www.tarunyo.com

সাম্প্রতিক মন্তব্যসমূহ

মায়াজাল ২-২ (উপন্যাস)

দুই-২

এ বাড়ির কারও সাথেই বা মেরিনার সাথেও মনের মিল নেই। আজকাল মেরিনাও কারও সাথে বিশেষ কথা বলে না। ভাল লাগেনা তার।
আফরিন রকির হাত থেকে নোটটা নিয়ে ভ্রূ কুঁচকে দেখলো। বলল এর মানে কি?
মেরিনা বলল, তুই বুঝবিনা।
-তুই নিজে বুঝেছিস?
মেরিনা আফরিনের দিকে এক ঝলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল। সে তাকানোয় তাচ্ছিল‌্য ছিল। কথাটার জবাব দেবার কোন মানেই হয়না।

যদিও আফরিন মেরিনার চেয়ে ছয় বছরের বড় তবুও সে মেরিনাকে সামঝে চলে। সেই সাথে ভয়ও পায়। রকিও ভয় পায় মেরিনাকে। রকি মাত্র দু বছরের বড়, দখলদার এবং মাতাব্বরি করার অধিকারসম্পন্ন দাদা হওয়া সত্বেও। তবে মেরিনা কিন্তু কারও সাথে কখনও ঝগড়া করেনা। তবুও সবাই মেরিনাকে সামঝে চলে। একটু সবাই এড়িয়ে চলে যেন। চোখে চোখ রাখেনা। তার যে কোন মতামতকে অনিচ্ছা সত্বেও গুরুত্ব দেয়। এটা মেরিঁনা বেশ ভাল বোঝে।

রকি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল আর আফরিন বসল বাবার বিছানায়। মেরিনা বিছানায় ঢেলান দিয়ে বসল। আফসার চৌধুরীর মৃতু্যজনিত শোক এ বাড়ি থেকেঁঁ মোটামুটি বিদায় নিয়েছে। যা আছে তাকে শোক বলা যাবে না তার শুন্যতা মাত্র। আর কিছু না। সময়ের সাথে সাথে সে শুন্যতাটুকুও ভরে যাবে ভিন্ন কোন বিষয়ে।
সুইসাইড নোটটা রকি টেবিলে আলগা রেখেছিল চাপা দেয়নি। ফ্যানের বাতাসে সেটা পাক খেয়ে উড়ে যাচ্ছিল জানালা দিয়ে। রকি দৌড়ে সেটা ধরে ফেলল।
আফরিন দু হাটু তুলে দু হাত দিয়ে বুকে জড়িয়ে বসল। জোড়া হাটুর উপর তার থুতনি রাখল। রকি চেয়ারে হেলান দিয়ে বসল দু পা সামনে ছড়িয়ে। মেরিনা উঠে বিছানায় পা মেঝেতে ঝুলিয়ে বসে আছে, ভাবটা এমন যে, সে এ বাড়ির লোক নয়। থাকে শুধু বা বেড়াতে এসেছে এখনি চলে যাবে।
আফরিন এক দৃষ্টিতে মেরিনার দিকে তাকিয়ে ছিল। বলল আচ্ছা বাবা যে সুইসাইড নোটটা লিখলো- লাইফ ইজ অল ফান, ইট ইজ ফানিয়ার টু টেক ইট অ্যাওয়ে- এ কথাটা কেন লিখলো তুই কিছু বলতে পারবি। বেঁচে থাকাটা না হয় ফান হতে পারে তবে মরাটা কি আর মজার। এ কি করে সম্ভব।
রকি মাথা নেড়ে বলল, বাবা মোটেই মজা করার লোক নয়। এমন সে করতেই পারেনা। সিরিয়াস ঘরানার একজন মানুষের কাছ থেকে এমন নোট আশা করা যায়না। আর জীবনটা কখনোই ফান হতে পারেনা। সে এভাবে ভাবতে পারেইনা। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এ নোটটা বাবা লিখেনি। আমার কাছে পুরো লেখাটা বেশ অদ্ভুত লাগছে। কেন জানি মনে হচ্ছে এটা বাবা লিখেনি।
আফরিন বিরক্ত হয়ে বলল, কি বলছিস? বাবার নয়ত এটা কার লেখা। তুই কি বাবার হাতের লেখাও চিনিস না।
-চিনি মানে খুব ভাল করে চিনি। তবে আমার মনে হয় এটা ঠিক বাবার কথা নয়। হয়ত বাবার উপর কিছু ভর করেছিল তাই এভাবে লিখেছে। বাবা হয়ত লেখার সময় বাবার ভিতর বাবা ছিল না।
আফরিন ভ্রু কুঁচকে বলল ভর ! ভর মানে।
- হি ওয়াজ পজেজ্ ড বাই সামথিং।
-সেই সামথিংটা কী?
-আমি কী করে বলব? লেট আস ইনভিষ্টিগেট। আমার মনে হয় মেরিনা বলতে পারে এ বিষয়ে। শী ওয়াজ কুয়াইট ক্লোজ টু হিম।

