতে থাকল তূর্যকে আর হয়ত ভাবছিল এই ছেলে আর কত হারাবে?

মাথার উপর গোল চাদ আর সবুজ ঘাসে গা এলিয়ে শুয়ে আছে তূর্য! বুয়েটে সে চান্স পেয়েছে, সেদিনের পর তূর্য নবনীকে আর দেখেনি। নবনী কোচিং আসেনি। হঠাৎ মোবাইল বেজে উঠল, স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখল অপরিচিত নাম্বার…
-হ্যালো কে?
-কে? চামচিকা? বুকটা কেপে উঠল তূর্যের…
-কে নবনী?
-না, তোমার চাশমিস।
অনেকদিন পর নবনীর দেখা, ও এখন ঢাবিতে পড়ছে, সেই মায়াবী চেহারা আর সেই এক চিলতে হাসির ফুয়ারা যেন এখনো উজ্জিবিত।এতটা খুশি আমি আগে ওকে দেখিনি হয়ত পিয়াসের সাথে সুখেই আছে আমার নবনী।
বিদায় মুহুর্তে নবনীকে খুব বলতে ইচ্ছে করছিল-
" চাশমিস তুমার সেই এক চিলতে হাসিটা দাও না যেটা দেখে আমি আমার দুঃখ গুলো ভুলে যেতাম।"
-তূর্য কিছু বলার ছিল তোমাকে
-বল
-না থাক যাই,ভালো থেক।
এক রাশ কালো মেঘ যেন নবনীর চেহারায় খেলে যাচ্ছে, হয়ত বন্ধুকে বিদায়ের দু;খ।
মেসে আসার পর শিহাব এর কল আসল-
-দোস্ত নবনী কিছু বলছে তোরে?
-কি বলবে?
-আরে তুই শুনলে টাসকী খাবি
-কি হইসে বলবি? মনটা খারাপ আমি কেটে দিব।
-আরে আগে শুন… নবনী তোমারেই ভালোবাসে। আর এইটা বলতেই তোকে কাল ফোন করে দেখা করতে বলেছিল।
-তাহলে পিয়াস?
-পিয়াস সেইদিনেই রিজেক্ট হইছিল তবে ও তোর নামে নবনীকে বলছিল তুই আর আফরিন নাকি প্রেম করছিস আর এইটা শুনেই নবনী আর কোচিং এ যাই নি।

জিবনটা খুব সুন্দর লাগছে আজ, আজ নবনীর হাতে আমার লেখা সেই চিঠিটা দিব সাথে একটা গোলাপ…নবনীর কোন গোলাপ পছন্দ? white রোজ না রেড? ফুল আর চিঠিটা দিয়ে নবনীকে বলব
"তুমি কি আমাকে দিবে, আমার না ঘুমানোর রাতে তোমার একচিলতে হাসি, আমি একবার নয় বার বার বলব তুমায় ভালোবাসি খুব ভালোবাসি....
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৯৬১ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৮/০১/২০১৫

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • অন্তু নীল ০৩/০২/২০১৫
    ভালো হয়েছে।
  • ফাগুনের পলাশ ০১/০২/২০১৫
    সুন্দর হয়েছে।
    শুভেচ্ছা আপনাকে।
  • হাসান ইমতি ৩০/০১/২০১৫
    বাহ
  • হাসান কামরুল ২৯/০১/২০১৫
    বেশ ভালো লিখেছেন।
  • সবুজ আহমেদ কক্স ২৯/০১/২০১৫
    ভালো লাগলো ..................
  • আবিদ আল আহসান ২৮/০১/২০১৫
    waaaooo
  • ২৮/০১/২০১৫
    সুন্দর প্রেমের গল্প ।
    শুভেচ্ছা রইল ।
  • কুয়াশা রায় ২৮/০১/২০১৫
    খুব ভাল লাগল।মিষ্টি প্রেমের গল্প।
  • শ্রাবনের মেঘ ২৮/০১/২০১৫
    সুন্দর
  • বাহ! অনেক নাইস লেখা। অনেক রোমান্টিক। আমার অনেক ভালো লেগেছে। শুভেচ্ছা রইলো।
 
Quantcast