মেরিনার মুখ সারাক্ষন গম্ভীর থাকে আজ আরও গম্ভীর হল। সে ভাই এবং বোনের বেশীর ভাগ কথারই কোন জবাব দেয়না। তবে তার মন হল কথাটা রকি একেবারে মিথ্যা বলছে না। বাবার কাছে জীবনটা খুব মজার ছিল এমন তো তারও কখনও মনে হয়নি। বা এমন কথা সে কোন দিন বাবার মুখে শুনেনি। তার বাবা ছিল একজন সচিব তার জীবন যাত্রা ছিল অনেকটা আর্মিদের মতো ষ্টাইল। রিটায়েরমেন্টের বহু আগে সে অবসর নিয়ে নেয়। তারপর শুরু করে ব্যাবস্যা। অনেক ধরনের ব্যাবস্যা করেছেন সে। একটা সময় ব্যাবস্যা তাকে ধরা দেয়। হু হু করে টাকা আসতে থাকে।
প্রথম জীবনে তারা থাকতো মহম্মদপুর তাজমহল রোজ। অবশ্য তা মেরিনার জন্মের আগে। তারপর বনানী বাড়ী কিনল সর্বশেষ গুলশান তারপর তারা উঠে এল গুলশানে। বাবার ব্যাবস্যা যত বাড়তে লাগল বাবা তত আত্মীয় স্বজন থেকে দুরে চলে যেতে লাগল। একসময় নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করল। ব্যাবস্যার প্রতি মন উঠে গেল। সব মানুষের উপর ছেড়ে দিয়ে নিজেকে গুটিয়ে দোতালা থেকে নেমে চলে এল একতলায়। সকলকে পাশ কাটিয়ে ভুত গ্রস্থের মত একা থাকতে লাগল। এটা কি কোন মজা। নাকি এটাই মজাদার জীবন ছিল।

রকি মেরিনার দিকে তাকিয়ে বলল তুই কি করে এ ঘরে একা থাকিস বলতো। ইউ মাষ্ট বি এ ব্রেভ গার্ল। আমি তো সব সময় ফিল করি দেয়ার ইজ সাম স্পিরিট অর সামথিং ইন দিস হাউস।

আফরিন ভ্রু কুঁচকে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বিরক্ত গলায় বলে আবার এই সব ফালতু কথা। বলেছি না তোকে এটা সাইকোলজিক্যাল। কেউ মারা গেলে কিছু দিন এমন ফিল হয়। এসব কিছু না।

রকি মাথা নেড়ে বলে অসম্ভব হতেই পারেনা। আই হিয়ার থিংষ, আই সি থিংস তাহলে ওসব কি? আমি কি ভুল দেখেছি বা শুনেছি।

মেরিনা সামান্য একটু হাসল। ইস্পাতের মত হাসি দিয়ে বলল, এ বাড়ির সকলের কাছে বাবা এখন তাহলে ভুত। ভালই বলেছো।
রকি একটু অস্বস্থিতে পড়ে গেল নিজের বাবাকে ভুত বলে কিভাবে। তাই বলল ঠিক তা নয়। কিন্তু সামথিং। ঠিক বোঝানো যাবেনা। আজকাল মাঝে মাঝে আমার অনেক রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়। তখন আই ফিল সামথিং। মনে হয় মশারীর বাইরে কে যেন দাড়িয়ে আছে। এক দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে। আমি বাথরুমে শব্দ শুনতে পাই, কে যেন বেসিনে মুখ ধুচ্ছে। বা লেডাউনের ফ্লাসার কেউ টানছে। পানির ফ্লাশের শব্দ পরিস্কার শুনি। অথচ কেউ কিন্তু যায়নি তখন বাথরুমে।

মেরিনা বলে বাবা তো দোতালার বাথরুম ব্যবাহার করতো না কারন সে থাকতো এক তলায় কেন যাবে দোতালার বাথরুমে।
রকি অসহায় হয়ে বলে, সেটা কোন যুক্তি নয়। আই ফিল এ ভেরি মিষ্টিরিয়াস প্রেজেন্স অফ সামবডি।
আফরিন ধমকের সুরে বলে রাখ তোর সামবডি আর সামথিং। এসব নিয়ে তুই থাক। বোকা ছেলে কোথাকার।
-তুইও তো ভয় পাস আপি নয়ত তোর ঘরে নিলাকে নিয়ে রাখিস। বেশী বাহাদুরী দেখাতে হবে না। ব্রেভ হল মেরিনা। রিয়েল ব্রেভ।
-আমি মোটেই ভয় পাইনা নিলা নিজে ভয় পায় বলে আমার ঘরে এসে শোয়।
-আহা তুই তো মাকে নিজে বলেছিস তুই ও আজকাল এমন অনেক কিছুই ফিল করছিস। তাহলে সেসব কি শুনি?
আফরিন চোখ পাকিয়ে কি যেন বলতে যাচ্ছিল তাই মেরিনা উঠে দাড়িয়ে বলল তোরা যদি ঝগড়া করিস। তাহলে কর আমি চলে যাচ্ছি আমার এসব ভাল লাগেনা। আমি তাহলে গেলাম।


চলবে.................
বিষয়শ্রেণী: গল্প
ব্লগটি ৪৬৮ বার পঠিত হয়েছে।
প্রকাশের তারিখ: ২৯/০৮/২০১৪

মন্তব্য যোগ করুন

এই লেখার উপর আপনার মন্তব্য জানাতে নিচের ফরমটি ব্যবহার করুন।

Use the following form to leave your comment on this post.

মন্তব্যসমূহ

  • suman ৩১/০৮/২০১৪
    অসাধারণ ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে কাহিণী ...ছোটগল্প আমাড় অন্যতম প্রিয় ভূবন ...
  • একনিষ্ঠ অনুগত ৩১/০৮/২০১৪
    কাহিনী গতি পাচ্ছে... এভাবেই চলুক...
  • ভালা।
 
Quantcast